লোকে বলে পুলিশের বাড়ির কুকুরও পুলিশ। মনেহয় কথাটি অন্তত ঢাকার বাড়িঅলার বাড়ির লোকজন সম্পর্কেও প্রযোজ্য। বাড়ির কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার ইত্যাদি। ভাড়াটেদের থাকার যায়গা নেই দেখে তারা দয়া করে আশ্রয় দিয়েছেন। আর কেউ যদি পরিবারের সদস্য হন তাহলেতো কথাই নেই। একবার দেখলাম রাস্তার ধারে দুজন যুবক একজন তরুনীর দিকে অশ্লীল মন্তব্য করল। সেটা ভাষায় প্রকাশ করা আমার সাধ্যাতীত। পরবর্তী কথাটি বাড়িঅলা সম্পর্কিত বলে জানাচ্ছি। একজন বলল, ‘আমাগো পছন্দ হয় না। আমরা বাড়িঅলার পোলা।’ যুবরাজ চার্লসও এভাবে নিজের পরিচিতি প্রকাশ করবেন বলে আমার মনে হয় না।
ঢাকা শহরের বাড়িঅলা মানে তারা বাড়ি ভাড়া দেন। যাদের নিজের বাড়ি নেই তাদের আশ্রয় দেন। না দিলে কি হত বলা অর্থহীন। ঢাকা শহরের কোটির ওপর মানুষ হয় ফুটপাতে ঘুমাত, নয় গ্রামে গিয়ে হাল ঠেলত। তারা যেন সেটা না করেন সেজন্যই এরা সচেষ্ঠ। বাড়িতে বিদেশী ফিটিংশ লাগান, মেঝেয় সিরামিক টাইলস বসান, তারপর সেটা ভাড়া দিয়ে নিজে অর্ধেক ভাড়ার বাসায় থাকেন।
ভাড়া দেন কত টাকায় ? কে নেয় ?
একেবারেই বোকার মত প্রশ্ন। ভাড়া দেন ভাড়াটিয়ার যত দেয়ার সামর্থ্য আছে তত টাকায়। আর ভাড়া নেন যার বাড়ির মালিক হওয়ার যোগ্যতা আছে। খোলাসা করে বললে, যার বেতন মাসে দশ হাজার টাকা তিনি পনের হাজার টাকা ভাড়ায় থাকেন। বাকি টাকা কোথায় পান জিজ্ঞেস করবেন না। আর বাড়িঅলা সেই টাকা কি করেন, আয়কর দেন কিনা সে প্রশ্ন বাতুলতা। এটুকু বলতে পারি, যারা ট্যাক্স আদায় করেন, নীতিনির্ধারন করেন তারা ভাড়াটিয়া নন, বাড়িঅলা।
শুনেছি সরকারের একটি মন্ত্রনালয় রয়েছে ঘরবাড়ি বিষয়ে। ঢাকা শহরের জন্য রাজুক নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের কাজ কি আমি জানি না। আমার মনে হয় কোন বাড়ি ঠিকভাবে তৈরী হয়েছে কিনা, তৈরী বাড়ি বসবাসের উপযুক্ত কিনা, যাকিছু সুযোগ সুবিধা থাকার কথা তা রয়েছে কিনা, ভাড়া যুক্তিসংগত কিনা এগুলি দেখা তাদের দায়িত্ব। নাকি আমারই ভূল। সম্ভবত ভাড়ার বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারে নেই। অন্য অনেক দেশে সেটা করা হয় বলে শুনেছি, কিন্তু থাক অন্য দেশের কথা। এখানে সরকারের বোধহয় এতসব দেখার মত তত লোক নেই। অন্যান্য সব যায়গায় যেমনটা দেখা যায়। দেশে যেমন যত পুলিশ থাকা প্রয়োজন তত পুলিশ নেই, রাজুকের কাজের জন্য যত লোক প্রয়োজন তত লোক নেই, সিটি কর্পোরেশনে যত লোক থাকা প্রয়োজন নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। একাজের লোক বোধহয় একেবারেই নেই। মাঝে মাঝে ভাবি সত্যিই এদেশে মানুষ কোথায় ? এতবড় একটা দেশে চৌদ্দ কি পনের কোটি, এটা একটা সংখ্যা হল ? এত অল্প মানুষ দেশ চালায় কিভাবে? আমেরিকার মত হতে হলে লোকসংখ্যা ডাবল করতে হবে আগে। সময় থাকতে বাইরে থেকে কিছু আমদানী করলে হত।
বলছিলাম বাড়িঅলার কথা। তারা বাড়িঅলাই। আপনি ভাড়া দিয়ে ভাড়াটিয়া হতে পারেন, বাড়ির কর্তৃত্ব তাদেরই হাতে। তাদের কথামতই আপনাকে চলতে হবে। আপনি কটায় বাড়িতে ঢুকবেন, বাড়িতে কতজন অতিথি আনতে পারবেন, কতটুকু পানি-বিদ্যুত ব্যবহার করতে পারবেন সেগুলি বাড়িঅলা নিয়ন্ত্রন করবেন। আপনি মনে করতে পারেন পানি-বিদ্যুতের বিল আপনি দেন, সত্যিকারের যা বিল তারচেয়ে উপরি কিছু বেশিই দেন, সেকথা মুখে না বলে মনে মনে বলাই ভাল। অন্তত আরেক যায়গায় আরেকটা বাড়ি ঠিক না করে। এটাও ভুলে গেলে চলবে না, সব বাড়িঅলাই বাড়িঅলা।
একদিন একজনের খেদ শুনতে হল এবিষয়ে। তিনি থাকেন ছয়তলার পাঁচতলায়। পুরো বিল্ডিংএ মোট বিশটি পরিবার থাকে (নিচতলার অর্ধেক বাদ দিয়ে। সেখানে বাড়িঅলার এবং তার আত্মিয়স্বজনের গাড়ি থাকে। কিছুটা গ্যারেজ হিসেবে ভাড়াও দেয়া হয়)। তিনি বলছিলেন তার দুঃখের কথা। তার ঠিক সামনের বাড়িতে যে ভাড়াটিয়া থাকেন তার কথা। সেখানে যে ভদ্রমহিলা থাকেন তার কথা (অবশ্য তার কথা শুনে তাকে ভদ্র বলা যায় কিনা সেকথাও একবার মনে হয়েছে)।
তার বাড়িতে দরজার সামনে ময়লা রাখা ছিল। ময়লা নেয়া লোকের এসে নিয়ে যাবার কথা। এজন্য মাসে মাসে টাকা দিতে হয়।
ভদ্রহিলার আপত্তি সেখানেই। দরজার সামনে ময়লা কেন ? তিনি কি জানেন না সামনের বাড়িতে কে থাকেন ? এক্ষুনি সরান ওগুলো। ভদ্র বাড়িতে থাকেননি কখনো ?
তিনি তাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। বললেন এই ময়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য মাসে মাসে টাকা গুনতে হয়, বাড়িঅলা সিড়ি পরিস্কার করার জন্য মাসে পাঁচশ টাকা নেয়, দারোয়ানের জন্য নেয় পাঁচশ টাকা। এক পরিবার থেকে একহাজার হলে বিশ পরিবার থেকে মাসে বিশ হাজার। তারপরও ময়লা জমে থাকলে আমি কি করতে পারি ? এ টাকায় কি ময়লা পরিস্কারের লোক পাওয়া যায় না ? কত হলে পাওয়া যায় ?
উত্তরে সেই মহিলা লাথি মেরে ময়লাকে তার দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন। তক্ষুনি আবির্ভাব হল বাড়িঅলার।
‘আপনে কত এ্যাডভান্স দিছেন ? তিন মাসের ? তারপর একবছরের এ্যাডভান্স দেয়ার লগে লাগতে যান ? সামনের মাস থ্যিকা দুইহাজার বাড়ায়া দিবেন। না পারলে রাস্তা মাপেন। বহুত লোক ঘুরতাছে।’
এটাই বাস্ততা। তিনি দয়া করে আপনাকে আশ্রয় দিয়েছেন। যদি সেটা মেনে নিতে না পারেন তাহলে রাস্তা মাপুন। তিনি রাস্তা মাপছিলেন বলেই আমার সাথে দেখা এবং এসব আলাপ।
তিনি বললেন, এটা পরপর তিনবার। এর আগেরবার এক ভাড়াটিয়া এসে বাড়িঅলাকে বলেছে উঠিয়ে দেন। একলাখ এডভ্যান্স আর মাসে পাঁচ হাজার বেশি দেবে। তার আগেরজন বলেছে-
মনে পড়ল একটা গল্প পড়েছিলাম। সম্ভবত পাকিস্তানের কোন লেখকের লেখা উর্দু গল্প। সংক্ষেপে বক্তব্য বলছি, লেখক যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন তার মালিকের এত বিষয়ে আপত্তি যে তিনি মাসে একদিন এসে ভাড়া দিয়ে যান আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাড়িটা দেখে ফেরত চলে যান। ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন না।
সত্যিই কালজয়ী গল্প। আমার মনে হল এই ভদ্রলোকও সেই পরিস্থিতিতেই পরেছেন।
তিনি বললেন, ‘ঠিক করেছি ফুটপাতেই ঘুমাব। দেখুন কত হাজার হাজার মানুষ ঘুমায়। ওরাও তো মানুষ। ওরা কত ভাড়া দেয় জানেন? বিনা ভাড়ায় থাকতে পারে বলে মনে হয় না। রাস্তায় বসে যে ভিক্ষে করে সেও নাকি ভাড়া দেয় সেখানে বসার জন্য। সমস্যা একটাই। পাবলিক টয়লেট বলে কিছু নেই। ওগুলো নোংরা জিনিষ বলে কেউ চোখের সামনে দেখতে চায় না। মনে হয় রাস্তাঘাটেই কাজ সারতে হবে।’
যাওয়ার মুহুর্তে তিনি বললেন, ‘আপনাকে একটা সৎ পরামর্শ দিয়ে যাই। বাড়ির ভাড়ার খবর যদি বাড়িঅলার বউ কিংবা চাকর-দারোয়ান রাখতে শুরু করে তাহলে সাথেসাথে বাড়ি ছাড়বেন। একদিনও দেরি করবেন না।’
কোন অভিজ্ঞতায় তিনি একথা বললেন তা আর ব্যাখ্যা করলেন না। আমার মনে সন্দেহ দেখা দিল, নিশ্চয়ই তিনি ভূল করেছেন। দারোয়ানের কথা আমি বিবেচনায় আনছি না। আগেও শুনেছি তাদের হাতে দুচার টাকা না দিলে আড়ালে গালাগালি করে। সেটা স্বাভাবিক। দারোয়ান হতে হলে এ যোগ্যতা থাকতে হয়। কিন্তু বাড়িঅলার বউ- আমি চিরদিনই শুনে এসেছি মেয়েদের মন নরম। তাদের এত ভয় পেতে হবে কেন ? আমি সদুত্তর পেলাম না। মাত্র একজনই জানালেন তাকে একমাসে দুবার বাড়িভাড়া দিতে হয়েছিল। একবার বাড়িঅলার বউয়ের কাছে, আরেকবার বাড়িঅলার কাছে।
অন্য কারো কাছে যাচাই করা যেত, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি সবাই তার মত নন। অন্যেরা হয়ত অন্যকথাই বলবেন। কেউ কেউ নাকি ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতে থাকতে চামড়া পুরু করে ফেলেন। কোনকিছুতেই মাথা-নাক-কান-চোখ কোনটাই গলান না। একজন যেন বলেছিলেন, ‘মন খারাপ করে লাভ কি, আরেক যায়গায় গেলে আরেক বাড়িঅলা দেখতে হবে। তারচেয়ে একেই নতুন করে দেখি।’
আরেকজন বললেন আরো মারাত্মক কথা। রীতিমত অশ্লীল। বললেন, ‘দেহ ব্যবসায়ী আর বাড়িভাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পার্থক্য এটুকুই, দেহব্যবসায়ীদের কিছুটা দায়িত্ববোধ থাকে, বাড়িঅলার সেটা থাকে না।’
এর সথ্যমিথ্যা যাচাই করা আমার সাধ্যের বাইরে। তবে বাড়িঅলা-ভাড়াটিয়ার সমস্যা রয়েছে, ভালমতই।
রাজপথে থাকতে চাওয়া ভদ্রলোক কোন সমাধানের পথে গেছেন জানি না। আর কখনো তারসাথে আমার দেখা হয়নি। তবে তারমত আরো দুচারজনের সাথে দেখা হয়েছে। হয়ত এদের মত হাজার হাজার, নাকি লক্ষ লক্ষ মানুষ সমস্যায় পরেছেন বলেই হাজার হাজার, নাকি লক্ষ লক্ষ মানুষ এদিকে দৃষ্টি দিয়েছে। ব্যাঙের ছাতা চোখে না দেখলেও শব্দটি সকলেরই পরিচিত। একসময় নাকি ব্যাঙের ছাতার মত চীনের হোটেল খুলতে শুরু করেছিল চারিদিকে। তারপর একে অনুসরন করেছে আরো অনেককিছু। বিউটি পারলর, আইটি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, কিন্ডারগার্টেন, পুরুষদের বিউটি পারলর ইত্যাদি ইত্যাদি। ইউনিভার্সিটি দেখার অভিজ্ঞতা আমার নিজেরই হয়েছে। বর্তমানে চলছে গৃহসমস্যা সমাধান প্রকল্প। পথে চলতে খানাখন্দ এড়িয়ে যদি ডানেবামে তাকানোর অভ্যেস থাকে তাহলে দেখতে পাবেন, অমুক কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড, তমুক ডেভেলপার লিমিটেড, সমুক হাউজিং লিমিটেড। নামে লিমিটেড হলেও এদের সংখ্যার কোন লিমিট খুঁজে পাবেন না, কিছুক্ষনের মধ্যেই মাথার মধ্যে নামগুলো জট পাকিয়ে যাবে। তারপর চোখ বন্ধ করলেও চোখের সামনে নামগুলি নাচতে শুরু করবে। দেখবেন এর দেয়ালে ওর দেয়ালে নামগুলি চেপে বসেছে। ভাড়ার টাকায় বাড়ির মালিক, পাচশ টাকায় বাড়ির মালিক, বুকিং দিলেই পুরস্কার ইত্যাদি। আর যদি পকেটে যথেষ্ঠ টাকা থাকে, নিজের অন্য সব খরচ করার পর আরো আট-দশ টাকার গচ্চা দিতে কোন খবরের কাগজ কেনেন তাহলে দেখবেন তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রঙবেরঙের বাড়ির বাহার। আপনাকে নিউইয়র্ক, টোকিও, সাংহাই, মুম্বাই কোথাও যেতে হবে না, সামান্য কিছু টাকা খরচ করলে এখানেই সে সুবিধে পাবেন। সেই পরিবেশ, চারিদিকে গাছপালা ঘেরা অট্টালিকা, মাথার ওপর হেলিকপ্টার ঘুরে ঘুরে আপনাকে পাহাড়া দেবে, লেকে স্পিডবোট নিয়ে ঘুরবেন, অথবা বিশাল রাস্তায় সুমাখারের মত মোটররেস দেবেন। গেটে গেটে দারোয়ান আপনাকে দেখেই সালাম ঠুকবে, সিকিউরিটি ক্যামেরা দিয়ে আপনার ওপর নজর রাখবে। সব ব্যবস্থাই তারা করে দেবে। বিজ্ঞাপনের বাহার দেখে আমার ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপনের কথা মনে হয়েছিল।
আমি যেখানে থাকি তার পাশেই। একদিন দেখলাম ছোট্ট কাগজে হাতে লেখা বিজ্ঞাপন। লেখা আছে, সুন্দর মনোরম পরিবেশে, নিরিবিলিতে ছোট ফ্যামিলি, একরুম ভাড়া হবে।
অন্তত ঢাকা শহরে এই একই কথার বিজ্ঞাপন দেখার জন্য কাউকেই বেশি কষ্ট করতে হবে না। চারিদিকে চোখ বুলালেই দেখা যাবে। আমার কাছে বিশেষত্ব এটুকুই যে সেই মনোরম পরিবেশ এবং নিরিবিলি যায়গা আমি নিজের চোখে দেখেছি। (অবশ্য এর পাশেই অন্য বিজ্ঞাপনও দেখেছি। সেখানে লেখা- সৎ, সুশ্রী, স্বাস্থ্যবান, ধার্মিক, বিনয়ী, ভদ্র, অধুমপায়ী, সদালাপি রুমমেট আবশ্যক। মিলের অভাব কি? আকানল বাকানল-এ সুন্দর মিল হয়।)
বিজ্ঞাপনের বর্ননা একেবারে বানানো সেকথা বললেও অন্যায় হয়। চারিদিকে এত যে অসংখ্য ঘরবাড়ি তার মালিক আছেন তো বটেই। সবাই ভাড়াটিয়া নন, অনেকেই বাড়ি কিনেছেন থাকার জন্য। এমন কি আমার মত নগন্য ব্যক্তিরও অন্তত দুজন বাড়ির মালিকের সাথে আলাপ হয়েছে। একজনের গুলশানে মদের দোকান (কিনতে যাবেন না, কেনার জন্য লাইসেন্স থাকতে হয় বলে সাবধান করে দিয়েছেন তিনি। দামের উল্লেখও করেছেন।), আরেকজন- তাকেও এককথায় ব্যবসায়ীই বলা যায়।
আমার পরিচিত মাত্র দুজন। অন্যদের নাগাল পাওয়া আমার সাধ্যের বাইরে। এমনকি তাদের আত্মীয় স্বজনদেরও। সবগুলি বাড়ির বাইরে লেখা থাকে, অতিথির গাড়ি বাইরে রাখুন। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ভাই-বোন কিংবা বাবা-মা যাই হোক না কেন, তারসাথে গাড়ি নিয়ে দেখা করতে যান তাহলে গাড়ি বাড়ির ভেতর ঢুকাতে পারবেন না। ভিতরের যায়গা মালিকের জন্য সংরক্ষিত। রাস্তায় গাড়ি রেখে সেটা যেন না হারায় সেজন্য একজন পাহারাদার রেখে যাবেন। সে সেখানে বসে রাস্তায় জ্যাম তৈরী করবে, রিক্সাচালক থেকে শুরু করে পথচারী, অন্য গাড়ির চালক-মালিকের গালাগালি শুনবে এবং নিজে গালাগালি করবে। আশাকরি কোন ট্রাফিক পুলিশের চোখে পড়বে না। সে হিসেব আলাদা।
ঢাকায় ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া নামে একটি অদ্ভুত পদ্ধতি চালু রয়েছে। আপনি যদি টু-লেট লেখা দেখে কথা বলতে এগিয়ে যান তাহলে প্রথমেই আপনাকে সেবিষয়ে ইন্টারভিউ দিতে হবে। চাকরীর ইন্টারভিউয়ের মতই সাজপোষাকে প্রস্তুতি নিয়ে, জুতা পালিশ করে, টেরি কেটে এবং আরো যা-যা সম্ভব সব প্রস্তুতি নিয়েই যাবেন। হয়ত অদুর ভবিষ্যতে ভাড়িভাড়া নেয়ার সময় জীবনবৃত্তান্ত লেখা দরখাস্ত জমা দিতে হবে। মন্ত্রী-আমলাদের সুপারিশও প্রয়োজন হতে পারে। নয়ত মিটারঅলা ট্যাক্সি ভাড়া করার মত বলতে হতে পারে, বাড়ায়া দিমুনে। বিষয়টি এখনো অত উন্নত পর্যায়ে পৌছেনি। মাত্র রওনা দিয়েছে।
সব বাড়িঅলা আবার এই শ্রেনিতে পড়েন না। ইদানিং অনেক বাড়িঅলা বুঝে গেছেন কোন গরুতে লাভ বেশি। ব্যাচেলর হওয়ার অর্থ তারা সারাদিন বাড়ি থাকবে না, সারাদিন গ্যাস-পানি খরচ করবে না (আবারও বলতে হচ্ছে, বিল ভাড়াটিয়াই দেয়, প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই দেয়।), সারারাত পোলাপানের ট্যাঁ-টুঁ শুনতে হবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা, ভাড়া নেয়া যায় মাথা গুনে। ব্যাচেলর বাড়িতে ড্রইং-ডাইনিং বলে কিছু থাকে না। সেখানে চৌকি পাতা যায় সেটাই সিট। বড় চৌকি হলে একসাথে দুই সিট। অনেক ক্ষেত্রেই ফ্যামিলি হিসেবে ভাড়া দিলে যে টাকা পাওয়া যায় তার কয়েক গুন বেশি পাওয়া যায় এভাবে। ইচ্ছে করলেই বলা যায়, ‘সামনের মাসে আরেকটা সিট ফালামু।‘ এখানে যারা থাকে, বেশির ভাগই আসে সার্টিফিকেটের তাগিদে, তাদের অন্য কোন পথ নেই। সার্টিফিকেট ব্যবসায়ীরা এখনও হোষ্টেল ব্যবসা শুরু করেননি। আর বাকি যারা তাদের মাসশেষে টাকা গুণে বাড়ি পাঠাতে হয়। অন্য পথ খোজার সময়-সামর্থ্য তাদের নেই। সেজন্যই বিশেষভাবে ব্যাচেলর ভাড়া দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপনে লেখা হয়, ‘পারিবারিক পরিবেশে ব্যাচেলর রুম ভাড়া।’
কাজেই, আমার পরামর্শ, কোন পথে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই, কত দামে হিসেব করার প্রয়োজন নেই, আমেরিকায় কি হয়েছে মাথায় ঢুকানোর প্রয়োজন নেই, প্রথমে বাড়ির মালিক হোন। মাতব্বরী করার এত অসীম ক্ষমতা অন্য কোনভাবে পাওয়া যায় না। দেখে শিখুন। এক সময়ের মন্ত্রীকেও অন্য সময়ে বাড়িছাড়া হতে হয়।