হিটলার-আইখম্যানের দোষ নেই

Aug 27, 2010
বহু লক্ষ মানুষ মেরেছেন হিটলার-আইখম্যান। ইতিহাসে এর তুলনা নেই। তাদের প্রশংসা তো দুরের কথা, নাম নিলেও শাস্তি পেতে হয়। রীতিমত জেলে যেতে হয়। এটাই প্রচলিত।
কিন্তু-
তাদের দোষ কোথায়! হিটলার কি কাউকে গুলি করেছেন পিস্তল দিয়ে ? কোন সাক্ষি আছে ? নাকি আইখম্যান নিজের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছেন ? গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়েছেন ধাক্কা মারতে মারতে ? বাস্তবতা তো এটাই, তারা সেখানে উপস্থিত পর্যন্ত ছিলেন না। অন্তত ২০০২ সালের ১২ জুলাইয়ের ঘটনার মত নেতা হিসেবে সামনে নেতৃত্ব দিতে। বড়জোর কি করতে হবে বলেছেন, তাতে তারা দায়ী হবেন কেন ? তারা খুনি হলেন কিভাবে ? তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হবে কেন ?
১২ জুলাইয়ের ঘটনার ছবি ছাপা হয়েছিল সবগুলি সংবাদপত্রে। পরে পোষ্টার হিসেবে দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে।
সব ষড়যন্ত্র। নেতার ভাবমুর্তি নষ্ট করার জন্য করা হয়েছে। হয়রানি করার জন্য হয়রানিমুলক মামলা দেয়া হয়েছে। সেখানে অস্ত্রহাতি পুলিশও তো ছিল, কই তাদের নামে তো মামলা দেয়া হয়নি, দেয়া হয়েছে সাংসদের নামে। গনতান্ত্রিক দেশে ওসব চলতে পারে না। সংসদ গনতন্ত্রের প্রাণ। সাংসদ সন্মানী ব্যক্তি। সন্মানী ব্যক্তির সন্মান রেখে চলতে হয়। কিভাবে, কোন ব্যবসায় কোটিপতি হয়েছেন ওসব কথা তুলবেন না। ওসব পুরনো কথা।
আর আরেকজনের কথা বলছেন। পুলিশ কর্মকর্তাকে মেরে সংবাদ করেছিলেন। তা প্রয়োজন হলে শাসন তো করতেই পারেন। পুলিশের বেতন কে দেয় জানেন না।
আর কদিন আগে খুনের কথা বলছেন। ওটা অপমৃত্যু। থানায় গিয়ে দেখে আসুন সেভাবেই লেখা হয়েছে। তার পিস্তল, তার গাড়ি এসব কথা তুলবেন না। কোন সাক্ষি নেই।
পিস্তলে হাতের ছাপ!
ওই ছাপ ঝাপসা। বোঝা যায় না কার ছাপ। মুখটা বন্ধ করুন। এরসাথে আদালত রয়েছে। আদালত অবমাননা করবেন না। হাড়ে হাড়ে টের পাবেন সেটা করলে কি হয়। তিনি বর্তমান সাংসদ ভুলে যাবেন না।
আসলে সমস্যা আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে। বুশ-ব্লেয়ার ইরাকে যুদ্ধ করেছেন এটা মোটেই ঠিক না। তারা নেতা ছিলেন, অস্ত্র হাতে ইরাকে যাননি। মিসাইল ছোড়ার জন্য সুইচও টেপেননি। তাদের কোন দোষ থাকতে পারে না। হিটলার-আইখম্যানও নিজের হাতে খুন করেননি। তাদের দোষ থাক পারে না। চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২১ আগষ্টের হামলা হয়েছে। তারা দায় এড়াতে পারেন না। এর বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে। সবধরনের সাক্ষি জোগাড় করা হবে। দেখছেন না কতজন এগিয়ে আসছে সাক্ষি দিতে।
আর ইকবাল-শাওন,
দেখি সাক্ষিটা কে ???

মদের টাকায় চিনি খান

Aug 25, 2010
এক লিটার তেলের দাম ছিল ১৩ টাকা, সে অনেক দিন আগের কথা। কাজেই শুরু করা যেতে পারে এমনভাবে, অনেক অনেক দিন আগের কথা, এই বলে।
চাকুরীজীবীদের অনেক সময়ই দোকানে কিছুএকটা খেয়ে দুপুরের খাবার পর্ব সারতে হত। ফাষ্ট ফুড মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। সেখানেই এক সহকর্মীর কাছে শোনা, মিডল ইষ্ট থেকে তেল কিনে এনে রিফাইন করে তারপর দাম ১৩ টাকা, আর ১ লিটার দেশের পানি বোতলে ভরলে ১৮ টাকা। ব্যাপারটা কি বলুন তো!
এই ব্যাপারের উত্তর দেয়া আমার সাধ্যের বাইরে। বরং বর্তমানের দিকে একবার দৃষ্টি দিলে রহস্য আরো ঘনিভুত হওয়ার সম্ভাবনা।
এক কেজি চিনি তৈরীতে কারখানার খরচ ৮৬ টাকা। সরকারের বেধে দেয়া নিয়মে সেটা মিলগেটে বিক্রি করতে হয় ৪৩ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৪৩ টাকা লোকসান। আর পৃথিবীর আরেক প্রান্ত ব্রাজিল থেকে যদি ইমপোর্ট করেন তাহলে কেনার দাম, আনার খরচ, নিজের লাভ সবহিসেব মেলানোর পরও দাম তারথেকে কম।
আসলে রহস্য রহস্যই। মানুষ রহস্য পছন্দ করে। সেকারনেই রহস্য গল্প, রহস্য সিনেমা এসবের কাটতি বেশি। তাহলে বাস্তবে রহস্য পছন্দ করবেন না কেন ? রীতিমত প্রাকটিক্যাল জোক।
তাহলে কথা হচ্ছে, চিনি কারখানাগুলো চালু রাখতে হবে। নইলে দেশের মান যায়, বহু মানুষ বেকার হয়। কাজেই শতশত কোটি টাকা ঢালতে হবে সেখানে। এই টাকার জোগান দেবেন আপনি।
সরকারের সামর্থ্য বলেও কথা আছে। কত আর দেয়া যায়। একদিকে দিলে আরেকদিকে টান পরে। কাজেই, সমাধান প্রয়োজন। আর সমাধান তো আছেই-
সব চিনি কোম্পানী লোকসান করলেও কেরু নামের কোম্পানী লাভ করছে। তারা স্পিরিট, এলকোহল আর ভিনিগার তৈরী করে ক্ষতি পুশিয়ে লাভের মুখ দেখছে। তাহলে সেপথে গেলে ক্ষতি কি ?
ভেজাল মদ খেয়ে যখন মানুষ জীবন দিচ্ছে তখন তাদের বাচানোও সরকারের দায়িত্ব। সরকার এভাবে অকারন জীবনহানি দেখতে পারে না। আবার মদ্যপানের সংখ্যাও নাকি উল্লেখযোগ্য পরিমানে বেড়েছে। মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বেড়েছে, সংস্কৃতির উন্নতি হয়েছে, রুচির পরিবর্তন হয়েছে, সচেতনতা বেড়েছে। তাহলে চিনি কারখানাগুলোকে বাচাতে মদ কারখানা করতে সমস্যা কোথায়? অবস্থা ভাল দেখলে রপ্তানীও করা যাবে।
না, এমন একটা সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। এতে কারো কোনরকম আপত্তি চলতে পারে না। এটাই করা হবে। দেশের ক্ষতি, জনগনের ক্ষতি এসব বছরকে বছর চলতে পারে না। একবার পরিসংখ্যানটা দেখুন তো। চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ৫১টি কারখানা বেসরকারি খাতে দেয়া হয়েছিল। তার ৪৩টি বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের হাতে আছে আরো ১৫। সবগুলিতে বছর বছর টাকা ঢালতে হচ্ছে।
কাজেই করপোরেশনের চেয়ারম্যান সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের স্বার্থে, চিনি কারখানাগুলোকে বাচানোর স্বার্থে আরো মদ তৈরীর কারখানা হবে।
আপনার আপত্তি থাকতে পারে না। যারা মদ খাবে তাদের টাকায় আপনি চিনি খাবেন।

কারো পৌস মাস

Aug 23, 2010
আগুন লাগলে সবার ক্ষতি এটা মনে করার কোন কারন নেই, কারো কারো লাভই হয়। সত্যি বলতে কি লাভ আর লোকসান আসলে সমান সমান। আপনি একটা জিনিষ বেচে ১০০ টাকা লাভ করলেন, তারমানে ক্রেতা ১০০ টাকা ঠকল। আর আপনি যখন ক্রেতা তখন ব্যাপারটি উল্টা। ব্যবসায়ীর লাভ, আপনার ক্ষতি। অন্যের ক্ষতি না করে নিজের লাভের উদাহরন অন্তত আমার জানা নেই।
কাজেই লাভ করতে হলে অন্যের ক্ষতি করতে হয়। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। আপনি দুমাইল যেতে ৩০০ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন (প্রতি গজে কত হয় কেউ কি হিসেব করে বলবেন ?) এতে আপনার মনে হতে পারে আপনি ঠকছেন, কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন কি এতে কারো না কারো লাভ হচ্ছে। টাকাটা সরাসরি একজনের হাতে তো যাচ্ছেই। তারপর সেটা ভাগ হচ্ছে বহুভাগে। আর এরা সকলেই রাজনীতিপ্রিয়, দেশপ্রেমিক, স্বেচ্ছাসেবী। এদের হাতে না রাখলে সরকারে থাকা যায় না। সরকার এবং দেশ দুই রক্ষা করা তাদের অন্যতম প্রধান কাজ। কাজেই-
জানি আপনার উপদেশ দেয়ার বাতিক রয়েছে। বলবেন পরিবহনের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। আরো বাড়িয়ে বলবেন গনপরিবহন। অমুক দেশ এই করেছে, তমুক দেশ এই করেছে। পাতাল রেল, উড়ুক্কু রেল এসব করা উচিত। ছোট গাড়ির বদলে বড় গাড়ি বেশি ব্যবহার করা উচিত। যেসব দেশে প্রত্যেকেরই গাড়ি আছে, ঢাকার চেয়ে বেশি মানুষ বাস করে সেখানেও এই সমস্যা নেই।
একটু থামুন তো। যারা দেশ চালান তাদের কি বলদ মনে করেন! আপনার বুদ্ধি শোনার জন্য তারা অপেক্ষা করে রয়েছে!
মোটেই না। তারা অনেক জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান। এবং দক্ষ। ক্ষমতার ভারসাম্য বিষয়টি আপনি বোঝেন না, তারা বোঝেন। রিক্সার কথা নাহয় বাদই দিলেন। এরা পরিবেশের ক্ষতি করে না, বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এর ফিটনেসের বিষয়টিও নেই। রোড পারমিটের বিষয়ও নেই। অন্যদের রীতিমত ফিটনেসের টাকা দিতে হয়, রোড পারমিট নিতে হয়। আর ওই মিটার, ওটা থেকেই জানার কথা ভাড়া কত হবে।
কিন্তু বাঙালীর মেধা বলে কথা। মিটারের হিসেবে যাবেন ? চলেন। ৩০০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা দিয়ে শখ মেটাতে হবে।
বড়বড় বাসের কথা বলছেন। এগুলো বাড়িয়ে কি হবে বলুন তো। বাঙালী তো অলস। শোয়ার সুযোগ পেলে বসতে পর্যন্ত চায় না। বাসের এখানে ওখানে ঝুলে একটু ব্যায়াম তো হচ্ছে। ব্যায়ামে স্বাস্থ্য ভাল থাকে। প্রতিদিন যে পরিমান ভেজাল খাচ্ছেন তাতে একমাত্র ব্যায়ামই পারে নিরোগ রাখতে। যদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে হয় তখনো ওই সরকারকেই গালাগালি করবেন। টিভিতে দেখিয়েছে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নাকি রোগিকে ব্যাঙ কাটার মত কেটে প্রাকটিক্যাল ক্লাশ করেছে। এতে তারা দক্ষ সার্জন হতেই পারে, তাইবলে নিজেকে ব্যাঙ বানিয়ে নিশ্চয়ই দক্ষ ডাক্তার তৈরীর সুযোগ করে দিতে চান না।
আসলে মুল কথা ওটাই, একজনের ক্ষতি আরেকজনের লাভ। সুযোগ খুজুন আপনার লাভ কোথায়। সেটা দিয়ে পুষিয়ে নিন।
আলুর গুদামে আগুন লেগেছে এতে গোপাল ভাড়ের কোন আপত্তি নেই। একটু লবন যোগাড় করে দিব্বী পটেটো চিপ খাওয়া যায়। বরং আগবাড়িয়ে জিজ্ঞেস করা যায়, আবার কবে আগুন লাগবে ?
রোজার মাসের ব্যবসায়ী, গ্যাস ষ্টেশনে নিষেধাজ্ঞার সময় ড্রাইভার, তারা নিশ্চয়ই দাত খোচাতে খোচাতে প্রশ্ন করে, আবার কবে ???  

চৌদ্দ বছরের ঠোক্কর

Aug 18, 2010
চন্ডিদাসের যুগে অমুককে পছন্দ হয়েছে, তাকে আমার চাই, যা করতে হয় করব একথা মনে করা, বলা কিংবা কাজে করার সুযোগ ছিল না। তারযুগে প্রেমে সফল হওয়ার পন্থা ছিল একটাই, ধৈর্য্য ধরা। কাজেই  তাকে সেপথেই যেতে হয়েছিল। রজকীনি যে ঘাটে যায় তার পাশে ছিপ ফেলে অপেক্ষা করা। একদিন-দুদিন, একসপ্তাহ-দুসপ্তাহ, একমাস-দুমাস, একবছর-দুবছর। এভাবে চৌদ্দ বছর কেটে গেল। অবশেষে কৌতুহল রাখতে না পেরে রজকীনি এসে জিজ্ঞেস করল, এভাবে যে ছিপ ফেলে বসে থাক, মাছ কি পাও ?
চন্ডিদাসের উত্তর, এইমাত্র ঠোক্কর দিল।
চৌদ্দবছর ঠোকর দেয়ার অপেক্ষা মন্দ না। রীতিমত কাব্যিক। বরং বিনা বিচারে কেউ চৌদ্দ বছর জেলে কাটিয়ে বলতেই পারেন, ওটা কোন ব্যাপার হল! এইমাত্র তো বিষয়টা জানাজানি হল। এখন কিছুএকটা না হয়ে যায় না। চৌদ্দবছরে কি যায় আসে। ঠোকরের দেখা তো পেলাম।
আমাদের নেতারা অবশ্য চৌদ্দ বছরের কথা বলেন না, বরং একটু দ্রুতই বলেন। এই তো, শিল্পমন্ত্রী বললেন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অটোমোবাইল শিল্প গড়ে তুলবে। আমাদের মেধা আর দক্ষতা দিয়েই সেটা সম্ভব।
নিশ্চয়ই। বাঙালীর মেধার কি কোন তুলনা হয়। আমরা গাড়ি রপ্তানী করব ইউরোপে-আমেরিকায়। ততদিনে বিমান তৈরীর পদ্ধতিও শিখে যাব। আপাতত, কাঠে পেরেক ঠুকতে হলে সেটা আনতে হয় চীন থেকে। আর সেটার মাথায় বাড়ি দেবার জন্য হাতুড়িও আনতে হয় ওই চীন থেকেই। ইস্পাত শিল্প অর্থ রি-রোলিং মিল। লোহা থেকে রড তৈরী করা।
সে যাকগে। মন্ত্রীমশাই যে ঠোক্কর দিয়েছেন সেটাই বড় কথা।
ইদানিং শুধু নেতারাই ঠোক্কর দেন না, মাঝেমধ্যে হাইকোর্টও দেয়। ওইযে, পাইরেসি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হল। তিন মাস পরপর রিপোর্ট দাখিল করতে হবে।
এটা বড় ধরনের ঠোক্কর। আদালতে ধর্না দিয়েছে চলচ্চিত্র এবং সংগিত বিষয়ের ব্যক্তিগন। কাজেই নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া হল, সিনেমা-গান ইত্যাদি পাইরেসি চলবে না। বন্ধ করতে হবে। আর সফটঅয়্যার-গেম-হলিউডের মুভি পাইরেসিতে বিশ্বে যে শীর্ষস্থান সেটা ধরে রাখতে হবে। জানেন না, ওগুলো রপ্তানী হয়। রপ্তানী কি বন্ধ করা যায়। কত লক্ষ লক্ষ মানুষ বেচে আছে ওই পেশায়। তাদের ওপর কি হামলা করা যায়। কারো পেটে লাথি মারতে নেই।
চৌদ্দ বছরের ঠোক্করের অপেক্ষা করতে করতে রজকীনির বয়স নিশ্চয়ই চৌদ্দ থেকে আটাশে পৌছেছিল। আর বাংলাদেশে যারা প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তারাও বয়সের সাথে চৌদ্দ যোগ করেছেন। এখনও ছিপ ফেলে বসে রয়েছেন।
এতদিনে, ঠোক্কর তো দিল। রীতিমত কাব্যিক বিষয়-

হোজ্জা আছেন যুগে যুগে

Aug 14, 2010
একদিন দেখা গেল নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তার বাগানে মাটি খুড়ছেন। একজন প্রতিবেশি আগ্রহি হয়ে এগিয়ে এলো, কি করেন ভাইসাব।
ওইযে রাস্তায় একটা গর্ত হয়েছে দেখেননি। ওটা বন্ধ করব এই মাটি দিয়ে।
এমন উপকারীর প্রশংসা না করে পারা যায় না। তারপরও প্রতিবেশির কাজ খুত ধরা। কাজেই পরবর্তী প্রশ্ন, আর এখানে যে গর্ত হচ্ছে সেটা ?
হোজ্জা বললেন, কেন, আরেক যায়গা থেকে মাটি এনে ভরাট করব।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা কোন দেশের মানুষ ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তুরস্কের দাবী সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। সেখানে তার কবরস্থান পর্যন্ত রয়েছে।
কিন্তু সেকথা বরং আপাতত থাক। কবর যখন আছে তখন তিনি মারা গেছেন। রেখে গেছেন উদাহরন। যেমন এইমাত্র উল্লেখ করা হল। উদাহরনের সাথে সাথে অনুসারীও রেখে গেছেন অনেক। নানা সময়ে নানারকমভাবে তার অনুসারীরা তার দেখানো পথে চলেন।
বিদ্যুত সমস্যা! মানুষ পথে নামছে। মিছিল করছে। ভাংচুর করছে।
বেশ কলকারখানা বন্ধ করে সেখান থেকে বিদ্যুত অন্য যায়গায় দিয়ে দিন।
তাতেও হচ্ছে না। স্কুল কলেজ একমাস ছুটি দিয়ে দিন। সবদিকেই লাভ। রাস্তায় যানজট কমবে, বিদ্যুত স্বাশ্রয় হবে, কোচিং সেন্টারে টাকা দিতে হবে না।
তাতেও কাজ হচ্ছে না। ফিলিং ষ্টেশন বন্ধ করে দিন। তাতেও কাজ হচ্ছে না। সার কারখানা বন্ধ করে দিন।
সার কারখানা বন্ধ হলে সারের সংকট হতে পারে বলছেন ? সে তখন দেখা যাবে। আরেক যায়গা থেকে এনে পুরন করা যাবে। আগে এই গর্ত তো পুরন করি।
একমাস বন্ধ থাকলে পড়াশোনা ক্ষতি হবে বলছেন ? সে আর এমন কি ক্ষতি। এজন্য তো কেউ ভাংচুর করছে না। করলে তখন দেখা যাবে।
আমরা সবধরনের চেষ্টা করছি। করে যাচ্ছি। সেগুলো একবার দেখুন। আটটায় দোকানপাট বন্ধ করেছি। ঘড়ির কাটা পিছিয়ে দেখেছি। একেক দিন একেক যায়গায় সাপ্তাহিক ছুটি করে দিয়েছি। আর কত করব। এসব সমস্যার সমাধান একদিনে হয় না। শোনেননি আগামী দিনের কথা। আমরা উদ্বৃত্ত বিদ্যুত উতপাদন করব। এইতো দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন হচ্ছে। এইতো দেশের সব মানুষ শিক্ষার আওতায় আসছে। একটু দৈর্য্য ধরুন। এইতো শীতকাল এসে গেল বলে। এসি বন্ধ হলেই দেখবেন কোন সংকট নেই। দেশ ধনী দেশে পরিনত হচ্ছে। গুনে গুনে ২২ নম্বরে যাবে। ততদিন নাহয় অপেক্ষা করলেনই। সবুরে মেওয়া ফলে।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা জীবিত থাকা অবস্থায় বহুকিছু শিখিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় শিক্ষা দিয়ে গেছেন মৃত্যুকালে। তার কবরে গেলে দেখে আসা যায়। কবরে বিশাল আকারের দরজা। তাতে মস্তবড় তালা ঝুলানো। চারিদিকে দেয়াল নেই এই-যা।

সৎ-পাত্র

Aug 10, 2010
উনিশবার ম্যাট্রিকে ঘায়েল হয়ে থেমেছিল গঙ্গারাম
হাসছেন!
কারনটা কি বলুন তো সে উনিশবার ঘায়েল হয়েছে সেটাই কারন ? নাকি সে থেমেছে সেটা ?? নাকি যে শিক্ষা ব্যবস্থা তাকে উনিশবার ঘায়েল করতে পেরেছে সেটা ???
উনিশবার ম্যাট্রিকে ঘায়েল হওয়া মানে তার মাথায় কোন হলুদ পদার্থ নেই সেটা হাসির কারন হতেই পারে কারো মাথায় যদি জৈব সার থাকে তাকে নিয়ে হাসবেন না-তো কাকে নিয়ে হাসবেন ? আর সে যে থেমেছে সেটাও হাসির কারন হতেই পারে-
বিষয়টা একটু গোলমেলে হাসির কারন কি তার উপলব্ধি হওয়া ? তার পক্ষে এই পাহাড় ডিঙানো সম্ভব না এই উপলব্ধি তাহলে নিশ্চয়ই সেটা প্রশংসার হাসি
আর সেই যে কোন রাজার গল্প যেন পড়ানো হয়েছে বইতে, কতবার যুদ্ধে হেরে এক গুহায় শুয়ে শুয়ে দেখল কত কষ্টে একটা মাকড়সা ওপরে উঠছে দেখে আবারো নতুন উদ্দমে যুদ্ধ শুরু করল, জয়ী হল তাহলে গঙ্গারামের হাল ছেড়ে দেয়াকে বিদ্রুপ করতে হয় নিশ্চয়ই বিদ্রুপের হাসি তাহলে
আর শিক্ষা ব্যবস্থা, তারই বা কৃতিত্ব কম কিসে ? একজনকে গুনে গুনে উনিশবার ঘায়েল করেছে এমন কৃতিত্ব যার থাকে তার প্রশংসায় হাসতেই হয়
আসলে গঙ্গারাম বলে কথা তার একভাই পাগল, একভাই গোয়ার একজন যাত্রাদলে তবলা বাজিয়ে পাচটাকা পায় আরেকটি একেবারে তৈরী ছেলে নোট জাল করে জেলে গেছে নিশ্চয়ই জেল থেকে বেরনোর মত যথেষ্ট পরিমান তৈরী করতে পারেনি থানা-পুলিশ-উকিল-জজ, কম তো নয় গঙ্গারামের ভাই তো, এরবেশি আর কি হবে!
গঙ্গারামের কথাই বরং বলা যাক তার সমকক্ষ না হলেও ধারেকাছে পাওয়া যায় অনেককেই। এই যে ধরুন না অমুক-, নামটা বরং উহ্যই থাক-
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কাউকে উনিশবার ঘায়েল করতে পারে না, যদি অর্থসামর্থ্য থাকে। কাজেই সে ঘায়েল হল না। রীতিমত বাহাদুরী করার মত সার্টিফিকেটের মালিক হল। ঘাপলা শুরু হল তখনই।
সরকারী চাকরী পেতে নির্দিষ্ট পরিমান বয়স থাকতে হয়। সেটা যতদিন, ততদিন সে চেষ্টা চলল। উনিশবারের বেশি ছাড়িয়ে যখন বয়সের হিসেব পেরিয়ে গেল তখন থামতে হল। উপলব্ধি, নেতামন্ত্র আর টাকার জোর না থাকলে ওসব হয় না।
কাজেই এবার বেসরকারী চাকরী। সেখানেও একসময় উপলব্ধি হল, নিজেদের মামা-চাচা না থাকলে, চেনাজানা ছাড়া কেউ চাকরী দেয় না। খালি উলুক-ভুলুক দেখায়। হেন অভিজ্ঞতা, তেন কাজের নমুনা। বাড়াবাড়ির শেষ নেই। আরে বাবা, কাজ করতে দিয়ে তো দেখবি!
কাজেই ওসব বাদ। তারচেয়ে বরং বিদেশ যাওয়া ভাল। এদেশে মানুষ থাকে। এরপর সেই চেষ্টা চলল। এখানেও গোনাগুনতি নেই। টাকাপয়সা শেষ করে সেখানেও থামতে হল। বাপরে! শ্রমিক হিসেবে মালয়েশিয়া যাওয়া এত কঠিন!!
বরং ব্যবসা করা যাক। শেয়ার ব্যবসা। ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট। গোডাউনে ষ্টক করা। ফাষ্টফুডের দোকান। রেন্ট এ কার। সিডি-ডিভিডির দোকান। গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা। সংখ্যায় অগুনতি-
মাথার চুলে প্রতিসপ্তাহে কলম লাগানোর মত অবস্থায় গিয়ে সত্যিকারের বোধোদয় হল, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। বরং আমার যাকিছু অভিজ্ঞতা তা কাজে লাগিয়ে ছেলেকে দিয়ে শখ পুরন করতে হবে। ও হবে জগতখ্যাত। না হয়ে যায় না। যা ব্রেন। এখনই শিখেছে কিভাবে মিথ্যে সাজাতে হয়।
একসময় সেখানে ঘায়েল হতে হয়। সে বাবার অভিজ্ঞতা থেকে শেখে না বরং নিজেও বাবার মত অভিজ্ঞতা লাভ করতে চায়। শেষমেশ অবস্থা এমনই যে ঘায়েল হয়ে ভাবতে হয়, ছেলেকে দিয়ে হবে না, বরং নাতিকে দিয়ে যদি হয়।
সমস্যা হচ্ছে, সেখানে উনিশবার ঘায়েল হওয়ার সময় পাওয়া যায় না।  

টক-শো ঝাল না মিষ্টি

Aug 8, 2010
টক-শো যে টকই হবে এমন কথা নেই। সব দেশেই এতে ভিন্নমতের মানুষকে ডেকে আনা হয়। অন্তত দুধরনের বক্তব্য নিয়ে দুজন। তারা বলেন বিপরীত স্বাদের কথা। যদি বক্তার সংখ্যা বাড়ে তাহলে স্বাদের পরিমানও বাড়ে। এদের সবার বক্তব্যকে একই স্বাদের বলা কি উচিত ?
উদাহরন দিয়েই বলি। একজন উচ্চপদস্থ প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিবিদ কথা বলছেন ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋন বিষয়ে। তার বক্তব্য;
খুব সহজে ঋন পাওয়া গেছে। কোন ঝুট-ঝামেলা নেই, দেন দরবার নেই। এত সহজে ঋন পাওয়ার উদাহরন খুবএকটা নেই। আর শর্তে বলা হয়েছে জিনিষপত্র-মানুষজন ভারত থেকে নিতে হবে। এতেও আমাদেরই লাভ। কোথাও খোজাখুজি করতে হবে না। আর জিনিষপত্রের দিক থেকেও ভারত বিশ্বের সেরা মানের। না-না, মানে বলছি সেরার কাছাকাছি। সব দিকেই আমাদের লাভ। যারা বিরোধিতা করছেন তারা বিরোধিতার কারনেই বিরোধিতা করছেন।
এই বক্তব্যকে টক মনে করার কোন কারন নেই। জিলিপির চেয়ে মিষ্টি। এমনকি রসগোল্লার চেয়েও।
আবার দেখুন আরেকজনের বক্তব্য। তিনি আবার উদাহরনের মধ্যে উদারন তুলে ধরলেন;
এক মুদি দোকানদার একজনকে বললেন, আপনার বাড়িতে আমার দাওয়াত। সবচেয়ে ভাল খাবারের আয়োজন করবেন। টাকার জন্য ভাববেন না, আমি দিচ্ছি। সামান্য শর্ত মানতে হবে। জিনিষগুলি কিনবেন আমার দোকান থেকে। অন্য দোকানে কিনতে পারবেন না। বাইরের কুলিও নেবেন না কিংবা কষ্ট করে নিজে বয়ে নেবেন না। আমার দোকানের কর্মচারী ওকাজ করে দেবে। ওরসাথে আবার দামাদামি করবেন না। মজুরিটা একটু বেশি কিন্তু কোন ঝামেলা নেই।
তারপর সময়মত আমার টাকাগুলো সুদসহ ফেরত দেবেন। সেখানে জারিজুড়ি চলবে না। আপনি বাড়ি ছেড়ে যেতে পারেন, সেখানে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই ফেরত দিতে হবে। দেরী করলে সুদের ডাবল জরিমানা।
একে টক বলা যায়না। এমনকি অপক্ক তেতুল কি টোকাই খায় না এমন কাচা আমের সাথেও তুলনা চলে না। এটা রীতিমত বগুড়ার কাচামরিচের মত ঝাল।
আরেক দলও আছে। তারা শুরু করে এভাবে, আমার চুক্তির বিষয়গুলি জানা নেই। কোন সংবাদ মাধ্যমে দেখিনি। তবে আমি এই দেশের নাগরিক। ঋন তো সরকার নেয়নি, ফেরত তাদের দিতে হবে না। ঋনি হলাম আমি। ওই ঋন শোধ করতে হবে আমার মাথা বেচেই। আমার মাথা কোন সর্তে বন্ধক রাখা হল জানার সুযোগ পেলাম না।
একে সত্যেকারের টক বলতে পারেন। খেতে কষ্ট হলেও খাওয়া নিরাপদ। কোনধরনের বিপদের ঝুকি নেই এতে। বলছে বলে যাক। চলছেই-চলবেই।
কথা হচ্ছে, সব মিলিয়ে কি দাড়ায়। 
টক-ঝাল-মিষ্টি সবই যদি থাকে তাহলে শুধু টক বলা কেন ? বরং টক-ঝাল-মিষ্টি-শো বলাই বাঞ্ছনিয়।
সদাসত্য না হোক দুএক যায়গায় অন্তত সত্য বলা উচিত।

রাম নামে ভুত পালায়

Aug 4, 2010
কেউ বলে রাম নামে ভুত পালায়, কেউ বলে ভুতের মুখে রাম নাম  বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এই দুটিকথাই এককভাবে যথেষ্ট রাম নাম কি আর ভুতই বা কি যদি জানা না থাকে
রামায়নের নায়ক রাম, জন্ম অযোধ্যায় এটাই যদি ধরে নেন তাহলে একদিক সামলানো যায় কেউ কেউ একেবারে  নির্দিষ্ট করে বলে দিতে পারেন যায়গাটা হচ্ছে বাবরের তৈরী মসজিদের তলায় মসজিদটা ভাঙলেই রামের জন্মস্থান পুজা করা যায় প্রবাদের আরেক ব্যক্তি, মানে ভুতের জন্মস্থান নির্নয় নিশ্চয়ই তত সহজ না কেউ সে চেষ্টাও করেনি অন্তত বকারামের (এই রাম সেই রাম নয়) জানা নেই
তাহলে ভুত চেনার উপায় কি ? লক্ষন দেখে ?? (আবারও রামায়ন, রামের সহোদর)
এই লক্ষনও সেই লক্ষন নয় এই লক্ষন হচ্ছে আচরন কার্যকলাপ এটা দেখেই চেনা যায় কোনটা ভুত
যদিও ভুত বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই কেউ বলে ভুতের অসাধ্য কিছু নেই ছোট হয়ে বোতলে ঢুকতে পারে, বড় হয়ে আকাশ ছুতে পারে। মানুষের ঘাড় মটকে দিতে পারে রাতের বেলা স্মশানে গেলে মাথা কেটে নিয়ে ফুটবল খেলতে পারে কারো মতে ভুত বায়বীয় বাতাসের মত বড়জোর সুড়সুড়ি দিতে পারে এরবেশি করার সামর্থ্য নেই
সেই লক্ষনের কথায় আসি। এই ভুত দেখা যায় না, অনুভব করা যায় ভালভাবেই। অবস্থান করে ঘাড়ের ওপর। একবার যদি চেপে বসে তাহলে তাকে সরায় সাধ্য কার। আজকাল ভুতের ওঝা পাওয়া দুস্কর। তাকে কাঢ়ে দিয়ে সারাজীবন পার করতে হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে একেবারে শেষমুহুর্তে এসে তাকে কাধছাড়া করা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই সেটাও সম্ভব হয় না। এমনমি মারা যাবার পরও লোকের মুখেমুখে ফিরতে থাকে, অমুকের কাধে ওই ভুত ছিল।
কেউ কেউ নিতান্ত দুর্ভাগা হলে ভুতকে পালাতে হয়। যদি তেমন ওঝা থাকে ধারেকাছে। সেকথা বলার জন্যই এত বাগাড়ম্বর। এবার উদাহরন দেখা যাক।
স্কুল পড়ুয়া এক ছাত্র গাবলিগ জামাতের খপ্পড়ে পড়ল। একেবারে অস্বাভাবিক না। তারা যখন দল ধরে ঘুরে বেড়ায় একাজেই। ফলস্বরুন, তার কাধে ভুত চেপে বসল।
কদিনেই তার লোমের মত দাড়ি গজাল। ওগুলো কাটা যাবে না। ধর্মে নিষেধ। প্যান্ট-সার্টের বদলে পড়নে পাজামা, হাটু ছাড়ানো লম্বা পাঞ্জাবী। বাড়িতে তার বক্তব্য, ধর্মে বলেছে পরিশ্রম করে খেতে হয়। ওসব স্কুলে পড়ালেখা করে কি হবে ? এই জগত মায়া, পরের জগতই আসল। ওখানকার টিকিট কাটতে হয় এই জগতে।
দিন-সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে গেলেও যখন ভুত ছাড়ল না, ক্রমেই জেকে বসতে শুরু করল তখন তার পিতা নিজেই ওঝায় পরিনত হলেন। তার পথেই তাকে চলতে বললেন, দেখ বাবা, ধর্মে যখন বলেছে পরিশ্রম করে খেতে হয় তখন পরিশ্রম করেই খাও। একটা রিক্সা কিনে দেই, সেটা চালাও। এরচেয়ে ভাল পরিশ্রম আর হয়না। আর ধর্মে বলেছে নিজের আয় খেতে হয়। এতে সেকাজও হবে।
স্বপ্ন যখন বাস্তব হয় তখন তাতে আপতিতর কিছু থাকে না। সে লেগে গেল। তবে ...
একদিন। পরদিনই তার ভুত তাকে ছেড়ে গেল।
আরেক উদাহরন আরো উন্নত পর্যায়ের ভুতের। রীতিমত পড়াশোনা শেষ করে বছর কয়েক  বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করলেন। সম্ভব হল না। ব্যবসার চিন্তাভাবনা করলেন। পুজি জুটল না। যার প্রয়োজন নেই ব্যাংক তাকেই ঋণ দেয়, যার প্রয়োজন তাকে দেয় না। নতুন কিছু করতে চাইলেন, সমাজ সায় দিল না। কোন কাজেই পছন্দমত পার্টনার পেলেন না। অবশেষে তিনি রীতিমত দার্শনিক বনে গেলেন। দার্শনিক ভুত চাপল বলতে পারেন। দার্শনিক ভুতের বক্তব্য, আহা, অমুকে কত ছোট কাজ করে কত বড় হয়েছে। ম্যাকডোনালস ভাইয়েরা, একসময় গাড়িতে গাড়িতে তৈরী খাবার বিক্রি করত, কমদামে। এখন সারা বিশ্ব চালায়। এ আর রহমান, একসময় পিয়ানো ভাড়া করে এনে প্রাকটিস করত, এখন বলিউড-হলিউডে কি নামডাক। বিল গেটস, মাইক্রোসফট করে দেখিয়ে দিল কি করা সম্ভব। এদেশে ওসব হবে-টবে না। সবাই আছে ল্যাঙ মারার তালে। গৌতম বুদ্ধকে দেখুন, ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেল বণে। সমাজের ওইসব নোংরামির জন্যই তো। এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ তার কথা মানে।
তার ভুতও বিদেয় হল একেবারে নিজের বাড়িতেই। একদিনে। সত্যি বলতে কি, একরাতে।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করার পর তাকে বলা হল, গৌতম বুদ্ধ বাড়ি ছেড়ে বনে গিয়েছিলেন, তোমাকে সেটা করতে হবে না। বনে সাপ-বাঘ কতকিছু থাকে, ডাকাত থাকে, তৈরী খাবার নেই। এসব তৈরীই আছে। যা আছে তারসাথে বনের অভিজ্ঞতাও কিছুটা নাও। রাতের বেলা বারান্দায় কাটাও। শীতের জন্য কম্বল আর গরমের জন্য ফ্যান ওই বস্তু পাবে না। বিছানাও পাবে না। মশার জন্য মশারী কিংবা কয়েলও পাবে না। বুদ্ধ তো ওসব নিয়ে যাননি। এটুকু করে বুদ্ধ হতে চেষ্টা কর। আর ওই মোবাইল ফোন, এমপিথ্রি প্লেয়ার ওগুলোও তার সময় ছিল না।
ভুত পালাতে সময় লাগল না।
রামনামে ভুত পালায় কথাটা ঠিকই। যদি জানা থাকে সেই রামনাম বিষয়টা কি।

বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে

Aug 1, 2010
বেড়ালের গলায় যদি ঘন্টা বাধা থাকে তাহলে ইদুরের খুব সুবিধে হয়। বেড়াল চলাফেরা করলেই ইদুর সেই ঘন্টার শব্দ শুনে সরে পরতে পারে। বেড়ালের আর সাধ্য কি ইদুর ধরে। একেবারে না খেয়ে মরতে হবে।
কাজেই ইদুরের সভায় বুদ্ধিজীবী ইদুরগন যখন এই বুদ্ধি আবিস্কার করলেন তখন সকলেই হাততালি দিয়েছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। শুধু বোকার মত কেউ একজন প্রশ্ন করে বসেছিল, ঘন্টাটা বাধবে কে ?
বেড়াল-ইদুর নিয়ে আলোচনা বরং থাক। ওসব ইতর প্রানীর বুদ্ধি যতই থাকুক মানুষের কাছে পাত্তা পায় না। বাঙালী বুদ্ধির কাছে কখনোই না। বরং কোন দেশের ইদুরের বুদ্ধি বেশি সেনিয়ে কেউ গবেষনা করতে পারেন যদি ফান্ড পাওয়া যায়। বরং অন্য কথা বলা যাক।
আমেরিকার নাইন-ইলেভেনের অনুকরনে অনেকে বলে থাকেন ওয়ান ইলেভেন। জরুরী আইন জারী করা হল। তার মানে আইন-কোর্ট বলে কিছু নেই। তিন উদ্দিনের যা মনে আসবে তাই করবেন। কোনরকমের গাইগুই চলবে না। কেউ কেউ মিনমিন করে বলেছিলেন সংবিধানে আছে অতদিন পর্যন্ত জরুরী আইন রাখা যায়। তারবেশি থাকলে সংবিধান লংঘন হয়। কদিনপর তারাও চুপ মেরে গেলেন। কাজেই জরুরী আইন চলতেই থাকল। তারা প্রয়োজনের বেশি একদিনও থাকবেন না একথা বলে দুবছর দিব্বি কাটিয়ে গেলেন।
দৃষ্টি যদি আরো দুরে পাঠাতে পারেন তাহলে ১৯৮২ সালের কথাও মনে করতে পারেন। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির যায়গায় এলেন সেনাপ্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। চীফ মার্শাল ল এডমিনিষ্ট্রেটর ঠিক করবেন সবকিছু কিভাবে চলবে। তারপর গনভোট, নির্বাচন বহুকিছু। একসময় এরশাদ সাহেব গেলেন বটে, ততদিনে নয় বছর কাটিয়েছেন ক্ষমতার শীর্ষে।
১৯৭৫ এর ঘটনা সেতুলনায় বেশ ঘোলাটে। ঘোলাপানি কখনো পরিস্কার হয়নি। রাষ্ট্রপতি নিহত হলেন, ক্ষমতা কার হাতে কেউ জানে না। কয়েকমাস ধরে চলল এই অবস্থা। আগষ্ট হত্যাকান্ডের পর নভেম্বরে জেলখানায় যেটুকু বাকী ছিল তা পুরন হল। একসময় খালেদ মোশাররফ-আবু তাহের পেরিয়ে বেরিয়ে এল এক নাম, জিয়াউর রহমান। তারপর সেখানেও গনভোট, নির্বাচন, রাজনৈতিক দল ইত্যাদি। তিনিও বিদায় নিলেন অস্ত্রের কাছে হার মেনে।
এগুলি দেশের খারাপ উদাহরন। খারাপ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। চীরদিনের জন্য এই পদ্ধতি বন্ধ করা প্রয়োজন। কাজেই সংবিধানে এমন কিছু থাকা প্রয়োজন যেন জিয়াউর রহমান কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারেন। (আশ্চর্যজনকভাবে এরশাদ সাহেব এবং উদ্দিনসাহেব সংবিধান লংঘন করেছেন সেকথা কেউ বলে না। তারা নিশ্চয়ই সামরিক বাহিনী থেকে অবৈধভাবে সরকারে আসেননি।)
কাজেই, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধা প্রয়োজন যেন বিড়াল যখন-তখন ইদুর ধরতে না পারে। আসলে ঘন্টা বাধা হয়েই গেছে। কোর্টের রায়ের পর সংবিধান পরিবর্তন হয়ে গেছে। দেশ ফিরে গেছে মুক্তিযুদ্ধে আদর্শে।
কথা একটুখানি। ভবিষ্যতে কেউ যদি অস্ত্রহাতে সামনে এগিয়ে আসেন তখন কে সংবিধান সামনে ধরে বলবেন, এটা সংবিধান লংঘন। সংবিধানে বলা আছে এভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া যাবে না।
 

Browse