কথা

Apr 26, 2010
এটা আসলে কথার কথাই কথা কখনো ভাঙা যায় না চেষ্টা করেই দেখুন না হাতুড়ি দিয়ে বড়জোর দাত ভাঙতে পারেন, কথা ভাঙবে না কথার আবার নির্দিষ্ট আকার-আকৃতিও নেই কাজেই অমুক কথা দেয়া হয়েছে বলে তাকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করাও যায় না আরেক সমস্যা হচ্ছে কথার বিবিধ ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যা অনায়াসে বলে দিতে পারেন আমি ওকথা বলতে পারি কিন্তু অমুক অর্থ বুঝাইনি যেমন ধরুন, কেউ যদি আপনাকে বলে, আপনি এখন আসুন,  আপনি কি ভাবেন তিনি আপনাকে নেমন্তন্ন করলেন ? মোটেই না তিনি বললেন আপনি মানে মানে কেটে পড়ুন কাজেই আমি কি কথা দিয়েছি তার ব্যাখ্যা আপনি বোঝেন নি
আরো কথা আছে আমি কথা দিয়েছি সেকথাই বা কে বলল কথা কি দেয়া যায় আমি দিলাম আর আপনি ঝুড়ি ভরে নিয়ে গেলেন কিম্বা পকেটে করে কোথায় রেখেছেন দেখান তো! দাম দিয়েছেন ?
কাজেই সব কথার শেষ কথা, কথা বলে আসলে কিছু নেই কথা সবাই বলে বণ্য প্রানী বলে, জাপানীরাও বলে, আমরাও বলি আমি জাপানীর ভাষা বুঝি না, কাকের ভাষাও বুঝি না কাজেই কাকের ভাষা আর জাপানী ভাষা সমান আবার একজন জাপানী বাংলাও বোঝে না শেয়ালের ভাষাও বোঝে না কাজেই ওদুটো সমান
তারপরও লোকে বলে, দিন যায় কথা থাকে কোথাও না কোথাও থাকে নইলে কবে কোন মহাপুরুষ কি বলেছিলেন সেকথা হুড়হুড় করে বলা যায় কিভাবে ?
আমাদের নেতারা, শাসকরা, প্রশাসকরা কথা বলেন যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই বলেন আপনি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাদের ঠেসে ধরতেই পারেন, কিন্তু তাতে যে লাভ নেই আগেই বলেছি
প্রয়োজনে সারা দেশের বিদ্যুত এনে ঢাকা শহরে দেয়া হবে তা-তো বটেই এমনি মোট বিদ্যুতের ৪০ ভাগ ঢাকায় (মানুষ যদিও ১০ ভাগ, কিন্তু রাজাগজা সবাই যে রাজধানীতে), এখন সেটা বাড়িয়ে ৮০ ভাগ করা হবে ক্ষমতাবানরা ঢাকাতেই থাকেন তারা যদি পথে নামেন তাহলে বিপদ অভিজ্ঞতা আছে মানুষের, পথে নেমে সরকার সরানো যায় আবার যদি সেই পথ ধরে!
কাজেই, গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুত বন্ধ করে হলেও ঢাকায় বিদ্যুত দেয়া হবে কথা দিলাম
আপনারা সেচের জন্য ভাবছেন ? মোটেই ভাববেন না কলকারখানা বন্ধ করে আপনাদের সেচের ব্যবস্থা করা হবে নিশ্চিন্তে থাকুন সার কারখানা বন্ধ করে গ্যাস দেয়া হবে বিদ্যুত কেন্দ্রে আপনারা পানি পাবেন ফসল ফলাবেন তাতেই না দেশ চলে বাম্পার ফলন আমাদের চাই
বলছেন সার কারখানা বন্ধ রাখলে বাম্পার হবে কিভাবে ?
হবে হবে কথা দিচ্ছি সার যতটা দরকার ততটাই পাবেন আগের সরকার সার নিয়ে বহু কেচ্ছা কাহিনী করেছে জরুরী সরকারও সেই পথ ধরেছিল আমরা তারা নই যত চান তত পাবেন
আবার কি বলছেন ? সারের দাম ? বিনামুল্যে দেয়ার কথা বলেছিলাম ?
মোটেই না অমন কথা বলতেই পারি না তাহলে সার কারখানাগুলো চলবে কিসে ? আর, কিছু ঘাটতি তো থাকেই কিছু বাইরে থেকে আনতে হয় ওরাও কষ্ট করে, বিনিয়োগ করে, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ওদের কথাও তো ভাবতে হয় সার কারখানা বন্ধ রাখলে ওদের ওপরও কিছুটা চাপ তো বাড়বেই
কথার বৈশিষ্ট হল সব কথা অনেক বিবর্তনের মধ্যদিয়ে ঘুরেফিরে শেষ কথায় গিয়ে থামে। ধারাভাষ্য দিলে সেটা হতে পারে এমনই,
ঘড়ির টাইম এক ঘন্টা আগাইয়া দিলে লোড সেডিং ২০ ভাগ কমব। আপনেরা একঘন্টা আগে উঠবেন একঘন্টা আগে ঘুমাইবেন। না-না, আমরা জনগনের কষ্ট সহ্য করতে পারি না, লোড সেডিং দুইঘন্টা। আপনেরা ব্যাটারী চার্জ কইরা ব্যবহার করেন। না-না, এক ঘন্টাই সই। কয়দিন কষ্ট করেন। রাস্তায় হাউকাউ কইরেন না। আচ্ছা আচ্ছা আমরা ভাড়ায় বিদ্যুতকেন্দ্র বসাইতাছি। তিনমাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান। না-না, আমরা ভারত থিকা বিদ্যুত আনতাছি। আর কোন সমস্যা নাই। খামো ওই সব বিদ্যুতকেন্দ্রের দরকারডা কি ? গ্যাস খোজো, ত্যাল কেনো, মানুষের সাথে ঝগড়াঝাটি কর। এই ভাল। বিদ্যুত আইতাছে। পায়ের ওপর পা তুইল্যা অপেক্ষা করেন-

সিটি অব জয়

Apr 22, 2010
আনন্দনগর, কলকাতা সম্পর্কে এ নামেই বিশ্বখ্যাত বই লিখেছিলেন লাপিয়ের সাহেব। শুধু বইতেই না বইয়ের বাইরে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন একমাত্র সেখানেই জীবন দেখেছেন তিনি।
তা দেখারই কথা। খুব বেশিদিন আগের কথা না সেটা। পথের দুথারে জমে থাকত আবর্জনার স্তুপ, ঘরে ঘরে গোয়াল ঘর, পথে জানজট। কারেন্ট কখন আছে কখন নেই তা ভববানই বলতে পারেন। বাড়িতে বাড়িতে জেনারেটন নয় ইনভার্টার। বাসে বাদুর ঝোলা মানুষ।
সেই বাদুরঝোলা অবস্থায়ই আনন্দ। একজন রেগে বলছেন, দাত খুলে নেব। আরেকজনের উত্তর, দাতের ডাক্তার নাকি ?
আনন্দ আর কাকে বলে!
কিছু মানুষ ঢাকায় পা দিয়ে বলত, বাপরে! ইউরোপে এসে পড়লাম নাকি ? কি বড় বড় দালান, দামী দামী গাড়ি, ঘরে ঘরে জাপানী জিনিষ। আমরা বাপু ওসব জিনিষ চোখেও দেখিনা। বড়জোর চোরাই পথে কিছু ভিসিপি আসে।
দিন বদলায়। মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেচে থাকলে বদলায়। কারনে অকারনে বদলায়। বলে গেছেন মুনীর চৌধুরী। কাজেই দিন বদলেছে। এখন কলকাতায় নাকি পধের ধারে ময়লা নেই। জ্যোতিবাবুর জ্যোতিতে বদলে গেছে। দুমিনিটের সোজা পথ আধ ঘন্টায় ঘুরে আসতে হয়। কোনমতেই উল্টোদিকে যাওয়া চলবে না। সব আনন্দ কেড়ে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে এখন আর ঢাকাকে কেউ ইউরোপের শহর মনে করে না। নট নড়নচড়ন ট্রাফিক। পানি নেই, বিদ্যুত নেই, গ্যাস নেই। বাসযাত্রীকে বাদুরের সাথে তুলনা করলে নিরীহ প্রাণীটিকে অসন্মান করা হয়। তারা অন্তত ডাল ধরেই ঝোলে, একজন আরেকজনকে ধরে ঝোলে না। রাস্তার দুপাশ পুরোটাই গাড়ি-রিক্সার গ্যারেজ। পুরো শহরটাই বাজার। দামাদামি করার অফুরন্ত সুযোগ। পর্যটন কর্পোরেশনের প্রচারপত্র খুলে দেখুন, এখানে দামাদামী করার সুযোগ পাবেন। আপনারা দলে দলে আসুন। অবশ্য একে দামাদামী বলেন না অনেকেই। বলেন মুলামুলি। শব্দটার উপত্তি সম্ভবত মলামলি থেকে। এটাও একধরনের কান মলামলিই। হাত দিয়ে কান না ধরে শব্দ দিয়ে কান মোচড়ানো।
আর আনন্দ! সে জিনিষটা ভরপুর। ওইতো, এক ভদ্রমহিলার সাথে রিক্সাচালকের তুমুল ঝগড়া। কেউ কারে নাহি ছাড়ে। তাদের ঘিরে উফুল্ল মানুষের ভীড়। হাতাহাতি লাগে না ক্যান। তাইলে তো মজাটা জমে।
আরেকটু দুরে হাতাহাতি চলছে। হাতাহাতি না বলে বরং গুতাগুতি কিংবা ঠেলাঠেলি বলাই ভাল। দুজন মাঝবয়সী ঠেলাঠেলি করে শক্তি পরীক্ষা করছেন। কে কাকে ঠেলে ফেলতে পারে। সেখানেও উসুক মানুষের ভিড়। একসময় একজন জয়ী হল। অপরজন উল্টে পড়ে ধাক্কা খেল রিক্সার সাথে। মাথা থেকে রক্ত বেরচ্ছে। ধরাধরি করে সেই রিক্সায় তুলেই নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালের পথে। অপরজন রেসলিংয়ে বিজয়ীর মত ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন সববেত জনতার দিকে, কেমুন খেলডা দেখাইলাম।
রাস্তায় মানুষ চলেছে পিলপিল করে। হাসতে হাসতে, গাইতে গাইতে। খুশিমনে এ ওকে ধাক্কা দিচ্ছে, তাকে কাতুকুতু দিচ্ছে, আরেকজনের বাপের শ্রাদ্ধ করছে, কানের সাথে মোবাইল ধরে হাসতে হাসতে বলতে বলতে চলেছে। রীতিমত স্বপ্নের দেশ।
লাপিয়ের সাহেব আনন্দের শহর নিয়ে লিখেছিলেন। মনে চাইলে স্বর্গের শহর নিয়েও লিখতে পারেন।

বিষ্ফোরন

Apr 18, 2010
একসময় বামপন্থীদের ভাল অবস্থা ছিল। মানে, আমি বামপন্থী একথা বলে বেশ আসর জমানো যেত। রীতিমত কদর পাওয়া যেত। কেউ কেউ আবার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেই বামপন্থী মতবাদ প্রচারের কাজেও লেগেছিলেন। একেবারে সহজ সরল ভাষায় তাদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বই লেখা হোত। ছাপা হোত। বিক্রিবাট্টাও হয়ত ভালই ছিল। উদাহরন দিয়ে দেখানো হোত কেমন করে, কতদিনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
যেমন ধরুন পদার্থবিদ্যার উদাহরন। আজকাল অনেকেই যে গুনগত পরিবর্তনের কথা জোরেসোরে বলেন তার উদাহরন।
একটি পাত্রে পানি রাখিয়া মুখ বন্ধ করিয়া উত্তপ্ত করুন। তাপ প্রয়োগের সাথেসাথে পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পাইবে। ইহা পরিমানগত পরিবর্তন। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রীতে পৌছাইলে পানি বাষ্পে পরিনত হইবে। ইহা গুনগত পরিবর্তন। যদি বাষ্প বাহির হওয়ার পথ না থাকে তাহা হইলে পাত্রটি বিষ্ফোরিত হইবে। বিষ্ফোরন ঠেকাইতে হইলে বাষ্প বাহির হওয়ার পথ করিয়া দেওয়া প্রয়োজন, অথবা উত্তাপ কমানো প্রয়োজন।
বাস্তবের সাথে মিল করে দেখানো হত এই সুত্র। শাসক যদি এমন আচরন করেন যারফলে মানুষ অসন্তুষ্ট হয় তাহলে তাদের সেই অসন্তুষ্টি তাপমাত্রার মতই বাড়তে থাকে। এইই পরিমানগত পরিবর্তন। অসন্তুষ্টি বিশেষ পর্যায়ে পৌছালে সেখানেও বিষ্ফোরন ঘটে। বিষ্ফোরন এড়ানোর জন্য পাত্রে ফুটো করার উপযোগি ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করতে হয়। অথবা সন্তুষ্টি বাড়ানোর কাজ করতে হয়।
আজকাল কিছু মানুষ অসন্তুষ্ট হয়ে পথে নামছে। মানববন্ধন করছে, মিছিল করছে, শ্লোগান দিচ্ছে। কে জানে, হয়ত এটা পরিমানগত পরিবর্তন। পরিমান হয়ত বাড়তির দিকে। সরকার বলছেন ধৈর্য্য ধারন করুন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি নিজের হাতে সুইচ বন্ধ করেন, আপনারাও সুইচ বন্ধ রাখুন। ধৈর্য্যহারা হয়ে পথে নামবেন না।
বাঙালীর ধৈর্য্য সবসময় প্রশংসনীয়। সাত চড়েও রা কাটে না। একগালে চড় দিলে আরেক গাল এগিয়ে দেয়। ৯ বছর আন্দোলন করে, বহু জীবন দিয়ে এরশাদ সরকারকে সরানো হয়েছে। সেদিন কারো ওপর রাগ দেখানো হয়নি। এককথায় তাদের মাফ করে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু ওইযে গুনগত পরিবর্তন। সেটা ভয়ের কারন বৈকি। সেটা যে এখনো বাকি।
ট্যাপে পানি নেই, বিদ্যুতের অভাবে বাতি জ্বলে না, ফ্যান ঘোরে না, গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বলে না, এগুলো বাঙালীর ধৈর্য্যচ্যুতির কারনে সহায়তা করতে পারে কিন্তু মুল কারন অন্যখানে। তাদের সামনে একজন রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক হচ্ছে, কোটি টাকার গাড়ি হাকাচ্ছে, খুন করে নিজেই খুনের মামলা তুলে নিচ্ছে, এসব ঘটছে তাদের চোখের সামনেই। কোন রাখঢাক নেই। পত্রিকায় খবর দিয়েছে প্রতি ৮ সেকেন্ডে একটা এই হারে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এগুলি দৈর্য্যচ্যুতির তাপমাত্রা বাড়াতেই পারে। একসময় তা বিষ্ফোরন ঘটাতেও পারে।
আর একবার ক্ষমা করার ফল যখন জানা তখন আরেকবার বিষ্ফোরনের সময় ফল অন্যরকম হতেও পারে। গুনগত পরিবর্তনের কথা যখন বলছে সকলে।

পথ কোন দিকে

Apr 16, 2010
সংস্কৃতি কিংবা দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ পোষন করার কোন কারন নেই অন্তত বিশেষ বিশেষ দিনে যখন যেমন খুশি সাজো পোষাক পড়ে মুখে রং মেখে লাখো মানুষ পথে নামে তখন প্রশ্ন করছেই বা কে এদেশে জন্মগ্রহন করে আমরা ধন্য, আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতির তুলনা মানবজগতে নেই একটু আধটু ধাক্কাধাক্কি, গালাগালি, হাতাহাতি এসব তো হতেই পারে এতে মন খারাপ করার কি আছে ? আমরা এত ছোট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই না ওই সংস্কৃতি আর স্বাধীনতা, ওসব বড় বড় বিষয় আমাদের চিন্তায়, আচারে, আচরনে, ব্যবহারে, ভাষায়, পোষাকে ...
একটুখানি কিন্তু থেকেই যায় একেবারে টাটকা অভিজ্ঞতা দিয়েই বলতে হচ্ছে,
সাইবার ক্যাফে নামক যায়গায় চুরি সবসময়ই ঘটে যেখানে দেয়াল যত উচু সেখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ তত বেশি, ঘন্টাপ্রতি টাকার পরিমান তত বেশি, চুরি হওয়ার সম্ভাবনা তারচেয়েও বেশি কম্পিউটার থেকে র‌্যাম, হার্ডডিস্ক খুলে নেওয়ার বিষয়টা অনেকটাই নিয়মিত সেতুলনায় পুরো মনিটর হাওয়া করে দেয়াটা নতুনত্বের দাবী করতে পারে আজকাল ডিজিটাল যুগের ছোট মনিটর আর প্রত্যেকের কাধে ঝুলানো ব্যাগ সে সুযোগ করে দিয়েছে সেটাই ঘটল ক্যাফের লোকে চোখে পড়ল মনিটর হাওয়া
সাথেসাথে বাইরে ছুট তাকে ধরাও গেল সামনের রাস্তায় বেশিদুর যেতে পারেনি সাথেসাথে লোক জমে গেল বেশ একটা তামাসা পাওয়া গেছে তামাসা দেখতে হাজির হল হল পুলিশও
তবে পুলিশ বোধহয় শুধু রসিকই না সেই সাথে বাস্তবধর্মীও বটে সেইসাথে কর্তব্যপরায়ন সাথেসাথে হাতকড়া লাগিয়ে ফেলল বিপত্তিটা বাধল সেখানেই
ক্যাফে মালিকের বক্তব্য, ওর বাড়িতে খবর পাঠাব ওর অভিভাবক আসলে মাফ চাইবে, ছেড়ে দেব আমরা অভিযোগ করিনি হাতকড়া লাগালেন কেন ?
পুলিশের বক্তব্য, এটা আমাদের কর্তব্য ওকে থানায় নেব আরো পাচটা কম্পিউটার চুরি করছে সেইডা জানেন ? খবর রাখেন কিছু ?
কাজেই টেনে-হিচড়ে রাজপথ পর্যন্ত এরই মধ্যে থানার বড়সাহেব পর্যন্ত হাজির
বাঙালীর বাঙালীত্ব সম্ভবত এখনও পুরোপুরি যায়নি আসেপাশের লোক রীতিমত হাউকাউ শুরু করল কোথায়, কত টাকায় কন্ট্রাক্ট হবে সে বিষয়েও ভবিষ্যতবানী শোনা গেল শেষমেশ হতাস হয়েই পুলিশকে খালিহাতে বিদায় নিতে হল
আসলে ঘটনাটা সামান্যই নেতা যখন শতকোটি-হাজার কোটি চুরি করে, সেটা নিয়ে প্রকাশ্যে বাহাদুরী দেখায় তখন এসব ছোটখাটো বিষয় কি অপরাধ হতে পারে ?
মোটেই না সবাই বলছে অর্থনৈতিক উন্নতি প্রয়োজন যেভাবে পারো অর্থ উপার্জন করো আলোচনা আলো যদি লোডসেডিংএ নিভে যায় তাহলে বাকি থাকে চোনা। অর্থনৈতিক থেকে অর্থ বাদ দিলে বাকী যা থাকে তাকে কি চলবে ? তাই দিয়ে কি দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে ?
ওসব চুরিতে কিছু যায় আসে না আমাদের স্বাধীনতা আছে, সংস্কৃতি আছে, গর্ব আছে সামান্য চুরিতে আর কি ক্ষতি হবে
সমাজ নিয়ে যারা ভাবেন, রাজনীতি নিয়ে ভাবেন, দেশ নিয়ে ভাবেন তাদের কেউ কেউ বলেন বর্তমানের নেতারা খারাপ হয়ত পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ত তাই
এই নেতাদের পরের সারিতে যারা অপেক্ষা করছে সেখানে কি ভাল কিছু দেখছেন ? তার পরের সারিতে ?? তার পরের সারিতে ???
বর্তমান নেতারা একসময় সুনাম কুড়িয়েছিলেন, পরে সুযোগ বুঝে চোর হয়েছেন তাদের উত্তরাধিকারী জন্ম নিয়েছে চোরের ঘরে তাদের ভাল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু লক্ষন কি বলে ?
যারা তত্ত্বকথা বলতে পছন্দ করেন তারা বলেছেন গনতন্ত্র হচ্ছে সাধারন মানুষের তন্ত্র নেতা জনগনের হাতে গনতন্ত্র তুলে দেন না, জনগনকেই সেটা তৈরী করে দিতে হয় সেই জনগন আশায় বসে থাকে কে গনতন্ত্র এনে দেবে, যদি হিসেব করে কোন নেতার হাত গলে কতটুকু পাওয়া যাবে তাহলে প্রশ্ন করতেই হয়, পথ কোন দিকে ?

প্রতিশ্রুতি

Apr 12, 2010
প্রতিশ্রুতির সাথে ভুলে যাওয়ার খুব গভীর সম্পর্ক। এক তৈরীই হয়েছে অন্যের জন্য। এইতো, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ১০টাকা কেজি চালের কথা বলেছিলেন কিনা ভুলে গেছেন। বলেছিলাম না-কি ! ও। হয়ত আগের কোন নির্বাচনের সময় বলেছিলাম। কিন্তু এইযুগে ১০টাকা কেজি চাল হলে কৃষকের কি দশা হবে ভাবুন তো। আমরা কি কৃষককে মারতে পারি!
কাজেই প্রতিশ্রুতি ভুলে যাওয়ার উপকারিতা অনেক। কৃষক বাচানো যায়।
কিংবা ধরুন, মন্ত্রী বললেন বঙ্গোপসাগর থেকে পানি এনে হলেও ঢাকাবাসিকে দেয়া হবে। এদেশের নাগরিককে কোন কষ্ট করতে দেয়া হবে না। ঢাকাবাসি যখন প্রতিদিন পানির জন্য রাস্তায় নামছে তখন মনে করিয়ে দিতে পারেন সেই প্রতিশ্রুতির কথা। কিন্তু এরই মধ্যে যে নতুন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এবছরই যমুনার পানি বুড়িগঙ্গায় আনা হবে। সেতো আপনাদেরই জন্য। ধৈর্য্য ধরুন।
কিংবা প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বাড়িতে পানির জন্য দুই লাইন বসানো হবে। একটাতে খাবার পানি, আরেকটাতে অন্যান্য কাজের পানি। আজকাল পানিতে কেচো পাওয়া যায়। ওটা ভাল দেখায় না। কেচো হল গিয়ে প্রকৃতির লাঙ্গল। এভাবে ওদের খেয়ে ফেলা সহ্য করা যায় না।
তাছাড়া কোন কোন দেশে নাকি খাবার পানিতে ফ্লুরাইড মেশানো থাকে। দাত বাচাতে আগে থেকেই সাবধান। আমরাও কিছু করে দেখাতে চাই। যাকিছু প্রোটিন-ভিটামিন প্রয়োজন সব ওই পানিতেই মিশিয়ে দেব। আপনারা টেরই পাবেন না সরকার গোপনে গনগনের কি সেবা করছে। ওসব বাইরে বাইরে কি হচ্ছে ওসবে কান দেবেন না। পানি নিয়ে হাউকাউ করবেন না। পানিতে মারব, ওটা কথার কথা। পানির অভাবে কেউ মারা যায় না। বড়জোর ডায়রিয়ায় মারা যেতে পারে। সেটাও মানুষের গাফিলতি। সময়মত হাসপাতালে যায়না। আবার ডাক্তারদেরও গাফিলতি আছে। ডায়রিয়া-কলেরার রোগি গেলে তাদের বাচায় না। অন্যের গাফিলতির দায় সরকারের ওপরে চাপাতে পারেন না।
আর বিদ্যুত নেই বলছেন ?
এ আর নতুন কি ? ওই জোট সরকার যা করে গেছে না। কত আর বলব। সব ষড়যন্ত্র। এমন ব্যবস্থা করে গেছে যেন পরের সরকার ভোগান্তির মুখে পরে। আপনারা দৈর্য্য ধরুন, আর ৫ বছরের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।
আরো ৫ বছর কেন ? ক্ষমতার মেয়াদ তো সাড়ে তিন বছর ??
আরে ওইটাই তো প্রতিশ্রুতি। জানেন ডাক্তার কি বলে ? নিজের কানে শোনা। অসুখ যদি সেরেই যায় তাহলে টাকা দেবে কেন ? যতদিন অসুখ ততদিনই টাকা। যতদিন মামলা ততদিন টাকা। সমস্যা যদি মিটেই যায় তাহলে কি ডাক্তার, উকিল, পুলিশের পকেটে টাকা যায় ? সমস্যা মিটলে সামনের ইলেকশনে ভোট দেবেন ?
প্রতিশ্রুতি শুনে রাখুন। যে প্রতিশ্রুত দেয় সে ভুলতে পারে, যাকে দেয় সে কখনো ভোলে না। আরেকবার ক্ষমতায় এলেই সব সমস্যার সমাধান ......

টেন্ডার

Apr 10, 2010
ইংরেজিতে টেন্ডার শব্দের অর্থ-, মোলায়েম জাতিয় কিছু একটা হবে। নিশ্চিত করতে পারছি না কারন ইংলিশে বরাবরই কাচা এবং দুর্মুল্যের বাজারে চাল না কিনে ডিকশনারী কেনার অর্থ হয়না। বাংলা টেন্ডার নিয়েই কথা বলি।
এটা হচ্ছে, নিয়ম মোতাবেক কাজ করার পদ্ধতি। বিশেষ করে সরকারী কাজের ক্ষেত্রে বাধ্যতামুলক (দুএকটা ব্যতিক্রম ঘটলেও ঘটে থাকতে পারে)। আর পদ্ধতিটি হচ্ছে;
একাধিক বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন আকারে কাজ বা দ্রব্যের বিবরন প্রকাশ করে দরপত্র আহ্বান। যারা কাজ করতে বা জিনিষ কিনে দিতে আগ্রহী তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমান করে প্রতিযোগিতামুলক মুল্য জমা দেবেন। যিনি যোগ্যতার মাপকাঠি পুরন করেন এবং যাহার মুল্য কম তিনি কাজ পাইবেন।
মোটকথা এই হচ্ছে টেন্ডার পদ্ধতি। অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতার যতরকম কাগজপত্র আছে জমা দেবেন এবং সম্ভাব্য কম মুল্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেবেন।
মাঝের পর্যায় বাদ দিয়ে শেষ পর্যায়টি সংক্ষেপে উল্লেখ করি। কাজ অথবা সরবরাহকৃত দ্রব্য যাচাই করার পর বিল পরিশোধ করা হইবে।
এই নিয়মেই সবকিছু হচ্ছে। কিছু এদিক-ওদিক, সেতো সবখানেই হয়। গরমের দিন বলেই কি সবদিন সমান তাপমাত্রা থাকতে হবে ? কমা-বাড়া চলবে না ?
কাজেই কিছু এদিক ওদিক হয়। দক্ষতা-অভিজ্ঞতার বিচার যেহেতু করেন কমিটির সদস্যগন, কাজেই তাদের সন্তুষ্ট রাখলে কিছু পয়েন্ট বেশি হতেই পারে। সেই টেকনিক্যাল পয়েন্টের গুনে সবচেয়ে কমদামকে পাশ কাটানোও যায়।
আবার শর্তে আছে কমপক্ষে অতজনকে অংশগ্রহন করিতে হইবে। চারজন হলে একাই চারনামে কাগজ জমা দেয়া যায়। অন্য কারো দাম কমানোর সম্ভাবনা থাকলে তাকে দুরে রাখা যায়। একসময় এই পদ্ধতি ছিল ঘুষ দেয়া। আমি এত টাকা দিচ্ছি ভাই, তুমি সরে দাড়াও। তারপরের পদ্ধতি টেন্ডার কিনতে না দেয়া। তারপরের পদ্ধতি টেন্ডার জমা দিতে না দেয়া। পরিচিত একজনকে পিস্তলের মুখে আটকে রাখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত।
তারপরও কিছু ফাকফোকর থেকেই যায়। কাজ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কাজেই, একেবারে কার্যকর পদ্ধতি,
কাজটা আমার। তুই কে-রে ব্যাটা!
সেই ব্যাটা যদি আবার নিজের দলের হয় তাহলেই মুসকিল। সেও সমানে সমানে ঘুরে দাড়ায়। তখন একটু-আধটু ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, একটু-আধটু মারামারি, দুএকটা খুন হতেই পারে। এসব সাধারন ঘটনা। অন্তত খুন পর্যায়ে না গেলে এনিয়ে মাথা ঘামানো কিছু নেই। সরকার উন্নয়ন করে টাকা খরচ করতে পারছে না। বাজেটে ছিল ৩০ হাজার কোটি, খরচ হয়না দেখে সেখান থেকে কমানো হয়েছে, তারপরও খবর হবে কিনা সন্দেহ। এটা হলে কি মান থাকে ?
কাজেই, টাকা খরচ কর। যারা ইলেকশনে জিতাইছে তাগো কাজ দাও। ওইসব অভিজ্ঞতা-টভিজ্ঞতা বাদ। দুই কোটি ট্যাকার কামে অভিজ্ঞতা লাগব না। জোট সরকারের আমলে কাম করেনাই বইলা কি মহাজোটের আমলে কাম করব না। ইলেকশনের আরো বহুত দেরী। অহন যা করার কইরা ফালাও। ইলেকশনের আগ দিয়া দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করা চলব না। ওই মিয়ারা, কাম দেন। ট্যাকা খরচ করেন। বছরের মাত্র দুইমাস বাকি।
একসময় পুরনো পাগলদের দুচারজনের দেখা পাওয়া যেত। এখন টেন্ডার আর লীগ সমার্থক শব্দ। মাঠ ফাকা। গুতোগুতি হলে নিজেদের মধ্যেই হয়।
বাছারা, তোমরা যা করার কর, খুনাখুনির পর্যায়ে যাইও না। নিজের ভাইরে খুন কইর না। লোক কুকথা কয়। নৌকায় বইসা জোটের সদস্য কয় এইসবের দায় কান্ধে নিব না। এইদেশের পাবলিক বড় খারাপ রে ভাই। কখন কোন হুজুগে মাতে কে জানে।
ইংলিশে টেন্ডার বইলা একটা শব্দ আছে। তার মান রাখ। চুপেচাপে কাম কর-

বিকল্প

Apr 9, 2010
বিকল্প খুব ভাল জিনিষ। মানে, খুব আগ্রহের জিনিষ। সবাই যেপথে চলেছে সেপথ ছেড়ে নতুন পথে চলা। অন্যকে পথ দেখানো। এরচেয়ে বড় কৃতিত্ব অন্যকিছুতে হয় না। একজন সমাজসংস্কারক বিকল্প পথের সন্ধান দেখিয়ে রীতিমত নবীর পর্যায়ে পৌছেছিলেন। এখনও বিকল্প বলতেই তার নামটি চলে আসে। ইউনিভার্সিটি পাশ বেকার ? ভাবনা নেই বস। গাড়ি চালাও। এতবছর ধরে বাপ-মায়ের টাকা পয়সার যে শ্রাদ্ধ করেছ, কয়েক বছর ধরে ইউনিভার্সিটিতে যে কেরাতমী দেখিয়েছ এবার সেটা রাজপথে দেখাও। আমরা দেশে কোন অশিক্ষিত ড্রাইভার রাখব না। সব হবে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা।
তার রেশ এখনও কাটেনি। এখনও যানবাহনে পরিস্কার করেই লেখা থাকে, সিএনজি চালিত, ভাড়ায় চালিত, ছাত্র চালিত-
তবে শিক্ষিত বলে কথা। তারা নিজেরাই বিকল্প খুজে নিতে জানে। পাবলিক গাড়ি চালানোর মত নিকৃষ্ট কাজ না করেও তাদের চেয়ে বেশি কামানো যায়। দরকার শুধু একটু সাহস আর একটু বুদ্ধি।
বিকল্পে ব্যবহার শিক্ষাক্ষেত্রেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি। ঢাকা শহর ছেয়ে গেছে বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপনে, বিকল্প পথে ব্যারিষ্টার। অতশত কষ্ট করার দরকার নেই। টাকা নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন আমরা নামের আগে ব্যা লাগিয়ে দেব।
আর স্কুল কলেজ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির তো কথাই নেই। মেধা প্রয়োজন নেই, আমরা বিকল্প পথে ব্যবস্থা করে দেব। বাবা-মা! ওরা আবার ছেলেমেয়ের জন্য কষ্ট করবে কেন ? টাকা সাপ্লাই দেয়াই যথেষ্ট। বাকি ভাবনা আমাদের। সন্তানকে আমাদের হাতে তুলে দিন আর মাসমাস টাকা গুনুন।
আরো বিকল্প চান ? বিকল্প পথে স্পোকেন শিখুন, বিকল্প পথে উপার্জন করুন, বিকল্প পথে চলাফেরা করুন, বিকল্প পথে চিকিসা করুন, বিকল্প খাবার খান, বিকল্প পোষাক পরুন, বিকল্প চিন্তা করুন, বিকল্প হাটুন, বিকল্প ঘুমান....
নামকরা লেখকের বইয়ের অনেক দাম। শুধু নামের গুনেই দাম বেড়ে যায়, সেই সাথে কমে কমিশন। নিলে নেন নানিলে নাই, এইসুরে কথা বলে বিক্রেতা। ঝকঝকে গ্লসি কাগজে ছাপা, কাঠের মত শক্ত কাভার, তাতে সোনালী রঙে নাম লেখা। ওই নাম লিখতে নাকি ৫ টাকা দাম বেড়ে যায়। ঘরে সাজিয়ে রাখলেও লোকে সন্মান করে কথা বলে। এমন বই কি হাতছাড়া করা যায় ?
কাজেই কয়েকবার চাওয়ার পরও যখন ধারনেয়া ব্যক্তি মার্ক টোয়েনের পথ ধরেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেল তখন আর চুপ করে থাকা গেল না। বইটা ফেরত নিতেই হবে।
তিনিও হাসিমুখেই ফেরত দিলেন। তবে, রীতিমত আতকে উঠার মত ঘটনা। ওপরে-নিচে যে শক্ত কাগজ ছিল সেটা উধাও।
কাভার গেল কোথায় ? এটা ছেড়া তো রীতিমত কষ্টসাধ্য ব্যাপার !
হে-হে-হে, লোডসেডিংএ বিকল্প পাখা বানাইছি। সুন্দর হাওয়া খাওয়া যায়।

পুরনো গল্প

Apr 8, 2010
আসলে সব গল্পই পুরনো গল্প গল্প কখনো নতুন হয়না জীবন যেমন নতুন হয়না, ঠিক তেমনিই একবার এদিক থেকে দেখা, আরেকবার অন্যদিক থেকে কাজেই পুরনো গল্প বললে ক্ষতি নেই
এক ব্যক্তির খুব বদনাম ছিল এলাকায় কখনো কোন ভাল কাজ করেনি বাপের টাকাপয়সা যাছিল তা উল্লেখ করার মত একটা কাজেই ব্যবহার হত, মদ খাওয়া সন্ধ্যে হলে তো কথাই নেই, দিনের বেলাতেও মদে চুর হয়ে থাকত
সে যখন মারা গেল তখন নিতান্ত ভদ্রতার খাতিরে হলেও এলাকার লোকজন এল পরিবারকে শান্তনা দিতে একজন তার ছেলেকে বলল, দেখ বাবা তোমার বাবা তো ভালকাজ কিছু করেনি ইচ্ছে করলেও প্রশংসা করার মত খুজে পাওয়া ভার তুমি এমন কিছু কর যেন তার সম্পর্কে দুচারজন ভাল কথা বলে
সে কথা রাখল কদিন যেতেই দেখল সে বাপের পথ ধরেছে দিনে-রাতে সমানে মদ খায় সেই অবস্থায় রাস্তায় এসে যাকে দেখে তাকে উচ্চস্বরে গালাগালি করে
সেই ব্যক্তি থাকতে না পেরে একদিন ধমক দিয়ে বললেন, এটা কি আচরন ? তোমার বাপ তো তোমার চেয়ে ভাল ছিল অন্তত গালাগালি করত না
সে সাথেসাথেই উত্তর দিল, আপনিই তো বলেছিলেন এমন কিছু করতে যেন তাকে সবাই ভাল বলে
বাংলাদেশের মানুষের এই ভাল দেখার সুযোগ হয়েছে অনেকবার উদাহরন হিসেবে অন্তত নিকট অতীতকালের কথা উল্লেখ করা যায়, তাতে বিপদের ঝুকি কম
৯ বছর আন্দোলন করে এরশাদ সাহেবকে সরানো হয়েছে জনগনের বিজয় হয়েছে গনতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে লাখো মানুষ পথে নেমে দ্বিতীয়বারের মত স্বাধিনতা উযাপন করেছে
তারপর প্রধান দুই দলের পালাক্রমে দেশ শাসন তারপর জোট-মহাজোটের পালা সংসদীয় গনতন্ত্রের বহর দেখে নাভিশ্বাস উঠেছে জনগনের বাপরে! আগের সরকার তো এরচেয়ে ভাল ছিল
কোন আগের সরকার ?
মহাজোটের চেয়ে চারদলীয় জোট লোড সেডিং অন্তত দুঘন্টা ছিল না লোডসেডিং থাকলেও ফ্যান-বাত্তি-টিভি-ফ্রিজ নষ্ট হত না পানিতে মরার অবস্থা ছিল না। চালের দাম ৩৫ টাকা ছিল না ২০ টাকার নিচেই ছিল
চারদলীয় জোট সরকারের চেয়ে ভাল ছিল তার আগের সরকার চালের দাম আরো কম ছিল তার আগের সরকারে আরো কম আর এরশাদ সাব, গালাগালি করলে হইব কি ব্যাটায় জানত ক্যামনে দ্যাশ চালাইতে হয় অনেক কিছু করছে যেকথা কইছে সেইডা কামে করছে ওই মাইয়া মানুষের বিষয়ডা বাদ দিলে ----- লোকটা খারাপ আছিল না নাইলে কি আর যারা ৯ বছর আন্দোলন করল তারা তারে নিয়া টানাটানি করে!
বলার আর কি থাকতে পারে বাংলা প্রবাদ, যায় দিন ভাল, আসে দিন মন্দ মন্দের জন্যই অপেক্ষা করি .....

অভিযান

Apr 7, 2010
একসময় অভিযান নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না। শতশত বই লেখা হয়েছে অভিযান নিয়ে। আফ্রিকার দুর্গম অঞ্চলে অভিযান থেকে শুরু করে উত্তর মেরুর তুষার অভিযান পর্যন্ত প্রতিটি বর্ননা মানুষ খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ত। অন্তত কিশোর বয়সীরা তো বটেই। তারপর, জয় করলে যেমন আগ্রহ হারিয়ে যায় তেমনভাবেই আগ্রহ মিইয়ে গেছে। এখন আর জয় করার মত নতুন কিছু নেই। চাদ পর্যন্ত দেখা হয়ে গেছে। আর বাকি কি ?
কাজেই ওসব অভিযান-টভিযান বাদ। একেবারে বইয়ের পাতা থেকেও। এমনকি টিভি-সিনেমার পর্দা থেকেও। তারচেয়ে বরং জীবন নিয়ে ভাবা যাক। জীবন মানেই প্রেম। প্রেমই জীবন। গল্প-উপন্যাস-গান-নাটক-সিনেমা এসব তো তাই নিয়েই হবে। সাক্ষাকারে যখন টিভি নাট্যকর্মী বলেন নাটকে আমরা প্রেমঘটিত সমস্যার সমাধান দেই তখন সত্যকথাই বলেন। সব ধরনের শিল্পকর্ম-চিন্তাভাবনা-বক্তব্য-বিবৃতি এসব তো নিখুত প্রেম শেখানোর জন্যই।
কিন্তু কম্বলকে ছাড়লেও কম্বল ছাড়েনা। অভিযান নামে একটা শব্দ যখন তৈরী হয়েই গেছে তখন তাকে কি ভুলে যাওয়া যায় ?
এখানে সেখানে ব্যবহার করতেই হয়। প্রয়োজনে সেই ক্লাসিক অভিযানের বাইরেই অন্য কাজের নামকরন করা যায়। নামকরন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ন। ওটাই সম্বল। একজন শিশু ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর একটা নামের মালিক হয়। একদিন প্রাকৃতিক নিয়মে সে বিদায় হয় কিন্তু নাম থেকে যায়। ওটা পৃথিবীর বস্তু, পৃথিবীতেই থেকে যায়। ভাল কারনেই হোক আর অন্য কারনেই হোক।
কাজেই নামকরনের বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখতে হয়। যেমন একসময় জেহাদ নামটা ব্যবহার করা হত নানা কাজে। অশিক্ষার বিরুদ্ধে জেহাদ, দারিদ্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ইত্যাদি। কিন্তু তাতে অনেকেরই আপত্তি। বিশেষ করে ওই আমেরিকার। ওতে ধর্মের গন্ধ পাওয়া যায়। সন্ত্রাসের গন্ধ পাওয়া যায়। সাথেসাথে ক্রুসেড নামটা চলে আসে। তখন পাল্টাপাল্টি। আর আমেরিকার সাথে পাল্টাপাল্টিতে যাবে কে ? সেটা পাল্টাপাল্টি না হয়ে শুধু পাল্টা হয়ে থেমে থাকে। সেদিক থেকে অভিযান অনেক ভাল নাম। কেউ বাধা দিতে আসছে না।
কাজেই মশক নিধন অভিযান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান, বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড ভাঙ্গা অভিযান, ভেজাল বিরোধী অভিযান, ফুটপাত মুক্ত অভিযান, নদী দুখলমুক্ত অভিযান।
তালিকা অনেক লম্বা। প্রতিদিন আরো লম্বা হচ্ছে। আর হবে না-ই বা কেন ? পক্ষ যে অনেক। কেউ দখল করছে, কেউ সহায়তা করছে, কেউ সমর্থন যোগাচ্ছে, কেউ মধ্যস্থতা করছে, কেউ বিরোধীতা করছে, কেউ মামলা করছে, কেউ মামলার গুনে দুপয়সা কামাচ্ছে, কেউ পরিবেশ রক্ষা করছে, কেউ মানবতা রক্ষা করছে, কেউ নির্দেশ দিচ্ছে, কেউ নির্দেশ মানছে। সকলেরই আয়। গড়লেও টাকা-ভাঙলেও টাকা। কাজেই ভাঙাগড়ার খেলা চলবে এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে। এইতো, শুরু হল বিলবোর্ড ভাঙা। একদিন এই এলাকায় আরেকদিন আরেক এলাকায়। সাথেসাথে কিছু মানুষের আয় বেড়ে গেল। ভাঙার জন্য লোক প্রয়োজন, কিছু মানুষের কর্মসংস্থান। ভাঙার পর সেগুলি কি কাঝে লাগানো হবে, কে পাবে, এতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান। কে এসব তদারকি করবে তাতেও কর্মসংস্থান। কাজ কতটুকু ঠিক হল বলাও কর্মসংস্থান, ঠিক হল না বলাও কর্মসংস্থান।
ভাঙার পর আবার গড়ার পালা। নতুন ডিজাইন, নতুন প্লান, নতুন বোর্ড-ইট-কঠি-লোহা-সিমেন্ট, নতুন কর্মী। আরো বহু মানুষের কর্মসংস্থান। আবারো নতুন করে শুরু।
আর ফুটপাত মুক্ত করার অভিযান!
সে আরো সহজ। ফুটপাত অনেক লম্বা। পুলিশের গাড়ি এসে আগের দিন জানিয়ে যায়, কাইলকা আমুনে। কয়দিন চুপচাপ থাক।
তা না জানিয়ে উপায় কি ? দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক খরচ তো ওরাই দেয়। বেতনের টাকায় সিগারেটের পয়সাও হয় না। কৃতজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে। ধর্মেও কইছে তোমরা---
কাজেই অভিযান চলতেই থাকে। আজ এখানে, কাল ওখানে, পরশু সেখানে। চলছেই-চলবেই
প্রাচীনকালের মানুষ আসলেই বোকা ছিল। খামোখাই বনে-জঙ্গলে-মরুতে-মেরুতে প্রান দিতে গেছে। ঘটে বুদ্ধি থাকলে দিব্বি এই সমাজেই অভিযান চালিয়ে জীবন কাটাতে পারত।

সুইসাইড না হোমিসাইড

Apr 4, 2010
বখাটে তরুনের উপাত সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে কিশোরী, এধরনের খবর ছোট করেই ছাপা হয়। খবরের কাগজে যায়গার অনেক দাম। বিজ্ঞাপন ছাপলে ইঞ্চি হিসেবে টাকা পাওয়া যায়। কারো পক্ষে-বিপক্ষে লিখলে রীতিমত অক্ষর গুনে। খবর লিখে যায়গা ভর্তি করে লাভ আছে! তাছাড়া এতে নতুনত্বই বা কি ? কদিন আগেই তো একই খবর ছাপা হয়েছিল। তারো কদিন আগে আরো একটা। এমন তো ঘটেই। এনিয়ে হাউকাউ করার কি আছে ?
কদিন আগে এক পশ্চিমা ভদ্রলোক বলেছিলেন সরকারী দলের লোক ধর্ষন করেছে জানার পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এটা দুঃখজনক। তারা দুঃখ প্রকাশ করতেই পারেন। তাতে তো পয়সা লাগে না। ক্ষমতায় থাকলে মানুষ একটু আধটু অমন করেই। আর আজকাল এসব সেকেলে বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় কে ? সমাজ-সভ্যতা উন্নত হয়েছে। ফ্রি সোসাইটিতে ছেলেমেয়ে একসাথে চলবে এটাই তো স্বাভাবিক। টিভি দেখেন না ? ডিভিডি দেখেন না ? ইন্টারনেট দেখেন না ?
আসলে দোষটা ওই মেয়েরই। একটু মানিয়ে নিলে কি ক্ষতি ছিল। বন্ধুত্ব করলেই সব মিটে যেত। খবরের কাগজে যায়গা দখল করত না। আর কিছু লোক বসেই আছে সরকারের ভাবমুর্তি, দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে। দেশকে হেয় করতে একপায়ে খাড়া।
প্রশ্ন করবেন ? কাকে ? যারা দেশ চালাচ্ছে, সমাজ চালাচ্ছে তাদের ?
তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি লেগেই রয়েছে। সাফল্যের বর্ননায় কথার ফুলঝুড়ি ছুটে চলেছে। ওইসব ছোটখাট ব্যাপার ছাইড়া বড় বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দ্যান। জানেন দ্যাশ কত উন্নত হইছে। কয়দিন পর মধ্যম আয়ের দ্যাশে পরিনত হইব। সবাই কইতাছে।
কি কন! হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ নিরবে চাকরী হারাইতাছে ? কারখানা মালিক-ব্যবসায়ী চক্ষে অন্ধকার দ্যাখতাছে ? গ্যাস-বিদ্যুত-পানির অভাবে মানুষের নাভিস্বাস উঠতাছে ?
ওইসব বাজে কথা। খারাপ ছাইড়া ভালর দিকে চান। ওইযে ডাষ্টবিনের পাশের ন্যাংটা পোলাডারে দ্যাখেন জাতিয় পতাকা হাতে পাইয়া কেমুন হাসতাছে। মাথায় লাল-সবুজ টুপি লাগাইছে। এইডারে কয় স্বর্গিয় সুখ। এইজন্যই তো স্বাধিনতা। এইজন্যই তো চল্লিশ বছর আগে দ্যাশ স্বাধিন করছি। স্বাধীনতার মুল্য বোঝেন। আর সেইসময় যারা রাজাকারী করছে তাগো বিচার করতাছি। এইসময় এইসব ফালতু কথা কইয়া ডিসটার্ব কইরেন না।
কিছুই বলার নেই।
যদি বিবেক বলে কোনকিছুর অস্তিত্ব থেকে থাকে তাহলে নিজেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, একটা সমাজ কতটা অসভ্য হলে একজন মেয়ে বখাটের অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে আত্মহননের পথে যেতে পারে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমাজ, প্রশাসন, রাষ্ট্র কেউ তাকে এই অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনা, সামান্যতম নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। যার সামনে একটাই পথ, জীবন দেয়া। মাথা নত না করা। সমাজ নিজেই যখন মেরুদন্ড হারিয়ে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে তখন তার পাশে দাড়াবে কে ?
রবীন্দ্রনাথের নায়িকা জীবন দিয়ে প্রমান করেছিল সে মরেনি। তাকে জীবন দিয়ে প্রমান করতে হল সমাজ কতটা মেরুদন্ডহীন। কতটা বিকৃত।
এটা আত্মহত্যা না, খুন। বিকৃত সমাজ তাকে হত্যা করেছে।

একেবারে পানির দামে

Apr 3, 2010
একসময় লোকে বলত পানির দাম। তারমানে এর দাম এতই কম যা প্রায় পানির মত বিনামুল্যে পাওয়া যায়। বঙ্গবাসি, বিশেষ করে ঢাকাবাসি খুব ভাল করেই জানেন পানির মুল্য কতটা। মাস মাস টাকা দেবেন, পানি পাবেন সে নিশ্চয়তা কেউ দেয়নি। যা পাবেন তাতে কেচোর মত জীবন্ত প্রোটিন থাকতে পারে। কোন আপত্তি করবেন না। আর যদি পছন্দ না হয়,
পত্রিকায় কফিনের ছবি দিয়ে কার্টুন ছাপা হয়েছে, মরিয়া বাচিলাম। পানি-বিদ্যুত-গ্যাস সঙ্কট হইতে-
আর যাই হোক অন্তত পানির সাথে তুলনা একেবারেই বেমানান। তাই বলে বিনামুল্যের কিছু নেই এটাও একেবারে বাড়িয়ে বলা। কথার বাড়াবাড়ি। কপিরাইট আইনে বলেছে আপনি যাই সৃষ্টি করুন না কেন তার কপিরাইট আপনার। অনুমতি ছাড়া ব্যবহারে জেল-জরিমানা হইতে পারে। কোন লেখা থেকে দুলাইন টুকলি করবেন, সাথেসাথে মামলা। বিনামুল্যে ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।
বিনামুল্যে একটা কাজ নিশ্চয়ই করতে পারেন। উপদেশ বিতরন। কারো লেখা থেকে উপদেশ নিয়ে যদি ইচ্ছেমত বিতরন করেন সেই অপরাধে লেখক-প্রকাশক তেড়ে আসবেন না। বরং খুশিই হবেন। বক্তব্যের সুচনাও সেকারনেই।
আমরা উপদেশ পছন্দ করি। বলতে এবং শুনতে। আজকাল ঈশপ-বিশপের যুগ নেই। এমনকি বিদ্যাসাগর যে মনে করেছিলেন শিক্ষার শুরুতে হিতোপদেশ শিখাতে হয় সে চলও নেই। ওসব সেকেলে ধ্যানধারনা দিয়ে ডিজিটাল রাষ্ট্র চলে না। ডিজিটাল রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন ডিজিটাল উপদেশ। এবং সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সে দায়িত্ব পালন করবেন বইকি!
তিনি বলেছেন আপনারা বিদ্যুত ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন। বিদ্যুত সাশ্রয় করুন। সরকার দুঘন্টা করে লোড সেডিংএর ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে, আপনারা বাকি দুঘন্টা নিশ্চিত করুন। ধৈর্য্য ধারন করুন। ধৈর্য্য মহত গুন। আপনারা মহত্বের পরিচয় দিন। দেশকে এগিয়ে নিন। চীনদেশে নাকি প্রতি ৩ দিনে একটা করে নতুন বিদ্যুতকেন্দ্র চালু করা হয়। আমরাও করছি। এইতো, সিলেটে বেসরকারীভাবে ভাড়া করা বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এটা শুরু। এরপর হবে শতশত, হাজার হাজার, লাখে লাখে। ঘরেঘরে বিদ্যুতকেন্দ্র-
বিদ্যুত-পানি-গ্যাস ছাড়াও মানুষের প্রয়োজন অনেক। তারমধ্যে খবরের কাগজ একটি। সকলেই যে বিদ্যুতের অভাবে হাতপাখা বানানোর জন্য মোটা দেখে কাগজ কেনেন এমন তো-না। বরং সেটা যা খেয়ে মোটা হয়েছে সেখানেও দরকারী তথ্য থাকে। বাড়িভাড়া, মাসিক কিস্তিতে বাড়ি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি, পাত্রি চাই, গ্রীষ্মকালীন অফার সবই ছাপা হয়। কাজেই এর মাধ্যমে বহু মানুষের কাছে পৌছানো যায় সহজেই। জনপ্রিয় সংবাদপত্রের সম্পাদকসাহেব বাকি দায়িত্বটুকু পালন করলেন সম্পাদকীয় লিখে।
সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করছে। জনগনের উচিত ধৈর্য্য ধারন করা। সরকার সময় চেয়েছে এরচেয়ে যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য হতেই পারে না। আর চারদলীয় সরকার দেশের বিদ্যুত-গ্যাস-পানি ধ্বংশ করে গেছে এরচেয়ে সত্য আর কি হতে পারে। আপনারা ধৈর্য্য ধারন করুন। অকারনে গোলযোগ করবেন না।
উপদেশের চেয়ে রায়ের সাথে মিল বেশি মনে হতে পারে। তথ্য-উপাত্ত-সাক্ষী-প্রমান বিশ্লেষন করে রায় ঘোষনা করা হইল,
কিন্তু সেটা ভুল। আসলে এটা উপদেশই। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পরামর্শও বলতে পারেন। কিংবা দেশের মংগলের জন্য আহ্বানও বলতে পারেন। সবাই সচেতন হোন। নিজেকে বদলান, সমাজ বদলান, দেশ বদলান।
খটকা একটুখানি। উপদেশ বিনামুল্যের এই যুক্তি বোধহয় পুরোপুরি টেকে না।

নিজের মান নিজে বাচান

Apr 2, 2010
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম খেতাব ছিল তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই ঝুড়িতে তলা লাগানো হয়েছে কিনা বোঝা যায় যখন অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা দেন। কোন দেশ কত সাহায্যের (!) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কথাটা মাটিতে পড়ামাত্র মুহুর্মুহু টেবিল চাপড়ানি। এরচেয়ে বড় আয় আর হয় না। এরচেয়ে সহজে আয় হয় না। কোন ঝক্কি নেই। কোন ঝামেলা নেই। কেবল হাত পেতে নেয়া।
অন্যভাবে অর্থ নেয়ার ঝামেলা সেতুলনায় অনেক বেশি। জনগন অসন্তোষ প্রকাশ করে। জনসমর্থন হাতছাড়া হয়। আবার সরাসরি দলের বিপক্ষেও যায়।
ওই তো, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের মুখে যে লোড সেডিং, সেই লোড সেডিং ব্যবস্থায় সিষ্টেম লস কমানো যায়না। কারন তো একটাই। যার ঘরে ঘরে এসি তারকাছে বিদ্যুত বিল নেয়া যায় না। যারা বিল মওকুফ করার দায়িত্ব পালন করেন তাদেরও কিছু বলা যায় না। সকলেই নিজের দলের। অন্তত সমর্থক। খুটি না থাকলে ঘর টেকে কিভাবে ?
প্রাক্তন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী ভ্যাট চালু করে কি সমালোচনার মুখেই না পড়েছিলেন। দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার ছাপা হল। সেখানে ভিক্ষুকের ছবি। এই ব্যবস্থায় তাকেও ট্যাক্স দিতে হয়। এখন অবশ্য সেদিন গত হয়েছে। বোঝা গেছে এই ব্যবস্থা আসলে টাকা ঘরে আসে। বরং যদি এর আওতা বাড়ানো যায় তাতেই মংগল।
তারপরও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখতে হয়। পিপড়েও নাকি নিজের ঘরে খাবার ষ্টক করে। আর মানুষ ব্যাংকে ষ্টক করবে না কেন ?
ষ্টক করতে লাগে টাকা। আর আয়ের সবচেয়ে বড় পথ হচ্ছে জনগন। ১৬ কোটি মানুষ ১ টাকা করে দিলেও ১৬ কোটি টাকা। বাপরে! ১০০ টাকা করে দিলে !! হাজার করে দিলে !!!
অর্থমন্ত্রী বলেছেন তিনি দেশের সকল নাগরিককে করের আওতায় আনতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অর্থের বড়ই প্রয়োজন। অর্থের অভাবে বিদ্যুত দেয়া যাচ্ছে না, গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না, পানি দেয়া যাচ্ছে না, বৃষ্টি হচ্ছে না, গরম কমছে না ...
কাজেই, কথাটা আগেই শুনে রাখুন। একটু একটু করে অভ্যস্থ হোন। আমরা হঠা করে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। জনগন দেশের চালিকা শক্তি। আপনারা ভোট দেন বলেই কেউ না কেউ ক্ষমতায় যায়, আপনার সমর্থন দেন বলেই ক্ষমতায় টিকে থাকে, আপনারা অর্থ যোগান দেন বলেই এক মন্ত্রী আধা ডজন গাড়ি ব্যবহার করে।
শোনেন নি, আমেরিকায় একবার দেশের মানুষ নিজে থেকে কর বাড়িয়েছিল। হল বিশ্বের ১ নম্বর দেশ। আমাদের দায়িত্ব তাদের অনুসরন করা। আপনারাও কর বাড়ান। দেশ সচল করুন।
কি বললেন ? ওরা সরকারী টাকাকে বলে জনগনের ট্যাক্সের টাকা ? টাকা জনগনের জন্য খরচ করে ? শিক্ষা, চিকিসা, কর্মসংস্থান, যাতায়াত সামাজিক সেবা এইসব ? আয় না থাকলে ভাতা দেয় ?
ওসব আমরাও করি। বরং আরো দক্ষতার সাথে করি। জানেন না সরকারী সেবার চেয়ে বেসরকারী সেবার মান ভাল। প্রতিযোগিতামুলক। সেজন্যই তো স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-হাসপাতাল-ক্লিনিক সব বেসরকারী খাতে দেয়া হয়েছে। চাইলে বেসরকারী পুলিশও পাবেন। ওদের কাছে যান, ওরা খুব ভাল সেবা দেয়।
আপনাদের হাতে সুযোগ রয়েছে সেই তলাবিহীন ঝুড়িতে তলা লাগানোর। দলেদলে এগিয়ে আসুন। ঝুড়িতে তলা লাগান। এভাবে বারবার অণ্যের কাছে হাত পাতলে ওরা বিরক্ত হয়, দেশের মান থাকে না। আপনাদেরও মান থাকে না।
নিজের মান নিজে বাচান। বেশি করে ট্যাক্স দিন।

রাজনীতির উপহার

Apr 1, 2010
পত্রিবার খবর, এই দুটি শব্দই মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার জন্য যথেষ্ট। বলে দেয়া প্রয়োজন নেই সেখানে কি থাকতে পারে। খুন, চাদাবাজি, দখলদারী আর সরকারী বক্তব্য, বিরোধীদলের বিবৃতি। দুভাগে ভাগ করলে একদিকে মানুষের দুর্ভোগ আরেকদিকে কৃতিত্বের বর্ননা। দুইই বাড়ছে সমানতালে।
কথা বলবে কে ? আর বললে শুনবে কে ? সৃষ্টিকর্তা কান দিয়েছেন দুটি, চোখ দিয়েছেন দুটি, আর মুখ দিয়েছেন একটি। হয়ত ইঙ্গিতে বলেছেন তোমরা বেশি দেখ, বেশি শোন, কম কথা বল। ফল হয়েছে উল্টো। চোখ-কান মুলত বন্ধই থাকে। অন্যভাবে বললে আমরা তাকাই, দেখিনা। বাংলায় শোনার বিষয়ে এমন অর্থবোধক শব্দ আমার জানা নেই। ইংরেজিতে আছে জানি। যার অর্থ দাড়ায় শব্দ কানে প্রবেশ করে, অর্থ বুঝি না।
যাক সেকথা। বরং মুখের ব্যবহার নিয়ে কথা বলা যায়। পক্ষে-বিপক্ষে, দুপক্ষে, কোনপক্ষ না নিয়ে কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। যা মুখে আসে বলে যান। সকালে এক বিকেলে আরেক, তাতেও কিছু যায় আসে না। সবই ছাপা হবে খবরের কাগজে। শুধু বিজ্ঞাপন ছাপলে পত্রিকা বলা যায় না। কাজেই খবর ছাপতে হয়। সেকারনেই, কে কি বলেছে সেটা সংগ্রহ করতে হয়। তারপর যাচাই-বাছাই, বহুরকম হিসেব-কিতেব, তারপর ছাপা। কোন কথা ছাপলে আবার কে বিরাগভাজন হয় তারতো ঠিক নেই। রাজনৈতিক মামলা হতে পারে, মানহানির মামলা হতে পারে, বিজ্ঞাপন বাদ পরতে পারে, এমনকি রাস্তাঘাটে গনপিটুনিও জুটতে পারে। হিসেব করে ছাপাই ভাল।
ফল, একই খবর দুকাগজে দুরকম। এক খবরে মনে হবে অমুক পক্ষকে ভেজাবেড়াল পেয়ে তমুক পক্ষ যাচ্ছেতাই করেছে। আরেক কাগজে পাবেন তমুকপক্ষের কুকীর্তি থামাতে অমুক পক্ষ সমাজ রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে। ঘটনা এক, দৃষ্টি দুই। হায়রে, দুই চোখের এটাই বিপদ।
যারা মধ্যপন্থি কিংবা সর্বপন্থি তারা দুখবরই রাখেন, দুটোই বিশ্বাস করেন, দুপক্ষেই সায় দেন। পুলিশ ধরে দায়িত্বপালন করেছে, ছেড়ে দিয়ে আরো বড় দায়িত্ব পালন করেছে। দুটোই ঠিক। মাঝখানে লাভ একটাই, পুলিশ নামের নির্জিব বস্তুকে ভয় পাবার কিছু নেই। নিতান্তই কিছু টাকাপয়সা কিংবা মানী দুচারজনের সাথে যোগাযোগ রাখাই যথেষ্ট। যাদের নাম শুনলে পুলিশের পা কাপে। আদালত নামের বিল্ডিংকেও ভয় পাবার কারন নেই। কেউ কেউ বলে ওখানকার দেয়ালের ইটগুলোও ঘুষের জন্য হাত পেতে থাকে।
কাজেই, ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ। সাহসী হও। ভাগ্য তোমার সাথে। জোর যার সবই তার। শুধু টাকাপয়সা, টেন্ডার, জমি, বাড়ি, খালবিল এসব নির্জিব বস্তু কেন, অমুক মেয়েকে আমার পছন্দ, তাকেও আমার চাই। বাধা দেবে কোন বাপের ব্যাটা। খুন কইরা ফালামু না।
যদি ভেবে থাকেন এবিষয়ে পুরুষ সমাজ কিংবা ছেলেরা এগিয়ে তাহলে ভুল করবেন। কুরুচিপুর্ন প্রেম সম্পর্কে শতর্ক করা ছাত্রীর হাতে শিক্ষক খুন, এমনটাও ঘটে। পত্রিকা বলছে।
একসময় এসব খবরের জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে কাগজ কিনত। আজকাল এসব খবরে কেউ অবাক হয় না। পত্রিকা কাটতি বাড়ে না। এমনকি ধারাবাহিকভাবে লিখলেও নিতান্তই মফস্বলের গেয়ো লোকেরাই কিছুটা আগ্রহ দেখায়। বরং এরচেয়ে তারা আগ্রহ দেখায় এমন কিছু লেখা ভাল। খবরের কাগজের সাথে ফাও হিসেবে রঙিন মিনি পত্রিকা। কোন সময়ে কোন ফ্যাসন, নিজেকে আকর্ষনীয় করে তুলে ধরার পদ্ধতি, নতুন প্রেমিক প্রেমিকার টিপস, মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট চ্যাটিং এর কলাকৌশল, দেশেই বিদেশী ক্যারিয়ান গঠন, ... 
হঠাত করে একদিনে বটগাছ গজায়নি। দিনেদিনে একটু একটু করেই গজিয়েছে। প্রতিদিনই তারা দেখে এসেছে, শুনে এসেছে, পড়ে এসেছে সব ধরনের সাফল্যের কথা। কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার কথা। অর্থপ্রাপ্তিই বড় কথা। আনন্দলাভই জীবন। অপরাধ করে, দুনীতি করে কোটিপতি হয়ে কেউ শাস্তি পেয়েছে একথা একবারও শোনা যায়নি। ধরা পরেছে এমন কথাও না। কাজেই আমি করলে দোষ কোথায়। আমাকে ধরবে কে ? হলিউডের ছবি দেখি না! হিটম্যান গেম খেলি না!
বাংলাদেশের পুলিশ, ওরা তো ফুটপাতের দোকান থেকে ৫ টাকা করে চাদা উঠায়।
এটাই মুল কথা। সারাদেশে এত অপরাধ হচ্ছে আর আমি একটাকিছু করতে পারব না। শিক্ষাপ্রতিস্ঠান নাকি ছাত্রী পাঠায় নেতাকে খুশী করতে। তাও আবার দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিস্ঠান। আমি কম কিসে ? আমার কি অধিকার নেই ?
সমাজের জন্য আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় উপহার এটাই। নিয়মকানুন-আইন-পুলিশ মানার প্রয়োজন নেই। ক্ষমতা লাভ কর। ক্ষমতা ব্যবহার কর। এটাই জীবন। জীবন উপভোগ কর।
 

Browse