দরিদ্র সব পারে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে মাটি খুড়তে পারে, বীজ বুনতে পারে, আগাছা পরিস্কার করতে পারে, পানি টানতে পারে, ফসল কাটতে পারে, সেই ফসল পরের তাতে তুলে দিতে পারে, না খেয়ে থাকতে পারে, না খেয়ে বাচতে পারে, জনসংখ্যা বাড়াতে পারে, আর –
আর পরের উপকার করতে পারে। ঋন নিয়ে সুদে-আসলে ফেরত দিতে পারে। সেই সুদের হার কত দেখা প্রয়োজন নেই। যারা কোটি টাকা ঋন নেন তারা টাকা ফেরত দেন না কারন তাদের সামর্থ্য নেই। দরিদ্ররা তত অসহায় না, সুদ যতই হোক তারা সেটা দেয়। দিয়ে আবার নেয়, আবার দেয়। কখনো কাউকে বিমুখ করে না। বিনিয়োগকারীদের টাকা বাড়তেই থাকে। আর দরিদ্ররাও মহানন্দে তাদের মাথায় তুলে রাখে। এমন উপকারি আর হয় না। জাপান-আমেরিকা-ইউরোপে সুদের হার কত সেকথা তুলবেন না। তারা এমন হতদরিদ্রের সেবা করে না। তারা ব্যবসায়ী। এখানে যারা ঋন দেয় তারা সমাজসেবি। মানবতাকর্মী। পরিস্থিতি সহায় থাকলে জনগনের অনুরোধে তারা রাজনীতিতে আসতে পারেন। ক্ষমতাহীন রাষ্ট্রপতি হতে তারা রাজী নন তবে যদি ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে আপত্তি নেই। একবার সেই সুযোগ দিয়েই দেখুন না, দেশকে বিদেশ বানিয়ে ফেলব। দেখছেন না একেবারে হত দরিদ্র, সহায় সম্বলহীন ঋন নিচ্ছে। প্রায় আধাআধি সুদ দিচ্ছে। আর কত উন্নতি করতে বলেন ?
শুনেছি, কাগজে পড়েছি এইসব ঋন নাকি বিশ্বে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছি। বড়বড় দেশের বড়বড় নেতারা পরামর্শ নিচ্ছেন। কিভাবে এই কাজ করা যায় জানছেন। অর্থনীতিবিদ পর্যন্ত প্রশংসায় শতমুখ। এমন উদ্ভাবনী বুদ্ধি তাদের মাথায়ও নেই। যার কিছুই নেই তার কাছেও ব্যবসা করা যায়। এরই নাম ক্রিয়েটিভিটি। আপনারা দেখুন, দেখে শিখুন, শিখে কাজে লাগান। এইসব দরিদ্র নামের প্রাণী দিয়ে করানো যায় না এমন কাজ নেই। এরা গরুর মত নিবোর্ধ নয়। শিখালে শিখতে পারে। শক্তির সাথে সাথে কিছুটা মাথাও খাটাতে পারে। যে কোন কাজ করতে পারে। এদের কাজে লাগান, কাজে লাগিয়ে টাকা বানান। এশিয়ায়, আফ্রিকায়, ল্যাটিন আমেরিকায়। টাকা খাটান আর সুদে আসলে ফেরত নিন। টাকায় টাকা আনে। আড়াই বছরে দ্বিগুন। শতভাগ নিশ্চয়তা।
সরকার বহু অনুনয়-বিনয় করে ব্যাংকের সুদের হার দুই অংকের নিচে আনতে পারেনি। কথা হচ্ছে আনা হবে। তাদের সাথে আলাপ করা হচ্ছে, হবে। একদিন সেটা হবেই। মন্ত্রী আস্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও নতুন সুর ধরেছে। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে তাদের মত থাকা উচিত। সেটাও হবে নিশ্চয়ই। কেউ বিমুখ হবেন না।
তবে কথা হচ্ছে, যারা ব্যাংকে টাকা রেখেছেন বসে বসে সুদের টাকা খাওয়ার চিন্তায় তারা যদি লাভ কমতে দেখেন তাহলে কি করবেন ? টাকা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনবেন ? সোনা কিনবেন ? ডলার কিনবেন ? জমি কিনবেন ? এখনই জমির দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। এটা হতে দেয়া যায় না।
আর যদি হয়ই, যাদের টাকা ব্যাংকে জমা তারা যদি টাকা তুলতে শুরু করে তাহলে বাংকের অবস্থা কি হবে ? কর্মকর্তাদের কথা বলছি না। তারা তো নগদ নারায়ন ছাড়া কিছু বোঝেন না। নিজের লাভ কোন মাসে কত জানার সাথে সাথে পকেটে রেখে দেন। পাঠিয়ে দেন বিদেশের ব্যাংকে। যা জমা থাকে সেটা অন্যের। এই টাকা না থাকলে ব্যাংক চলবে কিসে ?
না, তারা এবিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। যারা টাকা তুলতে চেষ্টা করছেন তাদের এখনই বলা হচ্ছে, টাকা তুলবেন কেন ? বেশি টাকা তুলতে পারবেন না। আপনার টাকা তাতে কি হয়েছে, ব্যাংকে যখন রেখেছেন তখন ব্যাংকের নিয়ম মানতে হবে। কে বলেছে ব্যাংক বন্ধ হবে ? দেখেননি আমেরিকা-বৃটেন কিভাবে ব্যাংক চালু রেখেছে ? সিটি ব্যাংক, এইচবস। আরে ব্যাংক ছাড়া কি দেশ চলে। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আপনার টাকা আমাদের কাছেই থাকবে। সরকার বীমার টাকা বাড়িয়েছে। টাকা না পেলে অন্তত দুলাখ তো পাবেনই।
ছোট ঋন ব্যবসায়ীদের এতসব চিন্তা নেই। তাদের গ্রাহক ছোট ছোট মানুষ। সরাসরি দরিদ্র। তাদের গরু কিনতে হয়, বীজ কিনতে হয়, সার কিনতে হয়, জমিতে পানি দিতে হয়। তারা টাকা নেবেই। তাদের সুদের হার আরেকটু বাড়ানো প্রয়োজন। এদের মত এত সামর্থ্য আর কারো নেই। ইদানিং তাদের পরিচালন খরচা বেড়ে গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও বলে কথা। তারা সহায়তা না করলে, আশা না দেখালে দেশ কোন রসাতলে যাবে কে জানে। মন্ত্রী মশাই বিবেচনা করুন। কোটি কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন না।
0 comments:
Post a Comment