স্বাধীনতা মানে মাথা নিচু করা

Mar 23, 2011
স্বাধীনতার মাস বলে কথা। পুরো মাস জুড়ে প্রচার করতে হবে স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষ কি করেছে। স্বাধীনতা দিবস পালন করা বলে কথা। এইদিনে লাল-সবুজ রং ছড়াতে হবে। না ছড়ালে কি দেশপ্রেম প্রকাশ করা হয়। যে স্বাধীনতার জন্য কয়েক লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানো হয়! স্বাধীন জাতি গর্ব হিসেবে করা যায়!
কাজেই সেটা করতে হবে। সমস্যা হচ্ছে একাজ বিনে পয়সায় করা যায় না। এখানে খরচ, ওখানে খরচ। সরকারের একেবারে কাছের কেউ না হলে এই খাতে সরকারী অর্থও পাওয়া যায় না। আবার নিজের টাকাও খরচ করা মানায় না। নিজের খেয়ে বণের মোষ তাড়ায় কে!
কাজেই, সমাধান হচ্ছে অন্যের সাহায্য নেয়া। স্কুল শিক্ষক নিশ্চয়ই নিজে হাত পাততে পারেন না। সন্মান বলে একটা বিষয় তো রয়েছে। তাদের হয়ে কাজটি করে দিতে পারে স্কুলের ছাত্ররা। এরকাছে ওরকাছে হাত পেতে অর্থসংগ্রহ করতে পারে।
এটা অবশ্য খবর না। যারা খবর প্রচার করেন তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। তাদেরও লাভ বিজ্ঞাপনে। দুএকজন ব্যতিক্রমি ব্যক্তি রয়েছেন যারা একেই খবর মনে করে অন্যদের সামনে এনে হাজির করেন। সেকারনেই এটা খবর। একেবারে সামান্য খবর।

পার্লামেন্ট মানে মিথ্যে বলা

Mar 21, 2011
প্রাকটিস এবং পারফেকশন দুটি শব্দ শুনতে যেমন কাছাকাছি, অনেকে এদুটি একসাথে করে বলেন প্রাকটিসে পারফেকশন হয় কাজেই যদি ভাল ফল পেতে হয়ে তাহলে প্রাকটিস প্রয়োজন
নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছে এই পুরনো কথা শুনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা একেবারে জ্বলন্ত উদাহরন তো দেখাচ্ছেন শুধু ক্রিকেটারই বা কেন, জাতি হিসেবে সবাই প্রাকটিস ছাড়াই পারফেক্ট কাজে আগ্রহি লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে দেখুন, তারা আশা করছে পড়াশোনা শেষ করে বিশাল একটা চাকরী পাবে, গাড়ি হাকাবে সেই চাকরীতে কি কাজ করতে হবে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই ওসব প্রাকটিস করে সময় নষ্ট করে কে ! একবারে বাজিমাত করে দেব
কাজের কথায় আসা যাক বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা কি প্রশ্ন করলে নানা মুনীর নানামত পাওয়া যাবে কারো মতে দুর্নীতি, কারো মতে অদক্ষ সরকার, কারো মতে দারীদ্র, কারো মতে অশিক্ষা যাই হোক না কেন ঘুরেফিরে শেষ যা বাস্তবতা তা হচ্ছে দেশে কয়েক কোটি বেকার রাজপথে সবসময় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড় এই মানুষগুলি যদি কাজে ব্যস্ত থাকত তাহলে নিশ্চয়ই রাস্তায় ঘোরার সময় পেত না ওই রিক্সাচালকদের কথাই ধরুন না কেন ? ১০ থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছে মানুষকে এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায় বয়ে নিয়ে যাচ্ছে একটা কারখানার কথা ভাবুন তো যেখানে এই পরিমান মানুষ এই পরিমান শ্রম দেয় সেটা নিশ্চয়ই বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারখানা বিপরীতভাবে, এরা যে কাজ করছে সেকাজ আরো ভালভাবে করা যায় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষ আরো কম শ্রমে, কম খরচে, কমম সময়ে, আরাম করে যাতায়াত করতে পারে যদি সে ব্যবস্থা করা হয়
সেটা হচ্ছে না কারন, এই মানুষগুলিকে কেউ কারখানায় লাগাচ্ছে না তারা নিজেরাই বেকার সমস্যার সমাধান করে নিচ্ছে রিক্সা বন্ধের কথা বলুন, সাথেসাথে বহু মানবদরদী পথে নামবে আগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন ওদেরকে পথে বসাবেন নাকি! সাথে আমাদেরও!!
এতদিন সরকার কর্মসংস্থানের কথা শুনিয়েছে একটা মাত্র পদ্ধতির কথা বলে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র খোজা হচ্ছে কোন দেশ এধরনের পরিশ্রমি মানুষ নিতে চায় বের করা হচ্ছে তারা নিজের টাকায় যাবে, কাজ করবে, দেশে টাকা পাঠাবে তাদের উন্নতি, দেশের উন্নতি, সরকারের সাফল্য

২০১২ মহাপ্রলয় কতদুর

Mar 18, 2011
২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২1 তারিখ এ নিয়ে বহু কথা বলা হয়েছে বহু লেখা, বহু ভিডিও, বহু ডকুমেন্টারী এইনামে তৈরী হয়েছে হলিউডি ব্লকবাষ্টার মুভি সেটা এখনও না দেখে থাকলে এটুকু উল্লেখ করতে পারি, ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। যাদের সামর্থ্য আছে তারা জীবন বাচাতে নুহের মত নৌকায় উঠেছেন বাইরে প্রলয় চলছে। এভারেষ্টের বদলে সবচেয়ে বড় পর্বতসৃংগের যায়গা দখল করেছে আফ্রিকা
এসবের কতটা গুজব কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে তর্ক থাকাই স্বাভাবিক অন্তত যেসব যুক্তি তুলে ধরা হয় তাকে অবিশ্বাস করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না
যেমন ধরুন, মায়া ক্যালেন্ডার তারা ক্যালেন্ডারকে আমাদের মত শুধুমাত্র দিন-তারিখ হিসেব করার জন্য ব্যবহার করত না, ব্যবহার করত ভবিষ্যতে কি ঘটবে সেটা জানার জন্য সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৫১৯ সাল তাদের জন্য বিপদময় বছর ধুমকেতু দেখা দেবে, বিপদ আসবে দক্ষিন দিক থেকে এবং ইতিহাস বলে সেই বছরই ধ্বংশ হয়ে গেছে মায়া সভ্যতা প্রাকৃতিক কারনে না, বিদেশী আক্রমনের কারনে যারা এসেছিল দক্ষিন দিক দিয়ে মায়া, এজটেক, ইনকা সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে
মায়া ক্যালেন্ডারের শেষ দিন ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর এরপর আর কোন দিন নেই কেউ বলেন এটা বিশ্বের শেষ কেউ বলেন সভ্যতার শেষ নতুন সভ্যতা শুরু হবে এরপর মায়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পৃথিবী এর আগে ৫ বার ধ্বংশ হয়েছে
কিংবা ধরুন নষ্ট্রাডামুসের ভবিষ্যতবাণী তার সময়ে সরাসরি ভবিষ্যতবাণী করার সুযোগ ছিল না এধরনের কথা বললে আগুনে পুড়ে জীবন দিতে হত তার সব বক্তব্য তাই প্রতীকি যায়গা, সময় বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ নেই ফরাসী বিপ্লব থেকে শুরু করে কেনেডির হত্যাকান্ড, চাদে মানুষের পদক্ষেপ পর্যন্ত সবকিছুই তার ভবিষ্যতবানীর সাথে মিলে যায় অন্তত একটা যায়গায় তিনি যায়গার নাম উল্লেখ করেছেন, মেসোপটেমিয়া বর্তমানের ইরাক বিদেশী আক্রমনের ফলে ধ্বংশাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং একসময় বিদেশী শক্তি পরাজিত হবে এটা চলমান ঘটনা, এবং আমরা জানি আমেরিকা সেখানে খুব ভাল অবস্থায় নেই একসময় পরাজয় স্বিকার করেই হয়ত তাদের বিদেয় নিতে হবে

রাজনীতি নেই রাজনীতিতে

Mar 14, 2011
সাদা চামড়া কথাটা আপত্তিকর। একসময় সাদাদের কাছে কালো চামড়া যতটা আপত্তিকর ছিল ঠিক ততটাই। কিন্তু দির্ঘ্যদিনের যা অভ্যেস তা-কি বদল হয়। কাজেই,
যদি চামড়া সাদা হয় এবং সেই সাদা চামড়ার মুখ থেকে যদি নিজের পক্ষে মত পাওয়া যায় তাহলে ঢাক পেটাতেই হয়।
একজন মার্কিন সাংবাদিক ঢাকায় এসেছেন রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে। তার মত শোনার বিষয়ে দুপক্ষের আগ্রহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি কার পক্ষ নেন, কার বিপক্ষে যান। এরচেয়ে বড় সার্টিফিকেট আর কি হতে পারে।
বিষয়, কর্নেল তাহেরের ফাসি। সেজন্য জিয়া কতটা দায়ী সেটা প্রমান করা।
এতে জিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল না একথা সম্ভবত জিয়ার নিজের দলও বিশ্বাস করে না। মুখরক্ষার জন্য তারা বিচারের কথা তুলতে পারে কিন্তু অন্যদের মত তারাও জানে ওই ট্রাইবুনাল নামের নাটকে কি হয়। সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা যার তার সিদ্ধান্ত নেয়াই যথেষ্ট। কাজেই, তখনকার ক্ষমতাশীন জিয়ার ভুমিকা সেখানে ছিল এটাই সত্য। কথা হচ্ছে, সেটা প্রমান করা। কারন এই না যে জিয়াকে ফাসিতে ঝুলানো হবে। তিন দশক আগে তিনি মরে সেপথ বন্ধ করেছেন। তার কবরস্থানে তার লাশ আছে এটাও অস্বিকার করে বিপক্ষ দল। তাহলে এটা নতুনভাবে প্রমান করলে কি হবে ? কি ব্যবস্থা নেয়া হবে ? কার বিরুদ্ধে ?

এক প্রশ্নই যথেষ্ঠ

Mar 12, 2011
নিজাম ডাকাতের এতটাই কুখ্যাতি ছিল যে মায়েরা নাকি তার সন্তানকে ভয় দেখাতে বলতে, ওই যে নিজাম ডাকাত আসছে। তারা সাথেসাথে চুপ করে যেত। শিশুও বুঝত নিজামের নামের ওপর কথা চলে না।
কিন্তু যার হারানোর কিছু সে ভয় পাবে কেন ? এক সন্যাসী তাকে সামনাসামনি দেখেও ভয় পেল না। বরং উল্টো প্রশ্ন করল, তুমি জানো ডাকাতি করা খারাপ কাজ। তারপরও করছ কেন ?
নিজাম ডাকাত হলেও অন্তত আধুনিক বেয়াদপ ছিল না। সন্মানীকে সন্মান দিতে জানত। তার উত্তর, এটাই আমার বাচার পথ। এই করেই নিজে খাই, পরিবার চালাই।
সন্যাসীর প্রশ্ন, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখ তো তারা ডাকাতি পছন্দ করে কি-না।
নিজামের উত্তর, অবশ্যই করে! ডাকাতি না করলে তারা খাবে কি ? যত বেশি ডাকাতি তত বেশি সম্পদ-
সন্যাসীর প্রশ্ন, তারা কি তোমার পাপের ভাগ নেবে ? জেনে এসো।
নিজামের কথাটা খারাপ লাগল না। ডাকাতি যদি খারাপ কাজ হয়, সে যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে তার স্ত্রী-সন্তানও সেই অন্যায়ের অংশিদার। বাড়ি ফিরে সে সরাসরি সে প্রশ্নই করল।
তার স্ত্রীর উত্তর, আমি কেন তোমার পাপের ভাগি হব। তোমার দায়িত্ব আমাদের খাওয়ানো পড়ানো, কিভাবে করবে সে দায়িত্ব তোমার।
সন্তানের উত্তর, আমরা কেন পাপী হতে যাব। আমরা কি ডাকাতি করতে বলেছি ? পারলে অন্যকিছু কর।
এই গল্পের কতটা সত্য আর কতটা বানানো নিশ্চিত করা আমার পক্ষে অসম্ভব। এটুকু নিশ্চিত করে জানাতে পারি, নিজাম বাস্তব চরিত্র। আগ্রহি হলে দিল্লীতে গিয়ে নিজামের কবরস্থান দেখে আসতে পারেন। বহু মানুষ যায়। অবশ্য তাকে নিজাম ডাকাত বলে না, বলে নিজামউদ্দিন আউলিয়া। ওই একটিমাত্র প্রশ্ন তাকে ডাকাত থেকে সেরা আউলিয়ায় পরিনত করেছিল।

সোনার ডিম

Mar 7, 2011
সোনার ডিম শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইচ্ছে করলেই তৈরী করে নেয়া যায়। অন্তত সোনার নৌকা যখন হর-হামেশা তৈরী হচ্ছে (হয়ত সোনার ধানের শীষও) তখন কেউ একজন ডিম মার্কায় নির্বাচনে দাড়ালে তার সমর্থকেরা তৈরী করতেই পারেন। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করলেই ব্যবস্থা করতে পারেন।
বলছিলাম সেই গল্পের সোনার ডিমের কথা। যে হাস সোনার ডিম পারে। হাসে মালিক সোনার ডিমের বদৌলতে সুখে থাকে। কিন্তু ওই যে কথা আছে, সুখে থাকতে ভুতে কিলায়, তাকেও ভুতে কিলাল। মাথায় বুদ্ধি চাপল দিনে একটা করে ডিম না নিয়ে একবারে পেট কেটে সব বের করে নেবার। ফল যা হবার তাই, দৈনিক ডিম পাওয়ার পথটিও বন্ধ হল।
আপনি হয়ত জানেন ডিমের আরেক নাম হিরন্যগর্ভ। যার গর্ভে সোনা রয়েছে। ডিমের কুসুমের রং একেবারে ঝকমকে সোনার মতই। কাজেই যে কোন ডিমই আসলে সোনা। এক হাস থেকে দৈনিক একটা, বছরে ৩৬৫ না হলেও অন্তত ২৬৫। ২৬৫ ডিমের দাম হচ্ছে ... একসাথে করলে সোনা কেনা যায়। যদিও মানুষ সোনা খায় না ডিম খায়। তাহলেও ডিমের থেকে সোনার দাম বেশি। অনেক অনেক বেশি।
মুল বিষয়ে ফিরি। বিষয়টি আসলে দৃষ্টিভঙ্গির। কিংবা বলতে পারেন স্বভাবের। একদিনে সব পেতে চাই। হাস দিনে একটা করে ডিম পারবে তার সেটা কুড়াতে হবে এত সময় কোথায়। সব ডিম একবারে পাড়লেই তো হয়!
প্রাকৃতিক নিয়মে জোরাজুরি চলে না। অপ্রাকৃতিক নিয়মে অনায়াসে চালানো যায়। ধরুন ব্যবসা করছেন। এক কেজি চালে লাভ ৫ টাকা। ১০০ কেজিতে ৫০০ টাকা। আপনার দোকানে হয়ত দিনে ১০০ কেজি বিক্রি করা সম্ভব। তাহলে এই নিয়ম কাজে লাগাবেন কিভাবে ?
কেন, লাভ বাড়িয়ে দিন। প্রতি কেজি ১০ টাকা। ওই ১০০ কেজিতেই হাজার টাকা লাভ। কিংবা বাড়িয়ে দিন আরো ৫ টাকা। ওই ১০০ কেজিতেই ১৫০০।
নীতিকথা বলছেন। বহু বছর আগে একজন গুনী ব্যক্তি আধুনিক ব্যবসার মুলকথা প্রকাশ করে গেছেন। যত কমে কিনবেন এবং যত বেশিতে বেচবেন আপনি তত দক্ষ ব্যবসায়ী। মহাত্মা গান্ধীও জন রাস্কিন নামের এই ইংরেজের কথা শুনে মহাত্বা হয়েছিলেন। তার সময়ের সবচেয়ে দামী লেখক তলস্তয় নিজের বইয়ের টাকা পর্যন্ত নেয়া ছেড়েছিলেন।
সে অনেক পুরনো কথা। বর্তমানে আধুনিক ব্যবসায় সুযোগ-সুবিধে অনেক বেশি। সরকার ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী সরকার। সরকার বলে দিচ্ছে, ধান চাষ করতে কৃষকের কেজিপ্রতি খরচ কত ? ২৫ টাকা ? তাহলে আমরা ২৭ টাকায় কিনব। কেজি প্রতি লাভ করবে দুটাকা, মন্দ কি ? বীজ, সার, সেচ, পরিশ্রম, ঝুকি তারপর তাদের পরিবারের খরচ সব চলে যাবে ওই টাকায়। বাংলাদেশের বাজারদর বিশ্বের থেকে অনেক সস্তা। জানেন আমেরিকানরা এককাপ কফি খায় ২ ডলারে। মানে দেড়শ টাকায়। এখানে এককাপের দাম বড়জোর ১০ টাকা। বাংলাদেশের কৃষক কফি খাবেই বা কেন ? তাতে কি কৃষকের মর্যাদা থাকে ? ওদের জন্য পান্তা, হুকো, লুঙ্গি-গামছা মানানসই। আর্টিষ্টিক।
আর ব্যবসায়ীদের কথা বলছেন ? ওরা ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করতেই পারে। কেজিপ্রতি ২০ টাকা লাভ না করলে ওদের চলবে কেন ? লাভের জন্যই ওরা ব্যবসা করে। সরকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে না। মাঝেমধ্যে দুচারকথা শোনাতে পারি, ওতে কিছু মনে করবেন না। পেটে খেলে পিঠে সয়, প্রবাদ আছে। আমরা অন্তত পিঠে দিচ্ছি না। বড়জোর কানে দিচ্ছি। ইচ্ছে করলে কান বন্ধ রাখতে পারেন। আমরা আসলে গালাগালিও করি না। খুববেশি দার্শনিক বক্তব্য শোনাই। মনের জন্য উপকারী।
সরকারের নিজেরও লাভের বিষয় আছে।  এটাও ব্যবসা বৈকি। এখানেও তুমুল প্রতিযোগিতা। সময়মত আখের গুছিয়ে নিতে হয়। নিজের ব্যাংক, ব্যবসাপ্রতিস্ঠান, শিল্পকারখানা সবকিছু গোছগাছ করে নিতে হয় ক্ষমতায় থাকতেই। কখন ক্ষমতা অন্যের হাতে যায় তার কি ঠিক আছে ? সুবিধে এটাই, এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর পেটে লাথি মারে না।
মুল কথা একটাই। আমাদের ওই দিনে একডিমে চলবে না। দ্রুত ডিম চাই। কম সময়ে বেশি।
দেশটাকে যদি হাস ভাবেন তাহলেও তাই। যত কম সময়ে যত বেশি ডিম পাওয়া যায় তত লাভ। হাসের কি হল তাতে কি যায় আসে!

দিনে দিনে যত বাড়িয়াছে দেনা

Mar 6, 2011
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিতর্কের বাইরে থাকার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি খুব বেশি নেই। সাবাবুদ্দিন আহমেদ একজন ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একদল যদি পুবদিকে যায় আরেকদল চোখ বন্ধ করে পশ্চিমে রওনা দেয়।
তিনি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কথাই বলেছিলেন। এখন অবশ্য দুই দল নেই, দুই জোটে পরিণত হয়েছে। যার অর্থ, যারা এই সরাসরি এই দুই দলের কোনটির সাথেই জড়িত নন তারাও এখন জোটের শরিক। পুরো দেশের মানুষই দুভাগে বিভক্ত, একেবারে মুখোমুখি, কিংবা পিঠাপিঠি। একজন হ্যা বললে অপরজনকে না বলতেই হয়।
এই প্রফেসর ইউনুস এর কথাই ধরুন না কেন। সরকার (মহাজোট) বলছে তার গ্রামীন ব্যাংকের প্রধান পদে থাকার যোগ্যতা নেই। তাকে সরে যেতে হবে। একটু ঘুরিয়ে বললে, যুক্তসংগত কারনে, আইনানুগ পন্থায় তাকে বিদায় করা হল।
অবধারিতভাবেই বিরোধী জোটকে এর প্রতিবাদ জানাতে হয়। তিনি কত ভাল মানুষ ছিলেন, দেশের জন্য কত কি করেছেন থেকে শুরু করে দেশের জন্য নোবেল পুরস্কার এনে দিয়েছেন, এসব করে দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে পর্যন্ত। আর বিরোধী জোট যখন একথা বলে তখন তাদের সমর্থকদের সাতে সাড়া দিতেই হয়।
সাথে তাদের নিজস্ব বিশাল কর্মী বাহিনী। লক্ষ নাকি কোটি নিশ্চিত করা কঠিন, তবে সেটা বিশাল। তাদেরও ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয়। তাদের পেটে লাথি মারার ব্যবস্থা করা হবে আর তারা চুপ করে থাকবেন তাতো হয় না।
সাথে অনুসারীরা। দরীদ্রের থেকেও যারা দরীদ্র তাদের কাছেও টাকা কামানো যায় এই সুত্রে যারা পথে নেমেছেন, নিজেরা শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাদেরকেও আগে থেকেই সাবধান হতে হয়।
আবার বিদেশীরাও রয়েছেন। অনেকে নিজের দেশে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সরকার যেখানে ব্যাংকের সুদের হার কমাতে কমাতে শুন্যের দিকে নিতে শুরু করেছেন তখন তাদের সুদের হার আধাআধি।
কাজেই প্রতিবাদের দল অনেক বড়। এদের সাথে সাধারন মানুষ যোগ দেবেন এটাই তো স্বাভাবিক। ওই যে ক্রিকেট খেলার সমর্থনের মত, এবার বিশ্বকাপটা দেশেই রেখে দেব। আমরা সাথে আছি। ১০ হাজার টাকার টিকিটেও খেলা দেখতে রাজী। তারপর দল যখন ৫৮ রানে অলআউট তখন ওদের গাড়িতে ঢিল মার। হুজুগ বলে কথা।
অনেকেই বলেন বাঙালী কথা বলতে পছন্দ করে। যত শুনতে চান তত শুনবেন। তবে, প্রয়োজনীয়টা বাদ দিয়ে। গ্রামীন-ব্রাক দেশের উন্নতি করতে করতে একেবারে এভারেষ্টের চুড়ায় নিয়ে যাচ্ছে। যারা ঋন পায় না, বন্ধক রাখার মত কিছু নেই তাদেরও ঋন দিচ্ছে। অমুক গ্রামে তমুকের ভাগ্য ফিরেছে সমুকের কল্যানে। কত উদাহরন চান ?
একটা কথা কেউই বলতে রাজী নন, সরকার যখন শতশত কোটি টাকা ঋন দিচ্ছেন শিল্পের নামে, ১০% এর কম সুদে, সেই সুদ পাচ্ছেন না, মুল টাকাও পাচ্ছেন না, তারা দিব্বি বাড়ি-গাড়ি করে আয়েসে দিন কাটাচ্ছেন, নেতাগিরি করছেন, তখন এই দরীদ্র মানুষকে সামান্য টাকা ঋন দেয়ার দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে না কেন ? সরকার তো এজন্যই। না-কি বন্ধক রাখার মত কিছু নেই বলে তাদের পুরো নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা নেই। দলের হয়ে কাজ করতে পারেননি বলে পুরো নাগরিক হননি। আধানাগরিক কিংবা সিকি নাগরিক হয়ে রয়েছেন।
কিংবা ওই বেসরকারী ব্যাংক, যারা শেয়ার বাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে, বাড়ি-গাড়ি-এসি-টিভি কেনা থেকে শুরু করে বিয়ে-পিকনিক করা পর্যন্ত সবধরনের ঋন দিতে হা করে বসে রয়েছে। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তারাই বা একজনকে দরীদ্রকে ব্যবসার জন্য ১০ হাজার টাকা ঋন দিচ্ছে না কেন ?
ইতিহাস বলে, সময় সবকিছু সমান করে দেয়। বহু বছর ধরে বহু ঋন জমেছে মধ্যপ্রাচ্যে, আফ্রিকার দেশগুলিতে। তাদের জনগন বুঝেছে এখন সেই ঋন শোধ করার পালা। পালাবদল শুরু হয়েছে। অনেকে বলেন বাংলাদেশেও যুগ যুগ ধরে বহু ঋন জমেছে। ইতিহাস যদি সত্য হয় তাহলে একসময় এই ঋন শোধ হবে।
কখন এবং কিভাবে সেটাই কথা। বাঙালীর স্বভাব তো এটাই, সামনে যেতে রাজি নই। তুমি এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে।
 

Browse