কবির সুখ

May 29, 2009

স্কুলে পাঠ্যবইতে একটা ইংরেজি কবিতা ছিল। হ্যাপি দা ম্যান। কবি বলছেন, তিনি সুখি মানুষ হতে চান। তার কয়েক একর জমি থাকবে যেখানে তিনি চাষ করবেন। তাতে তার ভরনপোষন চলবে। জগতের অন্যকিছু নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। এবং তিনি যখন মারা যাবেন তখন সেখানেই গাছতলায় তাকে শুইয়ে রাখা হবে। সেখানে কোন নামফলক লাগানো হবে না। শিক্ষক বললেন উনি মস্তবড় কবি।

আমার বিশ্বাস হয়নি। তখন আমার চোখে বিশাল স্বপ্ন। কোন একটা কিছু করে বিখ্যাত হব। আইনষ্টাইন-নিউটনের মতই হোক, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মতই হোক, জয়নুল-কামরুলের মতই হোক আর ম্যারাডোনা-পেলের মতই হোক, বড় কিছু একটা করব। দেশের-বিদেশের মানুষ বলবে অমুকে কতবড় কাজই না করেছে। আর এই লোক বলে কিনা তাকে কেউ চিনবে না। সকলের অগোচরে মারা যাবে, সকলের অগোচরে কবর দেয়া হবে। সেই জীবনের মানে কি হল ?

জীবনের মানে এখন বুঝি এমন দাবী করা রীতিমত অন্যায়। তবে যা বুঝি তা হচ্ছে কবি বর্নিত সেই কৃষকের যে নির্ভেজাল জীবনের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন সেটা লোভনীয়। এবং দুর্লভ। বিবিধ কারনে। প্রথমত বাংলাদেশের মোট আয়তনকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে কয়েক একর হয় না। নেই অর্থে কয়েক একর জমির মালিক হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই যদি না অপরের জমি দখল করা হয়। দুর্বলের জমি দখল করা হয়ত সম্ভব কিন্তু আরো সবল এসে সেটা কেড়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই ঘটবে।

কথা তারপরও রয়েছে। আকাংখা আরো কমিয়ে কয়েক একরের পরিবর্তে হয়ত আরো কমে সন্তুষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করা যায়। উপেনের হয়ত দুবিঘে ছিল আপনি এক, কিংবা আরো কমে সন্তুষ্ঠ থাকলেন, কৃষক না হয়েও যে জমির মালিক তার জমি চাষ করেও চলা যায়। কিন্তু খাবেন-গল্পগুজব করে সময় কাটাবেন আর নিশ্চিন্তে মারা যাবেন সেটা হবে না। কিভাবে ফসল বেশি ফলানো যায় সেকথা না ভাবলেও চলবে, ভাবতে হবে আপনার এলাকায় চেয়ারম্যান-মেম্বার কে হবে। সাংসদ কে হবেন। আপনি লীগ করবেন না দল করবেন। আপনাকে এর বাইরে থাকতে দেয়া হবে না। কে কতটা দুর্নীতি করেছে সেটা আপনাকে জানতে হবে, কে এলাকার কতটা উন্নতি করেছে সেটাও জানতে হবে। এরই নাম সচেতনতা। আপনার বাড়ির সদস্যরা উপোস করে করুক, আপনাকে সচেতনতা দেখাতেই হবে।

তার পরও কথা আছে। আপনার এলাকায় নিশ্চয়ই ডজন খানেক প্রতিষ্ঠান আছে। মানুষের দুঃখকষ্ট কমানোকে তারা জীবনের সবকিছু বলে পণ করেছেন। তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে হাজারে হাজারে, কর্মীসংখ্যা বাড়তে থাকে লাখে লাখে, কারন মানুষের দুঃখও বাড়ছে সমান তালে। দুইই বাড়ছে, বাড়বে। আপনি এর বাইরে থাকবেন কেন ?

শুধূ বিঘে দুই, ছিল মোর ভুই। না আজকাল দুবিঘের মালিক হওয়ার কোন সুযোগ নেই লীগ কিংবা দল না করলে। আবার ভিটেছাড়া হয়েও যে দলছাড়া-লীগছাড়া হবেন সে সম্ভাবনাও নেই। এই সমাজসেবীরা আপনাকে নির্জনে থাকতে দেবে না।

কবি বোধহয় এই কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন কোন রাজনৈতিক দল কিংবা এনজিওর খপ্পরে পড়তে চান না। অনেক আগে বুঝেছিলেন বলেই তিনি বড় কবি।

ষড়যন্ত্র থাকতে পারে

May 28, 2009

অবশেষে, তিন মাস পর পিলখানা ঘটনার তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সারাংশ প্রকাশ পেয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রেখেছেন। আগের সব তদন্ত কমিটির মত এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অন্ধকারে হারায়নি। পত্রিকায় প্রকাশ, রিপোর্টে বলা হয়েছে নেপথ্যের কুশিলবরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। দবিরের কথা শামসুর রাহমান লিখেছিলেন বহু আগে। আধখাওয়া রুটি চিনতে না পেরে সবাই যখন দবিরের স্বরনাপন্ন হল তিনি বহুক্ষন প্রত্যক্ষ করে বললেন, দবির বিনা ধামরাই আন, উইয়ে খেয়েছে পুরান চান। দবিরকে ছাড়া ধামরাই অন্ধকার। এটা পুরনো চাদ, আকাশ থেকে খসে পড়েছে আর এক অর্ধেকটা উইপোকা খেয়ে ফেলেছে। তিন মাসের এই তদন্ত কমিটি ছাড়া আমরাও অন্ধকারে। এতদিনে জানা গেল এটা কেউ ষড়যন্ত্র করে ঘটিয়ে থাকতে পারে। তারা জানিয়ে দিলেন।

আরো কারন রয়েছে। সেনা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। যেদিন ঘটনার শুরু সেদিনই বিবিসিতে এক বিডিআর সদস্যের বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন কিছু কারনের কথা। সেটা কারো কানে পৌছে থাকে তাহলে বলতে হয়, তিন মাসের এই তদন্ত রিপোর্টে নতুন কিছু নেই। সেই ব্যক্তি তার দুঃখের কথা বলতে গিয়ে কেদে ফেলেছিলেন। তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয় সেকথা বলেছিলেন। আর বলেছিলেন কর্মকর্তাদের কথা। তারা কিভাবে টাকাপয়সা হাতিয়েছেন, হাতাচ্ছেন সেকথা। পালিয়ে যাওয়া অনেক বিডিআর সদস্যের কাছ থেকে নাকি লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। পালিয়ে যাওয়ার সময়ও নাকি তাদের পকেট থেকে সেই টাকা পড়ে গেছে পথে। কুড়িয়ে পেয়েছে অন্য লোকে। লক্ষ টাকার অলংকার এবং অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

মৃত ব্যক্তির ওপর ক্ষোভ রাখতে নেই। এটা মানবতাবিরোধী। যারা এভাবে নিহত হয়েছেন সেটা অগ্রহনযোগ্য। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই খুনী হিসেবে শাস্তি পাবে (ইহকালে যদি নাও হয়, পরকালে)।

কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। কেউ কি একবার প্রশ্ন করবেন যে অর্থ নিয়ে এই অনর্থ ঘটেছে তার উৎস কি ? কিভাবে তারা এই বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হয়েছিলেন ? যদি না করা হয়, আমি দুঃখিত, এই ঘটনার পথ বন্ধ হচ্ছে না।

তবে এখন এটা ষ্পটলাইটে নেই। ইদানিং রসালো বক্তব্য দেয়ার আরো বড় খবর পাওয়া গেছে। বৃটেনের মন্ত্রী-সাংসদ অর্থ কারচুপি করেছে। দেশের নেতা-বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে এনজিও-সংবাদ মাধ্যম সকলেই তাথৈ তাথৈ নাচ নাচছেন। যারা এতদিন আমাদের চোর বলেছে তারা নিজেরাই চোর।

থামুন। তাদের চুরির নমুনাটা একবার দেখুন। একজন সাংসদ কয়েকশ পাউন্ডের হিসেবের গড়মিলে দোষী। তিনি বলছেন তার অগোচরে সেটা ঘটেছে। এত পুখানুপুংখ হিসেব করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

বাস্তবতার নিরিখে তার কথা একবার যাচাই করুন। তিনি যদি সচেতনভাবে চুরি করতেন তাহলে কয়েকশ পাউন্ড চুরি করবেন কেন ? বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশে অর্থের কি এতই অভাব। কই, এদেশে তো অর্থের অভাব নেই। একটা টেন্ডার পাইয়ে দিলে কোটি টাকা পাওয়া যায়। তাদের দেশে কি টেন্ডার বলে কিছু নেই। আমি সেই সাংসদের কথা কিছুটা হলেও বিশ্বাস করে সত্য জানতে আগ্রহী।

আমার বক্তব্য কে দোষী কে নির্দোষ সেখানে না। এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেদিকে। তারা দোষি কি নির্দোষ তাতে কিছু যায় আসে না, তাদেরকে বিদায় হতে হয়েছে। বৃটেনের তিনস বছরের সংসদের ইতিহাসে স্পিকারকে বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি কেমন স্পিকার যেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তার স্পিকার পদে থাকার যোগ্যতা নেই। তেমনি যোগ্যতা নেই একজনের মন্ত্রীত্ব দখল করে রাখার যার নামে দুর্নীতির কথা ওঠে।

তবে, ওসব কথা এখানে বলবেন না। চৈত্র মাসের হাদিস পৌষ মাসে চলে না। এখানে যারা সংসদের যান তারা জনগনের ভোট নিয়ে যান। জনগন তাদের ক্ষমতা দিয়েছে। তারা কাকে মারবেন, তাকে চাকরি দেবেন, কাকে কাজ দেবেন সেটা তাদের ইচ্ছে। আপনি বলার কে ? আপনি দেখেন নি সবচেয়ে বড় গাড়ির কোম্পানী যখন নিশ্চিত দেউলিয়া ঘোষনার পথে তখন এদেশে অর্ধলক্ষ গাড়ি আসছে। কোন দেশের ক্ষমতা আছে এই অবস্থায় এমন মেরুদন্ড সোজা করে দাড়ায়। দেখুন। দেখে শিখুন দেশ কিভাবে চালাতে হয়।

বৃটেনের সব গোপন খবর ফাস করে দিয়েছে একটিমাত্র পত্রিকা। খবর ফাস এদেশেও হয়। জরুরী শাসনামলে হয়েছিল। প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা ভরে রঙিন ছবিসহ ছাপা হত কে কি করেছেন তার বর্ননা। তখন ছিল জোয়ার। তারপর যখন ভাটা শুরু হল, খবরের ধরনও পাল্টে গেল। বৃত্ত ঘুরে আবার আগের অবস্থানে।

আগের স্পিকারের, সাংসদের দুর্নীতির তদন্ত হবে। নিশ্চয়ই হবে। সেটাই জরুরী। এরসাথে বর্তমানকে মেলাবেন না। বর্তমান সাংসদ যা করছেন সেটা তার অধিকার। তার সাথে বেআদপি করলে তিনি তো পেটাবেনই। যদি বিচার করতেই হয়, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা করবেন। আমরা বৃটিশ নই যে কথা উঠলেই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ষড়যন্ত্র করে এসব কথা প্রচার করা হয়ে থাকতে পারে।

আমি বিরোধীদলের রাজনীতি করি

May 27, 2009

ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি করতে হয়। ইচ্ছেয় হোক অনিচ্ছায় হোক কোন নেতার কথা ফেলা যায় না। তারা বড়ভাই, কথা না শুনলে মাইন্ড করেন, তাদের ইচ্ছের ওপর অনেককিছু নির্ভর করে। কাজেই ডাকলে একদিন তাদের সভায় গিয়ে বসতে হয়, একদিন মিছিলের সাথে হাটতে হয়। একসময় পরিচিতি হয়ে যায় অমুকে অমুক দলের কর্মী।

আরেকটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া যায়। অমুক নেতার আদর্শ বাস্তবায়ন করা, তার স্বপ্ন পুরন করা ইত্যাদি বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে। তারা গত হয়েছেন কয়েক দশক আগে, তাতে কি। আদর্শ রেখে গেছেন। সেই আদর্শে চলছে দেশ। যত বড় করে তাদের নাম প্রচার করতে পারবেন, জিকির করতে পারবেন তত বাড়বে আপনার মহিমা।

কোন এক রাজনৈতিক দলের সাথে আমারও সংশ্লিষ্ঠতা ছিল। তবে সংশ্লিষ্টতার ধরন একটু অন্যরকম। স্পষ্ট বক্তব্য, আমি মিছিলে, মিটিংএ যাব না। এর বাইরে কোন কাজ থাকলে সম্ভব হলে করে দেব। নিজ যোগ্যতাবলে এটুকু দাবী আদায় করা সম্ভব হয়েছিল। এর একটা সুফল এই যে নির্দিষ্ট দলের জন্য পরিচিত হলেও সব দলের সকলের সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। একদল আরেক দলের কর্মীকে মারার জন্য লাঠি হাতে ধাওয়া করে যাচ্ছে, আমি দাড়িয়ে আছি পাশেই, দুপক্ষের কেউই আমাকে দেখছে না। আমি এই রাজনীতির বাইরের কিছু। আমি কাউকে মারতে যাচ্ছি না, আমাকে কেউ মারতে আসছে না।

সেসব কথা থাক, আমার বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে বিরোধী এক দলের কর্মীকে নিয়ে। কর্মি না বলে নেতা বলাই ভাল কারন তেমনটাই শুনেছি। এবং ছাত্র নেতা নন, শ্রমিক নেতা।

তার কর্মস্থল কলেজের কাছেই। সারাক্ষনই তাকে কলেজের আসেপাশে দেখা যেত। একেবারে নিবেদিতপ্রান নেতা। সকলের সাথে আলাপ করছেন। বুদ্ধিপরামর্শ দিচ্ছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি বলতে পারি না, আমার ধারনা খুব বেশিদুর যাননি, তবুও বড় ধরনের নেতা। সবাই মান্য করে চলে।

আমার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এড়িয়ে চলা সম্পর্কের মত। একেবারে সামনাসামনি পরে গেলে কুশল বিনিময় হয়। এপর্যন্তই।

এরপর বহুদিন গত হয়েছে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সেই উত্তাল দিন পেরিয়ে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমিও ছাত্রজীবন ছেড়ে কর্মজীবনে। রাজনীতির সাথে সামান্যতম সম্পর্কও নেই।

কাছাকাছি যাওয়ায় একবার শখ হল, সেই চেনা পরিবেশটা দেখে যাই। যে হোটেলে চায়ের কাপ সামনে নিয়ে একসময় এখানে দিনরাত কাটিয়েছি সেটা এখন কেমন আছে। পরিচিত কজন এখনো টিকে আছে এখানে। প্রথমেই দেখলাম হোটেলের মালিক বদল হয়েছে। আগের সেই আন্তরিকতা নেই। এককাপ চা নিয়ে বসে দেখতে শুরু করলাম আগের কি আছে, কি নেই। এমন সময় তিনি দেখা দিলেন। আমাকে দেখে দ্রুত এগিয়ে এলেন, আরে কেমন আছেন ?

ভাল।

তিনি বসলেন আমার সামনে। আমি আরেককাপ চা দিতে বললাম।

আপনি তো ঢাকা থাকেন। অমুক ভাইয়ের সাথে আপনার দেখা হয় ?

উনার বিরোধী দলের নেতার নাম করছেন। বললাম, না। পরিচিত কারো সাথেই আমার যোগাযোগ নেই।

তিনি বললেন, ঢাকা গেলে উনার সাথে দেখা করব।

আমি একটু ঘুরিয়ে বললাম, এখন তো আপনার দল ক্ষমতায়।

তিনি বললেন, আমি বিরোধীদলের রাজনীতি করি।

অবাক না হয়ে উপায় থাকল না। এমন নিবেদিতপ্রান নেতা নিজের দল ছেড়ে বিরোধী দলে গেলেন। কারন কি ? নিশ্চয়ই নেতারা ক্ষমতায় গিয়ে তার কথা ভুলে গেছেন। প্রাপ্য মর্যাদা দেননি। তাকে কখনো খারাপ কাজে জড়িত হতে দেখিনি। একমাত্র রাজনীতিতেই নিবেদিতপ্রান। এমন নিবেদিতপ্রান নেতার নিশ্চয়ই কিছু প্রাপ্য ছিল। সেটা না পেয়ে মনে দুঃখ পেয়েছেন।

জিজ্ঞেস করলাম, কেন ?

চা আসায় কাপটা হাতে নিয়ে তিনি বিব্রতভাবে নাড়তে থাকলেন। কিভাবে বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। একসময় গলার স্বর আরো নিচু করে বললেন, দেখুন রাজনীতি করতে আমার ভাল লাগে। সরকার কি দোষ করল এসব কথা বললে মানুষ সচেতন হয়। কথা শোনে। সেকথা যদি না বলতে পারি তাহলে রাজনীতি করে লাভ কি ? ঠিক করেছি সবসময় বিরোধী দলের রাজনীতিই করব।

তাকে দেখলাম ভাল করে। একেবারে সাধারন পোষাক, সাধারন চেহারা। আমার এখনো মনে হচ্ছে এই শ্রমিক নেতা বেশিদুর লেখাপড়া করেনি। যাকিছু শিখেছে বাস্তবতা থেকে। এবং সতিসত্যিই শিখেছে। বহু বড়বড় নেতার দেখা পেয়েছি। ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে দলের প্রধান পর্যন্ত। বহু বুদ্ধিজীবি সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে। সামনাসামনি থেকে খবরের কাগজ-টিভিতে। বহু বিশেষজ্ঞেন পরিচয় পেয়েছি তাদের কথায়-লেখায়। এমন সরলভাবে এই বক্তব্য কারো কাছে পাইনি।

যতদুর মনে পরে তাকে সবাই টিপু নামে ডাকত।

বদলে যাও – বদলে দাও

May 26, 2009

প্রায়ই খবরের কাগজে দেখি গোল টেবিল, লম্বা টেবিল, চৌকো টেবিলের খবর নানারকম মুখ, নানারকম মন্তব্য কখনো একই মুখ ঘুরেফিরে আসে, কখনো একেবারে টাটকা নতুন মুখ টাটকা বক্তব্য যিনি জীবনে কাঠে একটা পেরেক ঠোকেননি তিনি জানিয়ে দেন ঠিক কোন কারিগরী পদ্ধতিতে দেশ উন্নতির শিখরে পৌছবে, যিনি চেয়ার-টেবিল বই-পত্র ছাড়া ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে বাইরের চেহারা দেখেননি এবং এখনও দেখেন না, গাড়ির কাচের ভেতর থেকে যতদুর দৃষ্টি যায় ততটুকুই দেখা তিনি ব্যাখ্যা দেন সমস্যা সমাধানের জন্য এদেশের মানুষকে কি করতে হবে, যিনি সারাজীবন অধনস্থ পুলিশকে ব্যবহার করেছেন সরকারের তোষামুদিতে, নিজের ব্যক্তিগত চাকর হিসেবে তিনি জানিয়ে দেন এদেশের প্রশাসনের উন্নতিতে কি করা কর্তব্য, মানবাধিকার রক্ষার জন্য ঠিক কি করা উচিত, যিনি সারাজীবন বিচারের রায় লেখার আগে খোজ নিয়েছেন তার ফলে কে অসন্তুষ্ট হবে, কে সন্তুষ্ট হবে, কার কতটুকু ক্ষতি হবে তিনি উপদেশ দেন কিভাবে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়, যিনি সবসময় সভার মধ্যমনি থেকেই অভ্যস্থ, কোনকারনে সামান্যতম বিচ্যুতি হলে যার অসন্তোস ঢাকা থাকে না তিনি জানিয়ে যান সমাজ নিয়ে তিনি কত আশাবাদী প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে সমাজ সাফল্যের পথে এগিয়ে চলেছে। আপনারা সকলে অংশ নিন, তাহলেই দেখবেন-

সবাই বলেন করতে হবে, তোমরা কর আমি বলে দিচ্ছি সমাধান এপথেই আগে পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকত, এখন টিভির পর্দায়ও দেখা মেলে পার্থক্য তেমন নেই এই টেবিলের চারিদিকে যারা বসে সেইদলে থাকেন দুই মাধ্যমেরই মালিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি তাদের নিজের ছাগল তারা গলায় কাটবেন না লেজে কাটবেন তাতে কার কি বলার থাকে কে আছে বাধা দেয়

একজন ব্যক্তি, যিনি সৎ, তিনি কি রাস্তার মাঝে এসে দাড়িয়ে বলবেন আমি সৎ আমি চুরি করি না কিংবা আমি চুরি করব না তিনি কি চোর নন একথা প্রচারের জন্য চুরি থেকে বিরত রয়েছেন কিছু মানুষের জন্য সেটা সত্য হয়ত অধিকাংশ মানুষের জন্য কেউ যখন বলেন অমুকে দুনম্বরী করে কোটিপতি হয়ে গেল তখন তার কথার মধ্যে কোন সুর বাজে তা ধরা যায় কারো সুর হচ্ছে অমুকে সুযোগ পেল আমি পেলাম না কেন কারো সুর বলে তারমত চক্ষুলজ্জা ত্যাগ করলে আমার এই অবস্থা হত না নিদেন পক্ষে একজন নেতা মামা-দুলাভাই যদি থাকত দেখিয়ে দিতাম কার যোগ্যতা বেশি কেউ চুরি করে না সুযোগ নেই বলে, কেউ করে না ধরা পরার ভয়ে, সমর্থন করার মত কেউ নেই বলে, কেউ পারে না চক্ষুলজ্জার কারনে এরই মাঝে দুচারজন মানুষ রয়েছে যারা চুরির সুযোগ থাকার পরও চুরি করেন না কারন-

কারন সেটা অন্যায় সেটা অনৈতিক সেটা ধর্মবিরোধী সেটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর আমি চুরি করব না, একথা বলে এইসব অহংকারী মানুষ না খেয়ে উপোষ করেন, ছেলেমেয়েকে দরিদ্র স্কুলে পাঠান, সারাদিনের কাজ শেষে রাতে নিজেই পড়াতে বসেন, বছরের শুরুতে পুরাতন বই খোজ করেন একটামাত্র আশাকে সম্বল করে, তার সন্তান তার মতই হবে সে ধনী হবে না, ধনীর পেছনে ঘুরবে না খেয়ে হোক, না খেয়ে হোক, একা নিজের কাছে হোক, নিজেকে বলবে আমি কোন অন্যায় করিনি এই ধারনাকে প্রাণশক্তি করে জীবন কাটাবে

সেই ব্যক্তি রাস্তার মোড়ে এসে কেন চিৎকার করে বলবে আমি সৎ

বলবে না শতভাগ নিশ্চিত, হাজারভাগ নিশ্চিত, বলবে না বলার কোন কারন নেই বলার কোন প্রয়োজন নেই তার পরিচয় তিনি জানেন, তার প্রিয়জন জানে, আর জানেন অন্তর্যামী

তবু বলা প্রয়োজন হয় তারা বলেন, না বললে যাদের সম্পর্কে লোকে নানারকম কুকথা বলে বলতে হয় কারন এতে পরিচিতি বাড়ে, জনগন চেনে, ভোটাররা চেনে বলতে হয় কারন সমাজের ভালর জন্য কাউকে না কাউকে কাজ করতে হয় সমাজসেবি হতে হয়। মানবতাবাদী হতে হয়। জহির রায়হান লিখেছিলেন বণ্যায় বাধ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখে একদল মানুষ সারারাত জেগে দলধরে মোনাজাত করলেন, সৃষ্টিকর্তার কাছে রক্ষা চেয়ে কান্নাকাটি করলেন, সকালে বেরিয়ে দেখলেন বাধ ভাঙেনি প্রার্থনার কি মহিমা

তাদের অগোচরে কিছু মানুষ সারারাত জেগে কঠোর পরিশ্রম করে সেই বাধ রক্ষা করেছে সেকথা তারা জানল না

এদের কথা কেউ জানে না কারন তারা প্রকাশ করে না তারা অগোচরে থাকে সমাজ যখন সাপের দংশনে নিল হয়ে থাকে সেই বিষ থেকে সমাজকে রক্ষা করার পরও তারা আড়ালে থেকে। সামনে আসে না।

কখনো কোন সমাজ যদি তাদেরকে সামনে আনতে পারে সেই সমাজ ইতিহাসে যায়গা করে নেয়। সেই সময় ইতিহাসে লেখা থাকে অমুক সভ্যতা হিসেবে। পৃথিবীর সমস্ত সভ্যতা একথাই বলে গেছে।

সভ্যতা তৈরীর জন্য সত্যিকারের যা প্রয়োজন তা বলা হয়ে গেছে ছাড়তে হবে ভন্ডামি। নিজেকে বদলাতে হবে আগে

সুশাসন

May 24, 2009

বৃটিশ শাসনামলে নাকি পুলিশ গুলি খরচ করলে হিসেব দিতে হত তারা বিদেয় নেবার পর সেপ্রথা উঠে গেছে এখন গুলি খরচ করলে হিসেব দিতে হয় না বইতে পড়া কথা, কতটা সত্যি কতটা মিথ্যে আমার জানার উপায় নেই গুলির খরচের সাথে অর্থখরচের বিষয় যখন রয়েছে তখন অন্তত টাকার হিসেব থাকতেই পারে আর জিনিষটা যখন বেশ দামী বাজারে চাহিদা রয়েছে

কথা হচ্ছে গুলির হিসেব নিয়ে পুলিশ যদি গুলি করে সন্ত্রাসী মারে তাহলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয় কটা গুলি খরচ হয়েছে ? একটার যায়গায় তিনটা খরচ হল কেন ? অতিরিক্ত দুটা খরচের টাকা কে দেয় ? তাহলে ট্রেণিং দেয়া হল কেন ?

কিংবা যদি রাতের বেলা রাস্তায় একটা গাড়িকে সন্দেজনক মনে করে থামানো হয় তারপর তাদের জিনিষপত্র নিজের পকেটে ঢুকিয়ে লাইন করে দাড় করিয়ে পায়ে গুলি করা হয়, বলা হয় ছিনতাইয়ের সময় গোলাগুলিতে আহত, তখন কি খরচের প্রশ্ন ওঠে ? তখন কি বলা হয় এতগুলো গুলি নষ্ট করা হল কেন ? আরো কম খরচ করা যেত না ? হিটলার বাহিনী কতরকম পথ বের করেছিল জানেন না টাকা পাওয়া কত কষ্টকর কেউ ট্যাক্স দিতে চায় না ট্যাক্সের কথা বললে আন্দোলনের হুমকি দেয় ট্যাক্স ছাড়া সরকার চলে কিসে ? দেশ চলে কিসে ?

অন্য প্রশ্ন করে লাভ নেই গুলি করা প্রয়োজন হয়েছে তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হয়েছে বিপদ ঘটানোর আগেই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন জীবন বাজি রেখে হলেও সন্ত্রাস চাদাবাজি বন্ধ করবেন তার বাড়ী থেকে তার ফোন ব্যবহার করে তার নামে চাদাবাজি করা হয়েছে ও, তাই নাকি তাকে তো আমি তেমন চিনি না সে গরীব মানুষ বিপদে পরে আশ্রয় নিয়েছে বিপদে পরা মানুষকে আশ্রয় দিতে হয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রী, (তিনি সবসময় পরের রাষ্ট্রে থাকেন বলেই হয়ত এই নাম) বিভিন্ন দেশে গিয়ে বলেছেন আইনবহির্ভুত হত্যা বন্ধ করা হবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জিরো টলারেন্স তবে, দেশ চালাতে হয় তাদেরই সবসময় সবকথা রাখলে চলে না জানেন নাতো পনের কোটি মানুষের দেশ চালানো কেমন কঠিন কাজ সবাই তো আর আমার দলের লোক না দুচারটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে ওদিকে তাকান কেন ? জানেন আগের সরকার কি করেছে ? পরিসংখ্যান দেখেন

দুটো সংস্থাকে বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা কতবড় ষড়যন্ত্র এদের ছাড়া দেশ চলবে ? মানুষ কথা শুনবে ? জানেন না ওদের চেহারা দেখলে মানুষের বুক কাপে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো পোষাক, চোখে কালো চশমা, মাথায় কালো রুমাল এমন পোষক দেখছেন কোথাও ? রেসলিংএ দেখছেন ? আন্ডারটেকার ? তাইলে বোঝেন তারে কেমুন ভয় পায় সকলে আরে ভয় না পাইলে কেউ সোজা হয় ? কথা মানে ? কথা না মানলে জনগনের সেবা করব ক্যামনে ?

খবরে প্রকাশ চারজনকে গুলি করার তদন্ত হবে। তদন্ত করবে অন্য পুলিশ। তারা বের করবে আসলেই তাদের পকেট থেকে মোবাইল ফোন, টাকাপয়সা এসব বের করে তাদের পায়ে গুলি করা হয়েছে নাকি অন্যকোনভাবে তারা আহত হয়েছে। কে জানে, নিজেরাও গোলাগুলি করে পুলিশের ওপর নাম চাপাতে পারে। পুলিশের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে সকলে উঠেপড়ে লেগেছে। পুলিশ ছাড়া কি দেশ চলে ? একমুহুর্ত পুলিশ না থাকলে সারা দেশের কি অবস্থা হবে জানেন ? বাগদাদ পতনের পর ইরাকের চেহারা দেখেছেন ?

রাজা যায় রাজা আসে, বলেছিলেন কবি পাত্রপাত্রী পাল্টায়, রাজত্ব থেকে যায়, শাসন থেকে যায় কাউকে না কাউকে দেশ চালানোর দায়িত্ব নিতে হয় অপরাধী ধরতে হয় আইনের শাসন কায়েম করতে হয় সব অপরাধের কিনারা করতে হয় তুই ক্যামনে মরবি ক স্বিকারোক্তি দিয়া ফাসিতে ঝুলবি, জেলে যাবি না শক খাইয়া হার্ট এটাকে মরবি, না এনকাউন্টারে মরবি আমি এই মামলার কিনারা করমুই করমু জীবন বাজি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময়ের উল্লেখযোগ্য নেতা মেজর জলিলকে বরখাস্ত করা হয়েছিল চাকরি থেকে এখন কি একই কারনে বরখাস্তের ঘটনা ঘটে ? ষাটোর্ধ ব্যক্তি পথের মোড়ে এসে চিকার করে ঘোষনা করলেন, তরে আমি ক্রশ ফায়ারে ফালামু চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই ঘটল সেই ঘটনা এলাকায় রটে গেল সাত লাখ খরচ হয়েছে এজন্য

বাপরে!

দরিদ্রের সামর্থ্য বেশি

May 23, 2009

দরিদ্র সব পারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে মাটি খুড়তে পারে, বীজ বুনতে পারে, আগাছা পরিস্কার করতে পারে, পানি টানতে পারে, ফসল কাটতে পারে, সেই ফসল পরের তাতে তুলে দিতে পারে, না খেয়ে থাকতে পারে, না খেয়ে বাচতে পারে, জনসংখ্যা বাড়াতে পারে, আর

আর পরের উপকার করতে পারে ঋন নিয়ে সুদে-আসলে ফেরত দিতে পারে সেই সুদের হার কত দেখা প্রয়োজন নেই যারা কোটি টাকা ঋন নেন তারা টাকা ফেরত দেন না কারন তাদের সামর্থ্য নেই দরিদ্ররা তত অসহায় না, সুদ যতই হোক তারা সেটা দেয় দিয়ে আবার নেয়, আবার দেয় কখনো কাউকে বিমুখ করে না বিনিয়োগকারীদের টাকা বাড়তেই থাকে আর দরিদ্ররাও মহানন্দে তাদের মাথায় তুলে রাখে এমন উপকারি আর হয় না জাপান-আমেরিকা-ইউরোপে সুদের হার কত সেকথা তুলবেন না তারা এমন হতদরিদ্রের সেবা করে না তারা ব্যবসায়ী এখানে যারা ঋন দেয় তারা সমাজসেবি মানবতাকর্মী পরিস্থিতি সহায় থাকলে জনগনের অনুরোধে তারা রাজনীতিতে আসতে পারেন ক্ষমতাহীন রাষ্ট্রপতি হতে তারা রাজী নন তবে যদি ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে আপত্তি নেই একবার সেই সুযোগ দিয়েই দেখুন না, দেশকে বিদেশ বানিয়ে ফেলব দেখছেন না একেবারে হত দরিদ্র, সহায় সম্বলহীন ঋন নিচ্ছে প্রায় আধাআধি সুদ দিচ্ছে আর কত উন্নতি করতে বলেন ?

শুনেছি, কাগজে পড়েছি এইসব ঋন নাকি বিশ্বে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছি বড়বড় দেশের বড়বড় নেতারা পরামর্শ নিচ্ছেন কিভাবে এই কাজ করা যায় জানছেন অর্থনীতিবিদ পর্যন্ত প্রশংসায় শতমুখ এমন উদ্ভাবনী বুদ্ধি তাদের মাথায়ও নেই যার কিছুই নেই তার কাছেও ব্যবসা করা যায় এরই নাম ক্রিয়েটিভিটি আপনারা দেখুন, দেখে শিখুন, শিখে কাজে লাগান এইসব দরিদ্র নামের প্রাণী দিয়ে করানো যায় না এমন কাজ নেই এরা গরুর মত নিবোর্ধ নয় শিখালে শিখতে পারে শক্তির সাথে সাথে কিছুটা মাথাও খাটাতে পারে যে কোন কাজ করতে পারে এদের কাজে লাগান, কাজে লাগিয়ে টাকা বানান এশিয়ায়, আফ্রিকায়, ল্যাটিন আমেরিকায় টাকা খাটান আর সুদে আসলে ফেরত নিন টাকায় টাকা আনে আড়াই বছরে দ্বিগুন। শতভাগ নিশ্চয়তা।

সরকার বহু অনুনয়-বিনয় করে ব্যাংকের সুদের হার দুই অংকের নিচে আনতে পারেনি কথা হচ্ছে আনা হবে তাদের সাথে আলাপ করা হচ্ছে, হবে একদিন সেটা হবেই মন্ত্রী আস্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও নতুন সুর ধরেছে। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তে তাদের মত থাকা উচিত। সেটাও হবে নিশ্চয়ই। কেউ বিমুখ হবেন না।

তবে কথা হচ্ছে, যারা ব্যাংকে টাকা রেখেছেন বসে বসে সুদের টাকা খাওয়ার চিন্তায় তারা যদি লাভ কমতে দেখেন তাহলে কি করবেন ? টাকা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনবেন ? সোনা কিনবেন ? ডলার কিনবেন ? জমি কিনবেন ? এখনই জমির দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি এটা হতে দেয়া যায় না।

আর যদি হয়ই, যাদের টাকা ব্যাংকে জমা তারা যদি টাকা তুলতে শুরু করে তাহলে বাংকের অবস্থা কি হবে ? কর্মকর্তাদের কথা বলছি না তারা তো নগদ নারায়ন ছাড়া কিছু বোঝেন না নিজের লাভ কোন মাসে কত জানার সাথে সাথে পকেটে রেখে দেন পাঠিয়ে দেন বিদেশের ব্যাংকে যা জমা থাকে সেটা অন্যের এই টাকা না থাকলে ব্যাংক চলবে কিসে ?

না, তারা এবিষয়ে যথেষ্ট সচেতন যারা টাকা তুলতে চেষ্টা করছেন তাদের এখনই বলা হচ্ছে, টাকা তুলবেন কেন ? বেশি টাকা তুলতে পারবেন না আপনার টাকা তাতে কি হয়েছে, ব্যাংকে যখন রেখেছেন তখন ব্যাংকের নিয়ম মানতে হবে কে বলেছে ব্যাংক বন্ধ হবে ? দেখেননি আমেরিকা-বৃটেন কিভাবে ব্যাংক চালু রেখেছে ? সিটি ব্যাংক, এইচবস আরে ব্যাংক ছাড়া কি দেশ চলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন আপনার টাকা আমাদের কাছেই থাকবে সরকার বীমার টাকা বাড়িয়েছে। টাকা না পেলে অন্তত দুলাখ তো পাবেনই।

ছোট ঋন ব্যবসায়ীদের এতসব চিন্তা নেই তাদের গ্রাহক ছোট ছোট মানুষ সরাসরি দরিদ্র তাদের গরু কিনতে হয়, বীজ কিনতে হয়, সার কিনতে হয়, জমিতে পানি দিতে হয় তারা টাকা নেবেই তাদের সুদের হার আরেকটু বাড়ানো প্রয়োজন এদের মত এত সামর্থ্য আর কারো নেই ইদানিং তাদের পরিচালন খরচা বেড়ে গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও বলে কথা। তারা সহায়তা না করলে, আশা না দেখালে দেশ কোন রসাতলে যাবে কে জানে। মন্ত্রী মশাই বিবেচনা করুন কোটি কোটি মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবেন না।

পুনশ্চ : আমেরিকা, আফ্রিকা বা অন্য কোন দেশে ক্ষুদ্রঋনের সুদের হার কারো জানা থাকলে জানাবেন

আমি নাটক দেখি না

May 21, 2009

আমি নাটক দেখি না নাটক দেখার ভয়ে টিভি দেখি না শেষ কবে, কত বছর আগে টিভি দেখেছি মনে পড়ে না একসময় খেলা দেখতাম নিয়মিত একবার খেলা দেখার জন্য অফিস ফাকি দিয়েছিলাম, ফল কারন দর্শাও নোটিশ এখন রাজ্যের সময় থাকলেও টিভির সামনে যাই না

কথাটা ভুল হল আমি নাটক দেখি তবে টিভিতে না একেবারে লাইভ প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে সেখানে শতশত, হাজার হাজার অভিনেতা-অভিনেত্রী নিখুত অভিনয়ে নাটক করে যাচ্ছে মার্কেটে এক ভদ্রলোক বোধহয় কিছু বলেছিলেন তার স্ত্রীকে হয়ত কোন বিষয়ে আপত্তি কিংবা অন্য কিছু ভদ্রমহিলা মুখ বিকৃত করে কিছু বললেন নাটকের খলনায়িকা এমন মুখভঙ্গি করতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে যথেষ্ট আমার ধারণা পারবেন না একেবারে জীবন থেকে নেয়া অভিনয় আমি অবাক হয়ে তার মুখভঙ্গি দেখছিলাম কোনমতেই মুখ ফেরাতে পারছি না এমন প্রকাশ্য জনসমাবেশে এমন মুখভঙ্গি করে, এমনভাবে কথা বলা কি সম্ভব এমন পোষাক পড়ে, এমন সাজগোজ করে

তার চোখ পড়ল আমার দিকে আমার তাকিয়ে থাকা তার দৃষ্টি এড়াল না পরমুহুর্তে দৃশ্য পরিবর্তন তার মুখে ফুটে উঠল সরল-স্নিগ্ধ হাসি এমন মোলায়েম হাসি দেখার সুযোগ কজনার ভাগ্যে জোটে

আমি এই নাটকই দেখি সব বয়সের, সব অবস্থার, সব গোত্রের মানুষ প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা নিয়ে এমন নিখুত নাটক কে লিখতে পারে ? সেক্সপিয়ার নাকি খুব বড় নাট্যকার ছিলেন ওইসব ভুতুরে নাটক লিখে বড় নাট্যকার!

আমি চা খেতে শুরু করেছি রসিক আলীর দোকানে অনেকদিন রসিক আলীর দেখা নেই আমি একাই সেখানে চা খাই আর সেখানে দাড়িয়ে নাটক দেখি

দেখলাম দুজন শিশু রিক্সা দরদাম করছে কেউ চায় বিশ টাকা, কেউ পনের টাকা তারা দশ টাকার বেশি দিতে রাজি না তাদের গন্তব্য শুনে বিরক্ত হলাম ভাল করে দেখলাম ওদের বয়স আট থেকে নয়, পড়নে সাধারন পোষাক এমন না যে ধনীর দুলাল তাহলে তিন মিনিটের পথের জন্য রিক্সা কেন ?

ভাবলাম ডেকে একটা ধমক দেই বাপের টাকা তো- খরচ করতে সমস্যা নেই পায়ে কি বাত হয়েছে ? হেটে যাও না বাপু

একজন রাজী হল বারো টাকায় রিক্সা একটু পেছনে এল এবার চোখে পড়ল, কাছেই রাখা তিনটা প্লাষ্টিকের পাত্র ওদের এগুলোই রিক্সায় করে নিয়ে যাবে চেহারা বলে দিচ্ছে ওতে রয়েছে পানি তারমানে বাড়িতে পানি নেই, পানি নিতে এসেছে

একজন একটা পাত্র ধরে টেনে উঠাতে চেষ্টা করল। ওটার ওজন সম্ভবত দুজনের সম্মিলিত ওজনের সমান। না পেরে রিক্সাচালকে বলল, ধরে উঠিয়ে দেন।

রিক্সাচালক ধমকে উঠল, টাকা বেশি দিবি ? একবার উঠামু একবার নামামু।

বাপরে! এই দুজন আর যাই হোক এমন পরিবার থেকে আসেনি যে তার ধমক শুনতে হবে।

একজন যুক্তি দেখাতে চেষ্টা করল, আমি কি নামাতে বলছি।

আরেকজন কথা বলাই প্রয়োজন মনে করল না। হাত নেড়ে রিক্সাচালককে সরতে বলল সামনে থেকে। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে সে এই রিক্সায় যাবে না।

রিক্সা সরল। তারা নতুন রিক্সার খুজতে শুরু করল। এরপর কি হল লক্ষ্য করিনি। কয়েক মিনিট পর দেখলাম একটা রিক্সা এসে থামল। সেখান থেকে নামল দুজন। দুরে কোথাও থেকে রাজি করিয়ে এনেছে।

আবারো পানির পাত্র উঠানোর চেষ্টা। নতুন রিক্সাচালক কোন কথা না বলে এসে হাত লাগাল। আগের রিক্সাচালক তখন বসে সিগারেট টানছে। সে হাসল হে-হে-হে।

একজন বলল, দশ টাকায় যাবে।

সে বলল, হ্যার হাউস হইছে দশ ট্যাকায় যাওনের।

দশ টাকায় যাওয়ার হাউস হওয়া রিক্সাচালককে দেখলাম। দশ টাকায় তার আপত্তি আছে বলে মনে হল না। মনে হচ্ছে রীতিমত খুশি। মুখে হাসি। একটা পাত্র উঠিয়ে রেখে আরেকটা উঠাচ্ছে। দুজন যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এদিক ওদিক ধরে সাহায্য করার। পাশাপাশি দুটা উঠল। আরেকটার যায়গা নেই দেখে সেটা উঠল দোতলায়।

আগের রিক্সাচালকের হাসি তখন থামে না। দ্যাহো, দ্যাহো-, দশ ট্যাকা কামাইব এমনে-

নতুন অভিনেতা যোগ দিল নাটকে। এক ভদ্রলোক, যুবকই বলা যায়, এসে মনোযোগ দিল এদিকে। রিক্সাচালক বলল, দ্যাখছেন দশটাকায় কি করতাছে?

সে পরিস্থিতি যাচাই করল। তারপর ধমকে উঠল, ছোট মানুষ না।

সমর্থন না পেয়ে আগের রিক্সাচালক আর কথা বাড়াল না। বুঝেছে এটা ওইপক্ষের লোক। রিক্সা তো চালায় না! চালালে বুঝত কষ্ট কি জিনিষ।

রিক্সা তখন যাওয়ার জন্য তৈরী। তিনটা বড়বড় পাত্র, তার ওপর যদি এই দুজন ওঠে তাহলে রিক্সাচালকের কষ্টই হবে। দশ টাকা এই পরিশ্রমের তুলনায় আসলেই কম। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে একজন রিক্সায় না উঠে দৌড় মারল। আরেকজন রিক্সার পিছনে গিয়ে ধাক্কা দেয়ার জন্য তৈরী। রিক্সাচালকের কাজ সহজ হবে এতে।

রিক্সা রওনা হল। দেখতে দেখতে চোখের আড়ালে চলে গেল ওরা।

আমি এই নাটকই দেখি।

চোরের সাথে চলা যায়, ভালর সাথে চলা দায়

May 20, 2009

চোরের সাথে কি বাস করা যায় ?

এককথায়, যায়। যদি আপনি জানেন সে চোর। প্রতিমুহুর্তে চুরির সুযোগ খুজছে। সুযোগ পেলেই চুরি করবে। বিষয়টি কষ্টকর। প্রতিমুহুর্তে তক্কে তক্কে থাকতে হয়। মনে হয় এই বুঝি চুরি হল। আর এই সাবধানতা রক্ষা করে আপনাকে। অন্তত দামি জিনিষপত্র সরিয়ে রাখেন। যাবে অল্পের ওপর দিয়েই যাক। এবং যায়ও। চোরের মনেও কথাটা থাকে। সে তার সীমা জানে। জানে কতটুকু চুরি করে রেহাই পাওয়া যাবে। সেই সীমা সংঘন করা যাবে না।

যদি বিপরীত অবস্থা হয় ?

আপনি যাকে ভাল মনে করছেন, ধরে নিচ্ছেন সে আপনার প্রকৃত বন্ধু, আপনার মংগলকামী, যারকাছে আপনার লুকনোর কিছু নেই, হারাবার কিছু নেই, সে যদি চুরি করে ?

আপনি পথে বসবেন।

আমার পরিচিত একজনের সিডির দোকান। তবে মুল আয় আসে ভিডিও ক্যাসেড থেকে সিডি বানিয়ে। অনেক কষ্টে কেনা একটা ডিজিটাল ক্যামেরা থেকে প্লে করে কম্পিউটারে নেয়, তারপর সিডিতে কপি করে দেয়। একঘন্টার সিডিতে ১০০ টাকা। কখনো কখনো আরো কম। অনেকসময় আক্ষেপ করে এরচেয়ে রিক্সা চালালে লাভ বেশি। লোক রাখার সামর্থ্য নেই। একাই সব কাজ সারে।

তো সেদিন তার পরিচিত একজনকে বসিয়ে রেখে ছোটকাজ সারতে গেল। ফিরে এসে দেখে সেই বন্ধু বিদায় নিয়েছে। সাথে উধাও হয়েছে ক্যামেরাটা। তার ভেতর কাষ্টমারের বিয়ের ভিডিও ক্যাসেট।

ফোন গেল তার বাড়িতে। তার মা বললেন সে বাড়ি নেই। রাতে ছাড়া আসে না। তার ফোন নাম্বার চাওয়ায় বললেন তারকাছে ফোন নেই।

কথা চালাচালি হল বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে। আমি যখন জানলাম তখন তথ্য দাড়িয়েছে এমন;

সে জরুরী ফোন পেয়ে সেখান থেকে চলে গেছে। ক্যামেরা সম্পর্কে কিছু জানে না।

তারকাছে মোবাইল ফোন নেই।

সে সকালে বের হয়েছে, রাতে ফিরবে।

আমি নিজেকে একেবারে গর্ধভ মনে করি না। কথার অসংলগ্নতা কিছুটা বুঝি। কিন্তু যাক সেসব কথা। মোটকথা শেষপর্যন্ত ক্যামেরা ফেরত পাওয়া গেছে।

এবারে নিজের কথা বলি। বিষয়টি আমাকে এত ভাবায় কেন ?

আমার পরিচিত একজন। পরিচয় ১৫ বছরের ওপর। শিক্ষাজীবন থেকে। শুধু পরিচয়ই না, রীতিমত ঘনিষ্ঠতা। এমন বিষয় নেই যা নিয়ে আলাপ হয় না। প্রয়োজনে নিজের কাজ ফেলে আমার করে দিতেও আগ্রহী।

তো বিষয়টা হল, আমার একটা কাজ হল তার মারফত, কাজের বিল ও আসার কথা তার মারফত। একমাস যায়, দুমাস যায়। শুনলাম অসুস্থ। একবার দেখা দিয়ে গেল। জানাল হাসপাতালে সব টাকা খরচ হয়ে গেছে।

আমি মাথা ঘামালাম না। আবারও কাজ, আবারও বিল। আবারও তার মারফত। আমার অর্থ প্রয়োজন। শেষে আর না পেরে একদিন বললাম, আমার বিলটা-

উত্তর হল, কেন সেদিন যে দিয়ে গেলাম। আমার ডায়রিতে লেখা আছে।

অনেকের কাছেই এর উত্তর খুব সহজ। আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বোধ্য। আমি যে বিলের জন্য কয়েক মাস ধরে দিন গুনছি সেই টাকা পেয়ে ভুলে গেছি, আমার সবচেয়ে বড় শত্রুও এমন অপবাদ দেবে না। পরিবার থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি তাতে এটা নিশ্চিত, সরাসরি মুখের ওপর বলতে পারি না সে মিথ্যে বলছে। সেটা সে জানে। সেটাই তার হাতিয়ার।

ফল যা হবার তাই।

টাকার ক্ষোভ আমার নেই। বিন্দুমাত্রও না। এমন এক পেশায় নিজেকে জড়িয়েছি যেখানে প্রতিনিয়ত বিল না পাওয়ার ঘটনা ঘটে। আমার ক্ষোভ সেই বন্ধুত্বে যা সত্যকে মিথ্যে বানাতে পারে। আমার সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত পড়াশোনা, সমস্ত ধ্যানধারনাকে ভেঙে দিয়ে শিখিয়ে গেল, টাকার জন্য সব করা যায়। নীতি, আদর্শ, সত্য এগুলো বইয়ের বুলি, বাস্তবে এগুলি মেনে চলতে হয় না। একজন চোর যদি চুরি করত আমি মুহুর্তেই ভুলে যেতাম। কিন্তু সে দাগ কেটে গেল সারা জীবনের জন্য। আমার মুখের ওপর মিথ্যে বলে গেল যা আর কেউ করেনি।

এজন্যই, ভালমানুষকে আমার বড় ভয়। যতক্ষন না জানি সে কিসের চোর।

নাকাল কর আরো, যে যেভাবে পারো

May 19, 2009

১ কোটির বেশি মানুষের জাতিয় পরিচয়পত্র নেই না এটা কোন খবর না এতে চমকাবার মত কিছু নেই যেখানে বেকারের সংখ্যা এর কয়েকগুন বেশি সেখানে পরিচয়পত্র দিয়ে যে অভাব মিটবে না সেকথা অনেকেরই জানা তবুও, প্রয়োজন হয় এখানে-ওখানে বলা হয়, আছে পরিচয়পত্র ? ন্যাশনাল আইডি ? ওটা না আনলে কাজ হবে না

তখন ছুটতে হয় ন্যাশনাল আইডির খোজে কোথায় পাওয়া যায় ? কোথায় পাওয়া যায় ??

কেউ জানে না একজন খোজ দিল নিলক্ষেতে পাওয়া যায় সত্যিই, পাওয়া যায় টাকা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে খবর গেল পুলিশের কানে তারা এসে হাতকরা পড়াল, বুকে নাম এটে লাইন করে বসিয়ে ছবি উঠাল তারা নিজেরাও দাড়াল পিছনে খবরের কাগজে ছাপা হবে, যেমন তেমন কথা!

যাকে বলা হয়েছিল এনআইডি আনতে তার যন্ত্রনা বাড়ল আর কোথায় পাওয়া যায় ?

যায় আরো অনেক যায়গায় দেশের আনাচে কানাচে ডিজিটাল বাংলাদেশে কম্পিউটার-প্রিন্টারের অভাব নেই, মেধার অভাব নেই, জনবলের অভাব নেই, টাকা রোজগারের পদ্ধতির অভাব নেই একখানে না পারিলে দেখ অন্যখানে কাজ চলতেই থাকে

তবে কথা অন্যখানে এই এনআইডি আসলে কি একসময় কজন দেবদুত ক্ষমতা দখল করে ঘোষনা করলেন তারা এই সমাজকে আদর্শ সমাজ বানিয়ে ছাড়বেন কার সাধ্য বাধা দেয় গাড়ি থাকুক বা না থাকুক বাড়িতে গ্যারেজ বানাতে হবে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি রাখুন আপত্তি নেই, গ্যারেজ বানান ফুটপাত ছাড়া হাটলে জরিমানা দিতে হবে গুদামে ষ্টক করে রাখা চলবে না দেশ এতদিন চলেছে কিভাবে! সব দুর্নীতিবাজ জেলে পোরা হবে বিবিসির কাদির কল্লোল যখন জিজ্ঞেস করলেন যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার গ্রেপ্তারের কারন কি দেখানো হয়েছে, দেবদুত ধমকে উঠলেন যাকে নিয়ে এত কথাবার্তা, এত সমালোচনা, তাকে ধরা নিয়ে এত কথা কিসের ? মুখ বন্ধ রাখুন

সারা পৃথিবীর মানুষকে রেডিওতে টেবিল চাপড়ানোর শব্দ শুনিয়ে দিলেন

তবে সবকিছু একেবারে মনমত হল না জিনিষপত্রের দাম হুহু করে বাড়তে থাকল একসময় ঘোষনা দিতে হল, ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করুক আর যাই করুক তাদের কিছু বলা হবে না শুধুমাত্র রাজনীতিবিদদের আমরা ধরব আমরা পুটিমাছ ধরব না, রুই কাতলা শিকার করব একসময় সেখান থেকেও সরতে হল রাজনীতিবিদরাও একে একে মুঠো থেকে বেরতে শুরু করল নির্বাচন, নতুন সরকার সবকিছুই হল কথা ছিল তাদের যাকিছু আবিস্কার সবকিছুরই স্বীকৃতি দেয়া হবে কিন্তু হল না অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে অনেক আবিস্কারকে চলে যেতে দেয়া হল এই গ্যাড়াকলে পড়ল এনআইডির বিষয়টিও নতুন মন্ত্রী সরাসরিই বললেন, সেটা মরে গেছে এখন এনআইডি-র বৈধতা নেই নতুন আইন করলে তখন দেখা যাবে কোন কাজেই এনআইডি থাকা বাধ্যতামুলক নয়, তবে এনআইডি থাকা ভাল পরিচয় জানা যায়

এখন এই পরিচয় জানানোর দায়িত্ব কার কেউ জানে না বলা হয় এটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বাপরে! নির্বাচন কমিশন দেশের সব মানুষের পরিচয় দেবে সেই পরিচয়ের গুনে একজন ব্যাংক একাউন্ট করতে পারবে, ইলেকট্রিক বিল-গ্যাসের বিল জমা দিতে পারবে, পাসপোর্ট বানাতে পারবে, ট্রেড লাইসেন্স বানাতে পারবে শুনেছিলাম যাদের বয়স ১৮ পেরিয়েছে তাদের দায়িত্ব এই নির্বাচন কমিশন নামের অভিভাবকের এখন দেখা যাচ্ছে সকলেরই

কিন্তু তারা সেটা করছে কখন ? কোথায় ? তাদের সাথে যোগাযোগ করার পদ্ধতি কি ?

কেউ জানে না মন্ত্রী যে কথা সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন সেকথা এইসব এনআইডি চাওয়া লোকের কাছে পৌছে না তাদের কাছে এটা অন্য সবকিছুর সাথে নতুন এক পদ্ধতি সাধারন মানুষকে নাকাল করার এমন সুযোগ ছাড়ে কে

সরকার বলছেন, আমরা যতটুকু করার করছি বাকিটা তোমরা কর সুকুমারের ভাষায়- নাকাল কর আরো, যে যেভাবে পারো

ডিজিটাল বাংলাদেশ - ডিজিটাল ক্যামেরা

May 18, 2009

আপনার ফটোগ্রাফির আগ্রহটা হঠাৎ করেই চাউর দিয়ে উঠেছে নেটে দেখা যায় কতরকম প্রতিযোগিতা ঘরে বসে ছবি পাঠিয়ে দিলেই হল যদি লাইগা যায় ১০ হাজার, ২০ হাজার ডলার পুরস্কার সেইসাথে বিদেশ ভ্রমন ভাল একটা ক্যামেরা কিনলেই হয় তারপর আর কোন খরচ নেই। একটা এসএলআর কি কেনা যাবে না একজনের কাছে শুনলেন সে কিনেছে ৭৫ হাজারে নাইকনের ডি-৯০ ফাটাফাটি ক্যামেরা

নেটে খুজতে শুরু করলেন নাইকনের ডিলার কে ? ফ্লোরা লিমিটেড তাদের ওয়েবসাইটও পাওয়া গেল সেখানে ক্যামেরাও ফোন করলেন

ডি-৯০ এর দাম কত ?

আশি হাজার

কেন পচাত্তরে পাওয়া যায় না ? একজন তো কিনেছে এই দামে। আপনারা তো ডিলার আরো কমে দেবেন

না একই দাম

লেন্স কি দিবেন ?

আপনে যা নেন

ওর সাথে তো ১৮-১০৫ লেন্স থাকে

ওটার দাম বিশ হাজার

তারমানে ?

তারমানে ক্যামেরা আশি লেন্স বিশ মোট এক লাখ

কিন্তু একজন যে লেন্সসহ কিনেছে পচাত্তরে

কোথায় ?

বায়তুল মোকাররমে

ও দুই নম্বর মাল

বিভ্রান্ত হয়ে ফোন রেখে দিলেন ক্যামেরাও দুই নম্বর কোথায় হয় ? ধোলাইখাল ? জিঞ্জিরা ? নাকি চায়না মাল

যাকগে এসএলআর অত টাকা নেই বরং অন্য ক্যামেরা দেখি

গুগল-ইয়াহু সার্চ করে খুজে পেতে বের করলেন কয়েকটা মডেল সুপারজুম ক্যামেরা সবগুলি দশ মেগাপিক্সেল বারো মেগাপিক্সেল মডেলগুলো দেখলেন ভাল করে নাইকন, ক্যানন, প্যানাসনিক, অলিম্পাস সেরা সেরা সব কোম্পানী পুরস্কার না পেয়ে যায় না

আবারো ফ্লোরা নাইকন আর অলিম্পাসের ডিলার

আবারো ঢুকলেন ওয়েবসাইটে। এমাথা থেকে ওমাথা চষে ফেললেন নেই পি-৯০ নেই

পি-৮০ দিয়ে কি কাজ হবে ? ওটা তো বাতিল মডেল

সেটাও নেই

আচ্ছা অলিম্পাস দেখা যাক এসপি ৫৯০ আলট্রা জুম

সেটাও নেই তার আগের মডেল তার আগের মডেল সেটাও নেই

আচ্ছা কদিন আগেই তো পেপারে দেখলাম প্যানাসনিকের প্রদর্শনী কে যেন ক্যামেরার ডিলারশীপ নিয়েছে বিক্রি করবে নাকি বাংলাদেশে তৈরী করবে ? দুদিন প্রদর্শনী করল মৈত্রি সন্মেলন কেন্দ্রে

সার্চ করতে শুরু করলেন প্যানাসনিক-বাংলাদেশ, লুমিক্স-বাংলাদেশ, ডিজিটাল ক্যামেরা-বাংলাদেশ গুগল-ইয়াহু ফেল মারল

যাকগে প্যনাসনিক ক্যাননের ডিলার কে জানি জেএএন আবার সার্চ করতে শুরু করলেন, জেএএন-বাংলাদেশ আবারও ফেল

ধুত্তোর সরাসরি যাই আইডিবিতে ওদের শোরুম আছে কম্পিউটার সিটি ওখানে সবকিছুই পাওয়া যায় বড়জোর দুঘন্টা লাগবে যেতে আসতে। প্লাশ জ্যামের জন্য আরো দুঘন্টা। সমস্যা কি ? সময়ের দাম আর কটাকা ? কেউ কি টাকা দিচ্ছে সময় বাচালে ?

জেএএন একটা রঙিন কাগজ ধরিয়ে দিল আপনার হাতে নানারকম ক্যামেরার ছবি। সব ধরনের বর্ণনা। এইতো দেখা যাচ্ছে এসএক্স-১ আইএস

এটার দাম কত ?

কোনটা ? ও, ওটা ষ্টকে নেই

মনটা খারাপ হয়ে গেল বড় পছন্দ ছিল জিনিষটা এসএলআরের বদলী কাজ চলত হাই ডেফিনিশন ভিডিও করা যায়। আচ্ছা একধাপ নিচে নামা যাক

এসএক্স-১০ আছে ?

না

আবারও ধাক্কা

শেষ হয়ে গেছে ? কবে পাওয়া যাবে ?

ওসব চলে না এইগুলান আছে

আপনি একবার চোখ বুলালেন প্রদর্শনীর দিকে এগুলো দিয়ে বাড়ির লোকজনের, বন্ধুবান্ধবের, বান্ধবীর ছবি উঠানোর শখ মিটতে পারে কিন্তু পুরস্কারের ডলার ?

একেবারে অর্ধেকে নেমে এলেন আপনি ২০এক্স জুম থেকে ১০ এক্স ওইযে এসএক্স-১১০, ওটার দাম কত ?

বত্রিশ

সেকি ? আমি যে নেটে দেখলাম ওর দাম ২০৫ ডলার

কোথায় দেখলেন ? নেটে ? ওরা একটা বিক্রি করে না ওইডা পাইকারী দাম

মনখারাপ করে ফিরতে শুরু করলেন তখনই পরিচিত একজনের সাথে দেখা তাকে বললেন দুঃখের কথা তার কোন পরামর্শ যদি পাওয়া যায়

বললেন, ভাবছি অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কিনে নেব

সত্যিকারের পরামর্শই পেলেন তার কাছে একেবারে বাস্তব

টাকা দেবেন কিভাবে ? বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে টাকা পাঠানো বেআইনি মানি লন্ডারিং আইনে পড়বেন চেষ্টা করে একজনের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছিলাম একবার হারিয়ে গেল, একবার আসার পর জিনিষটা কাষ্টমসকে দান করে এলাম ৫০ ডলারের জিনিষের ট্যাক্স ৩০০ ডলার তারচেয়ে ৩০০ ডলার বাচাই দরকার নেই জিনিষ

আপনারও মনে হল, দরকার নেই ক্যামেরা দরকার নেই পুরস্কার দরকার নেই ডলার। পেলেও ঝামেলা। পাঠাবে কিভাবে ? সেখানেও তো মানি লন্ডারিং। তারচেয়ে চোখকান বুজে ভালই আছি
 

Browse