পরিবর্তন দ্রুত হওয়াই ভাল

May 6, 2009

জগত পরিবর্তনশীল পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে, হবে তার কিছু আমরা দেখি, অধিকাংশই দেখি না গ্যালিলিও নাকি পৃথিবী নয় সুর্য ঘুরছে এমন স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েও একাএকা নিজেকেই বলেছিলেন, তবুও পৃথিবী ঘুরছে আমরা স্বিকার করি বা না করি কিছু যায় আসে না।

পৃথিবী ঘুরছে, ঘুরছি আমরাও কিন্তু আমার বক্তব্য এত বড় বিষয় নিয়ে নয় ছোট মানুষের আওতা ছোট, বক্তব্যও ছোট আমার পরিধি ঢাকা শহর এখানে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষ বাড়ছে, রাস্তায় ভিড় বাড়ছে, দামী গাড়ি বাড়ছে, জিনিষের দাম বাড়ছে, হৈচৈ-ধাক্কাধাক্কি বাড়ছে, ছিনতাই-মারামারি বাড়ছে এইসব তবে সবকিছু সবসময় বাড়ার লিষ্টে যায় না সকল ক্রিয়ার সমান বিপরীত প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান, এমনটাই নিউটনের বক্তব্য একদিকে বাড়ার সাথেসাথে আরেকদিকে কমছে হাটার যায়গা কমছে, ওয়াসার পানি কমছে, তিতাসের গ্যাস কমছে, খাবারের পরিমান কমছে কারো কাছে সবকিছু শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে কারো কাছে সবকিছু শুধু কমছে আর কমছে তবে এই পরিবর্তন চোখে পড়ে না অন্তত সহসা পথে হাটার সময় যেমন নিজের পা বাচাতে হয়, গা বাচাতে হয়, পকেট বাচাতে হয়, আশেপাশে কি ঘটছে চোখে পড়ে না ঠিক তেমনি নিজেকে বাচাতে ঢাকা শহরের দিকে চোখ রাখা দায়

একসময় একে বলা হত গ্রীন সিটি কোন সময় আমার জানা নেই হয়ত কোন এক জন্মে যখন ঢাকায় থাকা কতটা লাভজনক তা মানুষ বুঝে ওঠেনি যখন বুঝেছে তখন থেকেই সবুজ উধাও হতে শুরু করেছে সবুজের চেয়ে ইট-সুরকি-সিমেন্টের রং বেশি পছন্দসই মনে হয়েছে আমাজনের চেয়েও দ্রুত বিলুপ্ত হয়েছে সবুজ এখন ঢাকা নানা রঙে রঙিন এই পরিবর্তন হয়েছে এমনভাবে যা চোখে পরেনি কেউ পরিবর্তন চোখে দেখেনি যেদিন পথের ধারে একজন কয়েক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে বসল তখন মনে হয়েছে আহা বেচারা করার কিছু নেই বসুক কিছু একটা করে খাক অন্তত চুরি ডাকাতি তো করছে না কদিন পর সেই সিগারেটের প্যাকেটগুলি রাখার জন্য বাক্স তৈরী হল নয়ত সিগারেট কোম্পানী তৈরী করে দিল তাকে উদ্ধার করতে, মোবাইল কোম্পানী তাদের নাম লেখা ছাতা দিয়ে গেল রোদ থেকে বাচতে অন্তত সামান্য হলেও মাথার ওপর ছাদ পেল সে বাক্সটা আরেকটু বড় করতে হল লোকজন চা খেতে আসে, সেজন্য ষ্টোভ বসানো দরকার বসার জন্য ছোট একটা টুলও আনা হল

তবে লোক বাড়ছে এক টুলে যায়গা হয় না এরই মধ্যে পুলিশ এসে হাজির তাকে টাকা দিতে হল সাথে বলতেও হল, ওস্তাদ দেইখা রাইখেন

ওস্তাদ দেখে রাখলেন সে স্থায়ী বাইসন্দায় পরিনত হল। এখন তাকে সরায় কে। ওই ব্যাটা, জানস এইডা কার যায়গা। টেংরি ভাইঙ্গা দিমু।

একসময় তার প্রতিবেশি এসে হাজির হল তারপর আরেকজন। এভাবেই সমাজ গড়ে ওঠে সে শুরু করল আরো ছোট থেকে ক্রমে ক্রমে হামাগুড়ি দিতে শিখল, দাড়াতে শিখল, হাটতে শিখল কেউ লক্ষ্য করলনা পরিবর্তন ঘটছে যখন লক্ষ্য করল তখন সেখানে হাট বসে গেছে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে সেখানে এদের অন্য কর্মসংস্থান নেই, বাচার আর কোন উপায় নেই, যাওয়ার যায়গা নেই এদের বাচতে দাও, শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে এল একদল অন্যদের কর্মসংস্থান রক্ষা করাই তাদের কর্মসংস্থান তাদের বেতন-ভাতা খরচ আসে পশ্চিম দিক থেকে তারাও দলে বাড়তে শুরু করল

পরিবর্তন হচ্ছে হচ্ছে ধীরে ধীরে পরিবর্তন চোখে পড়ছে না কখনো মনে হয়েছে চোখে পড়বে তখন তারা বিরক্ত হয়ে বলবে, ধুত্তোর কিছু একটা হওয়া দরকার

কিন্তু ভেবে দেখেছি, সেটা হওয়ার না আমি হয়ত বিশ বছর, তিরিশ বছর আগের কথা মনে করতে পারি, তারসাথে তুলনা করতে পারি এরা সেটা দেখেনি দেখেছে বছর খানেক, বড়জোর বছর দুই-তিন-পাচ-সাত আগের অবস্থা সেখান থেকে পরিবর্তন সামান্যই বছরে পানির স্তুর কত ফুট নামে ? অ, এতে আর অসুবিধা কি। আরো দশফুট পাইপ বেশি লাগব। লাগুক না, এমনটা ঘটতেই পারে এনিয়ে হাউকাউ করার কি আছে

সেজন্যই বলছিলাম, পরিবর্তন দ্রুত হওয়াই ভাল যদি একসময় মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে বারো ঘন্টা লাগে, যদি নিজের প্রস্রাব ফিল্টার করতে হয় পানির অভাবে, তাহলে সেটা দ্রুতই ঘটুক। যেন সবাই দেখে আসলে কি হচ্ছে কি হতে যাচ্ছে

0 comments:

 

Browse