পুনরাবৃত্তি চাই না

May 7, 2009

২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংস ঘটনার তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে ২ মাসের মধ্যে, ৬ মাসের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবে, অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে। অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক খবর। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। আইনের দৃষ্টিতে সবার অধিকার সমান। কেউ নিপীড়িত হবে না। অপরাধীর বিচার করবে আদালত। কেউ ক্রসফায়ারে মারা যাবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিশ্বভ্রমনে একথা বলে এসেছেন জেনেভায়।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়। যাবে না আর যাচ্ছে এর মধ্যে যতটুকু ফারাক প্রশ্নটাও ততটুকু। ক্রসফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময়ও গেছে। তখন বিরোধীদল হিসেবে আওয়ামী লীগ বারবার ওর প্রতিবাদ করেছে। তারা এটা বন্ধ করবে। ক্ষমতায় আসার পরও বলা হয়েছে বারবার। যতবার প্রশ্ন করা হয়েছে ততবার। তারপরও ক্রসফায়ার ঘটে চলেছে। ৭ বছর আগের ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের বিচার করার প্রশ্নে তাই প্রশ্ন থেকে যায়।

নির্বাচনের পর গত ৩ মাস ধরে যা ঘটেছে, যা ঘটছে, প্রতিদিন খবরের পাতা ভরে যেসব খবর-ছবি ছাপা হচ্ছে তাতে কি আশা করতে পারি তদন্ত করে অপরাধীদের বিচার করা হবে ? প্রধানমন্ত্রী একে বলেছেন দখলদারিত্বমুক্ত করা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে আশার কথা, এবারের তদন্ত কমিশন হবে নিরপেক্ষ। কাজেই তদন্তও হবে নিরপেক্ষ। জোট সরকারের সময় নিরপেক্ষতা বলে কিছু ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও না। এটাই উপযুক্ত সময় নিরপেক্ষ বিচারের।

যারা এই তদন্ত দাবী করেছেন তারা মহামানব। সমাজের কোনরকম ত্রুটি তারা দেখতে চান না। নিজের সমস্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজন ত্যাগ করে মাঠে নেমেছেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। তাদের কাছে আমার সরল একটি প্রশ্ন, বর্তমানে যা ঘটছে সেটা কি আপনাদের চোখে পড়েছে ? না-কি এখানে কিছু বললে সেটা সেমসাইড হয়ে যায় ? ফ্রেন্ডলি ফায়ার ?

বর্তমান বিরোধী দল সংসদে নগন্য। তবে আমাদের রাজনীতির ধারা বলে দেয় আগামীতে তারা নির্বাচনে বিজয়ী হবে (যদি নির্বাচন হয়)। তখন কি আপনারা আবারও ঘাপটি মেরে থাকবেন ? অপেক্ষা করবেন আবারও কখন নিরপেক্ষতা ফিরে আসে ?

২০০১ সালের নির্বাচনের পর যা ঘটেছে তা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এর তদন্ত হওয়া উচিত, দোষিদের কাঠগড়ায় দাড় করানো উচিত, এতে কোন সন্দেহ নেই। দিন বদল হওয়া উচিত। দিন বদলের কথা বলে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সেই দিনবদলের নমুনা কি দখলদারিত্বমুক্ত করা ?

এই একই বিশ্বে আরেক প্রান্তে একবার চেয়ে দেখুন দিনবদল কিভাবে হয়। যে বুশের কারনে সারা পৃথিবী আমেরিকাবিরোধী হয়েছিল এখন তারাই ওবামার কল্যানে প্রশংসা করছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা, ইরাক-আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মত জটিল সমস্যাগুলোও তত জটিল মনে হচ্ছে না। সামান্য হলেও আশার আলো দেখছে মানুষ। অর্থনীতির হিসেবে তাদের সাথে আমাদের কোন তুলনা চলে না। তাই বলে নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও কি সেটাই হবে ?

২০০১ সালের অপরাধীদের বিচার হওয়া প্রয়োজন, তবে এই মুহুর্তে যা ঘটছে বন্ধ করা জরুরী। নয়ত মানবতাবাদ বলে যত চিৎকারই করুন, মানবতা ধরা দেবে না। ইতিমধ্যেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা হয়ে গেছে। আমরা এর থেকে পরিত্রান চাই।

0 comments:

 

Browse