বিষ্ফোরন চাই

Jun 1, 2009

বিষ্ফোরন কাকে বলে তা আমরা সবাই কম বেশি জানি। পত্রিকার পাতা খুললে, রেডিও-টিভি খুললে সদা সর্বদাই দেখা যায়, শোনা যায়, পড়া যায়। ইরাকে অমুক যায়গায় বোমা বিষ্ফোরনে অতজন নিহত অতজন আহত, পাকিস্তানে বোমা বিষ্ফোরনে অতজন নিহত অতজন আহত, আফগানিস্তানে বোমা বিষ্ফোরনে অতজন নিহত অতজন আহত। আর বিষ্ফোরনের খবর নেয়ার জন্য অন্যের দেশে যাওয়া প্রয়োজন নেই। একবার নিজের দেশেই কিছু মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে বিষ্ফোরন কাকে বলে। সারা দেশে, একই সময়ে। তাদের আইন-আদালত আইন-কানুন চাই না, তারা যা বলবেন, যা করবেন সেটাই আইন। সরাসরি আল্লার কাছ থেকে নির্দেশ নিয়ে এসেছেন। তার নির্দেশে চলেন।

তবে আমি সে বিষ্ফোরনের কথা বলছি না। এই বিষ্ফোরনে শব্দ হয় না। চোখের সামনে ঘটলেও দেখা যায় না। ফল কি জানার জন্য বহু বছর অপেক্ষা করতে হয়। একটু খটকা লাগতে পারে, কারন একে আজকাল বিষ্ফোরন বলা হয় না। এমনকি সমস্যাও বলা হয় না। বলা হয় সম্পদ। আমি জনসংখ্যার কথা বলছি।

হ্যা, সম্পদই বটে। দেশের প্রধান অর্থকরি ফসল। বিদেশে রপ্তানি করবেন আর ডলার আয় করবেন। একবার ভেবে দেখুন তো কত উপকার যারা যাবে নিজের ইচ্ছেয় যাবে নিজের খরচে যাবে নিজের ঘর-বাড়ি, ভিটেমাটি বিক্রি করে তারপর দেশে টাকা পাঠাতে থাকবে সেই রেমিটেন্স দিয়ে দেশের অর্থনীতি উন্নত হতে থাকবে তাদের পাঠানো টাকায় পরিবারের সদস্যরা জমি কিনবে, জমি হাতবদল হবে, জমির দাম বাড়বে। সরকার জমি হাতবদলের ট্যাক্স কয়েকগুন বাড়ানোর ঘোষনা দিচ্ছে। তারমানে কয়েকগুন বেশি ইনকাম। যত হাতবদল তত লাভ। আর শুধু কি তাই- এই রপ্তানির পেশায় কত পরিবার উন্নতি করছে। মুহুর্তে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছে সারা বিশ্ব যেখানে গাড়ি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সেখানে অর্ধলক্ষ গাড়ি আমদানী হচ্ছে। এই ব্যবসার সুযোগ কে পাবে সেটা বলে দিলে ব্যাংকের ব্যালান্স বাড়তে থাকে এক ঢিলে বহুপাখি মারার এমন সুযোগ কে ছাড়তে চায় তাহলে এত টাকাপয়সা খরচ করে, এত ঘাম ঝরিয়ে মন্ত্রী-মিনিষ্টার-সাংসদ হওয়া বৃথা সারা বিশ্ব যদি লক্ষ লক্ষ কিংবা কোটি কোটি মানুষ নিত তাহলে নিশ্চয়ই উপাদন বাড়ানোর নতুন পদ্ধতি বের করা যেত কেন যে নেয় না। জাপান-ইতালি-ফ্রান্স-রাশিয়া সব যায়গায় নাকি জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকার পুরস্কার ঘোষনা করেছে। সত্যিই কি বোকা। আদতেই জানে না খনি কোথায়। একবার সুযোগ দিলে দেখিয়ে দেয়া যেত জনসংখ্যা কিভাবে বাড়াতে হয়। পুরস্কার কিভাবে পেতে হয়।

এ বিষয়ে সরকারের মন্ত্রনালয় রয়েছে। এত সুবিধার কথা ভেবে তারা এখন নিশ্চুপ। আশা করা যায় একসময় তাদের নাম পরিবর্তণ হবে। অকারনে নিয়ন্ত্রন শব্দটা রাখার কোনই অর্থ নেই। এবং তার প্রয়োজনও নেই। একসময় নাকি লোকজন বিভিন্ন গ্রামে বাড়িবাড়ি ঘুরে এইসব নিয়ন্ত্রনের সামগ্রী পৌছে দিত। কি বোকামী। এভাবে অপচয়!

এসব অপচয় রোধ করা হয়েছে। এখনো কিছুটা অপচয় রয়ে গেছে। স্যাটেলাইটে নাটক-ফাটক দেখানো হয়। কদিন পর তারও প্রয়োজন হবে না। লিবিয়া বলেছে ৫ বছরে ১০ লাখ মানুষ নেবে। তার বড় একটা অংশ নেবে বাংলাদেশ থেকে। তারমানে অন্তত ৫ লাখ। তাদের দেশে নাকি সাতাশটা ইউনিভার্সিটি তৈরী করবে এইসব লোক দিয়ে (বাপরে, ওদেশে লোক কত!)

তা যা খুশি করুন। এখানে ভার্সিটি-ফার্সিটির দরকার নেই। কোচিং সেন্টারই যথেষ্ট। ওরা কি দেখে লোক নেবে সেটা জানা দরকার। তাহলে ভালমত প্রস্তুতি নেয়া যায়। বলকান দেশগুলোও নাকি আগ্রহ দেখিয়েছে। সেখানেও রপ্তানি করা যাবে। অবশ্য যদি বোঝার ভূল না হয়। কুটনীতির ভাষায় নাকি সম্ভাবনা আছে কথার অর্থ আশা করে লাভ নেই। কে জানে তারা কি বলেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যই আমাদের সম্বল।

একসময় চীন জোর করে মানুষ কমিয়েছিল। কথা দুপক্ষেই বলা হয়। কেউ বলে এটা করে দেশের মানুষ ৪০ কোটি কমানো গেছে, কেউ বলে জোর করে এসব করা যায় না। ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। তো চীন আবার এসব কথায় কান দেয় না। বিশ বছর আগে তিয়েন আমেনে গুলি করেও মানুষ কমিয়েছিল।

আমরা আমাদের সম্পদ কোনভাবেই কমাতে পারি না। রপ্তানির নতুন বাজার খুজে বের করাই জরুরী। আর প্রস্তুতি নেয়া। বিপুল পরিমান পন্য প্রস্তুত রাখা।

এজন্যই বিষ্ফোরন প্রয়োজন।

পুনশ্চ : কৌতুক শব্দটার সাথে অশালীনতার একটা সম্পর্ক রয়েছে। ইংরেজিতে বলে ডার্টি জোক। একজন বলেছিল এই ডার্টি জোক। এক বয়স্ক ব্যক্তি কোথাও যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠলেন। উঠে দেখলেন একজন তার বিশাল পরিবার নিয়ে বসার সমস্ত যায়গা দখল করে রেখেছে। বাধ্য হয়ে তাকে দাড়িয়ে থাকতে হল।

ট্রেন চলছে, ঝাকুনি সামাল দিতে বারবার তাকে হোচট খেতে হচ্ছে। তার হাতের লাঠি বারবার মেঝেতে শব্দ করছে। শেষে বড় পরিবারের কর্তা পরামর্শ দিলেন, লাঠির আগায় একটু রাবার বাধলে এত শব্দ হত না।

তিনি বললেন, আপনার লাঠির আগায় রাবার বাধলে আমার এই দুরবস্থা হত না।

0 comments:

 

Browse