কুকুর ঠেকাও

May 7, 2009

পত্রিকায় ছবিসহ খবর বেরিয়েছে, যারা বহুটাকা খরচ করে বাড়িতে গাভি পালন করে দুধ উৎপাদন করেছে তারা দুধ বিক্রি করতে পারছে না যাদের দুধ কেনার কথা তারা কিনছে না ফলে আর কোন উপায় না দেখে তারা দুধ ঢেলেছে রাস্তায়

এটা মুদ্রার একপিঠ আরেকপিঠ হচ্ছে যার দুধ কেনা প্রয়োজন, বাড়িতে শিশু রয়েছে, অসুস্থ মানুষ রয়েছে সে হাহাকার করছে দুধের জন্য ভেজাল দুধের লিটার চল্লিশ টাকা-পঞ্চাশ টাকা একই পত্রিকায় ছবিসহ খবর ছাপা হয়েছে ভেজার দুধবিক্রেতা আটক পাউডার দুধ নয়, রীতিমত তরল দুধ। বিশাল বিশাল দুধের পাত্র সহ মালিকদের সারবেধে বসিয়ে রেখে ছবি উঠানো হয়েছে পাউডার দুধে কি থাকে জানা নেই মেলামিন আছে কিনা যাচাই করতে দুমাস লেগেছে যদি এতে অর্ধেক আটা মেশানো থাকে জানতে কতমাস লাগবে জানা নেই

সে যাকগে কথা হচ্ছে কেউ দুধ পায় না, আকাশ ছোয়া দাম, কেউ দাম না পেয়ে মাটিকে দুধ খাওয়ায় এই অবস্থা দেখে হিসেব কষতে বসল আমার পরিচিত একজন

প্রথম ধাপ, একটা ভ্যানগাড়ি কেনা প্রয়োজন নেই মাসচুক্তি ভাড়া নিলেই চলবে দ্বিতীয় ধাপ, যাদের বাড়িতে গরু আছে তাদের জানানো তারা যেদামে বিক্রি করে তারচেয়ে কিছু বেশি দাম দিয়ে কেনা হবে টাকা নগদ শর্ত একটাই, দুধে কোনরকম ভেজাল থাকা চলবে না একেবারে সকাল সকাল দিতে হবে সকালে ট্রাফিক জ্যাম থাকে না একঘন্টার কম সময়ে ঢাকায় এনে বিক্রি শুরু করা যাবে

তিন নম্বর, প্রচারনা যাদের প্রয়োজন তারা যদি জানে টাটকা-নির্ভেজাল দুধ কমদামে পাওয়া যায় তাহলে প্রচারে সমস্যা হবে না দুচার দিনে মানুষ জেনে যাবে কখন কোথায় দুধ পাওয়া যায় লোকে এসে লাইন দিয়ে কিনবে কয়েক মিনিটে বিক্রি শেষ দৈনিক পাচশ লিটারও যদি ব্যবসা হয় তাহলে পাচ টাকা করে আড়াই হাজার টাকা এক হাজার লিটারে পাচ হাজার টাকা এখান থেকে খরচ বাদ দিলে-

গাড়ির খরচ, দুএকজন লোকের খরচ, কতই বা হবে দিনে দুহাজার আচ্ছা তিন হাজারই হল তারপরও দুহাজার লাভ মাসে ষাট হাজার বছরে সাত লাখের ওপর

এমন সুযোগ থাকতে বসে থাকে কে ? এত টাকা খরচ করে মরুভুমিতে গাছে পানি দিতে যায় কে ?

আরে থামুন থামুন এই হিসেব আরেকজন করেছিল তার হিসেবটা একবার জেনে নিন

তার দৃষ্টি ছিল সবজির দিকে গ্রাম থেকে টাটকা শাক-সবজি এনে শহবে বিক্রি করা জানেন নিশ্চয়ই গ্রাম থেকে ঢাকা পৌছতে দাম ডাবল হয়, কাওরান বাজার থেকে আপনার বাড়ির কাছের দোকানে পৌছাতে আবারও ডাবল হয় তারও লক্ষ্য ছিল দুপক্ষেরই উপকার করা কৃষকের আর ক্রেতার

তারপর যা হল যায়গা দেখতে শুরু করল মোটামুটি চলনসই একটা যায়গার ভাড়া ত্রিশ হাজার সেটাও কোনক্রমে দেয়া সম্ভব ভাড়ার টাকা আসবে লাভের টাকা থেকেই

এডভান্স ৫ লাখ বাপরে!

আলাপ সালাপ করে এই টাকা কমানো সম্ভব। আলাপের মাঝখানেই পাড়ার তমুখ ভাইয়ের প্রতিনিধি এসে হাজির, ‘ভাইজান কি করবেন ? ব্যাবসা। করেন, করেন কহন কি সাহায্য লাগব কইবেন আমরা দশজনে রইছি। যহন ডাকবেন পাইবেন। তয় কামাই করলে তো ট্যাকস দিতে হয় আপাতত হাজার পঞ্চাশ দ্যান বড়ভাইরে বুঝায়া কমুনে সরাসরি তার কানে গেলে আপনের সমস্যা তেনার আবার অল্প টাকায় চলে না মান-ইজ্জত বইলা তো কথা আছে

‘তার ব্যবসার ইতি সেখানেই আপনি কি শুরু করবেন ?’

‘না

শাইখ সাব বহু ভালভাল কথা জানেন। ভালভাল কথা বলেন কি করলে কি হবে সেটা তিনি দেশের মানুষকে জানান অন্যদেশের মানুষকে জানান। তিনি কি জানেন না মানুষ এসব কাজে কেন হাত দেয় না

জানেন সব যায়গায় মুখ খোলা যায় না যদি যেত, যদি মুখ খুললে কাজ হত তাহলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘড়বাড়ি বিক্রি করে বিদেশ দৌড়াত না ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনেরই মাথায় হাত পড়ত না পথেঘাটে হাজার হাজার বেকার ছিনতাইয়ের সুযোগ খুজত না পুরো শহর জুড়ে লক্ষ লক্ষ বেকারের ভিড় জমত না

বক্তব্য একটাই। সরকারের দেয়া চাকরী দরকার নেই দয়া দরকার নেই একটাই চাওয়া। ভিক্ষে চাই না মা, কুকুর ঠেকাও

0 comments:

 

Browse