একবার খবর বেরল বিশ্বের ৫০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের নাম নেই। রীতিমত হৈচৈ। পথেঘাটে সেই লিষ্টের ফটোকপি বিক্রি হল। সচেতন দেশবাসি সেগুলি কিনে দেখলেন দেশের কি দুর্গতি। গালাগালি করলেন একে ওকে।
তবে সময় থেমে থাকে না। দেশ উন্নতির দিকে যায়। এবারে দেখা গেল ৫ হাজারের মধ্যে খুজলে নিচের দিক থেকে নামটি কোনমতে দেখা যায়। এবারে হৈচৈ হল না। এটাই স্বাভাবিক। এটাই হবে। যারা এসব লিষ্ট করে তারা নিজেদের স্বার্থে করে। আমাদের ভাল তাদের সহ্য হয় না। কোন ইউনিভার্সিটির ছাত্র সবচেয়ে সচেতন, আধুনিক, রাজনীতিতে সক্রিয়, দেশপ্রেমিক, সংস্কৃতি প্রেমিক তার একটা লিষ্ট করে দেখাক তো। জানে সেখানে কে চ্যাম্পিয়ন হবে। সেপথে তারা যাবে না।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। কে পড়ে সেখানে ? যার বাপের টাকা নেই। পড়াশোনার খরচ দিতে পারে না, বিদেশ পাঠাতে পারে না, ব্যবসার মুলধন দিতে পারে না তারাই তো। থাকলে সেখানে পাঠাবে কেন ? দেশেই বিদেশি স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি থাকতে।
আর যায়, যারা ছাত্রের খাতায় নাম লিখিয়ে কোটিটাকার টেন্ডারবাজি করতে পারে, কয়েকযুগ ছাত্রনেতা হয়ে থাকতে পারে, তারপর জাতিয় নেতা হতে পারে। সেটাই সহজ পথ।
এই নেতাদের বাইরে যারা সেখানে যায় তারাও জানে তাদের ভবিষ্যত। সার্টিফিকেট দিয়ে হবে লবডংকা। তারচেয়ে যদ্দিন এই পরিচয়ে থাকা যায়, বাপের জমি জেরাত যতদিন আছে ততদিনই সুখ। বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এমন সময় আর কি হাতে আসবে ? দেখেন না ভিডিওতে কি দেখায়। এটাই তো জীবন উপভোগের সময়। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। একবার গেলে ফেরত আসে না। যদ্দিন এই পরিচয়ে থাকা যায় নাচ-গান-আনন্দ-ফুর্তি করে নাও। বয়স থেমে থাকে না। একবার গেলে ফেরত আসে না। দেখেন পশ্চিমের ভিডিওতে। এটা নিয়ে নাকি বানিজ্যও হয়। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের।
এ্যা ? কি বললেন ? সবাই এসব করে না ? তবে আমি যাদের দেখছি তারা কারা। ইউনিভার্সি-কলেজ ছাপিয়ে স্কুল পর্যায়েও পৌছে গেছে। বলা যায় না এমনসব কাজ করছে, ভিডিও করছে, দেশের মানুষকে দেখাচ্ছে, হাতেহাতে মোবাইলে ঘুরছে, সিডির দোকানে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে, ইন্টারনেটে সারা পৃথিবীর মানুষকে দেখাচ্ছে। রীতিমত নাম-ধাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় দিয়ে। কি বলছেন ? এসব নোংরা কথা বলতে নেই ? দুএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও ঘটে থাকতে পারে ? কিন্তু একপাত্র দুধ নষ্ট করার জন্য তো এককণা গোমুত্রই যথেষ্ঠ। একটা সমাজ নষ্ট করার জন্য তো একজনই যথেষ্ট।
এসব আলোচনা করলে দেশের ভাবমুর্তি নষ্ট -, আচ্ছা ঠিক আছে। মুখ বন্ধ করি তবে। অন্য কথা বলি।
সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তার দেশে সকলের উচ্চশিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন নেই। বেশিরভাগের প্রয়োজন মাধ্যমিক শিক্ষা, তারপর কারিগরী দক্ষতা। সেকথা বলতে দেবেন ? বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন দশ টাকা বাড়াবেন ?
বাপরে! যে বলে সে যে দেশের শত্রু। জনগনের শত্রু। দেশকে অন্ধকারের দিকে নিতে চান। গরীবের শিক্ষার সুযোগ বন্ধ করতে চান। জীবন দিয়ে হলেও সেটা হতে দেয়া হবে না। তাদের বেতন যদি দশ টাকা বাড়ে তাহলে খরচ কমাবে কোথায় ? মোবাইল ফোনে ? ফাষ্ট ফুডের দোকানে ? পার্কের ভাড়া করা বেঞ্চে ? সাইবার ক্যাফেতে ? ফ্যাসন শোতে ? বাসে-রিক্সায় ? আগে সেসব যায়গায় ষ্টুডেন্ট কনশেসনের ব্যবস্থা করুন তারপর বক্তৃতা দিন।
সবাইকে উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট নিতে হবে। তারপর সেটা হাতে নিয়ে হণ্যে হয়ে বসে থাকবেন কে তার জন্য কি করে দেখার জন্য। এত বড় সার্টিফিকেট নিয়ে ছোট কাজ করা যায় না। যে জনদরদী নেতা চাকরীর তদবির করেন তার দল করতে হবে। নয়ত বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। মাষ্টার্স পাশ করেছেন তাতে কি, নতুন করে ইংরেজি শিখুন। প্রতিদিন নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার হচ্ছে। ভয়-জড়তা সব এড়িয়ে মজার মজার কৌশলে ইংরেজি শেখা। এক ক্লাশেই ৪০ মিনিট অনর্গল বক্তৃতা দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা। অমুক স্যার তমুক যায়গায় শেখান। ইস্কুলে ব্যাকরন শেখেননি তো হয়েছে কি ? অমুক স্যারের কাছে যান। তার মেথডে শিক্ষা নিন। তারপর রওনা দিন বিদেশে। হোক না মরু নয়ত মেরু, রাস্তা ঝাড়ু দিলে কেউ টিটকারী দেবে না। ডলার-পাউন্ড-ইউরো পাওয়া যাবে। বাড়ির লোকেরা বলবে উচ্চশিক্ষিত ছেলে বিদেশে থাকে। মাস মাস টাকা পাঠায়। দেশের অর্থনীতি উন্নত হয়।
এটাও বলা যাবে না ? তবে কি বলব আমার জানা নেই।
সরাসরি জানাই তাহলে।
আমি উচ্চ শিক্ষা চাই না। নিম্ন শিক্ষার নিশ্চয়তা চাই। যেখানে স্কুলেই একজন গ্রামার শিখবে, ইংলিশ কোর্স প্রয়োজন পড়বে না। ইংরেজি বলতে শিখবে, স্পিকিং কোর্স প্রয়োজন হবে না। আর বাংলায় রচনা লিখতে শিখবে, মুখস্ত করবে না। আর ইতিহাস শিখবে, নিজেকে ইউরোপের-আমেরিকার-আরবের উত্তরসুরি মনে করবে না। আর বিজ্ঞান শিখবে, প্রকৃতির দয়ায় ঝড়-বন্যা-খরা-আবাদ হয় মনে করবে না।
0 comments:
Post a Comment