নেতারা এর প্রতিক্রিয়ায় কি করেন ?
বিবিসি একবার জানতে চেষ্টা করেছিল। আমেরিকার একজন প্রবীন কার্টুনিষ্ট উত্তরে বললেন, এতে নেতারা খুশী হন। অনেক সময় কার্টুনিষ্টকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে ধন্যবাদ জানান। বৃটেনেও তাই। তারাই নাকি এধরনের ক্যারিকেচার সবচেয়ে বেশি করে। সবাই পছন্দও করে।
কিন্তু, সবকিছুরই সীমা থাকা উচিত। সবাইকে নিয়ে নিশ্চয়ই কার্টুন করা যায় না। ডেনমার্কের সেই নবীর কার্টুন সারা বিশ্বে সোরগোল তুলেছিল। তাকে মেরে ফেলার ঘোষনা দেয়া হয়েছিল। একেবারে সাম্প্রতিক ঘটনা, কেউ একজন ফেসবুকে নবীর ছবির প্রতিযোগিতা আহ্বান করে রীতিমত ঝড় তুলেছে পাকিস্তানে। মানুষ পথে নেমেছে, সরকার সাথেসাথে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সেই পাতা বন্ধ করা হয়েছে। যা হয়নি তা হচ্ছে এর পেছনের ব্যক্তিকে আক্রমন করা, যদিও বর্তমান পাকিস্তানে সেটা অস্বাভাবিক ছিল না। তালেবান বলে কথা।
তারপরও সেটা হয়নি। ফেসবুকের চেহারা আবারও দেখা দিয়েছে সেখানে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিত ভিন্ন। এখানে মানুষ চুরি-জোচ্চুরি-ঘুস-দুর্নীতি যাই করুক ধর্মবিরোধী কথা বলে না। এমনকি নেতাবিরোধী কথাও না। দুই নেতা এখানে সব সমালোচনার উর্ধে। এমনকি বর্তমান নেতারাও। তাদের বংশধররাও। ফেসবুকে প্রধান দুই দলের প্রধানের ব্যাঙ্গাত্মক ছবি ছাপার অপরাধে র্যাব গ্রেফতার করেছে একজনকে। সংবাদ সন্মেলন করেছে বিষয়টি নিয়ে। এরপর সেকথা না বলে উপায় কি ?
এবিষয়ে বিবৃতি কি যদি শুনতে চান তাহলে শুনে নিন, ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানতে পারে এই সম্ভাবনায় ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছে। যারা নেতার ছবি বিকৃত করেছে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বিষয়টির মাত্রা অনেক। প্রথমত, আমাদের নেতাদের নিয়ে কিছু বলা যাবে না। সেটা ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানার মত অপরাধ। দ্বিতীয়ত, আমাদের পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা নিয়ে কোন প্রশ্ন করবেন না। তারা সাইবার ক্রাইম দমনে সিদ্ধহস্ত। মুহুর্তের মধ্যে তারা অপরাধীকে খুজে বের করতে পারে।
তৃতীয়ত, এটা দৃষ্টান্তমুলক পদক্ষেপ।
দৃষ্টান্তমুলক শব্দটি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রতিদিনই শুনি, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিন। সেটা দেয়াও হয়। সরকারের সমালোচনা করলে চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হবে, এটা নিশ্চয়ই দৃষ্টান্ত। অন্যরা দেখে সাবধান হোন। যা-তা প্রচার করবেন না।
সংবাদপত্র নিয়ে অত মাথা না ঘামালেও চলে। দেশে পড়তে পারে এমন মানুষই বা কজন। তারওপর গাটের টাকা খরচ করে খবরের কাগজ কেনে কে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কারো বিক্রি যদি ১ লাখে পৌছে তাহলে তাদের সোরগোলে টেকা দায়। তারওপর কি ছাপলে পকেটে টাকা আসবে তাতেই তারা ব্যস্ত। ওদের নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।
এরপর থাকে অনলাইন। ব্লগ-মিনিব্লগ, মাইক্রোব্লগ এইসব। যারা এসব করছেন তাদের জন্যও এটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেখে শিখে রাখুন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে র্যাবের হাতে যেতে হবে।
জানেন তো র্যাব মানে কি ?
কাজেই। চাচা, আপন প্রাণ বাচা। ডিজিটাল দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে এই তো অনেক। ঘরে বসে কতকিছু দেখা যায়। সেই দেখে সন্তুষ্ট থাকুন।
বিষয়টা বাস্তবসন্মত। বাঙালী যত গলাবাজিই করুক, কলমবাজি করার উদাহরন নেই। অন্তত ইরান-চীন-কিউবার সাথে তুলনায় তো বটেই। তারপরও যদি করা হয় প্রয়োজনে পুরো ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হবে। সেটা করতে বাধ্য করবেন না।