দুনীতিতে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে না একধাপ পিছিয়েছে বিষয়টি আমার কাছে পরিস্কার না। পরীক্ষার ফলে রোল যদি ১ হয় তাহলে আমরা বলি ফাষ্ট বয়। এরচেয়ে ভাল কিছু হয় না। কাজেই ১৩ থেকে ১২ হওয়া উন্নতি তো বটেই। বরং আমরা আমেরিকা থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছি এটাই আপত্তি। তা তারা বিশ্বের সবথেকে ধনী দেশ, সবচেয়ে শক্তিশালি দেশ। তাদের থেকে পিছিয়ে থাকা মেনে নিতে আপত্তি কোথায়।
আমেরিকা থেকে পিছিয়ে থাকা বিষয়টি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। আসলে আমেরিকার মুল ভুখন্ড সম্পর্কে বলা হচ্ছে না। আমেরিকা মানে ইরাক-আফগানিস্তান। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তারা এই দুই দেশের দখল নিয়েছেন। নিজেদের সমস্ত সামর্থ্য ব্যয় করছেন। কাজেই তারা বাংলাদেশের মত দেশ থেকে এগিয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর সোমালিয়ার কথা নাইবা হিসেবে আনলেন। অন্তত ব্লাক হক ডাউন নামের হলিউডি ছবি যারা দেখেছেন তারা জানেন আমেরিকা কিভাবে জীবন বাচিয়ে পালিয়েছিল ওখান থেকে।
কথা হচ্ছে, কথা তা না। সরকার বলেন ওই টিআই এর রিপোর্টে কোন ভিত্তি নেই। আর বিরোধীদলের বক্তব্য, ওরাই বলে দিচ্ছে সরকার কতটা দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিকে প্রশাসনিক রুপ দিয়েছে। ওইযে, সরকারী দলের লোককে চাকরী না দেয়ায় ডিসি-এসপি পর্যন্ত হটিয়ে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন চাকরী দেয়া হবে আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকে, টেন্ডারবাজি সরকারের লোকের অধিকার। টেন্ডারের জন্য কোন অভিজ্ঞতা-সার্টিফিকেট প্রয়োজন নেই। দলের সার্টিফিকেটই যথেষ্ট। আর টেন্ডার মানেই টাকা। কাজ করতে হয় না, বিল জমা দিলেই চলে। বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ যে ওখানেই। উন্নয়ন কর্মকান্ড।
আসলে দুর্নীতি সব দেশেই থাকে। সবচেয়ে ধনী দেশেও থাকে, সবচেয়ে গরীব দেশেও থাকে। বরং দরীদ্র হলেই দুর্নীতি বাড়বে এমন কথা অন্তত পরিসংখ্যান বলে না। প্রতিবেশি দেশগুলির মধ্যে ভুটানে দুর্নীতি সবচেয়ে কম, অথচ ওরাই নাকি সবচেয়ে গরীব। না খেয়ে থাকলেও ধান্দাবাজি-বাটপারি করে না।
কথাটা ঠিক তো বটেই। যে খেতে পায় না সে পেট ভরে খেতে চায়। তার চাহিদা এটুকুই। যদি একবার খেতে পায় তাহলেই চাহিদা বাড়তে থাকে। ডাল-আলু ভর্তায় চলবে না, ওইযে কেন্টাকি থেকে যে আলু আসে ওটা চাই। দুহাজার টাকার মোবাইল ফোন কি ফোন হল! ওতে কি হাই রেজ্যুলুশন ভিডিও করা যায় ? ডাউনলোড করা যায় ??
কাজেই চাহিদা বাড়তেই থাকে। রাবনের মত দশ মাথায় চারিদিকে চোখ রাখে, দুর্গার মত দশহাতে দশদিকে আয় খুজতে শুরু করে। আর, সুযোগ তো রয়েছেই। চারদলীয় জোট সরকারের সময় নানারকম পথ তৈরী হয়েছিল, মহাজোট সেই পথকে অলিতে-গলিতে পরিনত করেছে। হাত বাড়ালেই টাকা। টাকা মানেই ক্ষমতা। অমুক মেয়েকে আমার পছন্দ, বাধা দেবে কে ? মেরে ফেলব না।
কেউ কেউ বলেন স্বাধীনতা পরবর্তী পরিস্থিতি ফেরত আসছে। তখন নাকি এটাই ঘটত। যাকে পছন্দ তুলে নিয়ে গেলেই হল। এভাবেই বিরত্বের পরিচয়। অনেকেই বীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। কেউ আবার বলছেন দেবার আর বাকি কি ? চাকরী পাবার আশা গেছে, ব্যবসা গেছে, জমিজমা যাচ্ছে, জীবন যাচ্ছে। এরপর হয়ত বলতে হবে আমরা ক্ষমতাশীন দলের ক্রীতদাস। দয়া করে দেশে থাকতে দাও তাই থাকি। কাজকম্ম করতেও তো মানুষ লাগে। আমরা সেই ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। একসময় বিদেশীদের দাসত্ব করতে হয়েছে এখন নাহয় যারা স্বাধীনতা এনেছে তাদের দাসত্ব। পার্থক্য কোথায় ?
কেউ কেউ আশংকা করছেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে। বেশি বাড়াবাড়ি নাকি সৃষ্টিকর্তাও মেনে নেন না। কোন একভাবে একহাত দেখিয়ে দেন।
এই আশংকা সম্ভবত অমুলক। পুরনো পথে ফেরা, সেটা হয়ত হবে না। পাশে ভারত আছে না! তাদের প্রাক্তন সেনাপ্রধান বলেছেন একবার ঢাকার দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দিল্লি আর সেভুল করবে না।
এটাই ঠিক। ভারতের জন্য ট্রানজিট ফি স্থগিত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে সাংসদ ভারতে গিয়ে ত্রানসামগ্রী দিয়ে আসছেন। দাদা পাশে থাকলে ভয় পাবার কিছু নেই।
অমুলক আশংকা করবেন না।