ব্রেন ড্রেন

May 11, 2009

ভদ্রমহিলা খুব সুন্দর করে কথাটা বললেন। তার বাচ্চাকে ওয়ার্ল্ডে প্লেস করার মত শিক্ষা না পেলে সেখানে বাচ্চাকে পাঠাবেন না।

বলার প্রয়োজন ছিল না। ওয়ার্ল্ডে প্লেস করার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশে রয়েছে। মাসে লক্ষাধিক টাকা বেতন দিতে হয়। প্লেস না কোন পেয়ে উপায় নেই। সেখানে ভীড় যে খুব কম তাও তো মনে হয় না। স্কুল শুরুর সময়, ছুটির সময় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তাদের গাড়ির ঠেলায়। এই কীর্তিমানদের কীর্তির কথাও জানাযায় হরহামেশাই।

আমার বক্তব্য অন্যখানে। যাদের সে ক্ষমতা নেই তারাদের নিয়ে। তাদের ভরসা তো একসময় ছিল সরকারী স্কুল। সেখানে শিক্ষকরা বসে থাকে তাদের কোচিং সেন্টারের ছাত্র ধরার কাজে। স্কুলে যাও বা না যাও আপত্তি নেই, দল ধরে কোচিং সেন্টারে এসো। সবকিছু শিখিয়ে দেব। শিক্ষক বোর্ডের প্রশ্নপত্রের মডারেটর কাজেই প্রশ্ন নিয়েও ভাবনা করার কারন নেই। বাপকে বল টাকার ব্যবস্থা করতে।

এর ফল ফলছে সবখানে। একসময় একটা কথা খুব চাউর হয়েছিল। ব্রেন ড্রেন। এখন সেই ড্রেন নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কারন ড্রেন দিয়ে যা বেরোচ্ছে তার বদলে আসছে আরো বেশি। আর তারচেয়েও বড় কথা তেমন কিছু যাচ্ছেও না। যে লক্ষ লক্ষ মাথা বাইরে যাচ্ছে ব্রেন বলে কিছু নেই। নিতান্তই গাধার শ্রম দিতে যাচ্ছে। যেকাজ সেই দেশের মানুষ করে না, অন্য দেশের মানুষ করে না। সেইসব কাজে। এনিয়ে মাথা ঘামাবার কি আছে। যত বেশি যাবে তত বেশি রেমিটেন্স। হোত যতি আফ্রিকা তাহলেও কথা ছিল। তারা নাকি টাকা পয়সা খরচ করে যেসব ডাক্তার-শিক্ষক তৈরী করছে তাদের ডলার-পাউন্ড-ইউরো নিয়ে কিনে নিচ্ছে পশ্চিমারা। নিজের দেশে কেউ থাকছে না। আমাদের সে মাথা নেই, মাথাব্যথাও নেই। যেটুকু কথা বলার কারনে বলতে হয় সেটুকুই বলা। মফস্বলের শিক্ষক যখন শিক্ষাভবনে আসেন তখন নাকি সেখানে পিওন-দাড়োয়ান পর্যন্ত তাদের শিক্ষা দিয়ে দেয়। এসেছো ভাল কথা, পকেটে কি আছে দেখিয়ে যাও। তারপর ফিরে গিয়ে শেখাও কি শিখলে। কি করবে ? ধর্মঘট ? দেশের বারোটা বাজাবে তোমরা ? এই কারনে শিক্ষক হয়েছো ? দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্রের ভবিষ্যত নষ্ট করবে ? ঘাড়ে মাথা কয়টা ?

ঘাড়ে তাদের মাথা একটাই। মাস গড়িয়ে বছর হয়। বছর গড়িয়ে যায়। তাদের বেতন আটকে থাকে। একজন দিনমজুরের দৈনিক বেতন দুশো টাকা, রিক্সাচালকের আয় তিনশ থেকে পাচশ টাকা, ট্যাক্সি ড্রাইভারের আয় ছয়স থেকে হাজার টাকা। শিক্ষকের বেতন ?

তাদের বেতন প্রয়োজন কি ?

শতবর্ষ আগে নাকি চেখভ বলেছিলেন স্কুলের শিক্ষকের কথা। তারকাছে শুধু ছাত্ররাই শিক্ষা লাভ করবে না গ্রামের কৃষক যাবে পরামর্শ নিতে, গ্রামের মাতব্বর যাবে বুদ্ধি নিতে। আর বাস্তবে গ্রামের মুদিঅলা তারকাছে টাকা পায়। সামনে পরলে ধমকায়।

শতবর্ষ পর রাশিয়ার অবস্থা কি আছে জানা নেই তবে তার কথা ছড়িয়ে পড়েছে বহুদুর। একজন শিক্ষক এখন বুদ্ধি দেয় না, জ্ঞান দেয় না। ধার করে চলতে হয়, মাথা নিচু করে থাকতে হয়। যার যোগ্যতা আছে সে ব্যবসা করে, ঠিকাদারী করে, চাকরী করে। যার নেই কোন গতি সে করে মাষ্টারী। তাও চাকরী পেতে সরকারী দলের সমর্থন পেতে হয়। দলের খাতায় নাম লেখাতে হয়।

বৃটেনে একজন স্কুল শিক্ষকের চাকরী গেছে, বিবিসির খবর। কারন সেই বেকুফ তার কম্পিউটার ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফির সাইটে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেবার মত নৈতিকতা তার নেই। বাপরে-, এদেশে ছাত্রী নির্যাতন নিয়ে ছাত্রীদেরই আন্দোলন করতে হয় দিনের পর দিন। সেই নীতিবান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে তাদের সেই আন্দোলন ভেঙে দেয় নীতিবান ছাত্রের দল। সরকার পরম আনন্দে সেটা উপভোগ করে। ঠিক কি হইছে কনতো। নিজে তো সুযোগ পাইলাম না, একটু শুইনা দেহি। ইন্টারনেটে কতকিছু দেহা যায়।

সংবাদ মাধ্যম রসালো সংবাদ পরিবেশন করে। নৈতিকতা! সেটা আবার কি জিনিষ ?

এখন ব্রেন ড্রেন বলে কিছু নেই। লক্ষ টাকা বেতনের স্কুলে যে পড়ে সে ওয়ার্ল্ডে প্লেস পাবার জন্যই পড়ে। সিজার-চার্চিল-ওয়াশিংটনের জীবনকাহিনী মুখস্ত করে। ভিসার লাইনে দাড়ানোর আগে মুখস্ত করে এনবিএ খেলোয়ারদের নাম। বাকিদের জন্য কোচিং সেন্টারই যথেষ্ট। টাকা থাকলে সব সার্টিফিকেটই পাওয়া যায়। এমবিএর দাম সারে চার লাখ, এমবিবিএস সাড়ে সাত, কম্পিউটার সায়েন্স সাড়ে তিন থেকে আট। দেশ চালাবে এরাই। টাকা জোগার করাই যথেষ্ট।

আর যদি না পারেন তাহলে ওয়ার্ল্ডে প্লেস করার জন্য ব্যায়ামাগারে পাঠান। শরীরে শক্তি থাকলে যে কোন দেশেই প্লেস করা যায়। শক্তিই ভরসা।

0 comments:

 

Browse