কবির সুখ

May 29, 2009

স্কুলে পাঠ্যবইতে একটা ইংরেজি কবিতা ছিল। হ্যাপি দা ম্যান। কবি বলছেন, তিনি সুখি মানুষ হতে চান। তার কয়েক একর জমি থাকবে যেখানে তিনি চাষ করবেন। তাতে তার ভরনপোষন চলবে। জগতের অন্যকিছু নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। এবং তিনি যখন মারা যাবেন তখন সেখানেই গাছতলায় তাকে শুইয়ে রাখা হবে। সেখানে কোন নামফলক লাগানো হবে না। শিক্ষক বললেন উনি মস্তবড় কবি।

আমার বিশ্বাস হয়নি। তখন আমার চোখে বিশাল স্বপ্ন। কোন একটা কিছু করে বিখ্যাত হব। আইনষ্টাইন-নিউটনের মতই হোক, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মতই হোক, জয়নুল-কামরুলের মতই হোক আর ম্যারাডোনা-পেলের মতই হোক, বড় কিছু একটা করব। দেশের-বিদেশের মানুষ বলবে অমুকে কতবড় কাজই না করেছে। আর এই লোক বলে কিনা তাকে কেউ চিনবে না। সকলের অগোচরে মারা যাবে, সকলের অগোচরে কবর দেয়া হবে। সেই জীবনের মানে কি হল ?

জীবনের মানে এখন বুঝি এমন দাবী করা রীতিমত অন্যায়। তবে যা বুঝি তা হচ্ছে কবি বর্নিত সেই কৃষকের যে নির্ভেজাল জীবনের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন সেটা লোভনীয়। এবং দুর্লভ। বিবিধ কারনে। প্রথমত বাংলাদেশের মোট আয়তনকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে কয়েক একর হয় না। নেই অর্থে কয়েক একর জমির মালিক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই যদি না অপরের জমি দখল করা হয়। দুর্বলের জমি দখল করা হয়ত সম্ভব কিন্তু আরো সবল এসে সেটা কেড়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই ঘটবে।

কথা তারপরও রয়েছে। আকাংখা আরো কমিয়ে কয়েক একরের পরিবর্তে হয়ত আরো কমে সন্তুষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করা যায়। উপেনের হয়ত দুবিঘে ছিল আপনি এক, কিংবা আরো কমে সন্তুষ্ঠ থাকলেন, কৃষক না হয়েও যে জমির মালিক তার জমি চাষ করেও চলা যায়। কিন্তু খাবেন-গল্পগুজব করে সময় কাটাবেন আর নিশ্চিন্তে মারা যাবেন সেটা হবে না। কিভাবে ফসল বেশি ফলানো যায় সেকথা না ভাবলেও চলবে, ভাবতে হবে আপনার এলাকায় চেয়ারম্যান-মেম্বার কে হবে। সাংসদ কে হবেন। আপনি লীগ করবেন না দল করবেন। আপনাকে এর বাইরে থাকতে দেয়া হবে না। কে কতটা দুর্নীতি করেছে সেটা আপনাকে জানতে হবে, কে এলাকার কতটা উন্নতি করেছে সেটাও জানতে হবে। এরই নাম সচেতনতা। আপনার বাড়ির সদস্যরা উপোস করে করুক, আপনাকে সচেতনতা দেখাতেই হবে।

তার পরও কথা আছে। আপনার এলাকায় নিশ্চয়ই ডজন খানেক প্রতিষ্ঠান আছে। মানুষের দুঃখকষ্ট কমানোকে তারা জীবনের সবকিছু বলে পণ করেছেন। তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে হাজারে হাজারে, কর্মীসংখ্যা বাড়তে থাকে লাখে লাখে, কারন মানুষের দুঃখও বাড়ছে সমান তালে। দুইই বাড়ছে, বাড়বে। আপনি এর বাইরে থাকবেন কেন ?

শুধূ বিঘে দুই, ছিল মোর ভুই। না আজকাল দুবিঘের মালিক হওয়ার কোন সুযোগ নেই লীগ কিংবা দল না করলে। আবার ভিটেছাড়া হয়েও যে দলছাড়া-লীগছাড়া হবেন সে সম্ভাবনাও নেই। এই সমাজসেবীরা আপনাকে নির্জনে থাকতে দেবে না।

কবি বোধহয় এই কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন কোন রাজনৈতিক দল কিংবা এনজিওর খপ্পরে পড়তে চান না। অনেক আগে বুঝেছিলেন বলেই তিনি বড় কবি।

1 comments:

Anonymous said...

Whats the point? Things not gonna change. We used to live in it.

 

Browse