চোরের সাথে চলা যায়, ভালর সাথে চলা দায়

May 20, 2009

চোরের সাথে কি বাস করা যায় ?

এককথায়, যায়। যদি আপনি জানেন সে চোর। প্রতিমুহুর্তে চুরির সুযোগ খুজছে। সুযোগ পেলেই চুরি করবে। বিষয়টি কষ্টকর। প্রতিমুহুর্তে তক্কে তক্কে থাকতে হয়। মনে হয় এই বুঝি চুরি হল। আর এই সাবধানতা রক্ষা করে আপনাকে। অন্তত দামি জিনিষপত্র সরিয়ে রাখেন। যাবে অল্পের ওপর দিয়েই যাক। এবং যায়ও। চোরের মনেও কথাটা থাকে। সে তার সীমা জানে। জানে কতটুকু চুরি করে রেহাই পাওয়া যাবে। সেই সীমা সংঘন করা যাবে না।

যদি বিপরীত অবস্থা হয় ?

আপনি যাকে ভাল মনে করছেন, ধরে নিচ্ছেন সে আপনার প্রকৃত বন্ধু, আপনার মংগলকামী, যারকাছে আপনার লুকনোর কিছু নেই, হারাবার কিছু নেই, সে যদি চুরি করে ?

আপনি পথে বসবেন।

আমার পরিচিত একজনের সিডির দোকান। তবে মুল আয় আসে ভিডিও ক্যাসেড থেকে সিডি বানিয়ে। অনেক কষ্টে কেনা একটা ডিজিটাল ক্যামেরা থেকে প্লে করে কম্পিউটারে নেয়, তারপর সিডিতে কপি করে দেয়। একঘন্টার সিডিতে ১০০ টাকা। কখনো কখনো আরো কম। অনেকসময় আক্ষেপ করে এরচেয়ে রিক্সা চালালে লাভ বেশি। লোক রাখার সামর্থ্য নেই। একাই সব কাজ সারে।

তো সেদিন তার পরিচিত একজনকে বসিয়ে রেখে ছোটকাজ সারতে গেল। ফিরে এসে দেখে সেই বন্ধু বিদায় নিয়েছে। সাথে উধাও হয়েছে ক্যামেরাটা। তার ভেতর কাষ্টমারের বিয়ের ভিডিও ক্যাসেট।

ফোন গেল তার বাড়িতে। তার মা বললেন সে বাড়ি নেই। রাতে ছাড়া আসে না। তার ফোন নাম্বার চাওয়ায় বললেন তারকাছে ফোন নেই।

কথা চালাচালি হল বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে। আমি যখন জানলাম তখন তথ্য দাড়িয়েছে এমন;

সে জরুরী ফোন পেয়ে সেখান থেকে চলে গেছে। ক্যামেরা সম্পর্কে কিছু জানে না।

তারকাছে মোবাইল ফোন নেই।

সে সকালে বের হয়েছে, রাতে ফিরবে।

আমি নিজেকে একেবারে গর্ধভ মনে করি না। কথার অসংলগ্নতা কিছুটা বুঝি। কিন্তু যাক সেসব কথা। মোটকথা শেষপর্যন্ত ক্যামেরা ফেরত পাওয়া গেছে।

এবারে নিজের কথা বলি। বিষয়টি আমাকে এত ভাবায় কেন ?

আমার পরিচিত একজন। পরিচয় ১৫ বছরের ওপর। শিক্ষাজীবন থেকে। শুধু পরিচয়ই না, রীতিমত ঘনিষ্ঠতা। এমন বিষয় নেই যা নিয়ে আলাপ হয় না। প্রয়োজনে নিজের কাজ ফেলে আমার করে দিতেও আগ্রহী।

তো বিষয়টা হল, আমার একটা কাজ হল তার মারফত, কাজের বিল ও আসার কথা তার মারফত। একমাস যায়, দুমাস যায়। শুনলাম অসুস্থ। একবার দেখা দিয়ে গেল। জানাল হাসপাতালে সব টাকা খরচ হয়ে গেছে।

আমি মাথা ঘামালাম না। আবারও কাজ, আবারও বিল। আবারও তার মারফত। আমার অর্থ প্রয়োজন। শেষে আর না পেরে একদিন বললাম, আমার বিলটা-

উত্তর হল, কেন সেদিন যে দিয়ে গেলাম। আমার ডায়রিতে লেখা আছে।

অনেকের কাছেই এর উত্তর খুব সহজ। আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বোধ্য। আমি যে বিলের জন্য কয়েক মাস ধরে দিন গুনছি সেই টাকা পেয়ে ভুলে গেছি, আমার সবচেয়ে বড় শত্রুও এমন অপবাদ দেবে না। পরিবার থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তাতে এটা নিশ্চিত, সরাসরি মুখের ওপর বলতে পারি না সে মিথ্যে বলছে। সেটা সে জানে। সেটাই তার হাতিয়ার।

ফল যা হবার তাই।

টাকার ক্ষোভ আমার নেই। বিন্দুমাত্রও না। এমন এক পেশায় নিজেকে জড়িয়েছি যেখানে প্রতিনিয়ত বিল না পাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমার ক্ষোভ সেই বন্ধুত্বে যা সত্যকে মিথ্যে বানাতে পারে। আমার সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত পড়াশোনা, সমস্ত ধ্যানধারনাকে ভেঙে দিয়ে শিখিয়ে গেল, টাকার জন্য সব করা যায়। নীতি, আদর্শ, সত্য এগুলো বইয়ের বুলি, বাস্তবে এগুলি মেনে চলতে হয় না। একজন চোর যদি চুরি করত আমি মুহুর্তেই ভুলে যেতাম। কিন্তু সে দাগ কেটে গেল সারা জীবনের জন্য। আমার মুখের ওপর মিথ্যে বলে গেল যা আর কেউ করেনি।

এজন্যই, ভালমানুষকে আমার বড় ভয়। যতক্ষন না জানি সে কিসের চোর।

0 comments:

 

Browse