আপন প্রাণ বাচা

May 30, 2010
নেতাদের নিয়ে কতটা ব্যঙ্গবিদ্রুপ করা হয় জর্জ ডব্লিউ বুশ সাহেব সেটা খুব ভাল করেই জেনেছেন পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি তার ধারেকাছে ঘেষার সুযোগ পাবেন না বর্তমানের বারাক ওবামা তার ধারেকাছেও না তবে তারও ক্যারিকেচার হয় আরো যেসব নেতা আছেন সবারই হয় একজনও বাদ যান না
নেতারা এর প্রতিক্রিয়ায় কি করেন ?
বিবিসি একবার জানতে চেষ্টা করেছিল আমেরিকার একজন প্রবীন কার্টুনিষ্ট উত্তরে বললেন, এতে নেতারা খুশী হন অনেক সময় কার্টুনিষ্টকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে ধন্যবাদ জানান বৃটেনেও তাই তারাই নাকি এধরনের ক্যারিকেচার সবচেয়ে বেশি করে সবাই পছন্দও করে
কিন্তু, সবকিছুরই সীমা থাকা উচিত সবাইকে নিয়ে নিশ্চয়ই কার্টুন করা যায় না ডেনমার্কের সেই নবীর কার্টুন সারা বিশ্বে সোরগোল তুলেছিল তাকে মেরে ফেলার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা, কেউ একজন ফেসবুকে নবীর ছবির প্রতিযোগিতা আহ্বান করে রীতিমত ঝড় তুলেছে পাকিস্তানে মানুষ পথে নেমেছে, সরকার সাথেসাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সেই পাতা বন্ধ করা হয়েছে যা হয়নি তা হচ্ছে এর পেছনের ব্যক্তিকে আক্রমন করা, যদিও বর্তমান পাকিস্তানে সেটা অস্বাভাবিক ছিল না তালেবান বলে কথা
তারপরও সেটা হয়নি ফেসবুকের চেহারা আবারও দেখা দিয়েছে সেখানে
বাংলাদেশের প্রেক্ষিত ভিন্ন এখানে মানুষ চুরি-জোচ্চুরি-ঘুস-দুর্নীতি যাই করুক ধর্মবিরোধী কথা বলে না এমনকি নেতাবিরোধী কথাও না দুই নেতা এখানে সব সমালোচনার উর্ধে এমনকি বর্তমান নেতারাও তাদের বংশধররাও ফেসবুকে প্রধান দুই দলের প্রধানের ব্যাঙ্গাত্মক ছবি ছাপার অপরাধে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে একজনকে সংবাদ সন্মেলন করেছে বিষয়টি নিয়ে এরপর সেকথা না বলে উপায় কি ?
এবিষয়ে  বিবৃতি কি যদি শুনতে চান তাহলে শুনে নিন, ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানতে পারে এই সম্ভাবনায় ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছে যারা নেতার ছবি বিকৃত করেছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে
বিষয়টির মাত্রা অনেক প্রথমত, আমাদের নেতাদের নিয়ে কিছু বলা যাবে না সেটা ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানার মত অপরাধ দ্বিতীয়ত, আমাদের পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে কোন প্রশ্ন করবেন না তারা সাইবার ক্রাইম দমনে সিদ্ধহস্ত মুহুর্তের মধ্যে তারা অপরাধীকে খুজে বের করতে পারে
তৃতীয়ত, এটা দৃষ্টান্তমুলক পদক্ষেপ
দৃষ্টান্তমুলক শব্দটি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী প্রতিদিনই শুনি, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিন সেটা দেয়াও হয় সরকারের সমালোচনা করলে চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হবে, এটা নিশ্চয়ই দৃষ্টান্ত অন্যরা দেখে সাবধান হোন যা-তা প্রচার করবেন না
সংবাদপত্র নিয়ে অত মাথা না ঘামালেও চলে দেশে পড়তে পারে এমন মানুষই বা কজন তারওপর গাটের টাকা খরচ করে খবরের কাগজ কেনে কে ১৬ কোটি মানুষের দেশে কারো বিক্রি যদি ১ লাখে পৌছে তাহলে তাদের সোরগোলে টেকা দায় তারওপর কি ছাপলে পকেটে টাকা আসবে তাতেই তারা ব্যস্ত ওদের নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই
এরপর থাকে অনলাইন ব্লগ-মিনিব্লগ, মাইক্রোব্লগ এইসব যারা এসব করছেন তাদের জন্যও এটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখে শিখে রাখুন বেশি বাড়াবাড়ি করলে র‌্যাবের হাতে যেতে হবে
জানেন তো র‌্যাব মানে কি ?
কাজেই চাচা, আপন প্রাণ বাচা ডিজিটাল দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে এই তো অনেক ঘরে বসে কতকিছু দেখা যায় সেই দেখে সন্তুষ্ট থাকুন
বিষয়টা বাস্তবসন্মত বাঙালী যত গলাবাজিই করুক, কলমবাজি করার উদাহরন নেই অন্তত ইরান-চীন-কিউবার সাথে তুলনায় তো বটেই তারপরও যদি করা হয় প্রয়োজনে পুরো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হবে সেটা করতে বাধ্য করবেন না

পক্ষির তৃতীয় পক্ষ

May 28, 2010
পক্ষির দুইখানা পাখা থাকে। তার ওপর ভর করে অনায়াসে বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শুণ্যে ভেসে থাকা চিল দেখে মানুষও তাকে অনুকরন করেছে। গ্লাইডার নামের একধরনের বস্তু, দেখতে সেই পক্ষির পাখনার মতন, সেটা দিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ানো যায়।
মুলসুত্র একটাই, দুই পক্ষে সমতা রাখতে হয়। নইলে ঘুড়ির একদিকে ভারী হলে যেমন গোত্তা মারে তেমনই গোত্তা খেতে হয়।
এই নীতি বুঝেছিলেন জর্জ অরওয়েল, বহু বছর আগে। ১৯৮৪ নামে একখানা বই লিখেছিলেন। তার পৃথিবী শাসন করবে দুই সুপার পাওয়ার। একে অন্যের সমান হয়ে ভারসাম্য রক্ষা করবে। একসময় আমেরিকা-সোভিয়েত দেখে মানুষের এই ধারনা আরো বদ্ধমুল হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টা চিরস্থায়ী হয়নি। অরওয়েলের সেই ৮৪ সালের স্বপ্ন পুরন হয়নি।
আরো বৈশিষ্টের কথা লিখে গেছেন তিনি। একপক্ষের নেতা ষ্টেজে উঠে জ্বালাময়ী ভাষন দিচ্ছে। জনগনকে রীতিমত তাতিয়ে তুলছেন। এরই মধ্যে একজন এসে হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল। সেটা একনজর দেখলেন তিনি। তারপর বক্তৃতা আরো জ্বালাময়ী হয়ে উঠল। তবে, এবার গতি বিপরীত দিকে।
আমরা ভাল করেই এধরনের বিপরীত জ্বালাময়ী বক্তৃতার সাথে পরিচিত। যখন যেদিকে পাল তখন সেদিকে হাল। নৌকার এটাই নিয়ম। নৌকার সাথে যখন আওয়ামী লীগের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত তখন তাকে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে।
একসময় আওয়ামী লীগ প্রধান গর্ব করে বলেছিলেন এক-এগারো তাদের আন্দোলনের ফল। তখন পুরো জাতি এক-এগারো নায়কদের সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছিল। তারা যতদিন খুশি ক্ষমতায় থাকুন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করুন, গনতান্ত্রিক করুন। আমরা আছি তোমার সাথে।
তারপর, সেই সমর্থন একসময় কমতে শুরু করেছে। দুর্নীতিমুক্ত করার নমুনা, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নমুনা দেখে জনগন আরেকবার ঠিকপথে এসেছে, আমাদের ওইসব নেতাই ভাল। তিন-উদ্দিন কি করেছে সেটা নিয়েও নানামুনির নানামত। কাজেই আর সমর্থন করা যায় না। এটা কখনো তাদের আন্দোলনের ফল হতে পারে না। কাজেই,
এক-এগারো হচ্ছে চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতির ফল। তাদের কারনেই দেশের মানুষ কালো সময় অতিক্রম করেছে।
সে যাকগে। কথা হচ্ছিল পক্ষি এবং পক্ষ নিয়ে। পক্ষির দুটি পক্ষ না হয়ে তিনটি হলে কেমন হত আন্দাজ করা কি সম্ভব। জনগন যখন দুইপক্ষে সন্তুষ্ট না। একপক্ষ আওয়ামী, আরেক পক্ষ জাতিয়তাবাদী, তারপর তৃতিয় পক্ষ
এদের মাঝেমধ্যে দেখা যায়। একবার এদিকে হেলেন, আরেকবার ওদিকে। কখনোই স্থায়ী পক্ষ অবলম্বন করেন না। দুইই ভাল, দুইই খারাপ।
কেউ কেউ বলেন ওসব আওয়ামি-জাতিয়তাবাদী বলে কিছু নেই। পক্ষ দুটিই। সরকারী পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষ। স্থান পরিবর্তন হওয়ার সাথেসাথেই বক্তব্য পাল্টে যায়। সেই অরওয়েলের চিরকুটের মত। একপক্ষ দেখতে পান হরতাল ছাড়া সমাধান নেই, আরেকপক্ষ দেখতে পান এরমত ভয়াবহ ক্ষতিকর কিছু নেই। একপক্ষ বোঝেন সংসদে সমাধান হওয়ার কোন সুযোগ নেই, আরেক পক্ষ হাড়ে হাড়ে বোঝেন সংসদ গনতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। সব সমাধান সেখানেই। আর সেই তৃতিয় পক্ষ, দুদিকেই সমর্থন জোগান, দুদিকেই বিরোধীতা করেন।
বিজ্ঞান বলে, সমাধান এই তৃতীয় পক্ষের হাতেই। তারাই ঠিক করে দুই পক্ষের সমতার পর দুজনে কোনদিকে যাবে। পক্ষির অনুকরনে দুপাশে পাখা লাগিয়ে আদর্শ বিমান তৈরী হয়নি, কোনদিকে যেতে হবে ঠিক করার জন্য লেজের দিকে আরেকটা পাখা লাগাতে হয়েছে।
পক্ষির লেজ যাকে বলা হয় সেটা আসলে দিক ঠিক করার আরেকটি পক্ষ। সেকারনে পাখির দুটি পাখা না বলে তিন পাখা বলাই যুক্তিসংগত।

হেলায় করিল জয়

May 26, 2010
বাঙালীর ছেলে হেলায় লংকা জয় করতে পারে। অন্তত করেছিল হাজার বছর আগে। তারপর সেই জয় আরেকবার দেখতে কেটে গেছে দুহাজার বছরের বেশি।
কিংবা আরো সচেতন হলে এভাবেও বলতে পারেন, বাঙালীর ছেলে হেলায় করিল জয় এভারেষ্ট।
এটাই ঠিক। মুসা ইব্রাহিম বাঙালীর ছেলে। সে এভারেষ্ট জয় করেছে। হিলারীর নামের সাথে বলা হবে তার নামও। আর ওই বিজয় সিংহের লংকা জয়ের বিষয়টা অনায়াসে বাদ দিতে পারেন। অন্তত ঐতিহাসিকরা যখন বলেন বাঙালী জাতির বয়স হাজারখানেক বছর।
ইতিহাস নিয়ে টানাটানি করার কোন ইচ্ছে নেই। আমরা এখনো জানিনা কার ঘোষনায় বাংলাদেশ হয়েছে। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন না মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তারচেয়ে বরং নির্জীব বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক। অন্তত জয় করার বিষয় যেখানে রয়েছে।
বাংলা ভাষাকেও আমরা জয় করেছি বায়ান্ন সালে। আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে (আমাদের দাবী, যদিও ভারতের মানুষ জীবন দিয়েছে একই কারনে)। আমাদের কারনে একুশে ফেব্রয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমরা না থাকলে কি হত!
কাজেই ভাষা নিয়ে আমাদের কৃতিত্বের অভাব নেই। পত্রিকায় একবার খবর চোখে পড়েছিল ডজন তিনেক গবেষক গবেষনাপত্র জমা দিয়েছেন কম্পিউটারে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে। আছে অন্য দেশে ?
মোটেই নেই। কম্পিউটার যখন মানুষের কাছে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর এক যন্ত্র তখনই মানুষ শুনেছিল বাসকি নামে এক শব্দ। ওদের আসকি আর আমাদের বাসকি। আমরা পিছিয়ে থাকব কেন ?
না আমরা পিছিয়ে নেই। একসময় বাংলাকে জয় করা হয়েছে। এই বিজয়ের নাম বিজয়। কয়েক হাজার টাকায় কিনতে হত একসময়। কমাস পর নষ্ট হলে আবার কয়েক হাজার টাকা। তবে এটা বিজয়। লংকা জয়ের নায়কের মতই আরেক বিজয় সিংহ। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপা হত, এই বিজ্ঞাপনে কাচি ব্যবহার করা হয়নি। পুরোটাই কম্পিউটারে করা।
আমাদের দুঃখ এটাই, অন্যরা আমাদের দিকে চেয়ে দেখে না। সেই উইন্ডোঝে থামলে কি হত ? উইন্ডোজ থেকে নাইন্টিফাইভ, তারপর টু থাউজেন্ড, তারপর এক্সপি, তারপর ভিসতা, তারপর সেভেন। এতকিছুর দরকার কি বাবা। প্রতিবার যে আমাদের বাংলায় পরিবর্তন আনতে হয়। একসময় রীতিমত গিট্টু খেয়ে বসে থাকতে হয়। বসে বসে কি আঙুল চুসব!
না-না, কে যেন বিজয় কিবোর্ড নকল করেছে। ব্যাটার সাহস কত। এইযে একটা কাজ পাওয়া গেছে। দেখি কতটা নাকানি-চুবানি খাওয়ানো যায়। ব্যাটার মাতব্বরী করার শখ। ভিসতায় বাংলা চালাবে। আবার বিনে পয়সায়। একেই তো ভাত মারা গেছে আগামীতে কিছু করার পথটাও বন্ধ করছে।
আর যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন ?
সরকার নির্দেশ দিয়েছে দুসপ্তাহের মধ্যে ওপেনটাইপ বাংলা চালু করতে হবে মন্ত্রনালয়ে। নইলে-
কার বাংলা ?
এখন ওসব কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। কারো নামে যদি স্বত্ব দেয়া হয় তাহলে তার। উনি দেখিয়েছেন কিবোর্ডে জে চাপলে ক লেখা হবে, সেটা ওনার আবিস্কার। দেখতে পাননা বিজয় চালু করলে ওনার ছবি দেখা যায়। আপনার ওই অক্ষর ব্যবহার করবেন না। পারলে অন্য অক্ষর ব্যবহার করুন। মেধার দাম না দিলে মেধার বিকাস ঘটে না শোনেননি।
আর, ওপেন টাইপ। চিঠিপত্র লিখবেন, ইমেল করবেন, বাংলায় চ্যাট করবেন। আরকি চাই ? বলছেন অনেক সফটঅয়্যারে ব্যবহার করা যায় না। এডবির কোন সফটঅয়্যারেই না।
ওসবে আমার দরকার কি ? নিতান্তই দরকার হলে এক্সপি ব্যবহার করবেন। ওখানে ঠিকমত কাজ করে। কসম। কম্পিউটারের দাম কমিয়েছি, সফটঅয়্যার কিনতে হয় না। এরবেশি আর কি করতে বলেন।
যে ভাষায় বড়জোর ১০ লাখ মানুষ কথা বলে সেই ভাষায়ও উইন্ডোজ আছে বলছেন। জনসংখ্যায় ৭ম হয়েও বাংলায় নেই কেন প্রশ্ন করছেন ? ওই প্রশ্ন বিল গেটসকে করুন। সে জানে।
আমাদের এই-ই ভাল। আমরা পারি না এমন কাজ নেই। এভারেষ্ট জয় পর্যন্ত করতে পারি। ওসব ছোট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই।
১৬ কোটি মানুষের দেশে, একটা জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একজন মুসা ইব্রাহিম। সংখ্যাটা কমই। অন্তত কম্পিউটারে বাংলা ভাষার সমাধানের জন্য তারমত একজন জেদি মানুষ প্রয়োজন ছিল।

অন্ধ ঠকিয়ে লাভ

May 23, 2010
লাভ সবাই পছন্দ করে। বস্তুত এর ওপর ভিত্তি করেই সব কাজের উসাহ উদ্দীপনা। বাংলা-ইংরেজিতে ভেদাভেদ নেই। সব লাভই লাভ। শেয়ার ব্যবসায়ী আশা করেন কম দামে কিনবেন আর বেশি দামে বেচবেন। লাভ না হয়ে যায় না। একবারের জন্যও ভাবেন না সবাই যদি একই লাভ খোজে তাহলে তারকাছে কমদামে বেচবে কে, বেশি দামে কিনবে কে। সে কি অন্ধ ?
কিন্তু, সবাই যখন একধরনের চিন্তা করে এবং একধরনের চিন্তা বাদ দেয় তখন লাভে সমস্যা হয় না। অন্তত বাংলাদেশে অনায়াসে ১০০ টাকার শেয়ার হাজার টাকায় পৌছে। এমনকি যে কোম্পানীর শেয়ার তার মরনদশা হলেও, তার অস্তিত্ব না থাকলেও। মাইক্রোসফট-এপলের শেয়ারের দাম ওঠানামা করে কোম্পানীর ভালমন্দ কিছু ঘটলে। বাংলাদেশে শেয়ার ব্যবসা যখন নিজেই ব্যবসা তখন ওসব কোম্পানীর তোয়াক্কা করে কে ?
কাজেই, লাভ করতে হবে। অন্ধকে ঠকিয়ে হলেও।
ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব-শত্রুতা-তুলনা সবই চলে সমানভাবে। রাজনৈতিক বিষয়ে না গিয়েও নিরাপদে উল্লেখ করা যায় আইটির কথা। ভারত সবে ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স নিলাম করছে, আমরা চালু করেছি। তুলনা চলতেই পারে।
ভারত নাকি আউটসোর্সিং কাজে বিশ্বে ১ নম্বরে। সিলিকন ভ্যালীতে এমন কোম্পানী পাওয়া কঠিন যেখানে ভারতীয় নেই। কোন কোন কোম্পানীর প্রধান তারাই। বাংলাদেশিও আছেন অবশ্যই। মাঝেমাঝে তাদের কৃতিত্বের কথা পত্রিকায় ছাপা হয়। এবিষয়ে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেই না। তারপরও, পার্থক্য কিছুটা থাকেই। যেমন,
ভারতের কিছু ব্যক্তি কিংবা কোম্পানী সেখান থেকে কাজ সংগ্রহ করেন। তারপর ভারতের মধ্যে খুজে বের করেন কাকে দিয়ে সেই কাজ করানো যায়। সন্মিলিত ফল হচ্ছে, কিছু মানুষ যাদের কাজ করার দক্ষতা আছে, তারা কাজ খোজার জন্য অলিগলি না ঘুরেই হাতের কাছে কাজ পাচ্ছে। আর কিছু মানুষ যাদের অলিগলি জানা তারা মধ্যস্থতা করে লক্ষ ডলার কামাচ্ছে। লাভ দুপক্ষেরই।
এরই আংশিক চিত্র বাংলাদেশে। হাজার হাজার (নাকি লক্ষ লক্ষ) মানুষ ইন্টারনেটে কাজ খুজে মরছে। শোনা যায় কিছু বাংলাদেশি সিলিকন ভ্যালী থেকে কাজ এনে ফেরত নিয়ে গেছেন যোগ্য মানুষ না পেয়ে। ভারতের এই সমস্যা হয়নি কারন তারা আগেই লক্ষ ডলারের কাজে হাত দেয়নি। যে ওয়ার্ড প্রসেসিং জানে তারজন্য ওয়ার্ড প্রসেসিং, যে গ্রাফিক ডিজাইনার তারজন্য গ্রাফিক ডিজাইন, যে প্রোগ্রামার তারজন্য প্রোগ্রামিং এই পদ্ধতেই চলেছে। তাদের কাজ ফেরত দেয়া প্রয়োজন হয়নি।
যে যাকগে। বলছিলাম লাভ করার কথা। সেটা যেহেতু করতে হবে সেহেতু লাভের পথ খুজতেই হয়। এখানে লাভের পথ একটু অন্যরকম। আপনি ইন্টারনেটে কাজ করতে চান ? আসুন বলে দিচ্ছি কাজ কিভাবে হয়। কোথায় খুজতে হয়, কত সহজে কত টাকা পাওয়া যায়। সেমিনারে যোগ দেয়ার ফি মাত্র ১ হাজার টাকা। আচ্ছা ৫০০ টাকাই সই। আসুন সব শিখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে ঘরে বসে হাজার ডলার কামানো যায়। ভারতকেও ছাড়িয়ে যাবেন।
কি শিখতে হবে জানতে চান ? কিভাবে করবেন জানতে চান ?
সে দায়িত্ব আপনার। নিজেই শিখে নিন না কেন। ওইযে ব্যানার ঝুলানো ১ হাজার টাকায় ১৬ কোর্স, ওদের কাছে যান। ডস-উইন্ডোজ থেকে শুরু করে সি শার্প শিখিয়ে আপনাকে শার্প করে দেবে। সেই ধারে সব কাটবে।
আপনি নানা ঘাটে পানি খেয়ে একসময় নিজেই ইন্টারনেট ঘুরতে পারেন। তারপর নিজের চোখে দেখে, সবকিছু জেনে অনুনয়-বিনয় করে বলতে পারেন, আরকিছু দরকার নেই শুধু পে-পল টা চালু করুন। শেখার দায়িত্ব আমার, কাজ খোজার দায়িত্ব আমার, করার দায়িত্ব আমার। কাজশেষে ১০০ ডলার যেন আমি হাতে পাই সে ব্যবস্থাটুকু করুন।
সে গুড়ে বালি। আপনি অনলাইনে অবৈধ লেনদেন করবেন, সরকারের লাভে বাধা দেবেন সেটা হবে না। এভাবেই তো দুর্নীতি বন্ধ রাখা হয়েছে। জানেন না আমেরিকা-ইউরোপে ওরা বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতি করে। ওসব করলে কি এই দেশ টিকবে ?
আমরা ওসব হতে দেব না। সরকারের লাভ সরকারকে করতে দিন। আপনার লাভ আপনি খুজে নিন।
অন্ধকে ঠকিয়ে হলেও।

আমি বাংলাদেশে যাব

May 20, 2010
ষ্ট্যালিনের যুগে সোভিয়েত ইউনিয়নের এক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক বর্ননা করছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন কত ভাল যায়গা সেখানে মানুষের কোন দুঃখকষ্ট নেই, সবার অধিকার সমান, সবাই সুখি এক শিশু উঠে দাড়িয়ে বলল, স্যার আমি সোভিয়েত ইউনিয়নে যাব
এটা পশ্চিমা কৌতুক পশ্চিমাদের কাছে ষ্ট্যালিন আর হিটলার সমান তিনি বহু মানুষ মেরেছেন মানুষ মারতে পছন্দ করতেন তিনি ড্রাকুলার মত রক্ত পান করতেন, বাদ দিয়ে আর সবকথাই তারজন্য প্রযোজ্য কি আর বলব, এরচেয়ে খারাপ হয় না
বাংলাদেশের মানুষ সোভিয়েত ইউনিয়নে বাস করে না, বাংলাদেশে বাস করে ইচ্ছে থাকলেও সোভিয়েত ইউনিয়ে বাস করা, এমনকি কয়েকদশক আগের বামপন্থীদের মত বেড়িয়ে আসার সুযোগও নেই কারন সোভিয়েত ইউনিয়ন বলে কিছু নেই অকারনে যাকে-তাকে ডেকে পাঠায় না। তার নাম এখন বিপ্লবের আগের মত রাশিয়া
রাশিয়ার কথা থাক বরং বাংলাদেশের কথাই আলোচনা করা যাক
প্রতিদিন পত্রিকায় নির্দিস্ট যায়গা দখল করে রাখে কিছু ছবি আজকাল সবই রঙিন, কাজেই রঙ স্পষ্ট দেখা যায় টকটকে লাল রঙ আর বাংলার কৃতি সন্তানেরা। হাতে লোহার রড, হাসুয়া, রামদা। কখনো কখনো আগ্নেয়ান্ত্র। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ। সময়ে যুবদল, ছাত্রদল, ছাত্র শিবির। কখনো কখনো শুধুই সন্ত্রাসী। কিংবা বখাটে। অন্য পরিচয় নেই। বাংলায় বাঘের অভাব নেই। সবাই ভবিষ্যত নেতৃত্বের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হল, টেন্ডার, খাসজমি, খাল-বিল-জঙ্গল এগুলোর কর্তৃত্ব নিয়ন্ত্রনে আনা হয়ে গেছে। এরপর জনগন। জনগন মুখ বন্ধ করেছে। মেয়েরা স্কুল কলেজ ছাড়ছে। কজন আত্মহত্যাও করেছে, যারা মানিয়ে নিতে পারেনি। সবই ভাল দিক। অধিকাংশই সয়ে নিচ্ছে একটু একটু করে। মানিয়ে নিচ্ছে আগামী দিনের নেতৃত্বের সাথে। সবার সামনে অপেক্ষা করছে সোনালী দিন।
বিরোধীদল একটামাত্র কাজই জানে। হরতাল। ওসব পুরনো মরচে ধরা অস্ত্র বারবার ব্যবহার করছে। এখনো বোঝেনি ওই অস্ত্রে কাজ হয় না। বিশেষজ্ঞরা বুঝেছেন কাজ কোন অস্ত্রে হয়, ওরা বোঝেনি। তারচেয়ে বরং উন্নতির কথাই শোনা যাক।
দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে। ক্রশফায়ার, ওটা আমাদের আবিস্কার না। গুপ্তহত্যা নামে যা ঘটছে সেটা আমাদের ওপর চাপাবেন না। কোন প্রমান নেই। সামনে কেমন দিন অপেক্ষা করছে সেটা দেখুন। সবকিছুই সামনে। অতীত বর্তমান নিয়ে অত মাথা ঘামাবেন না। মস্তিস্ক খুব দামী জিনিষ। অকারনে অপচয় করবেন না। আমাদের কথা শুনুন।
এইতো, ১৪ সালের মধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হবে। কোন খাদ্য আমদানী করতে হবে না। ঘরে বসে পায়ের ওপর পা তুলে খাবেন।
এসএসসির ফল দেখে ঘাবড়ে গেছেন ? ভাবছেন ভর্তির সমস্যা হবে ? মোটেই না। পর্যাপ্ত কলেজ-ইউনিভার্সিটি আছে। কলেজ না থাকে সরাসরি ইউনিভার্সিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। মোটেই ঘাবড়াবেন না। দেশে নিরক্ষর বলে কিছু থাকবে না। ১৪ সালের মধ্যে সবাইকে শিক্ষাব্যবস্খায় আনা হবে।
১৪ সাল কেন ? না-না, ১২ সালের মধ্যেই আরো অনেক কিছু হবে। দেশে উদ্বৃত্ত বিদ্যুত তৈরী হবে। যত খুশি ব্যবহার করবেন। তারপর বাড়তিটুকু-
সে আপনারাই ঠিক করুন। সব মন্ত্র যদি মন্ত্রনালয় পড়ে তাহলে আপনার সাথে মাথা রয়েছে কেন ?
কে জানে, এই বর্ননা শুনে কেউ বলে বসতেও পারে, আমি বাংলাদেশে যাব।

একেই বলে উন্নতি

May 19, 2010
ফুড ইনক, বর্তমান সময়ের সাড়া জাগানো ভিডিও ডকুমেন্টারী কে একজন বলল অস্কার পেয়েছে পেতেও পারে ওদের আবার অনেক ধরনের আজগুবি কাজ করার বাতিক আছে
সে যাকগে, কথা হচ্ছে পাইরেসির কল্যানে সেটা দেখার সুযোগ হয়েছে আমেরিকায় কিভাবে খাদ্য তৈরী হয় দেখানো হয়েছে মুরগীর খামারে আলো-বাতাস ঢোকে না জন্ম নেয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো তারা আলোর মুখ দেখে না নানারকম পুষ্টিকর খাবার তাদের এত দ্রুত ফুলে-ফাপিয়ে তোলে যে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে না যারা ম্যাকডোনাল্ড-বার্গার কিং এর এইসব খাবার খায় তারা জানেও না কি খাচ্ছে কোন খামারীর মুখ খোলা নিষেধ মুখ খুললে তারকাছে মুরগী কিনবে না ক্রেতা একমাত্র তারাই তাদের শর্ত মেনে খামার গড়ুন, তাদের লিষ্ট মিলিয়ে যন্ত্রপাতি কিনুন, তাদের কাছে বিক্রি করুন কোন সমস্যা নেই হাজার পঞ্চাশেক ডলার ব্যাংক ঋন মাথার ওপর, কিন্তু কোন সমস্যা নেই যে আয় হয় তাতে রাজার হালে থাকা যায় যদি তাদের কথামত চলেন
কথার অমান্য করলেই বিপদ আপনার খামার বন্ধ করতে হবে মাথার ওপর তখন সেই ঋনের বোঝা চেপে রয়েছে
কে একজন শিশু মারা গেছে এইসব খাবার খেয়ে ৫ বছর ধরে লেগে থেকে তার মা স্বীকৃতি আদায় করেছেন সেই শিশুর নামে একটা আইনও তৈরী হয়েছে খাদ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে বাস্তবে সেটা কাজ করুন বা না করুন, আইন তৈরী না করে তিনি ছাড়েননি এইসব নানাবিধ বিষয় নিয়ে কথাবার্তা
আসলে এসব নিয়েও আমার মাথাব্যথা নেই আমেরিকার গরু তারা লেজের দিকে কাটুন নয় গলায় কাটুক তাতে কি যায় আসে ? তাদের দেশে ফাষ্ট ফুড হল সস্তা খাবার জাংক ফুড ঢাকা শহরে সেটা আভিজাত্যের প্রতিক যার সত্যিকারের সামর্থ্য আছে তারজন্যই কেফসি-পিজাহাট
আমার আগ্রহ একটি মাত্র কথায় বলা হল, সবকিছুই উন্নত হচ্ছে সুযোগ-সুবিধে বাড়ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে জ্ঞান বাড়ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ সচেতন হচ্ছে, তারসাথে পাল্লা দিয়ে হাসপাতালে ভীড় বাড়ছে
আগ্রহ না দেখিয়ে উপায় কি ? অন্তত ঢাকা শহরের অভিজ্ঞা যার আছে
মানুষ ধনী হচ্ছে বিদেশী খাবার খাচ্ছে কোটি টাকা বাড়ি কিনছে কোটি টাকার গাড়ি চড়ছে তারপর সেই গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে শতশত-হাজার হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিক সবগুলোর সামনে শতশত থেমে থাকা গাড়ি একেই না বলে উন্নতি একসময় নাকি মানুষ হাসপাতাল কি জানত না, ডাক্তার কি জানত না আশেপাশে দশ-বিশ মাইলের মধ্যে ডাক্তার বলে কিছু ছিল না বড়জোর দুচারজন কবিরাজ পাওয়া যেত এই গাছ- ওই গাছ এক করে খেতে বলত বেশিরভাগ সময়ই বলত, এই নিয়মে খান, ওই নিয়মে কাজ করেন, সেই নিয়মে ঘুমান ওষুধ আবার কি জিনিষ রীতিমত অসভ্য সমাজ
তারাই নাকি অনায়াসে শতবছর বেচে থাকত
উন্নতি দেখেছি আমরা অনবরত দেখছি সারা বছর যা চান তাই পাবেন ঋতু বলে কিছু নেই ফল পচে না, মাছ পচে না, দুধ নষ্ট হয় না একেবারে উন্নত ব্যবস্থা বিদেশী যন্ত্রপাতি, বিদেশী ডাক্তার, বিদেশী ওষুধ দেশেই বিদেশী চিকিসা এই না হলে উন্নতি!
উন্নতির আরো দিক আছে পরীক্ষার ফল বেরলে আনন্দের মিছিল রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ ফাইভ পেয়েছে (কি জিনিষ জানি না) রাত দুপুরে ছেলে-মেয়ের দল ধরে রাস্তায় নাচানাচি
আদ্যিকালের কিছু মুখ্য আবার এসব দেখে প্রশ্ন তোলে, এত যে প্রতিভা এরা সব যায় কোথায় ? উদ্ধাবনী থেকে শুরু করে সংস্কৃতি সবকিছুর গতি তো শুন্য ছেড়ে মাইনাসের দিকে পৃথিবীর মানুষ উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্য একজনকে মাত্র চেনে তিনি উদ্ভাবন করে দেখিয়েছেন যারা দরীদ্রেরও অধম তাদের নিয়েও ব্যবসা করা যায় এর বাইরে জ্ঞান বিজ্ঞান দুরের কথা, গানবাজনা-চলচ্চিত্র-নাটক-সাহিত্য-খেলাধুলা কোন বিষয়ে কারো কৃতিত্বের কথা দেশের বাইরে পৌছেনি
আসলে বিষয়টা ওই ডকুমেন্টারীর মতই স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা যত বাড়ছে হাসপাতালে ভীড় তত বাড়ছে

অনলাইন পর্নোগ্রাফি প্রজন্ম

May 18, 2010
পশ্চিমা দেশে মানুষ অনেককিছু নিয়ে মাথা ঘামায় হয়ত তাদের দেশে শীত বেশি, অকারনে মাথা ঘামে না সেজন্যই যদি বাংলাদেশের মানুষের মত লোড সেডিংএ মাথার ঘাম গড়িয়ে পায়ে পৌছুত তাহলে তারাও মাথা ঘামাতে ভয় পেত কোন প্রয়োজন বোধ করত না
পরিবেশের কারনেই, ষ্টিভ জবস যখন বলেন আপনার যদি শিশু থাকে তাহলে পর্ন বিষয়ে ভেবে দেখা উচিত, তখন নানা মুনীর নানা মত শোনা যায় তিনি কি এপল ষ্টোরকে এ থেকে মুক্ত করতে চান ? নাকি এপল ব্যবহারকারীদের পর্নোগ্রাফি থেকে দুরে রাখতে চান ? নাকি পুরো ইন্টারনেটকেই পর্নোগ্রাফিমুক্ত দেখতে চান ? সেটা করা কি সম্ভব ? তার সেটা করার অধিকারই বা কি ?
তারা তাদের মত করে কথা বলতে থাকুন আমরা এটুকু জানি পশ্চিমা দেশে ফ্রি-কালচার প্রচলিত বহু আগে থেকেই নারী-পুরুষের একসাথে বাস করার জন্য বিয়ে প্রয়োজন হয় না, যদিও বিষয়টি সন্মান করা হয় সেখানে শতভাগ মানুষ শিক্ষিত ধরে নেয়া হয় একজন শিক্ষিত মানুষ নিজের বুদ্ধিতে চলবেন, ভাল-মন্ত নিজেই বেচনা করবেন তারপর কি করবেন সেটা তার স্বাধীনতা
কিন্তু ওই যে জবসের ভাষায়, যদি শিশু থাকে, তাহলে বিষয়টা জটিল হয়ে দাড়ায় পশ্চিমে পর্নোগ্রাফি বড় ব্যবসা হাজার কোটি ডলারের। অনলাইন হোক আর অফলাইনই হোক, যে কেউ কিনতে পারে শিশু বাদ দিয়ে শিশুর কাছে সিগারেট বিক্রি করলেও নাকি জেল-জরিমানার ব্যবস্থা আছে তাদের দেশে বয়সের রেটিং না দেখে ভিডিও গেম বিক্রি করলেও তাই বৃটেনে এক স্কুল শিক্ষককে চাকরী হারাতে হয়েছে কারন তিনি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি সাইটে গেছেন তিনি নৈতিকভাবে শিশুদের শিক্ষা দেবার উপযুক্ত নন ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি আদৌ বন্ধ করা সম্ভব একথা মনে করেন এমন মানুষ কমই, তারপরও অন্তত শিশুপর্নগ্রাফি মুক্ত করেছেন তারা ইন্টারনেটের যেখানেই এগুলি থাক এর পেছনের ব্যক্তি খুজে বের করা হয়
এরসাথে কি তুলনা চলে এমন সমাজের যেখানে ছাত্রীর যৌন হয়রানির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিছিল-আন্দোলন করতে হয় আরেক পক্ষ লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে আক্রমন করে আর শিক্ষক মশাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে সেটা উপভোগ করেন টিভি ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে গলা পরিস্কার করে আহ্বান জানাবেন, ইভ টিজিংএর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এমন কৃতিত্ব কজনার থাকে!
এমন সমাজে যেখানে নিয়ম ভাঙলেই বিপুল অর্থের মালিক হওয়া যায় অর্থ মানেই ক্ষমতা ক্ষমতা মানেই রাজনৈতিক আশ্রয় রাজনৈতিক আশ্রয় মানেই আইনের উপরে উঠে যাওয়া, যা খুশি করার স্বাধীনতা
এমন সমাজ যেখানে শিক্ষিতের চেয়ে অশিক্ষিত বেশি যার শিক্ষা যত বেশি সে অপরাধে তত দক্ষ, তত বেশি সম্পৃক্ত শিক্ষা মানে সার্টিফিকেট যার অর্থ বেশি তার সার্টিফিকেট তত বড়
এমন একটা সমাজ যেখানে হঠাত করেই মানুষ জেনে গেছে, জীবন উপভোগ করতে হয় যাকিছু ভাল লাগে সেটা করতে হয় যতক্ষন ভাল লাগে ততক্ষন খুজে খুজে বের করতে হয় কি বাদ গেল ইউরোপে-আমেরিকায় মানুষ কি করে শখ মিটিয়ে তাদের মত খেতে হয়, তাদের মত পোষাক পরতে হয়, তাদের মত ফ্রি সোসাইটিতে বাস করতে হয় এজন্য যাকিছু উপকরন প্রয়োজন সেগুলির ব্যবসাই সবচেয়ে জমজমাট
আর বর্তমান সময়-
এমন একটা সময় যখন তরুন প্রজন্ম বলতে যা বুঝায় তারা ইতিহাসে প্রথমবারের মত পনোর্গাফি ব্যবহারের অবাধ স্বাধিনতা পেয়েছে হাতে একটা মোবাইল ফোনই যথেষ্ট সারা বিশ্বে রয়েছে লক্ষ লক্ষ গিগাবাইট পর্নোগ্রাফি প্রতি মুহুর্তে বাড়ছে তাতেও যদি শখ না মেটে, নিজেই তৈরী করা যায় হাতের মোবাইল ফোন দিয়েই
কেউ কেউ বলছেন এটা অনলাইন পর্নোগাফি প্রজন্ম
গন্তব্য কোথায় তা হয়ত রাত পোহালে জানা যাবে

কপিরাইট বনাম কপি-রাইট

May 17, 2010
কপিরাইট করেন ?
সিডির দোকানে ক্রেতার প্রশ্ন। দোকানদার বুঝে ওঠেননি ক্রেতা কি চান। ক্রেতাকেই পকেট থেকে একটা সিডি বের করে দেখাতে হল, এইডার একটা কপি রাইট কইরা দিতে পারবেন ?
একেবারে স্পষ্ট ব্যাখ্যা। তিনি কপিরাইট করেন বৈকি। সারাদিনই করেন। সিডি-ডিভিডি সবই। গান-গেম-সফটঅয়্যার-মুভি কোনটাই বাদ নেই। পকেটে করে সিডি বয়ে আনারও প্রয়োজন নেই। সবই কপিরাইট করা আছে। চাহিবামাত্র পাইবেন। সিডি পচিশ, ডিভিডি চল্লিশ। কপি রাইট করার জন্যই তৈরী হয়েছে সিডি রাইটার, ডিভিডি রাইটার। ব্লুরে রাইটারের কথাও শোনা যায়। এখনও দামটা বেশি। দাম কমলে ওটাও পাবেন। হলিউডের আগেই পাইবেন।
কপিরাইট অন্যভাবেও হয়। ফটোকপির প্রচলন তো বহুকাল ধরেই। সার্টিফিকেট, নোট থেকে শুরু করে বই পর্যন্ত। দেশি বই-বিদেশী বই। দেশের সবচেয়ে প্রচলিত সংবাদপত্র (তাদের দাবী) রীতিমত প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ফিচার লিখে ফেলল, নিলক্ষেতে কমদামে উচ্চশিক্ষার বই। ৫ হাজার টাকার বই পাবেন দুশো টাকায়। অর্ডার দিয়ে যাবেন, তারা তৈরী করে দেবে। বাজারে পাওয়া যায় না এমন বইও পাবেন। জাতিকে উচ্চশিক্ষিত করে উচ্চতায় তোলার মহত দায়িত্ব নিয়েছেন এইসব অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত গবীব সহজ-সরল মানুষগুলো। নামমাত্র লাভে দেশের সেবা করে যাচ্ছে। সরকারের উচিত এদের দিকে দৃষ্টি দেয়া। শিল্প হিসেবে বিকাশ ঘটানো। কেউ কেউ ফটোকপির প্রাচীন পদ্ধতি ছেড়ে আধুনিক পদ্ধতির দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। রীতিমত অফসেট প্রিন্টারেই ছাপা হয়। লেখকের খরচ নেই, কম্পোজ-ডিজাইনের মামলা নেই। স্ক্যানিং-ট্রেসিং-প্রিন্ট পদ্ধতি। হুবহু এক বই। চাররঙা প্রচ্ছদ।
সবাই এতে সহযোগিতা করছেন এমনটা বলা যায় না। কিছু মানুষ তো রীতিমত মুখিয়ে আছে শত্রুতা করার জন্য। পাঠ্যবই করবে কর, সুনীল-শীর্ষেন্দু-সমরেসের বই যত খুশি কর আমরা দেখছি না।  তাই বলে দেশি উপন্যাস করবে ? জানেন কত মানুষ টিকে আছে এই শিল্পে। উপন্যাস না থাকলে বাংলা সাহিত্য কবে বুড়িগঙ্গায় তলিয়ে যেত।
কাজেই মাঝেমাঝে পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞাপন দিতে হয় (বিজ্ঞাপনই, খবর না। নিজের টাকা খরচ করে ছাপতে হয়) হুমায়ুন আহমেদের নকল বইসহ গ্রেপ্তার। আসলে গ্রেপ্তার হয়েছে নাকি দুচারজন মডেল দাড় করিয়ে ছবি তুলে ছাপা হয়েছে কে জানে ? বিজ্ঞাপন ছাপা হ্য় প্রকাশকের টাকায়। হয়ত ভয় দেখানো। হুমকি-ধামকিতে যদি কাজ হয়। মাইক্রোসফটের ধামকিতে যেমন হয়েছে। আপনারা কপিরাইট করবেন করুন। যত খুশি করুন। তাইবলে উইন্ডোজ আর অফিসের সিলভার ডিস্ক বানিয়ে আমেরিকায় রপ্তানি করবেন সেটা হবে না। অন্যদেশের বই নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই, দেশের জনপ্রিয় লেখকের বই কপিরাইট করবেন না।
মাইক্রোসফটের এক কথায় কাজ হয়। কিন্তু অনেকেই জানেন তাদের এক কথায় কাজ হবে না। দেশের মধ্যে হর্তাকর্তা-বিশেষজ্ঞ হলেও না। তাই কথা ঘুরিয়ে বলতে হয়। আপনারা দেশি সফটঅয়্যারের কপিরাইট মেনে চলুন। তবে বিদেশী সফটঅয়্যারের বিষয় সাবধানে মোকাবেলা করতে হবে। এই মুহুর্তে সেটা বন্ধ করা যাবে না। বন্ধ করলে অনেক টাকার সফটঅয়্যার কিনতে হবে।
তার এই কথায় কাজ হয়নি। এখন দেশি সফটঅয়্যার কেউ টাকা দিয়ে কেনে না। এমনকি অনেকে ব্যবহারও করে না। রীতিমত নকল করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়। বিজয় নাকি ভিসতা-সেভেনে চলে না, অভ্র চলে। বেয়াদ্দপ। বিজয় না হলে বাংলা কম্পিউটারে বাংলা ভাষা ব্যবহার হত ? এটা ছেড়ে দেয়া যায় না। জেলে ঢুকাতে হবে। কোথায় কপিরাইট আইন। কোথায় অফিস ?
কপিরাইট অফিস একটু নড়েচড়ে বসল। এইবার লোকজনরে একটু জানান দেই দেশে কপিরাইট অফিস বইলা কিছু আছে। লেখেন তো একখান উকিল নোটিস। কপিরাইট ল ইনফ্রিঞ্জমেন্ট। কি জানি হয় বাংলায়। কাকে নেড়েছ বাবা! একহাত দেহায়া দেই।
কি কইলা ? বাংলা ঠিকমত টাইপ হয় না ? ভিসতা ইনষ্টল করছ ? আইচ্ছা, ওই অভ্র না কি, ওইডা দিয়া লেখ।

দুই ভাইয়ের গল্প

May 13, 2010
এক গ্রামে দুই ভাই বাস করত। গ্রামের দুই প্রান্তে দুজনার বাড়ি। বড় ভাইয়ের বাস পরিবার নিয়ে, ছোট ভাই একা। দুজনার দেখাসাক্ষাত কমই হয়।
নতুন ফসল উঠেছে। ছোট ভাই চিন্তা করল, আহা, বড় ভাইয়ের বড় সংসার। বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে থাকে না-থাকে। আমার কিছু করা উচিত। যাই, রাতের বেলা তাকে না জানিয়ে তার ঘরে একবস্তা ধান রেখে আসি।
বড় ভাইয়ের চিন্তা, আহা- বেচারা একা থাকে। দেখার কেউ নেই। আমি নয় বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে থাকি। প্রয়োজনে ওরাই দেখবে। ওকে দেখবে কে ? বরং এক কাজ করি। একবস্তা ধান রেখে আসি ওর ঘরে।
ব্যস। রাতের অন্ধকারে দুজনই বের হল মাথায় ধানের বস্তা নিয়ে। দুজনের অগোচরে দুজনার ঘরে রেখে বাড়ি ফিরল। কেউ জানল না কারো কথা।
এটা গল্প। গল্প পড়তে হয়, শুনতে হয়, শিখতে হয়। তারপর সুযোগমত বলতে হয়। সভ্যতার ইতিহাস সেটাই বলে। গল্প প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলের প্রধানও বলেন। রিক্সাচালক-চাষী-দিনমজুর-বেকার সবাই বলে। আর সামনে মাইক্রোফোন থাকলে তো কথাই নেই। সর রাজা-উজির একাই মারতে পারি।
সে কারনে কিছু নিয়ন্ত্রন রাখতে হয়। মুখে লাগাম পরাতে হয়। টিভি ক্যামেরার সামনে এসে যা-তা বলবে সে-কি হতে দেয়া যায় ? গনতন্ত্র বলে কথা আছে না!
কাজেই গল্প গল্পের মত করেই বলুন। বাড়াবাড়ি করলে চ্যানেল বন্ধ হবে। সরাসরি মতামত প্রচার করবেন না। ওসব টক-শো, ফক-শো রেকর্ড করে, এডিট করে তারপর প্রচার করুন। নাইলে ওই প্রোগ্রাম বন্ধ। গল্পকে বাস্তব বানাবেন না।
গল্পকে বাস্তব বানালে কি হয় জানেন ? দুই ভাইয়ের গল্পটাই হবে এইরকম,
এক গ্রামে দুই ভাই বাস করত। গ্রামের দুই প্রান্তে দুজনার বাড়ি। বড় ভাইয়ের বাস পরিবার নিয়ে, ছোট ভাই একা। দুজনার দেখাসাক্ষাত কমই হয়।
নতুন ফসল উঠেছে। ছোট ভাই চিন্তা করে, আমি যে একা থাকি তার কোন খোজ রাখে ওই ব্যাটা ? নিজে বউ পোলা লইয়া আরামে আছে। জানত যদি আমার মত থাকত। খাই কি না খাই কেউ দ্যাখে না। ধান তুইল্যা গোলায় ভরছে একটা খবর পর্যন্ত দ্যায় নাই। যামু নাকি রাইতের বেলা একটা বস্তা নিয়া। একবস্তা ধান হইলে একটু নিশ্চিন্তে থাকা যায়।
বড় ভাইয়ের চিন্তা, ব্যাটা একা থাকে তো, টের পায় না সংসারের মানে কি ? থাকত যদি বউপোলাপান, সাত রকমের ঘ্যানঘ্যান, বুঝত কত ধানে কত চাল। ধান তুইল্যা গোলা ভরছে। ক্যান ? একা মাইনষের এত লাগব ক্যান। রাইতে যামু একটা বস্তা নিয়া। একবস্তা ধান পাইলে ...
ব্যস। রাতের অন্ধকারে দুজনেই রওনা হল খালি বস্তা নিয়ে।
 

Browse