আরো কথা আছে। আমি কথা দিয়েছি সেকথাই বা কে বলল। কথা কি দেয়া যায়। আমি দিলাম আর আপনি ঝুড়ি ভরে নিয়ে গেলেন। কিম্বা পকেটে করে। কোথায় রেখেছেন দেখান তো! দাম দিয়েছেন ?
কাজেই সব কথার শেষ কথা, কথা বলে আসলে কিছু নেই। কথা সবাই বলে। বণ্য প্রানী বলে, জাপানীরাও বলে, আমরাও বলি। আমি জাপানীর ভাষা বুঝি না, কাকের ভাষাও বুঝি না। কাজেই কাকের ভাষা আর জাপানী ভাষা সমান। আবার একজন জাপানী বাংলাও বোঝে না শেয়ালের ভাষাও বোঝে না। কাজেই ওদুটো সমান।
তারপরও লোকে বলে, দিন যায় কথা থাকে। কোথাও না কোথাও থাকে। নইলে কবে কোন মহাপুরুষ কি বলেছিলেন সেকথা হুড়হুড় করে বলা যায় কিভাবে ?
আমাদের নেতারা, শাসকরা, প্রশাসকরা কথা বলেন। যখন যেটা প্রয়োজন সেটাই বলেন। আপনি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাদের ঠেসে ধরতেই পারেন, কিন্তু তাতে যে লাভ নেই আগেই বলেছি।
প্রয়োজনে সারা দেশের বিদ্যুত এনে ঢাকা শহরে দেয়া হবে। তা-তো বটেই। এমনি মোট বিদ্যুতের ৪০ ভাগ ঢাকায় (মানুষ যদিও ১০ ভাগ, কিন্তু রাজাগজা সবাই যে রাজধানীতে), এখন সেটা বাড়িয়ে ৮০ ভাগ করা হবে। ক্ষমতাবানরা ঢাকাতেই থাকেন। তারা যদি পথে নামেন তাহলে বিপদ। অভিজ্ঞতা আছে মানুষের, পথে নেমে সরকার সরানো যায়। আবার যদি সেই পথ ধরে!
কাজেই, গ্রামে-গঞ্জে বিদ্যুত বন্ধ করে হলেও ঢাকায় বিদ্যুত দেয়া হবে। কথা দিলাম।
আপনারা সেচের জন্য ভাবছেন ? মোটেই ভাববেন না। কলকারখানা বন্ধ করে আপনাদের সেচের ব্যবস্থা করা হবে। নিশ্চিন্তে থাকুন। সার কারখানা বন্ধ করে গ্যাস দেয়া হবে বিদ্যুত কেন্দ্রে। আপনারা পানি পাবেন। ফসল ফলাবেন। তাতেই না দেশ চলে। বাম্পার ফলন আমাদের চাই।
বলছেন সার কারখানা বন্ধ রাখলে বাম্পার হবে কিভাবে ?
হবে হবে। কথা দিচ্ছি সার যতটা দরকার ততটাই পাবেন। আগের সরকার সার নিয়ে বহু কেচ্ছা কাহিনী করেছে। জরুরী সরকারও সেই পথ ধরেছিল। আমরা তারা নই। যত চান তত পাবেন।
আবার কি বলছেন ? সারের দাম ? বিনামুল্যে দেয়ার কথা বলেছিলাম ?
মোটেই না। অমন কথা বলতেই পারি না। তাহলে সার কারখানাগুলো চলবে কিসে ? আর, কিছু ঘাটতি তো থাকেই। কিছু বাইরে থেকে আনতে হয়। ওরাও কষ্ট করে, বিনিয়োগ করে, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। ওদের কথাও তো ভাবতে হয়। সার কারখানা বন্ধ রাখলে ওদের ওপরও কিছুটা চাপ তো বাড়বেই।
কথার বৈশিষ্ট হল সব কথা অনেক বিবর্তনের মধ্যদিয়ে ঘুরেফিরে শেষ কথায় গিয়ে থামে। ধারাভাষ্য দিলে সেটা হতে পারে এমনই,
ঘড়ির টাইম এক ঘন্টা আগাইয়া দিলে লোড সেডিং ২০ ভাগ কমব। আপনেরা একঘন্টা আগে উঠবেন একঘন্টা আগে ঘুমাইবেন। না-না, আমরা জনগনের কষ্ট সহ্য করতে পারি না, লোড সেডিং দুইঘন্টা। আপনেরা ব্যাটারী চার্জ কইরা ব্যবহার করেন। না-না, এক ঘন্টাই সই। কয়দিন কষ্ট করেন। রাস্তায় হাউকাউ কইরেন না। আচ্ছা আচ্ছা আমরা ভাড়ায় বিদ্যুতকেন্দ্র বসাইতাছি। তিনমাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান। না-না, আমরা ভারত থিকা বিদ্যুত আনতাছি। আর কোন সমস্যা নাই। খামো ওই সব বিদ্যুতকেন্দ্রের দরকারডা কি ? গ্যাস খোজো, ত্যাল কেনো, মানুষের সাথে ঝগড়াঝাটি কর। এই ভাল। বিদ্যুত আইতাছে। পায়ের ওপর পা তুইল্যা অপেক্ষা করেন-