শহরের ঠিক পাশেই তিনটি বড় বড় নদী, এমন শহরের নাম বলতে পারেন ?
হয়ত পারবেন না। টেমস নদী বিশ্বখ্যাত। সারা পৃথিবীর মানুষ সেটা দেখতে যায়। সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে বাঙালীও যায়। বিস্ময়ে হতবাক হয়, ছবি-ভিডিও করে এনে আত্মীয়দের দেখায়। তারপরও তিন নদীর শহর, তিন নদীর নাম বলার মত মানুষ খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না। ‘আমাদের টেমস সারা পৃথিবীর মানুষ দেখতে আসে। আর তোমরা তিনটা নদী নিয়ে বসে আছ।’
কথাটা একজন বৃটিশের। তিনি এই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কথাই বলেছেন। তার কথার উত্তর কিভাবে দেয়া সম্ভব ? বড়জোর স্বভাবগত গোয়ার্তুমি করে বলা যায়, ধুর ওটা তো একটা খাল। নদী যদি থাকে তো আমাদের দেশে।
তবে একথা বলা যায় না। যিনি বলেছেন তিনি নদীকে কটাক্ষ করেননি, করেছেন ব্যবস্থাপনাকে। নিতান্তই নির্লজ্জ না হলে তার উত্তর দেয়া যায় না। পরিচিত একজন লঞ্চে চেপে ভোরে সদরঘাট পৌছে নদীর পানিতে মুখ ধুয়েছিল। তখনও দিনের আলো ফোটেনি। হাতে শক্ত কিছু ঠেকায় সে ভাল করে চেয়ে দেখল। তারপর-
তারপর বলার প্রয়োজন নেই।
এই নদীর তীরেই একদা শহর গড়ে উঠেছিল। সভ্যতার ইতিহাসই এমন। যেখানে নদী তার পাশে লোকালয়। এখনও এই নদীতে নৌকা-জাহাজ চলে। তবে বাধ্য না হলে মানুষ পানির ধারেকাছে যায়না। দুর্গন্ধে পেটের সবকিছু বেরিয়ে আসে। যাদের অন্য কোন উপায় নেই সেই মানুষ নামের কিছু প্রাণী বাস করে এরই কাছাকাছি। বাধ্য হয়ে এই পানি ব্যবহার করে। সারা গায়ে খোসপাচড়া। সৃষ্টিকর্তা তাদের দুর্ভোগে রেখেছেন, তারা কাকে কি বলবে। সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না। কাফের হতে হয়।
গরমকালে দৈনিক হাজারখানেক মানুষ কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হয়। বাড়িতে স্যালাইন খায় অন্তত তার দশগুন। ওয়াসা জানিয়ে দিয়েছে নদীর পানি শোধনের অনুপযুক্ত, মন্ত্রী বলেছেন প্রয়োজনে বঙ্গোপসাগর থেকে পানি এনে হলেও খাওয়ানো হবে। কারবালা হতে দেয়া হবে না।
তা তারা পারেন। কারো প্রতিদিনের প্রতিবেলার খাবার যদি ইউরোপ থেকে আসতে পারে সে তুলনায় বঙ্গোপসাগর তো বগলতলা। তবে তিনি বোধহয় সাধারন মানুষের কথা বলেননি। তারমত মহাপুরুষদের কথাই বলেছেন। যখন হাড়িপাতিল নিয়ে মানুষ পানির জন্য হাহাকার করে তখন যাদের বাড়িতে ওয়াসার পানির ফোয়ারা সৌন্দর্য বর্ধন করে।
বলছিলাম নদীর কথা। দুই তীর দখল হয়েছে, হচ্ছে বলে কিছু মানুষ প্রায়ই হাউকাউ করেন। পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়। পরদিন চা খেতে খেতে তারা কাগজে সেই ছবি দেখেন। তাদের অভিযোগ নদী দখল হচ্ছে, ঘরবাড়ি দোকানপাট হচ্ছে, পানিতে বিষ মেশানো হচ্ছে, নাব্যতা কমে যাচ্ছে। তলায় নাকি দশফুট পুরু পলিথিন জমেছে। পলিথিন আইন করে বন্ধ করা হয়েছে ৫-৬ বছর আগে, তবুও। মানুষ হাসফাস করছে। যার সামথ্যর্ আছে সে পরিবার নিয়ে শ্বাস নিতে আশুলিয়া যাচ্ছে। তা তারও মরণ হল বলে। এমন যায়গা নেই যেখানে সাইনবোর্ড চোখে পড়ে না। সেগুলো দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। আবাসন শিল্প বড় শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। এর কোন ক্ষতি হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হবে। কারখানা বন্ধ হলে লক্ষ লক্ষ বেকার হবে। পরিবেশের ক্ষতি যা করার করেছে আমেরিকা। তাদের ক্ষতিপুরন দিতে হবে। এই দরীদ্র দেশে এসব কথা বলা অন্যায়। জনগনকে বাচার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
আর কথা বলবেন কার বিরুদ্ধে ? জানেন তাদের ক্ষমতা। আদালতের হিসেবে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হতে পারে কিন্তু তাকে ধরার সামর্থ্য কার ? প্রধান সেনাপতিকে ডেকে তিনি ফুটবলের জন্য ঘুস দিতে পারেন। এসব জনদরদীর বিরুদ্ধে কথা বলবেন ? আপনে কেডা ? মাথা কয়ডা ?
আমার মাথা একটাই এবং সেটা হারানোর কোন ইচ্ছে নেই। অন্য কোন দেশ হলে, সেখানে মানুষ থাকলে, সচেতনতা থাকলে বলতাম অন্তত বানিজ্যিকভাবে হলেও নদীর দু’ধার লিজ দিন (সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে ভয় হয়)। শর্ত- নদীর সীমানা রক্ষা করতে হবে. দুধারে পার্ক করতে হবে, লক্ষ মানুষের যাওয়ার মত পরিস্থিতি রাখতে হবে। সেখানে প্রতিদিনই মেলা বসতে পারে। রথ দেখা কলা বেচার মত মানুষের অভাব নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে তাতে। কোটি মানুষ শ্বাস নেয়ার সুযোগ পাবে। টেমসের মত সারা প্রথিবীর মানুষ দেখতে আসবে সেটা কেমন যায়গা।
কিন্তু সেটা হওয়ার না। এদেশের মানুষ ভোট দিয়েই দেশকে সৌন্দর্য়্যের শীর্ষে তুলতে পারেন। এত মানুষ থাকতে আমরা হারব কেন ? আমাদের কি ভোটারের অভাব ? ভোট সংগ্রহের জন্য যখন সারাদেশে প্রচার চালান ঠিক তখনই পত্রিকায় ছাপা হয় সেই সৌন্দর্য্যকেন্দ্রে বিদেশিনী ধর্ষনের খবর।
ভবিষ্যতবানী করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, দেশের সমস্ত মানুষ যদি প্রত্যেকে শতবার ভোট দেয় তারপরও অন্তত এক্ষেত্রে বিদেশীদের স্বীকৃতি পাবেন না। তারা সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ান এবং জানেন বেড়াতে যাওয়ার জন্য কি থাকা প্রয়োজন, কি পরিবেশ প্রয়োজন।
0 comments:
Post a Comment