সত্যভাষন
Dec 28, 2009সকল কাজের কাজী
Dec 25, 2009ছোট কেক বড় টুকরো
Dec 22, 2009নিজেকে বাচান
Dec 17, 2009বিজ্ঞাপনের যুগ
Dec 15, 2009বিনে পয়সার ব্যবসা
Dec 13, 2009বিশ্ব নাকি বেচাকেনার যায়গা। রীতিমত হাটবাজার। এক হাটে কিনবেন আরেক হাটে বিক্রি করবেন। মাঝখানে যা পাবেন সেটা লাভ। অথবা ক্ষতি। সবাই নিশ্চয়ই লাভ করে না। কিংবা করলেও সমান করে না। আপনি কৃষকের কাছে ১০ টাকায় কিনে বিক্রি করবেন ২০ টাকায়। আপনার কাছে কিনে আরেকজন বিক্রি করবে ৪০ টাকায়। আপনার লাভ ১০, আরেকজনের লাভ ২০। আর কুষকের লাভ-
হিসেব করতে হবে। প্রথমে জমির খরচ, বীজের দাম, সার-পানির দাম, পরিশ্রম-
জটিল হিসেব। বোঝা যাচ্ছে তার লাভ বেশি না। এরচেয়ে বরং কম পরিশ্রমে, সহজে বিক্রি করা যায় এমন জিনিষের ব্যবসা করাই ভাল। যেমন ধরুন, কার্বন।
বীজ, সার, তেল, গ্যাস, বিদ্যুত কিছুই দরকার নেই। বরং যত কম ব্যবহার করবেন তত বেশি টাকা। একেবারে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন, শীতের দিনে লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমাবেন, তাতেই আয় সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে শুধু মুখটা বের করে জেনে নেবেন কত আয় হল।
বিষয়টা আর মশকরা নেই। সত্যিসত্যি আল-গোর সাহেব এই সুযোগ এনে দিয়েছেন। কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয় এমন কিছু করবেন না, তবেই টাকা পাবেন। বিষয়টি এখনও ব্যক্তি পর্যায়ে যায়নি। তাহলেও ধারনা করে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিজ্ঞান বলে প্রতিমুহুর্তে নিশ্বাস ত্যাগের সময় আপনি কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়াচ্ছেন। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এটা বন্ধ করুন। যত বেশিজন এই পন্থা অবলম্বন করবেন আয় তত বেশি। এভাবে ১৫ কোটি মানুষের দেশে যথেষ্ঠ পরিমান কার্বন নির্গমন বন্ধ করা সম্ভব।
গোর সাহেব বুদ্ধিমান তাতে কোন সন্দেহ নেই। নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি তাতে কি, ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন ক্লিনটনের। তার সময়ে কিয়োটো না কি নিয়ে যেন ভোট হয়েছিল। কিয়োটো সই করলে কারখানার ক্ষতি হবে, মানুষ বেকার হবে, মানুষের দুঃখকষ্ট বাড়বে একারনে তাদের সিনেট কিয়োটোর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। ৯৫-০ ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট গোর সাহেবের ভোট কোন পক্ষে ছিল জানা যায়নি।
কিন্তু গোর সাহেব বুদ্ধিমান। তার নিজের প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট কার্বন বের হয়। সেগুলি বিক্রি করা প্রয়োজন। আর সেজন্য ক্রেতা প্রয়োজন। নাহলে নিজের কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়। তারমানে সেই বেকারত্ব। জনগনের নেতা হিসেবে কি সেটা করা যায়।
কাজেই, তোমরা যে যেখানে আছো কার্বন নির্গমন বন্ধ কর আর আমার কাছে টাকা নাও। হে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, তোমরা তোমাদের জনগনকে বোঝাও। বৃথা কলকারখানা চালিয়ে লাভ নেই। এতে পরিবেশের ক্ষতি। এই বিশ্ব রক্ষা করতে হবে। এ দায়িত্ব তোমাদের। নিজেকে ভিক্ষুক মনে কোর না। হাত পাতায় লজ্জার কিছু নেই। এটা তোমাদের দাবী। কাজ না করার পুরস্কার। তোমাদের অধিকার। তোমরা হাত বাড়াও।
জেনে রাখ, বিশ্ব এখন রাজা-প্রেসিডেন্ট চালায় না। ওবামা চলে ওয়াল ষ্ট্রিটের নির্দেশে। তাকে উঠতে বললে উঠতে হয়, বসতে বললে বসতে হয়। এখন দেশ বলে কিছু নেই। যা আছে তা হল রাজত্ব। মনসান্টো-মাইক্রোসফট-আইবিএম-ওয়ালমার্ট-সেল এইসব। বৃথাই নিজের দেশ, স্বাধিনতা এসব কথা আওড়াচ্ছো। এসব বাতিল হয়ে গেছে অনেক আগে। এখন সরকারের নাম বদল হয়, ভেতরের সবকিছু ঠিক থাকে। আমাদের বারাক ওবামা সবচেয়ে বড় উদাহরন। বুশের নীতির পরিবর্তন করতে হবে, তবে করবে হবে যারা সেই নীতি তৈরী করেছিল তারাই। ওদের সরানো যাবে না। ওরাই খুটি।
কাজেই ভাইসব। কার্বনের জোরে তোমাদের কোন কাজ করতে হবে না। বিনে পয়সার ব্যবসা। জোরে হাততালি।
লালবাগ ব্যাটারী
Dec 9, 2009বুশ-ব্লেয়ারের কল্যানে বাগদাদের কথা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌছে গেছে। শুধু বর্তমান কেন, অতীতে সেখানে কি ছিল সেকথাও। ৮ হাজার বছর আগে সভ্যতার শুরু হয়েছে সেখানেই। ব্যাবিলনের শুন্যোদ্যান নামের বাগানে নাকি পানি দেয়া হত এক ধরনের যন্ত্র দিয়ে যাকে আমরা চিনি আর্কিমিডিসের স্ক্রু নামে। অথচ আর্কিমিডিসের জন্ম তারো হাজার বছর পর। যে চাকার জোরে সারা পৃথিবী চলছে সেটাও নাকি তারা তৈরী করেছে। কিন্তু এসব পুরনো কথা। নতুন কথা হচ্ছে মাটি খুড়ে সেখানে পাওয়া একটা মাটির পাত্র এবং একটা তামার পাত। গবেষকরা গবেষনা করে বলছেন ওই পাতটা আসলে ইলেকট্রড। এত সুন্দরভাবে তামা-দস্তা দিয়ে অন্যকিছু হতেই পারে না। পাত্রটার মধ্যে ভিনিগার রেখে পাতটা ডুবিয়ে বিদ্যুত তৈরী করা হত। কাজটি আরো কয়েক হাজার বছর পর ভোল্টা নতুনভাবে আবিস্কার করতে পারেন, কিন্তু বিষয়টি তাদের জানা ছিল। তার নামও দেয়া হল, বাগদাদ ব্যাটারী।
আমাদের দেশে এমন কিছু আবিস্কারের সম্ভাবনা নেই। কাজেই আবিস্কর্তা হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সত্যি বলতে কি, আগের ইতিহাস খোজার জন্য মাটি খুড়তে গেলে কেচো খুড়তে সাপ পাওয়ার বিষয় ঘটার সম্ভাবনা। আর কার যায়গা খুড়বেন ?
তারচেয়ে বরং মাটি না খুড়ে বাগদাদ ব্যাটারীর মত কিছুর সন্ধান করা যেতে পারে। আর ঢাকা শহরে প্রাচীন বলতে টিকে আছে একটামাত্র যায়গাই। শায়েস্তা খার লালবাগ কেল্লা। এরও নামের সাথে যখন বাগ আছে তখন কিছু না কিছু পাওয়া যাবেই। সেই আশায় গমন।
সত্যিই মুগ্ধ হওয়ার মত। মানুষজনের হুড়োহুড়ি নেই, বাড়ি-গাড়ী ঘাড়ের ওপর উপচে পরছে না। চারিদিকে মনোরম মনোহর পরিবেশ। সবুজ ঘাস, গাছপালা, পরিস্কার রাস্তা, তারমাঝে এখানে ওখানে কেল্লার ভবন। ভবন মানে পুরো যায়গার মাঝখানে তাজমহলের মত স্মৃতিসৌধ, একদিকে সোনালী রঙের মসজিদ, আরেকদিকে একটি দালান। এর নাম হামাম খানা নাকি হাম্মামখানা কি যেন। এখানে শায়েস্তা খা বসবাস করতেন নয়ত সুবাদারি করতেন। তার কথা ভেবে একটু কষ্টই হল। এত ছোট্ট বাড়িতে তিনি থাকতেন কিভাবে ? শুনেছি রিক্সা-স্কুটার কিনে সেগুলি ভাড়াদেয়ার ব্যবসা করেও অনেকে ছ‘তলার মালিক। কেউ বারো তলারও। সেতুলনায় তিনি নিতান্তই নগন্য ব্যক্তি ছিলেন। দেয়ালের বাইরে থেকে যে উচু উচু বাড়িগুলি উঁকি মারছে সেগুলি বোধহয় ব্যঙ্গ করছে তাকে।
কি বলবেন তিনি তাদের ?
তার সময় ছ‘তলা-বারোতলা বাড়ি তৈরীর প্রযুক্তি ছিল না। এটাই একমাত্র যুক্তি হতে পারে।
দেখলাম অন্য অনেকের সাথে কয়েকজন বিদেশীও ঘুরে বেরাচ্ছেন। আমিও ঘুরে বেরাতে শুরু করলাম। এদিক ওদিক হাঁটলাম, ঘাস-গাছপালা দেখলাম, মরচেধরা টিনের নোটিশ দেখলাম, নিয়মকানুন পড়লাম, দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে সেটা কতটা পুরু বোঝার চেষ্টা করলাম, কি দিয়ে তৈরী বোঝার কসরত করলাম। খুব সুবিধে হল না তাতে। কাউকে জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন। ঘুরতে ঘুরতে একজন ব্যক্তি দেখে কর্তাব্যক্তি মনে হওয়ায় তার কাছেই ধর্না দিতে চেষ্টা করলাম।
বললাম, ‘স্লামালেকুম, আপনি এই কেল্লার দায়িত্বে আছেন মনে হচ্ছে।’
তিনি দাঁত বের করলেন।
বললাম, ‘খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। দেখে একেবারে নতুন মনে হয়।’
তিনি বললেন, ‘হে হে হে।’
আমি বললাম, ‘আপনাদের কর্মতৎপরতার প্রশংসা না করে পারা যায় না। ওই বিদেশীনি মনেহয় প্যারিস কিংবা হনুলুলু থেকে এসেছেন দেখতে।’
তিনি বললেন, ‘হে হে হে।’
আমি বললাম, ‘যারা এত কষ্ট করে এসব দেখাশোনা করছেন তাদের সবার নাম টাঙিয়ে রাখা উচিত।’
তিনি বললেন, ‘হে হে হে।’
আমি বললাম, ‘কেউ কেউ অবশ্য পুরনো দিনের কথাও জানতে চায়। সেগুলো একটা কাগজে ছাপিয়ে রাখলে হয়। যাদের দরকার তারা টাকা দিয়ে কিনে নেবে।’
তিনি বললেন, ‘হে হে হে।’
আমি বললাম, ‘আছে নাকি তেমন কিছু ?’
তিনি বললেন, ‘হে হে হে।’
এরই মাঝে আরেকজন এসে সঙ্গী হল। হে হে হে ভদ্রলোক আরেকবার হে হে হে বলে চলে গেলেন। নবাগতকেই আগের প্রশ্ন করলাম, ‘এই যায়গার ইতিহাস, এই জিনিষগুলোর বর্ননা লেখা কাগজপত্র কিছু আছে নাকি আপনাদের কাছে ? বিক্রির মত ?’
তিনি বললেন, ‘সে যারা গবেষনা করেন তাদের জন্য।’
বললাম, ‘সেই গবেষনার ফলগুলো ? সেগুলো দিয়েও তো কাজ চলতে পারে ?’
তিনি বললেন, ‘আপনি কোথাকার কে ? গবেষনা মানে বোঝেন ? এটা করতে মাথা লাগে। যাকে-তাকে দিয়ে হয় না।’
বললাম, ‘আমি গবেষনা করতে যাচ্ছি না। সেটা যাদের করার তারাই করুন না কেন। গবেষনা করে তারা কিছু একটা সিদ্ধান্ত তো নিয়েছেন। আমি সেটার কথা বলছি।’
তিনি বললেন, ‘আপনি আচ্ছা ত্যাদোর লোক দেখছি। আপনি কি ভাবেন গবেষনা কবিরাজী ওষুধের লিফলেট যে মোড়ে দাঁড়িয়ে হাতেহাতে বিলি করবে। নাকি জনসভার বিজ্ঞাপন যে রাস্তায় রাস্তায় সেঁটে রাখবে। এক গবেষকের লেখা আরেক গবেষকই বোঝে।’
লালবাগ ব্যাটারী খোজার চেষ্টা বাদ দিয়ে আমাকে কেটে পরতে হল।
কাজেই প্রমানিত হল
Dec 7, 2009মাঝরাতে শেয়ালের ডাক শুনে যদি ঢাকা শহরে কারো ঘুম ভাঙে তাহলে কতটা অবাক হবেন ?
মোটেই অবাক হবেন না। অবাক হওয়ার কোন সুযোগ আসলে নেই। প্রথমত ঢাকা শহরে কেউ মাঝরাতে ঘুমায় না কাজেই ঘুম ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না। তারচেয়েও যা বড়, ডাক শুনলেও সকলেই জানবেন সেটা শেয়াল না। ঢাকা শহরে চারপেয়ে শেয়াল নেই। গুগল-ইয়াহু দিয়ে খূজেও লাভ হবে না। সত্যকথা হচ্ছে ঢাকা শহরে শেয়াল নেই। কাজেই প্রমানিত হল শেয়াল এখনো শহরমুখি হয়নি।
শহরমুখি হওয়া আমার বিবেচ্য বিষয় না। এনিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ গবেষনা করছে। গ্রামের মানুষ কেন শহরে যাচ্ছে, দেশের মানুষ কেন বিদেশ যাচ্ছে এই গবেষনায় কোটি কোটি ডলার ব্যয় হচ্ছে। সারা পৃথিবীর মানুষই ক্রমাগত স্থানান্তর হচ্ছে। এখান থেকে ওখানে, ওখান থেকে সেখানে। খুজে বেড়াচ্ছে শান্তি কোন পাড়ে।
আমার বিবেচ্য বিষয় সেতুলনায় একেবারে ক্ষুদ্র। প্রমানিত হওয়া। স্কুলে পড়িয়েছে প্রমান করতে হবে ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি দুই সমকোনের সমান। কোনমতে কমবেশি হওয়া চলবে না। কিংবা বৃত্তের একটামাত্র কেন্দ্র থাকে, কোনভাবেই একাধিক থাকা চলবে না। অনেকটা তেমনই প্রমানের ব্যবহার।
অবশ্য এটা প্রমান করায় আমার কৃতিত্ব বিন্দুমাত্র নেই। সকলেই অহরহ প্রমান দেখে অভ্যস্থ। সরকার প্রতিদিনই বলেন, এতে প্রমানিত হল বিরোধী দল দেশের ভাল চায় না। বিরোধীদল প্রতিদিনই বলে এতে প্রমানিত হল সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। এগুলো আমাদের কান সওয়া হয়ে গেছে।
বিবিসি জরিপ করে বের করেছে শতকরা ৮০ জন মানুষ দেশের বাইরে যাবার সুযোগ পেলেও দেশেই থাকতে চায়। কাজেই প্রমানিত হল বাঙালী দেশপ্রেমিক। তারা দেশের বাইরে গিয়ে নিজের পসার গুনতে চায় না। দেশে থেকে দেশের ভাল করতে চায়।
এই প্রমানের আবার বিপরীত দিকও আছে। শতকরা ৮০ জন মানে শতকরা ২০ জন বাদ দিয়ে। বাকি শতকরা ২০ জন মানে ১৫ কোটি মানুষ থেকে ৩ কোটি। জরিপ বলছে এই ৩ কোটি মানুষ দেশে থাকতে চায় না।
সত্যিই কি সুখের খবর। কত সহজে জনসংখ্যা ৩ কোটি কমানো যায়। সরকারকে কোন টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না। এমনকি খরচের বদলে তাদের কাছ থেকে আয় করাও সম্ভব। তারা নিজের খরচে অন্য দেশে যাবে। তারপরও সরকার কিংবা অন্য কেউ এদের পাশে এসে দাড়াচ্ছে না। কাজেই প্রমানিত হল-
বিবিসি চলে বৃটেন সরকারের টাকায়। তারা বলে জনগনের ট্যাক্সের টাকা। তারা বাংলাদেশে জরিপ করতেই পারে। এধরনের জরিপে যদি প্রকাশ পায় শতকরা ২০ জন বৃটিশ বৃটেনে থাকতে চায় না তাহলে কি হতে পারে। শতকরা ২০ প্রয়োজন নেই, শতকরা ২ জন।
গেল-গেল রব পড়বে আন্দাজ করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। কুকুরের খাবারের জন্য কয়েক পেন্স সরকারী তহবিল থেকে খরচ করলেও যেখানে মন্ত্রীত্ব যায়। তারপরও বিবিসি সেখানে এধরনের জরিপ করে না। কাজেই প্রমানিত হল-
তাতে আমার কি
Dec 4, 2009২০৫০ সালে, যদি এই বিশ্ব টিকে থাকে, পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯০০ কোটি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার সঠিক তথ্য নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন কাজেই সর্বজনস্বিকৃত বিশ্বের বিষয়টি আলোচনায় রাখাই ভাল। এর পেছনে যারা রয়েছেন তাদের তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করা কঠিন।
তাহলে, বিশ্বের জনসংখ্যা হচ্ছে ৯০০ কোটি। বাসস্থান, শিল্পকারখানা ইত্যাদি ইত্যাদির জন্য আবাদী যায়গা কমতেই থাকবে প্রতিবছর। এমনকি প্রতিদিন। যার অর্থ মাঠের ফসল কমে আসবে। বর্তমান ব্যবস্থায় খাদ্যসংকটে রয়েছে একশকোটির বেশি মানুষ। সেটা বেড়ে কয়েকশ কোটি হবে। বর্তমানে সারা বিশ্বে যা খাবার তৈরী হয় তখন নাকি দ্বিগুন খাবার তৈরী করতে হবে। এখনই প্রতি সেকেন্ডে নাকি ৬ জন মারা যায় খাবার স্বল্পতায়।
খবরের কাগজের একটা টাটকা খবর এখানে উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশে শতকরা ৪০ জন বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে। দারিদ্রসীমার নিচে বাস করার অর্থ তারা প্রয়োজনীয় খাবার পায় না। শতকরা ৪০ জন অর্থ ১৫ কোটি জনসংখ্যার হিসেবে ৬ কোটি। জনসংখ্যা বেড়ে আরো ৫ কোটি যোগ হলে সেটা হবে ১১ কোটি।
তাতে আমার কি ?
আসলেই তো। তাতে আমার কি ? টাকা থাকলে চাল পাওয়া যাবে, মাংশ পাওয়া যাবে। সেগুলি কোথায় তৈরী হবে সে চিন্তা যাদের তারা করবে। তারা তো ব্যবসা বন্ধ করছে না। আমার চেয়ে তার গরজ বেশি। ব্যবসা না থাকলে তারা খাবে কি ?
যার সামর্থ্য আছে সে দোকান থেকে কিনবে। যার নেই তার চিন্তা তার। আমাদের নেতারা-বিশেষজ্ঞরা তো সবসময়ই বলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্নতা অর্জন করা হবে। যে সামান্য ঘাটতি এখনো আছে সেটা পুরন করা হবে। ধনী দেশগুলি আমাদের ভাল চায় না, সবসময় আমাদের পিছনে লেগে থাকে, সেকারনে এতদিন সম্ভব হয়নি। ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে।
আমাদের ইনশাল্লাহ আছে, অনেকেরই নেই। অন্তত ইউরোপের লোকজনের নেই। সেজন্যই তাদের ভিন্নপথ খুজতে হয়। তারা নাকি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি লিজ নিচ্ছে আগে থেকেই। সেখানে ফসল ফলাচ্ছে, মাছ ধরছে। তারপর নিজের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু ইউরোপই বা কেন, কাতার নাকি কেনিয়ার বড় একটা অংশ লিজ নিচ্ছে। সেখানে চাষ করে নিয়ে যাবে নিজের দেশে। লোকজন পথে নেমেছে সেটা ঠেকাতে।
এই পথে নামাটাই একটা ভয়ের ব্যাপার। গতবছর চালের দাম বাড়ায় লোকজন পথে নেমেছিল। সরকার-পুলিশ-আইন কিছু মানেনি। রাস্তা জুড়ে ভাংচুর-আগুন। কোন কোন দেশে নাকি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ নামের উটকো লোকগুলি আবার সবসময় আগাম খারাপ খবর দেয়। তেলের দাম নাকি বাড়তেই থাকবে। এবার দুশো ডলার ছাড়িয়ে যাবে। চাষের খরচ বেড়ে যাবে। সেইসাথে আবাদ কম হওয়ায় খাবারের দামও নাকি বাড়বে। আবারও নাকি লোকজন পথে নামবে। এখন পর্যন্ত নাকি ঠেকা দিয়ে চালানো সম্ভব হয়েছে। যেখানে আছে সেখান থেকে যেখানে নেই সেখানে সাপ্লাই দেয়া হয়েছে। সবদেশেই যখন নেই অবস্থা হবে তখন নাকি এই সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাবে। শুরু হবে খাদেত্যর জন্য হাহাকার, গন্ডগোল, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন। ঠেকা দিয়েও সামলানো যাবে না।
তাতে আমার কি ?
নিজে বাচলে বাপের নাম। কিভাবে বাপের নাম টিকিয়ে রাখা যায় সেটা নিয়ে ভাবাই ভাল। নিজের জীবন বাচানো ফরজ। সময় থাকতে কিছু কামিয়ে নেই, এসব তত্ত্বকথা শুনে কাজ নেই।
নিজেকে জানো
Dec 2, 2009কথাটা আমরা সবাই জানি। এমনকি অন্যভাষাও উগড়ে দিতে পারি। সাথে দার্শনিক ব্যাখ্যাও দিতে পারি। তবে কথা হচ্ছে, মোল্লা সবই জানেন, তারপরও যা করেন তা করা উচিত না। আমরা সবাই সেই মোল্লা। জানি নিজেকে জানতে হবে। সব রহস্য সেখানে। তারপরও পরের গন্ধ শুকে বেড়াই। কতরকমভাবে পরকে চেনা যায় সে চেষ্টায় নিজের সময়-শ্রম-অর্থ অকাতরে ব্যয় করি। যতটুকু দেখি তাতেই খুশিতে আন্দোলিত হয়ে বলি, এইতো- পেয়েছি।
আপনি বা আমি কেউই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা মানতে যাচ্ছি না। কর্মফল ছাড়া কর্ম করতে আমরা রাজী নই। একেবারে পাই পয়সা হিসেব করে তবেই কর্ম করতে চাই। তারপরও, কথা থেকে যায়। কতটুকু করতে পারি!
দেশে বেকারের সংখ্যা কত কেউ জানে না। ধরে নিতে পারি বেকার বলে কিছু এদেশে নেই। থাকলে সে নিয়ে কথাবার্তা শোনা যেত। সরকার যখন বলেন পাচ বছরে পাচ লক্ষ মানুষকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে তাতেই আমরা হাততালি দেই। পাচ লক্ষের মধ্যে আমার নামটা নিশ্চয়ই থাকবে। খালি সুযোগের অপেক্ষা। কত টাকা লাগবে আর কাকে ধরলে কাজ হবে তাকে পাওয়াটাই ব্যাপার। অন্যকিছু ভেবে লাভ কি।
সমাজ আমাদের শেখায়, প্রতিযোগি হতে হবে। অমুকের পাচ হাজার টাকার মোবাইল থাকলে আমার পনের হাজার টাকার থাকতে হবে। অমুকে আরমানি কিনলে আমাকে র্যাংগলার কিনতে হবে। অমুকে পিজাহাটে খেলে আমাকে কেফসিতে খেতে হবে।
আর শিক্ষাব্যবস্থা শেখায় কিভাবে সার্টিফিকেট পেতে হয়। কোচিং সেন্টারে যান, সাজেশন দেখে মুখস্ত করুন, পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দিন। ইউরোপীয়ান-আমেরিকান সার্টিফিকেট পাওয়া আরো সহজ। শুধু টাকা ঢাললেই চলে। একেবারে আন্তর্জাতিক মানের ডিগ্রী।
সমস্যাটা শুরু হয় তখনই। আন্তর্জাতিক মানের যোগ্যতা নিয়ে দেশি চাকরী করা যায় না। যারা করে তারা নিতান্ত মুর্খ, বিদেশী শিক্ষা পায়নি। সেকারনে এসব ছোট কাজ করে। আমি করলে কি মান থাকে ? জানেন আমেরিকায় একজন এই যোগ্যতায় কত ডলার পায় ?
চলতে থাকে এই প্রক্রিয়া। আগেই বলেছি এদেশে বেকার বলে কিছু নেই। পচিশ ত্রিশ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা-মা কোন প্রশ্ন না করেই বেতন-খাতাপত্র থেকে শুরু করে চা-সিগারেট, এমনকি প্রেম করার টাকা পর্যন্ত জুটিয়ে যায়। তারপর বিদেশী চাকরী দেশে না থাকায় চাকরীর অপেক্ষায় যায় আরো বছর দশেক। তারপর-
ঠ্যালায় পড়লে বাঘেও নাকি ঘাস খায়। ঠ্যালায় পরে তারাও দার্শনিক বনে যান। তখন একটাই বক্তব্য, সব কাজেরই দাম আছে। কোন কাজকে অবহেলা করতে নেই।
খিদে পেলে বাঘকে ঘাস খেতে হয় বৈকি। না খেয়ে তো জীবনধারন করা যায় না। জীবনের মায়া বড় মায়া। এটা ত্যাগ করতে নাকি সাহস লাগে। সেটা কোথায় ?
আগের কথায় ফিরি। বাঘকে যদি ঘাস খেতেই হয় তাহলে বাঘের জানা উচিত সে আর বাঘ নেই, ছাগল হয়ে গেছে। বাঘ নিজের শক্তিতে তার খাদ্য জুটিয়ে নেয়। আর ছাগলকে ঘাস খেতে হয়।
বাধ্য হয়ে ছাগল হওয়ার আগে জেনে নিন আপনি আসলে ছাগল না বাঘ।
পরের চোখে দেখা
Dec 1, 2009পরের চোখে দেখার সুবিধে অনেক। কষ্ট করে আয়নার সামনে দাড়াতে হয় না। যার অর্থ, লাইফ সাইজ আয়না কিনতে হবে না। আর আয়নার ওপরই বা ভরসা কি। বিজ্ঞাপনে দেখায় অমুক কোম্পানীর আয়না ব্যবহার না করলে ঠোটের লিপষ্টিক গিয়ে গালে লাগে। আয়নার ওপর নির্ভর করবেন কিভাবে?
কাজেই, নির্ভরতা পরের ওপর। কথায় আছে নিজের রুচি খাবেন, পরের রুচি পড়বেন। গরমকালে কোটটাই পড়ে থাকতে কিছুটা কষ্ট হতেই পারে। কিংবা শীতকালে শরীরের অর্ধেক বের করে রাখলেও। তবে যেহেতু পোষাক অন্যকে দেখানোর জন্য, অন্যের রুচি পুরন করার জন্য, সেহেতু এটুকু কষ্ট মেনে নেয়া কর্তব্য। সহজ কথায় পরের চোখে যা মানায় সেটাই পরিধান করুন।
পড়া বিষয়টি আবার জামাকাপড়, সার্টপ্যান্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। বইপড়া বলেও একটা বিষয় থেকে যায়। সেখানেও পরের রুচিই ভরসা। স্কুলে পাঠ্যবইতে ইরেজি প্রবন্ধ পড়িয়েছে। লেখবের বক্তব্য ছিল, কাউকে কোন বই পড়তে দিলে বইটা ভাল না মন্দ এধরনের কিছু বলবেন না। ভাল বললে কথাটা তার মনে গেথে যাবে। বইয়ের মান যাই হোক না কেন তার মনে হবে সেটা ভাল বই। ভালনা বললে তাকে বোকা মনে করা হবে। আর খারাপ বললে যত ভালই হোক তারকাছে খারাপ মনে হবে। তারমানে, কাউকে বইতে দিন বইয়ের মলাট ছিড়ে। যেন লেখকের নাম পাঠক না জানতে পারে।
বাপরে! একশ পাতার বইয়ের দাম দেড়শ টাকা। মলাট ছিড়লে সেটা শোকেসে থাকবে কিভাবে ? আর মানুষ জানবেই বা কিভাবে অমুক বিখ্যাত বই চোখের সামনে রাখা। জানেন এক সপ্তাহে বইটার কয়টা এডিশন ছাপতে হয়েছে ? দুনিয়াসুদ্ধ মানুষ কিনেছে আর আপনি এখনো কেনেননি। সমাজে মুখ দেখান কিভাবে ?
কাজেই, আপনার সমাজে মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করা উচিত। ড্রইংরুমে সাজিয়ে রাখা উচিত। গাড়ির ড্যাসবোর্ডে সাজিয়ে রাখা উচিত। যদি একেবারেই সামর্থে না কুলোয় তাহলে একজনের পরামর্শ তার অগোচরে জানিয়ে দিতে পারি। কারো কাছ থেকে বইটা ধার করে এনে নীলক্ষেত থেকে প্রচ্ছদের রঙিন ফটোকপি করবেন, আর কিনবেন একই সাইজের একটা পুরনো বই। ব্যস, কয়েক মিনিট সময় ব্যয় করলেই সাজিয়ে রাখার জন্য তৈরী।
এসব হচ্ছে পাঠকের কথা। লেখক যদি লেখে তবেই না পড়ার বিষয়টা ভাবা যায়। কাজেই লেখককে অবহেলা করা যায় না। পরের রুচি পড়া কথাটা যেমন সত্য তেমনি পরের রুচি লেখা কথাটাকেও অবহেলা করা যায় না। তাদের জন্যও কিছু পরামর্শ থাকা উচিত।
পাঠক যা পড়েন লেখককে তাই লিখতে হয়। উপন্যাসের যুগে কবিতা লিখে ফায়দা কোথায় ? নাটকের যুগে ডকুমেন্টারীর যা অবস্থা হয় তাই। তাছাড়া আজকাল কষ্ট করে কবিতার বই কিনতে হয় না। কবিতা শুনে প্রেমিকা খুশি হয় না। কবিতা উপহার দেয়ার নতুন পদ্ধতি বেরিয়েছে। কষ্ট করে পড়তেও হয়না। সার্টে-গেঞ্জিতে কবির ছবি আর কবিতা ছাপা আছে। গায়ে দিয়ে চলুন, যার যতবার খুশি পড়ে নিক। জীবনানন্দ হোক আর রবীন্দ্রনাথ হোক, এভাবে পুরো একটা কাবতা অনায়াসে পড়ানো যায়। পদ্ধতি একেবারে মন্দ না। নতুন কবি অনায়াসে এই পদ্ধতিতে জনপ্রিয়তা পেতে পারেন। কষ্ট করে বই না ছেপে কয়েকশ গেঞ্জি-পাঞ্জাবী ছাপলে বিক্রি এবং পরিচিতি দুইই সুনিশ্চিত। দেশে যখন সাহিত্যপত্রিকা বলে কিছু নেই। যেসব ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনায় মনোযোগ নেই তাদের জন্যও বিষয়ভিত্তিক পোষাক বানানো যেতে পারে।
বই পড়ার অন্য পদ্ধতি নিয়েও চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। দুনিয়াসুদ্ধ মানুষ নাকি এখন আর কষ্ট করে বই পড়ে না। মোবাইল ফোন, এমপিথ্রি প্লেয়ারে গল্প-কবিতা-উপন্যাস শোনে। সেক্সপিয়ার, টেনিসন থেকে ওবামা সকলের বই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। যতদুর মনে পড়ে এক বাংলা উপন্যাসের সিডিও দেখেছি। প্রথমের পর দ্বিতীয়টা হয়নি দেখে ধরে নেয়া যায় ওই পদ্ধতি কাজে আসেনি। তবে বিকল্প পদ্ধতিতে এটা প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইংরেজি কিংবা হিন্দী গানের মিউজিকের ওপর যেভাবে বাংলা কথা জুড়ে দেয়া হয় সেই পদ্ধতিতে। সমস্যা হতে পারে একটাই, কবির নাম প্রকাশ করা। দোকানে গিয়ে যেমন ক্রেতা বলে, শাহরুখ খানের এমপিথ্রি তেমনি কবিতা কিনতে গিয়ে বলতে পারে শাহরুখ খানের কবিতা।
যাই বলুক না কেন প্রচার করা দিয়ে কথা। অন্তত নিজের চোখের চেয়ে পরের চোখ যখন বেশি কাজে দেয় তখন সেটা ব্যবহার করতে আপত্তি কেন ?