সাম্প্রতিক বিষয়টার শুরু হঠাৎ করেই। গ্রীণ ক্রিসেন্ট নামে একটা মাদ্রাসায় বিপুল পরিমান অস্ত্র পাওয়া গেছে। কি পরিমান অস্ত্রকে বিপুল মনে করা হয় জানিনা, তবে যে দেশে পুলিশ এবং সন্ত্রাসী ছাড়া অন্য কারো কাছে অস্ত্র থাকার কথা না সেই দেশে অস্ত্র পাওয়া গেছে। বড় ধরনের সন্ত্রাসী আগ্রমনের প্রস্তুতি ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। সরকারের-গোয়েন্দাবাহিনীর-পুলিশের বিরাট সাফল্য। এর পেছনে যারা আছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দশ-বিশ গ্রামের মানুষ দেখতে এসেছে কি হল সেখানে। বিশাল বাড়িটি এতদিন তারা দেখেছে দুর থেকে। ওতে আর দেখার কি আছে। কখনো খোজ করার ইচ্ছে হয়নি। এখন কি না দেখে পারা যায়। খবরের কাগজে ছবি উঠেছে, টিভিতে দেখাচ্ছে। চল ভাই দেখি। সকালে গেলে সন্ধ্যার আগেই ফেরা যাবে। খাবারের পোটলাটা, পানির বোতলটা নিয়ে চল।
হৈচৈ হয়েছে দেশের বাইরেও। যিনি এর প্রধান উদ্দোক্তা তিনি বৃটেনের নাগরিক। সেখানেও প্রশ্ন উঠেছে, সন্ত্রাস কি অন্য দেশ থেকে তাদের দেশে যাচ্ছে নাকি তাদের দেশ থেকেও অন্যদেশে ছড়াচ্ছে। দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে। একদলের বক্তব্য এরা দেশের শত্রু, এরা স্বাধীনতার শত্রু, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। এই বিশেষ ধরনের মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়া উচিত। কেউ আরেকটু সংযত হয়ে বললেন অন্তত খবরদারী করা উচিত। তারা যা খুশি করতে পারে না। অন্যদের বক্তব্য, নীরিহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এসবই সাজানো। পুলিশ অভিযানের আগেই টিভিতে অস্ত্র উদ্ধারের খবর প্রচার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের কোন স্বাক্ষী নেই।
সরকারের অবস্থান এবিষয়ে যা দেখা গেছে তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। তারা আলোচনায় বসেছেন। সরকারী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি সেটাই সরকারের পদক্ষেপ হয় তাহলে বলতে হবে বহু যুগের একটা অন্ধকারে আলো ফেলা হচ্ছে। সরকার শিক্ষার বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবার সেটা কাজে করে দেখানোর সময়। যারা মাদ্রাসায় আশ্রয় নেয় সেইসব নিঃস্ব শিশুদের প্রয়োজন আশ্রয়, শিক্ষার সুযোগ। তারা সন্ত্রাসী হয়ে পৃথিবীতে আসেনি, হওয়ার জন্য পৃথিবীতে আসেনি। তাদের শিক্ষা প্রয়োজন। সেই শিক্ষায় ধর্ম শিক্ষা থাকতেই পারে, তবে মুল শিক্ষা প্রয়োজন বিজ্ঞানে।
হ্যা, বিজ্ঞানে। এইসব জোব্বা-টুপি-দাড়িধারীরা বিজ্ঞানকে ভয় পান। কারন তাতে তাদের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়। অন্যরা যত মুর্খ থাকবে তাদের মুর্খতা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ তত কম। কাজেই তাদেরকে বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে বিরত রাখো। যে যেভাবে পারো। তাদেরকে কোরান-হাদিস মুখস্ত করাও। তাতেই উন্নতি। এই আমপারা পড়া হামবড়ারা যে ইসলামের যুগের গৌরব করে তার ইতিহাস কখনো দুপাতা পড়ে দেখা প্রয়োজন মনে করে না। ইসলামের যুগে যারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রন করেছে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে যাকিছু আবিস্কার করেছে, যার সুত্র ধরে বর্তমানের পশ্চিমা বিশ্বের উৎপত্তি তার পিছনে ছিল বিজ্ঞান। ধর্ম নয়। সেই যুগে তারা হিসেব কশে বের করতেন দিনের ঠিক কোন সময় নামাজ পড়তে হবে, কোনটা কাবার দিক। বর্তমানের ঘড়ি আর অন্যান্য যন্ত্র ছাড়াই নির্ভুল ছিল সেই হিসাব। তারা অংক করে, হিসেব কশে বের করেছিলেন বিশ্বের আয়তন, পরিধি। তাদের ৬০০ বছর পর পশ্চিমারা যখন আধুনিক পদ্ধতিতে সেই পরিধি বের করে বলল নির্ভুল, দেখা গেল তাতে আগের হিসেব থেকে বিচ্যুতি দুমাইলের কম। এতে অলৌকিকত্ব নেই। আছে তাদের মেধা, তাদের অংকের জ্ঞান, বিজ্ঞানচর্চা। সেসময়ের যত মানুষের নাম পাওয়া যায় তারা প্রত্যেকেই ছিলেন জ্ঞানের সাধক। বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, রসায়নবিদ। তাতে সবসময় সহায়তা করে গেছেন শাসকেরা। তাদেরই টাকায় জ্ঞানচর্চা করা সম্ভব হয়েছে। অমুকে ইহুদি একথা বলেও কাউকে ঠেলে দেয়া হযনি। যারা কোরান-হাদিসের টিকা লিখতেন, যারা গ্রীক-ভারতীয় দর্শনের অনুবাদ করতেন তাদের বড় একটা অংশ ছিল ইহুদি। একসাথে মিলেমিশে তারা জ্ঞানচর্চা করতেন।
যখন থেকে ইসলাম সেপথ ত্যাগ করেছে তখন থেকেই তাদের ক্ষমতার পরিবর্তন শুরু করেছে, কর্তৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছে পশ্চিমাদের হাতে। আজ তাদের গালাগালি করা জোব্বা-টুপি ধারন করাই ইসলামের একমাত্র সম্বল। আর সম্বল অস্ত্র হাতে নেয়া। সোমালিয়া-আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মত অবস্থা তৈরী করা। ইরাণ কিংবা তুরস্ক তাদের উদাহরন হয় না। ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই ইরানে যা হচ্ছে সেটা দেখা প্রয়োজন মনে করেন না। সেখানে লক্ষ লক্ষ বিজ্ঞানী-গবেষক তৈরী করা হচ্ছে। নিজেদের তৈরী স্যাটেলাইট পাঠানোর যোগ্যতা অর্জন করেছে তারা। পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সেটা অস্ত্র তৈরী। তাদের তালিকায় এটা সবচেয়ে সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ। সন্ত্রাসে মদদ দেয়। বিশ্বকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া। মার্কিনীদের বন্ধু সৌদিরা সেটা করে না। তবে ইরান ইরাক এবং এই অঞ্চলের কিছু মানুষ জানে এই অঞ্চল একসময় কি ছিল। কেউ কেউ সেটা মনে রেখেছে। সেপথ থেকে বিচ্যুতির কারণ জানার চেষ্টা করছে। চেষ্টা করে যাচ্ছে সেইদিকে যাওয়ার। তুরস্কে গত ৫/৭ বছরে শিক্ষা-গবেষনা ব্যয় দ্বিগুন করা হয়েছে। তাদেরকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যায়গা দেয়া হবে না। আগে তাদের মাথা নিচু করতে হবে।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তানে টুপিধারীদের দৃষ্টিতে সেগুলো ধরা পরে না। তাদের দৃষ্টি সৌদি রিয়ালের দিকে। সেটা সহজে বাগানো যায়। আবহাওয়া যাই হোক না কেন মরুর দেশের পোষাক পড়ে দৃষ্টি কাড়া যায়। সমাজে কর্তৃত্ব করা যায়। ধর্ম গেল, এই এক কথা বললে বহু মুর্খ জীবন দিতে এগিয়ে আসে। বোমা মেরে নিজের জীবন দেয়, কাফের মেরে বেহেসতের টিকিট কাটে।
সরকার যদি মাদ্রাসাগুলিকে আধুনিক করতেই চান, গাঠছড়া বেধে নামুন। এটা দলীয় রাজনীতির বিষয় না একথা পরিস্কার করে যা করার করুন। সাধারন মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখান। মানুষ যেন ভাবতে শেখে তার সন্তানকে অমুক যায়গায় পাঠানো প্রয়োজন নেই, মাদ্রাসায় পরলেও ভবিষ্যতে নিজে চলতে পারবে। আমাদের গা ঘেষে থাকা ভারতেই মাদ্রাসা থেকে স্কুলে, স্কুল থেকে মাদ্রাসায় যে কোন সময় বদলী হওয়া যায়। কেরালায় অন্য ধর্মের ছাত্রছাত্রীরাও মাদ্রাসায় যায়। কোরান হাদিস শেখে। কোরান হাদিসকে অন্তর থেকে ভালবাসলেই সেটা সম্ভব। সাপের মন্ত্রের মত মুখস্ত করলে সেটা হয় না।
সংস্কার করা হবে একথা মুখে বলাই যথেষ্ট নয়, রাজনীতি করাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন দায়িত্ব পালন করা। গ্রীণ ক্রিসেন্টে কি হল সেটা নিয়ে কদিন মাতামাতি করে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাবেন না। সারা দেশের মাদ্রাসাগুলিকে আধুনিক করতে পরিকল্পনা কি, কি পরিমান অর্থ বরাদ্দ করা হবে সেটা প্রকাশ করুন। প্রচার করুন। অর্থের হিসেব পাগলেও বোঝে। সাধারন মানুষকে বুঝানোর এরচেয়ে সহজ পথ নেই। মানুষকে বলুন, ধর্ম এবং বিজ্ঞানে বিরোধ নেই। জোব্বা-টুপি পড়লেই ধর্মপালন হয় না।
0 comments:
Post a Comment