বুড়ো শালিকের ঘাড়ে গো

May 8, 2009

গো ধরা আমাদের জন্মগত অধিকার কারনে অকারনে আমরা গো ধরতে পছন্দ করি অনেক সময় নিজেরাই বুঝে গো থেকে সরে আসি, কখনো অন্যকে এসে সেই গো ছাড়াতে হয় নয়ত তুলকালাম বেধে যায় কখনো কখনো গো ছাড়াতে কেউ কেউ এমন গো ধরেন যে সবাইকে গোবেচারা বানিয়ে ছাড়েন।

একজন শিশু ছোটবেলায় গো ধরতে শেখে তাকে খেলনা গাড়ি কিনে দিতে হবে এটা স্বাভাবিক গো যার সামর্থ্য আছে সে কিনে দেয়, সামর্থ্য না থাকলে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে, তাতেও কাজ না হলে ধমক, তারপর উত্তম-মধ্যম ছোটদের গো ধরা যেমন স্বাভাবিক তেমনি তার প্রতিক্রিয়াও আমরা স্বাভাবিক বলেই ধরে নেই যদিও অনেক দেশে ছোটদের উত্তম মধ্যম তো দুরের কথা, খারাপ ভাষা ব্যবহার করলেও জেল-জরিমানা গুনতে হয় সে তাদের অন্য হিসেব তারা বহু খারাপ কাজ করে

আমাদের কথাই বলি জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিয়মমাফিক সময়মত নির্বাচন হবে এটাই কথা কিন্তু গো এসে হাজির ৎকালীন বিরোধী দল বলল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান দলীয় তিনি থাকা অবস্থান নির্বাচন হতে পারে না দুপক্ষ কিছুটা নমনীয়তা দেখালে, কিছুটা আপোস করলে এর মিমাংসা হতে পারত, কিন্তু কেউই গো ছাড়লেন না এই গো অন্যদের মধ্যেও ছড়াতে শুরু করল যাকে নিয়ে গো শুরু তিনি বললেন তিনি যাবেন না কারো ক্ষমতা নেই তাকে জোর করে সরানোর গো লাগল প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়েও তিনিও বললেন কার সাধ্য তাকে সরায় সংবিধানে এমন কথা নেই আমরা সংবিধানের একচুল এদিক ওদিক হতে দিতে পারি না আমরা নির্বাচন করবোই করব দেখেন না নির্বাচন মানুষ কত পছন্দ করে হাতে বেলুন, রঙিন কাগজ নিয়ে বাশি বাজাতে বাজাতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায় ভোট আমাদের দেশে উৎসব একদল গো ধরল তাকে বাড়ি থেকে বেরতে দেবেন না, আরেকদল গো ধরল তার বেরনো প্রয়োজনই নেই। বাজার করে তার বাড়ি পৌছে দেব। সারা বিশ্ব লাইভ দেখল সেই তামাসা।

তবে তিনি সেই উৎসব দেখে যাওয়ার সুযোগ পেলেন না রাষ্ট্রপতি গো ধরে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়ে বসলেন তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা সংবিধান কাউকে দেয়নি

তবে গো জিনিষটি এমনই, একজন এগোলে আরেকজনকে কিছুটা পিছাতে হয় অন্তত যার ক্ষমতা বেশি তাকে মান্য করে হলেও কারন গো ধরার অধিকার সবার সমান প্রধান সেনাপতিও গো ধরলেন তিনি দেখাবেনই দেখাবেন তার কত ক্ষমতা দেশকে তিনি নতুন করে গড়ে তবে ছাড়বেন তিনি বাংলার জর্জ ওয়াশিংটন, বাংলার আব্রাহাম লিংকন সাথে দোসর (তেসর) রয়েছে দেখি কার কত ক্ষমতা, কে মুখ খোলে হাত পা ভেঙে দেব সবাইকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব যদি বাইরে থাকতে চান তবে আপোস করুন সংস্কার করুন ক্ষমতায় থাকার কোন ইচ্ছে নেই। দেশ গুছিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে সাথেসাথে নির্বাচন দেব প্রয়োজনের বেশি এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকব না

এতে কাজ হল কেউ জেলে গেলেন, বাকিরা সংস্কার শুরু করলেন যত রকমের সংস্কার আছে হাজির হতে শুরু হল দেশ কি প্রধানমন্ত্রী শাসিত হবে না রাষ্ট্রপতি, না রাজতন্ত্রী, নাকি সবগুলোই নাকি এরও বাইরে কিছু আছে প্রতিদিন টিভিতে নতুন নতুন তত্ত্ব নিয়ে নতুন নতুন মুখ হাজির আজ একজন একধাপ এগোয় তো পরদিন আরেকজন তিনধাপ এগোয় জনগনও পিছিয়ে নেই চালিয়ে যাও চালিয়ে যাও, আমরা আছি তোমার সাথে। আমরা দেশ দুনীতিবাজমুক্ত করে তবে থামব সৎ, শিক্ষিত, যোগ্য, দেশপ্রেমিক, আদর্শবাদী, নিষ্ঠাবান, সাহসী, ধর্মপরায়ন, সমাজসেবি, গরীবের বন্ধু যাচাই করে ভোট দেব ভুল অনেক করেছি, আর না কোন অসৎ লোক নির্বাচনে দাড়াতেই পারবে না যদি দাড়ায়ও, তাকে একজনও ভোট দেব না প্রয়োজনে না ভোট দেব দেখিয়ে দেব ক্ষমতা কার হাতে। ভোটের আগের দিন পর্যন্ত চলল এই গো। তারপর-

খাড়া – বড়ি – থোড়, কথাটার উপত্তি কিভাবে বক্তব্যই বা কিআমার জানা নেই। একজন কার্টুনিষ্ট পত্রিকায় কার্টুন আকলেন, যেই লাউ সেই কদু। এরও বক্তব্য সম্ভবত এমনটাই। বলার স্বাধিনতা আছে বলে যাও।

কথা হচ্ছে, এটাও এক ধরনের গো। কেউ শুনুক না শুনুক বলে যাব।

0 comments:

 

Browse