সভ্যতার পতন

Jan 26, 2011
ইতিহাস বলে বিশ্বের অনেকগুলি সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। চীন-ভারত-মিশর-গ্রীক-রোমান-মুসলিম-এজটেক-ইনকা-মায়া সব সভ্যতাই। ধ্বংস বলতে তারা যে উতকর্ষতা দেখিয়েছিল তাদের সময়ে সেটা ধরে রাখতে পারেনি। কোথাও কোথাও ধ্বংসস্তুপ রয়েছে নিদর্শন হিসেবে। পর্যটকদের আগ্রহের বস্তু। তারা দেখে অবাক হয়ে ভাবেন, আহা কত উন্নতই না ছিল সেই যুগের মানুষ। কম্পিউটার ছাড়াই হাজার বছর আগে মানুষ এসব করত, ভাবা যায়!
আমাদের সে ভয় নেই। বর্তমান সভ্যতা চিরস্থায়ী। জ্ঞান-বিজ্ঞান মানুষকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। বরং মৃত্যু বন্ধ হলে জন্মসমস্যার সমাধান কিভাবে হবে সেটাই বিবেচ্য। এই শতকেই যখন বিশ্বের জনসংখ্যা ৯০০ কোটিতে যাচ্ছে। মৃত্যু না হয়ে যদি জন্ম হতেই থাকে তাহলে তারা দাড়াবে কোথায় ?
অন্য গ্রহ সমাধান হতে পারে। অনেকেই বলছেন চাদে ঘরবাড়ি বানানো শুরু হবে এই শতকেই। মংগলে হলে আরো মংগল। স্পেসশীপে চড়ে যাতায়াত করবেন সবাই।  হলিউডের ছবিতে দেখা যায়।
আপাতত সমস্যা অন্যখানে। দুবছর আগে খাদ্যের দাম বাড়ায় মানুষ পথে নেমেছিল। সরকারের পতনও হয়েছে। আবারও দাম বাড়তির দিকে। এরই মধ্যে তিউনিসিয়ায় সরকারের পতন হয়েছে। মিসরের মানুষও তাকে উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করে পথে নেমেছে। সেটা দেখে হয়ত আরো দেশেও-
সে যাকগে। পরের দেশ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকারটা কি ?
বারং নিজেদের দিকেই দেখা যাক।
সরকারী হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা আড়াই কোটি। বেসরকারী হিসেবে সাড়ে চার থেকে পাচ। আরো বাড়ছে। এদের মধ্যে বিপুল পরিমান শিক্ষিত বেকার। দেশ থেকে নিরক্ষরতা যখন বিদায় করা হচ্ছে তখন সব বেকারই শিক্ষিত ধরে নিতেও সমস্যা নেই।
কথা হচ্ছে, তারা বেকার কেন ?
কারন চাকরী নেই। কেউ চাকরী দিচ্ছে না। যাদের হাতে চাকরী তারা বলছে যোগ্য লোক নেই।
বিষয়টা বেশ গোলমেলে। একদিকে কয়েককোটি শিক্ষিত মানুষ চাকরী খুজছে, আরেকদিকে প্রতিস্ঠান যোগ্য লোক খুজছে। একে অন্যের দেখা পাচ্ছে না।
সহজ সমাধান দিতে বলতে পারেন, যারা শিক্ষিত তারা আসলে যোগ্য নন। অন্তত কথা অর্থ তাই দাড়ায়।
কি ভয়ংকর কথা। তাহলে তারা বছর বছর এট টাকাপয়সা-সময় ব্যয় করছেন কেন। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-কোচিং এতকিছু।
আর এই সমস্যা নাকি শুধু এই দেশেই সীমাবদ্ধ না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, এমনকি উন্নত দেশেও মানুষ বলছে একই কথা। শিক্ষিত মানুষ চাকরী খুজছে আর চাকরী দেনেঅলারা বলছে যোগ্য লোক নেই।
কিছু মানুষ আগবাড়িয়ে কথা বলতে পছন্দ করে। নিজের বিদ্যে জাহির করে। তারা বলছে অল্পদিনের মধ্যেই নাকি সমস্যা আরো প্রকট হবে। এখনো তাত্ত্বিকভাবে পৃথিবীর খাদ্য দিয়ে পৃথিবীর মানুষের চাহিদা মেটে, কিছুদিন পর সেটা মিটবে না। মানুষ বাড়ছে-খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে আর একইসাথে চাষের জমি কমছে। মাটির নিচের সম্পদ শেষ হয়ে আসছে। আগামীতে নিশ্চিতভাবেই বহুসংখ্যক মানুষকে অনাহারে থাকতে হবে। ম্যালথাসের তত্ত্ব নাকি এখনো মিথ্যে হয়ে যায়নি। অন্তত ৬ বার যখন বিশ্ব ধ্বংশ হয়েছে, অধিকাংশ প্রানী বিলোপ হয়েছে, পুরনো সভ্যতার সবগুলি যখন ধ্বংস হয়েছে তখন আরেকবার হবে না সে নিশ্চয়তা দিচ্ছে কে ?
সময় থাকতে সাবধান থাকা ভাল। আবার নাকি শেয়ারের দাম বাড়ছে। এইবেলা কিছু কামিয়ে নেই।

মিডিয়া ভাগ্য

Jan 20, 2011
কারো কারো মিডিয়া ভাগ্য খুব ভাল। অন্যরা যখন নিজের নাম-ছবি মিডিয়ায় দেখার জন্য হাপিত্যেস করে, নিজের অর্থব্যয় করেও সুযোগ পায় না, তখন কারনে অকারনে এইসব ভাগ্যবাদের খবর ছাপা হয়। টিভিক্যামেরা হাতে মানুষ তাদের পেছনে ছোটে। দেশের মানুষ, বিশ্বের মানুষ তাদের মুখদর্শন করে।
প্রফেসর ইউনুসের কথাই ধরুন না কেন। তিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন। সাথেসাথে সারাবিশ্বের মিডিয়া ছুটল তার পেছনে। এটা অবশ্যই অত্যন্ত বড় একটা কারন। যদিও অনেকেই সুযোগ বলে থাকেন এটা বিশ্বের সবথেকে বিতর্কিত পুরস্কার। যিনি বাংলাদেশে পারমানবিক বোমা ফেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনিও পেয়েছিলেন। পাননি মহাত্মা গান্ধি। যাহোক, তারপরও এটা বিশাল কারন।
তিনি এক ফান্ডের টাকা আরেক ফান্ডে সরিয়ে আবারও খবরে এলেন। সেখানেও নানা মুনির নানামত। তার প্রতিস্ঠান থেকে ব্যাখা দেয়া হল তিনি সেকাজ করেছেন দরীদ্রদের মধ্যে দরীদ্রতমদের ২% সুদে ঋন দেবেন বলে। সেটা না করলে বড় অংকের ট্যাক্স দিতে হত, ২% সুদে ঋন দেয়া সম্ভব গত না। এটাও ছাপা হল ওই খবরের কাগজেই। আবার তিনি সাক্ষাতকার দিলেন আমেরিকার টিভিতে। সেখানে বললেন ক্ষুদ্রঋনের সুদ ২৫% এর বেশি হওয়া উচিত না, তার গ্রামিন ব্যাংক নেয় ২০%, সেখবরও ছাপা হল পত্রিকায়। ২% ঠিক নাকি ২০% ঠিক সেকথা যদিও আলোচনায় এল না।
তারপরও, এগুলি কারন। কারন ছিল বলেই এগুলি খবর হয়েছে। এতে কারো বিন্দুমাত্র আপত্তি থাকা উচিত না। যার যে সন্মান প্রাপ্য তাকে সে সন্মান দিতেই হবে। আপত্তি অন্য বিষয়ে। অকারনে যদি তিনি মিডিয়ার সন্মান পান তাহলে।
২০০৭ সালে তিনি রাজনীতিবিদদের অসন্মান করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারনামে মানহানির মামলা করা হয়েছিল। ২০১১ সালে তিনি সেই মামলায় জামিন নিতে আদালতে হাজির হয়েছেন। এটা একটু বাড়াবাড়িই।
তিনি রাজনীতিবিদদের গালাগালি করেছেন কয়েক বছর আগে। সারাদেশের মানুষ প্রতিদিন-প্রতি মুহুর্তে সেকাজ করে। অত্যন্ত অকথ্য ভাষা গালাগালি করে। তারা কেউ মিডিয়ায় চেহারা দেখানোর সুযোগ পেল না, আর তিনি পেলেন! এটা অবিচার।
মানুষ আদালতে বিচার আশা করে। তারাই যদি কয়েক বছর আগের সামান্য বিষয় নিয়ে তাকে এত প্রাধান্য দেয়, আগামীতে আবারও খবর তৈরীর জন্য সময় জানিয়ে দেয় তখন প্রতিবাদ জানাতেই হয়। যদিও আদালতের প্রতিবাদ জানানোর বিষয় খুব সহজ না। টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে দুর্নীতির উল্লেখ করায় সাথেসাথে সমন জারী করা হয়েছে। পরে আবার চায়ের দাওয়াও দেয়া হয়েছে।
সে যাকগে। কথা হচ্ছে, রাজনীতিবিদদের নামে কুকথা বলার জন্য যদি প্রফেসর ইউনুস এতটা সন্মান পেতে পারেন তাহলে সাধারন মানুষেরও কিছু অধিকার  আছে একই কাজে একই ফল পাওয়ার। তাদের মিডিয়া ভাগ্য সবসময় অবহেলা করা হবে, সবসময় মিডিয়া থেকে আড়ালে রাখা হবে সেটা হতে পারে না।
কাজেই, দলে দলে আওয়াজ তুলুন ...

ফালতু বিষয়

Jan 14, 2011
খাদ্যের দাম বাড়ায় বিশ্বের কয়েকটি দেশে দাঙ্গা হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। জাতিসংঘের হিসেবে তখন মুল্যবৃদ্ধির সুচক ছিল ১৯১।  এখন আবারও শোনা যাচ্ছে ওই দাঙ্গার খবর। তিউনিসিয়ায় নাকি ৫০ জনের বেশি মারা গেছে এরই মধ্যে। আবারও ওই সুচকের বৃদ্ধি। এখন সেটা ১৯২.৩। আগের থেকেও বেশি।
কি ফালতু বিষয় রে বাবা। আমরা তো জানি সুচক বেড়ে নতুন রেকর্ড গড়লে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে হয়। ওরা এমন কেন ? পথে নেমে মারামারি করছে। সেটা তো করে সুচক পড়ে গেলে।
তেলের দামও নাকি বৃদ্ধির দিকে। দুবছর আগে দাঙ্গার সময় দেড়শর কাছাকাছি পৌছেছিল। এখন আবার পা বাড়াচ্ছে তিন অংকের দিকে। এটাও নাকি একটা কারন। তেলের দাম বাড়লে পরিবহন খরচ বাড়ে। সেইসাথে বাড়ে খাবারের দাম। এই তত্ত্ব অবশ্য আমরা ভাল করেই জানি। তেলের দাম বাড়লে রিক্সাভাড়াও বাড়ে। ওরাও নাকি চাকায় তেল দেয়। সেটা বেশি দামে কিনতে হয়। কিন্তু ভুক্তভোগির সমস্যা অন্যখানে। এই ঢাকা শহরে মানুষ রান্না করে গ্যাস দিয়েই। যার থাকে সে সারারাত জ্বালিয়ে ঘর গরম রাখে। আর যার থাকে না-
এতদিন বসে থাকতে হত কখন বেলা ৩টা বাজে। গ্যাস এলে রান্না হবে। তারপর দুপুরের খাওয়া। তারপর সেটা লেট করতে করতে যখন রাত ৯টা বাজল তখন আর লেট করার সময় নেই। বাজারে ছুটতে হল কেরোসিনের চুলা কিনতে। কেরোসিনও একধরনের তেল। ওটাও কিনতে হয় অনেক টাকা দিয়ে। কাজেই সেখানেও দাম বাড়ার কিছু ফল ভোগ করতেই হয়।
আর খাদ্যের দাম। দুবছর আগে সাধারন মানুষ লাইন দিয়েছিল বিডিআরের দোকানে। তারপর কতকিছুই তো ঘটে গেল। সেই টাকার ভাগাভাগি নিয়ে রক্তারক্তি। শেষে বিডিআর-ই বাতিল করতে হল। শেষফল হচ্ছে তখন চালের দাম ৫০ টাকা ছোয়নি, এখন ছুয়েছে।
এর অবশ্য অন্যদিকও আছে। সরকার বলছেন মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের মত একই ভাষায়। কাজেই জিনিষের দাম বাড়তেই পারে। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষের হাতে যখন বেশি টাকা থাকে তখন বেশি দামে কেনে। টাকা না থাকলে চাল কিনছে কিভাবে ?
কিছু মানুষ আবার অনেক বেশি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়। বলে বিশ্বের মানুষ যেমন বাড়ছে হুহু করে তেমনি হুহু করে ফসলের জমি কমছে। আমেরিকা ইউরোপের মানুষ একসময় অতিমাত্রায় প্রোটিন খেয়ে স্থুলরোগি সেজে বাহাদুরী দেখাত। এখন এশিয়ার বহু মানুষ ওই দলে যোগ দিয়েছে। তারাও রোগাপটকা থেকে দরীদ্র দেশের দুর্নাম রটাতে চায় না। বার্গার খেয়ে বার্গারের মত চেহারা দেখাতে চায়। মানুষের খাদ্যচাহিদা বিশ্বের খাদ্যসরবরাহের সামর্থ্যকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখনও বলা হচ্ছে যাচ্ছে, কারন তারা হিসেব করে বের করেছেন ২০৭০ সালে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবে। তখন নাকি খাবার সুসম বন্টন করলেও সকলের খাবার মিলবে না। অনেককেই না খেয়ে থাকতে হবে। সেইসাথে বর্তমানের মত যদি রাশিয়ায় দাবানল, অষ্ট্রেলিয়ায় বন্যার মত ঘটনা ঘটে তাহলে তো কথাই নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে একবার বলার চেষ্টা করা হয়েছিল অন্য দেশে জমি লিজ নিয়ে সেখানে চাষ করা হবে। তারপর সেই ফসল দেশে এনে সবার খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া হবে। কাজটা কতদুর এগোল জানা যায়নি। নিশ্চয়ই অন্যান্য জরুরী কাজের নিচে চাপা পড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে কেনিয়ার বহু জমি লিজ নিয়েছে কাতার কয়েক বছর আগে। ইউরোপের দেশ স্পেন, ফ্রান্সও একাজ শুরু করেছে অনেক আগে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে হয়ত।
হে-হে-হে, বাঙালীর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকবে কে ? বাঙালী খেপলে পারে না এমন কাজ নেই। ওসব ফালতু বিষয় এখন থাক। আগের কাজ আগে। যুদ্ধাপরাধীদের আগে জেলে ঢুকাতে হবে। দেশের নিরাপত্তা সকলের আগে। আগে দেশের স্বাধিনতা-সার্বভৌমত্য রক্ষা করুন। সেটা কেন-কিভাবে-কোন ঝুকিতে পরেছে সেপ্রশ্ন করবেন না। দেশের কথায় প্রশ্ন চলে না। যা বলছি তারসাথে সুর মেলান।
পেটের চিন্তার মত ফালতু বিষয় নিয়ে চিন্তা পড়ে করলেও চলবে।

রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা

Jan 11, 2011
রেকর্ড ভাঙা কথাটি কিভাবে চালূ হয়েছে আমার জানা নেই। সিডি কিংবা ক্যাসেটের আগের যুগে গানের রেকর্ড বের হত জানি। কিন্তু নতুন রেকর্ড বের হলে আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলার উল্লেখ কোথাও পাইনি। তারপরও কথাটি চালু। নতুন কিছু ঘটার সাথেসাথেই বলা হয় আগের রেকর্ড ভাঙা হল। কখনো কখনো এই ভাঙাভাঙি শুধু রেকর্ডেই সীমাবদ্ধ থাকে না, আশেপাশের অনেককিছুতে ঘটে।
যেমন ধরুন শেয়ার বাজারের কথা। ৫০ মিনিটে দরপতনের নতুন রেকর্ড তৈরী হল। সাথেসাথে পুরনো রেকর্ড যেমন ভাঙল তেমনি রাজপথে গাড়ি ভাঙাভাঙিও শুরু হল। বন্ধ করে দেয়া হল শেয়ারের দোকান। হরতালের ভাঙাভাঙির ভয়ে যেমন দোকানপাট বন্ধ থাকে অনেকটা তেমনই।
অবশ্য কোন ভাঙাভাঙিতেই কর্তা ব্যাক্তিরা নিরব থাকেন না। তাদের মাথা দ্রুত কাজ করে। এখানেও সেটাই ঘটল। জরুরী পদক্ষেপ নেয়া হল। ঋন নেয়া সহজ করা হল। এখন নাকি দ্বিগুন ঋন নেয়া যাবে। ১ এর বিপরীতে ২। ১ লক্ষের এর বিপরীতে ২ লক্ষ।
কাজেই পরদিন আবারও নতুন রেকর্ড গড়া এবং পুরনো রেকর্ড ভাঙা। এবারে বিপরীতমুখি। ১ ঘন্টায় সুচক বেড়ে গেল হাজার পয়েন্ট। পার্থক্য শুধু এটাই, পতনের রেকর্ডের সাথে মিল রেখে যেমন গাড়ি ভাঙাভাঙি ঘটে সেটা ঘটেনি। এমনকি এর বিপরীত চিত্র যদি কল্পনা করেন, বিক্ষোভ মিছিলের বিপরীতে আনন্ত মিছিল, কিংবা মিষ্টি বিতরন সেটাও ঘটেনি। এমনকি যাদের মেধার গুনে এমনটা ঘটল তাদের কথা একবারও স্মরন করা হল না। তাদের ছবি হাতে কেউ পথে নামল না। বাঙালী আসলেই অকৃতজ্ঞ।
আমি ৩০ লক্ষ বিনিয়োগকারীর একজন নই। কাজেই আমাকে কোনপক্ষে দেখার সম্ভাবনাও নেই। আমার চিন্তা অন্য যায়গায়। একেবারে স্বার্থপরের মত নিজের চিন্তা।
শেয়ার কেনার জন্য যে টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা কার টাকা ? আমার নয়তো ? যে টাকা ব্যাংকে রেখেছি।
সন্দেহের কারন একটু আছে বৈকি। আমেরিকায়-ইউরোপে এমনটা ঘটে গেছে আগেই। সেসব খবর পত্রিকায়-টিভিতে-রেডিওতে প্রচার করা হয়েছে। কিছুটা কানে এসেছে বৈকি। যদি তেমনটা ঘটে ? বিশ্বের বাঘাবাঘা অর্থনীতিবিদরা যখন ওয়ালষ্ট্রিটের কথা আগাম বলতে পারেননা, সেখানকার ধ্বস থামাতে পারেন না, তাদের ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেটা এখানে ঘটবে না সে নিশ্চয়তা দিচ্ছে কে ? তারাও নাকি বলতে পারে না শেয়ার বাজারের হাজার হাজার কোটি ডলার আসলে কোথায় যায়।
অবশ্য বাঙালীর মেধা বলে কথা। এনিয়ে সন্দেহ করার কোন অবকাস নেই। এইতো উদাহরন চোখের সামনে। একদিনে উল্টোদিকের রেকর্ড। কই, কেউ পেরেছে এটা করে দেখাতে!
নিজের কথাতেই ফেরত আসি। যদি কোনভাবে আবারও বিপরীত দিকের রেকর্ড তৈরী হয়, যদি শেয়ার বাজারের টাকাগুলো কোথায় গেছে জানা না যায় তাহলে কি হবে ? যতদুর জানি ব্যাংকের নিজস্ব টাকা বড়জোর কয়েকশ কোটি। যে লক্ষকোটি টাকা লেনদেন করে সেগুলো আমার মত গরীব মানুষের টাকা। প্রতিমাসের বাসাভাড়া-বাসভাড়ার টাকা। খাবার টাকা হিসেবে উল্লেখ করছি না। না খেয়ে দিব্বি কদিন কাটানো যায় কিন্তু বাড়ি ছেড়ে ফুটপাতে থাকা, একদিনের জন্যও কষ্টকর।
কাজেই আমার চিন্তা, যদি টাকাগুলোর খোজ না পাওয়া যায়, যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন তারা যদি কোন কারনে ফেরত দিতে না পারেন, তাহলে ব্যাংক প্রয়োজনের সময় আমার টাকা দেবে কোথা থেকে ? তারা যদি ৬ হাজার কোটি ডলারের লেহম্যানের মত দেউলিয়া হয় তাহলেই বা আমার কি করার আছে ? কাকে ধরব ? তাকে পাব কোথায় ?
শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারী ৩০ লক্ষ। কিন্তু ব্যাংকে টাকা রেখেছে যে কয়েক কোটি। এই কয়েক কোটি মানুষের টাকা বাজি রেখে ৩০ লক্ষ মানুষকে বাচানোর চেষ্টা আমাকে সত্যিই ভীত করছে। আবারও বলছি, আমি ওই ৩০ লক্ষের দলের কেউ নই, কয়েক কোটির দলে।
রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলা খেলবেন খেলুন। আমাকে ভাঙবেন না।

কাক খায় কাকের মাংশ

Jan 1, 2011
কাক নাকি সবকিছুই খায়। এটা প্রচলিত কথা। আবার কাক কাকের মাংশ খায় না এটাও প্রচলিত প্রবাদ। কারো বিভ্রান্ত হবার জন্য বিপরীতমুখি এই দুই বক্তব্য যথেষ্ট।
কাক বিষয়টা নিশ্চয়ই প্রতিকী। আসলে কাক কি খায়, না খায় তাতে কারো কিছু যায় আসে না। অন্তত হোটেলে গিয়ে বার্গার খাওয়ার সম্ভাবনা নেই যে তারকাছে ব্যবসার চিন্তা করবেন। কাক বলে উল্লেখ করার অর্থ হচ্ছে সেটা নিরাপদ। সে প্রতিবাদ করে রাজপথে নামবে না। গালাগালি করে উত্তর দেবে না। কাজেই তার নাম করে যাকিছু বলতে পারেন।
কথা হচ্ছে, কেউ নিজের গোত্রের ক্ষতি করে না। এমনকি মৃতদেহ হলেও। এই রীতি সমাজে প্রচলিত বেশ ভালভাবেই।
যেমন ধরুন, আপনি এক দোকানে কিছু কিনলেন। আপনার মনে হল আপনাকে ঠকানো হয়েছে। খুব গুরুতর রকমের ঠকানোর বিষয় থাকলে তবেই বাঙালী সেটা নিয়ে মাথা ঘামায়। হয়ত এক জিনিষের নামে করে অন্য জিনিষ দিয়েছে, দাম কয়েকগুন বেশি নিয়েছে।
প্রতিকার ?
আইনের কথা ভুলে যান। কাকে রিমান্ডে নিতে হবে আর কোন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এইসব জরুরী কাজে সেটা ব্যস্ত। শক্তি থাকলে নিজ দায়িত্বে সেই ব্যবসায়ীর সাথে হাতাহাতি করতে পারেন, কিন্তু সে সামর্থ্য সকলের হয়না। ক্রেতার হাতে দোকানদার মার খেয়েছে এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। বরং ক্রেতার মার খাবার সম্ভাবনাই বেশি। ওই যে, গোত্র। দোকানদার দোকানদার ভাই ভাই। লাগলে রক্ষা নাই।
কাজেই, যে পথ খোলা থাকে তা হচ্ছে নিজের ক্ষতি স্বীকার করে সেখান থেকে সরে যাওয়া। অন্য কোথা, অন্য কোনখানে। আর এইখানেই গোত্র বিষয়টি প্রকট।
আপনি ভাবলেন ওর কাছে আর কখনো কিছু কিনব না। এভাবে একজন একজন করে সরতে সরতে যখন সব ক্রেতা সরে যাবে তখন ব্যাটা বুঝবে ব্যবসা কিভাবে করতে হয়। সার্ভিস মানে সেবা। সেটা ঠেকে শিখুক।
কিন্তু ওই যে কাকের উদাহরন। এক ব্যবসায়ী আরেক ব্যবসায়ীর ক্ষতি করে না। আপনি গেলেন আরেক যায়গায়, আরো বড় ঠক খেলেন। তারপর আরেক যায়গায়। তারপর আবারও। শেষমেশ বুঝলেন, আগেরজনই ভাল ছিল। এক ব্যবসায়ী সেবা দিয়ে আরেক ব্যবসায়ীর হক নষ্ট করেনি।
বাস্তব উদাহরন জানতে চান ?
ওই যে, পাইরেসি। যা নিয়ে বিশ্বখ্যাত ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওই ব্যবসায়ীদের কথাই ধরুন না কেন। শতশত সিডি-ডিভিডির দোকানে তারা চিঠি পাঠিয়েছে। বিষয়, নতুন বছরের শুরু থেকে ডিভিডির দাম বেশি। সব পাইরেটরা সমবেত হয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যে কেউ আগের দামে বিক্রি করবে না। করলে ৫০ হাজার জরিমানা।
কিংবা সেই পুরনো উদাহরনই আবার দেখুন না কেন। ডিজিটাল দেশের ইন্টারনেট। অমুকের ২৫৬ কেবিপিএস এর আনলিমিটেড লাইনে ৫ কেবিপিএস পাওয়া যায়। আমি কেন বেশি দেব ? আমার হিসেবও ওই ৫ কেবিপিএস। তাতেও মন না ভরলে লাইন বন্ধ। চাবি আমার হাতে। তুই ব্যাটা কথা বলার কে ?
টাকা দিয়েছিস ভাল কথা, খুজে দেখ তো আরেকজন কি করছে ? ওরাও কাক। কখনো কাকের মাংশ খাবে না।
 

Browse