যুক্তি বনাম প্রযুক্তি

Dec 30, 2010
যুক্তি অত্যন্ত ভাল জিনিষ। যুক্তিসংগত কাজ করবেন, যুক্তিসহ চিন্তা করবেন, যুক্তিসংগত কথা বলবেন, যুক্তিসংগত আচরন করবেন, যুক্তিসংগত চলবেন। একমাত্র প্রযুক্তি বাদ দিয়ে। অন্তত আপনি যদি প্রযুক্তির দেশে বাস করেন। যেমন তেমন প্রযুক্তি না, একেবারে ডিজিটাল প্রযুক্তি।
কথা না বড়িয়ে সরাসরি কাজের কথায় যাওয়া যাক। ডিজিটাল প্রযুক্তির মুল কথা হচ্ছে ডিজিটাল যোগাযোগ। কাজেই যুক্তিসংগতভাবে আপনাকে সেবিষয়ে পারদর্শী হওয়া প্রয়োজন এবং সেটা কাজে লাগানো প্রয়োজন। কিন্তু আগেই যেমন বলেছি, প্রযুক্তিকে যুক্তি দিয়ে বিচার করবেন না।
ধরুন ইন্টারনেট। সারা দেশে গ্রামে গঞ্জে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়া হবে। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবী দেশের ৯৮ ভাগ এলাকা ইন্টারনেটের আওতায়। কথাটায় ভুল নেই অবশ্যই। যদি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ থাকে তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগও অবশ্যই আছে। এখন প্রয়োজন শুধু কৃষকদের ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া।
বকারামের পাঠক আর যাই হোন, অন্তত কৃষক নন। কৃষক বাদে অন্যদের অবস্থা একবার জেনে নেয়া যাক।
একসময় বলা হত (আমাদের বিশেষজ্ঞরা বলতেন) দেশ সাইবার হাইওয়েতে যুক্ত হলেই বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার আসতে শুরু করবে। ওই যে, ডাটা এন্ট্রি। ইন্টারনেটে কাজ করবেন আর হুড়হুড় করে ডলার আসতে শুরু করবে। একসময় সেটা হয়েছে। মানে, সেই সাবমেরিন কেবল সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেখা গেল বিলিয়ন ডলার আসেনি।
নিশ্চয়ই অন্যভাবে সেটা হবে। আসলে দিন তো থেমে থাকে না। আজকাল দ্রুতই পরিবর্তন হয়। কাজেই আসলে ডাটা এন্ট্রি না, ওটা হবে মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, না-না এটা হবে ওয়াপ কনভার্শন, আরে না-না, ওটা হবে কল সেন্টার। আরে ওসব তো সেকেলে হয়ে গেছে। অন্য দেশ ওসব দখল করে ফেলেছে। ওটা হবে আউটসোর্সিং। গার্মেন্টস শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে এই শিল্প। মানুষ কিলবিল করে যেতে থাকবে সেখানে। দেখেননি, গার্টনারের আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশ। সবাই বলছে বাংলাদেশ ধনী দেশ হয়ে যাচ্ছে।
মুল শক্তি হচ্ছে ওই ইন্টারনেট। ওরই ধাক্কায় দেশ ২২ নম্বর ধনী দেশ হয়ে যাবে। আজকাল আমরা ডায়াল-আপ ব্যবহার করি না, ব্যবহার করি ব্রডব্যান্ড। ব্রডব্যান্ড অর্থ কি ওসব কথা তুলবেন না। ব্রডব্যান্ড মানে ব্রডব্যান্ড। টেলিফোন লাইন প্রয়োজন হয় না।
তার ওপর ফোরজি চালু করা হয়েছে ভারতের আগে। কই ওরা পেরেছে ওয়াইম্যাক্স চালু করতে!
ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করবেন কিভাবে ?
মডেম-সহ একটা লাইন কিনবেন। একমাসের টাকা অগ্রিম। সংযোগ দেবেন। সাথেসাথে এঞ্জেলিনা জোলি ডাউনলোড হতে শুরু করবে। তারপর কদিন গেলে দেখবেন সে আসতে আসতে বুড়ি হতে শুরু করেছে। তারপর দেখলেন আদৌ কানেকশনই নেই।
কারন কি, কারন কি ?
ও, আপনি তো আনলিমিটেড কানেকশন নিয়েছেন। সেটাই কারন। একে বলে ফেয়ার ইউজ। আপনি যতখুশি ডাউনলোড করবেন সেটা তো ফেয়ার না। হে-হে-হে। টাকা ঢালেন, আরো পাবেন। দেখেন না হলিউডের মুভি রিলিজ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাজারে ডিভিডি পাওয়া যায়। ওরা তো পাচ্ছে। আপনি ওদের পথে যান।
কেন ভাই ? আনলিমিটিড কানেকশন বলে টাকা নিলেন, সেখানে আবার লিমিট কিসের ?
আনলিমিটেড বলেছি তো বলেছি, ফেয়ার ইউজও তো বলেছি। সেটা চোখে দেখেননি।
একে বলতে পারেন আইনি জোচ্চুরি। তারা যেহেতু আগেই বলেছে সেহেতু আইনের চোখে কোন অপরাধ নেই। আপনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
আইনি ব্যবস্থার কথা যখন উঠলই তখন আমরিকার উদাহরন একবার দেখে নিতে পারেন। এফসিসি নাকি সবাইকে বলে দেয়, ওয়েবসাইট থেকে সফটঅয়্যার ডাউনলোড করে নিন, ইন্টারনেটের স্পিড মাপুন, দেখুন তারা যা প্রচার করে তারসাথে পার্থক্য আছে কি-না। থাকলে সাথেসাথে আমাদের জানান। সাথেসাথে জোচ্চুরি মামলা।
আপনি এই তথ্য না জানতে পারেন, তারা জানে। কাজেই আগে থেকে সেপথ পরিস্কার। বিটিআরসি-তে অভিযোগ করবেন ? করুন গে। তারাও জানে। সবচেয়ে বেশি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে টেলিটক। আর আমরা একা নাকি, সব কোম্পানীই ওই ফেয়ার ইউজের পথ বেছে নিয়েছে।
ভবিষ্যতে কি হবে জানতে চান ?
টেলিটক চীনের কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেছে থ্রিজি চালু করার। অপেক্ষা করুন। কোন প্রযুক্তি বাদ থাকবে না।
আর যদি যুক্তি খুজতে চান, যুক্তি কথা বলতে যান, যারা ওয়াইম্যাক্সের লাইসেন্স হাতে রেখে আদৌ চালূ করতে পারেনি তারা থ্রিজি চালু করবে তার ভরসা কোথায় ? চালু করলে তারা কি সেবা দেবে ? বর্তমানেই যখন ..
এজন্য আগেভাগে ওই কথা বলা। প্রযুক্তিকে যুক্তি দিয়ে বিচার করবেন না।

শয়তানের ভাই

Dec 26, 2010
ঢাকা শহরের পুরনো বাসিন্দাদের হয়ত মনে থাকার কথা, প্রেস ক্লাবের মোড়ে আইল্যান্ডে বিশাল আকারে বাণী লেখা ছিল একসময়। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। নিশ্চয়ই বক্তব্য ছিল আপনি যদি নিজেকে শয়তানের সহোদর বানাতে চান তবেই অপচয় করুন, নইলে মিতব্যায়ী হোন।
সে অনেক পুরনো কথা। দেশ বহুদুর এগিয়ে গেছে। শয়তানও নিশ্চয়ই পরিবর্তিত হয়েছে। হয়ত সে নিজেই এখন অপব্যয় ছেড়ে মিতব্যায়ী হয়েছে, আর সেটা পুরোটাই চাপিয়ে দিয়ে গেছে ঢাকাবাসীর ওপর। কিংবা দেশবাসির ওপর।
দুএকটা উদাহরন দিলেই বিষয়টা পরিস্কার হতে পারে। ধরুন ওই শিক্ষা ব্যবস্থার কথাই। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। কাজেই মেরুদন্ড শক্ত করতে শিক্ষাকে যথেষ্ট পুষ্টি দেয়া প্রয়োজন। শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগেই কোচিং সেন্টারে পাঠিয়ে সেটা শুরু। তারপর বছরের পর বছর চলতে থাকে সেই পুষ্টিদান। বেশিরভাগ সময় মা, কখনো কখনো বাবাকেও অফিস-ব্যবসা ফেলে সন্তান নিয়ে হাজিরা দিতে হয় স্কুলে। বাড়ি থেকে বেরতে হবে দুঘন্টা আগে, আবার ছুটির দুঘন্টা আগে রওনা দিয়ে গেটে পৌছুতে হবে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আপডাউন রিক্সা বা ট্যাক্সিভাড়া। অথবা নিজের গাড়ির তেল-গ্যাস-ড্রাইভার খরচ। কেউ কেউ স্কুলের পুরো সময়টাই স্কুলের সামনে ফুটপাতে বসে সময় কাটান। কোথাও কোথাও অবশ্য সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলীর কল্যানে ফুটপাত ঘিরে ঘর বানিয়ে বসার যায়গা করে দেয়া হয়েছে। রীতিমত স্থায়ী, পাকা ঘর। নির্মাতার নাম জ্বলজ্বল করছে সেখানে।
কথা বাড়িয়ে কাজ নেই। কথা হচ্ছিল অপচয় নিয়ে। হিসেব করে সহজেই বের করে নিতে পারেন এখাতে কত পরিমান টাকা, কি পরিমান সময় এবং কতখানি শ্রমের অপচয় হচ্ছে। শতকোটি, সহস্রকোটি কিছুএকটা হবে নিশ্চয়ই।
তাই বলে নিজেকে শয়তানের ভাই ভাববেন না। সরকার এনিয়ে বিস্তর মাথা ঘামাচ্ছেন। স্কুলের বাসের চিন্তাভাবনা করছেন। একদিন সেটা হবেই হবে।
স্কুল পেরিয়ে, কলেজ পেরিয়ে পরের ধাপে যাওয়ার সাথেসাথে ধরনটাও পাল্টে যায়। শুরুটাই একবার দেখা যাক।
দেশে যত ধরনের যতগুলি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে সব যায়গায় ভর্তির প্রস্তুতি নেবেন। সব ধরনের কোচিং সেন্টারে যাবেন। তারপর সব যায়গার ফরম কিনবেন, ভর্তি পরীক্ষা দেবেন। কোথায় সুযোগ পাবেন সেটা যখন জানা নেই তখন না করে করবেনই বা কি!
প্রশ্ন করতে পারেন একযুগ ধরে যে পড়াশোনা, এসএসসি-এইচএসসি নিয়ে এত তোড়জোর, সেটার ফল কি কাজে লাগে। সেটা দেখেই তো ভর্তি করা যায়। যে আগের দুই পরীক্ষায় ভাল করেছে তার অগ্রাধিকার, তারপর ক্রমাম্বয়ে ...
ওসব কথা বলবেন না। জানেন এটা কত টাকার বানিজ্য ? কোচিং সেন্টারগুলির টাকা কার কার পকেটে যায় ??
দেশের অর্থনীতির কথা তো ভাববেন। কত মানুষ করে খাচ্ছে এই পদ্ধতিতে সে খোজ রাখেন ? কিছু মানুষ টাকা খরচ করছে ঠিকই, কিন্তু যার সামর্থ্য আছে সেই তো খরচ করে। যাদের পকেটে যায় তারা রীতিমত মাথা ঘাটিয়ে, শ্রম দিয়ে, কষ্ট করে, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আয় করে।
আর যাই হোক একে অপচয় বলবেন না। ধর্মপ্রাণ এই দেশে শয়তানের ভাই বাস করতে পারে না।

এমন মজা হয় না

Dec 13, 2010
মজা কে না পছন্দ করে। মজার জন্যই জীবন। আর জীবন থাকলেই মজা। মজার খাবার, মজার কাজ, মজার কথা, মজার পোষাক। জীবনটাই মজা। ছোট হোক, বড় হোক, ধনী হোক গরীব হোক, ভেদাভেদ নেই। মজার নেশা মেতে ওঠাটাই কথা।
সমস্যা একটাই, মজার জিনিষ বেশিদিন টেকে না। ওই খাবারের কথাই ধরুন না কেন। কেএফসি গিয়ে কেনটাকির আলু খেলেন। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল। আরো মজা মানে আরো টাকা।
শাহরুখ খান এসে নিজে নেচে অন্যদের নাচিয়ে মজা করে, মজা করিয়ে চলে গেলেন। নিন্দুকেরা বলছে শতকোটি টাকার ব্যবসা করে গেলেন। তাতে কি ? মজাটা তো পাওয়া গেল। এরই মধ্যে লোকজন দোকানে গিয়ে খোজ করতে শুরু করেছে, শাহরুখ খানের অনুষ্ঠানের ভিডিও আছে ? দেন তো। একবার দেইখ্যা মজা শেষ হয় নাই।
একসময় একজন শিশুকে কাঠি লজেন্স ধরিয়ে দিলেই চলত। সেটা মুখে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চুষে যেত। সেটাও শেষ হত অবশ্যই, তবে ধীরগতিতে। আর খরচটাও কম। একসময় শুধু কাঠিটাই হাতে থাকত। আজকাল শিশুরা ওইসব কাঠিলজেন্স পেলে খুশি হয় না। কারো পছন্দ আইসক্রিম। সেটার মজাও বেশি, শেষও হয় খুব দ্রুত। কারো পছন্দ বোতলের ড্রিংক। কেউ কেউ আবার পরীক্ষা করে বলেছে ওতে নেশাদ্রব্য মেশানো থাকে। খেতে খেতে নেশায় পরিনত হয়, তারপর ওটা না খেলে চলে না। তা দ্রব্যের গুনেই হোক আর মজার নেশায়ই হোক, শিশু বায়না ধরলে আদায় করে তবেই ছাড়ে।
কিংবা বিশেষ দিবসের বিশেষ মজার কথাই বলুন না কেন। কোনদিন লাল-সবুজ পোষাক পরতে হয়, কোনদিন লাল-সাদা, কোনদিন শুধুই কালো, কোনদিন ঝলমলে হলুদ।
আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই। এতক্ষনে বোঝা হয়ে গেছে মজার পেতে টাকা প্রয়োজন হয়। লাল-সবুজ চুড়িই হোক আর মুখে লালসবুজ রং লাগানোই হোক, কোনটাই টাকা ছাড়া হয় না। কাঠি লজেন্স চুষতেও টাকা লাগে।আর যদি সেটা না থাকে তাহলে শুধু কাঠিই চুষতে হয়।
সমস্যা হচ্ছে, সেটা অনিরাপদ। চোষার জন্য কাঠি নিশ্চয়ই বিদেশ থেকে আমদানী করতে পারেন না (করলে কত ভাল ব্যবসাই না হত)। দেশের কাঠির আর নিশ্চয়তা কি। কি ভেজাল দেবে কে জানে ?
আরে ভাবছেন কেন ? সমস্যা তো হাতের নাগালে। একেবারে হাতে হাতে। বুড়ো আঙুলটা মুখে ঢুকান, আর চুষতে শুরু করুন। কোন খরচ নেই, শেষ হওয়ারও ভয় নেই। অন্তত বছর পাচেকের জন্য নিশ্চিত।
পাচ বছরের হিসেবটা আসলে গনতন্ত্রের হিসেব। দেশ যেহেতু গনতন্ত্রের  পথে চলছে সেহেতু আপনাকে গনতন্ত্র মেনেই চলতে হয়। পাচ বছরে একবার ভোট দেবেন। নেতাদের মুখে শুনবেন কাকে ভোট দিলে আপনার কি কি উপকার হবে। পাচ বছর নিশ্চিন্তে দিন কাটাবেন। তারপর চাকরী-বাকড়ি-টেন্ডার-ব্যবসা সবই যখন ওই নির্বাচন জেতা এবং নির্বাচন জেতানো নেতাদের দিকে যেতে শুরু করে তখন আপনার সম্পদ ওই বুড়ো আঙুলই। আবার নির্বাচন এলে দেখিয়ে দেব, একথা ভাবতে ভাবতে চুষতে থাকবেন।
এমন মজা কি অন্যকিছুতে পাওয়া যায় ?

চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা

Dec 5, 2010
বাংলাদেশের ভাবমুর্তি অত্যন্ত রঙিন। অন্তত বিদেশীদের কাছে তো বটেই। নানা রঙে উজ্জ্বল। রাজনীতি-অর্থনীতি-দুর্নীতি সবকিছু এতটাই উজ্জ্বল যে অন্যরা ধারেকাছে ঘেষতে পারে না। অবশ্য যুদ্ধআক্রান্ত দেশগুলিকে বাদ দিয়ে। তা সেগুলিকে আর দেশ বলেই বা লাভ কি ? ইরাক-আফগানিস্তানের সত্যিকারের মালিক কে জানার উপায় কি ? সিদ্ধান্ত যখন সেদেশের মানুষ নেয় না।
পরচর্চা করা প্রয়োজন নেই। বরং বাংলাদেশের বর্নিল দিকের কথাই বলা যাক।
ভাবমুর্তিতে অত্যন্ত রঙিন নতুন একটি পালক যোগ করলেন একজন। দারিদ্র দুর করার পথ আবিস্কার করে, সেপথে সারা জীবন কাটিয়ে শান্তির মানব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন। সারা বিশ্বের মানুষ ঝুকে পড়ল দারিদ্র দুরীকরনের এই পদ্ধতির দিকে। আর নিজের দেশে শতশত, হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল দারীদ্র দুর করার মহান কাজে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত থাকবে এটা অস্বাভাবিক মনে করার কারন নেই। মানুষ ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষেও কথা বলে।
সেকথা থাক। বরং ঘটনা কি দেখা যাক। হঠাত করেই একটা পুরনো খবর নতুনভাবে আবিভুত হল। নরওয়ের টিভিতে এইসব ঋনের কাযর্কারিতাকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে বিপত্তি সেখানেই।
দারীদ্র দুরীকরনের পথপ্রদর্শক, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গ্রামীন ব্যাংক নরওয়ে থেকে অর্থগ্রহন করেছিল দরীদ্রদের শতকরা ২ ভাগ সুদে ঋন দেবার শর্তে। সেই অর্থ থেকে বড় একটি পরিমান (তাদের হিসেবে ৭০০ কোটি টাকা) তাদেরই আরেকটি প্রতিস্ঠানে স্থানান্তর করা হয়েছে। আপত্তি সেখানেই।
নানা মুনির যেমন নানামত থাকে তেমনি এখানেই বহুমত রয়েছে। বরং তাদের নিজেদের ব্যাখ্যার দিকেই দৃষ্টি দেয়া যাক। অর্থ যদি না সরানো হত তাহলে তাদের বিপুল পরিমান কর দিতে হত। তাহলে দরীদ্রদের ২% সুদে ঋন দেয়া সম্ভব হত না। কাজেই দরীদ্রদের স্বার্থে কাজটি করতে হয়েছে। আর বিষয়টি বছর পনের আগের। তখন  যদি কথা না ওঠে তাহলে এখন উঠবে কেন ?
আর বিপক্ষমত যদি শোনেন, এক ফান্ডের টাকা আরেক নেয়া কতটা আইনসম্মত, কতটা নৈতিক। মুল কারন যখন ট্যাক্স ফাকি দেয়া। কিংবা যে ২% সুদে ঋন দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেই ২% সুদে কে কখন ঋন পেয়েছে। শোনা যায় ঋনের সুদ সরকারী-বেসরকারী-বানিজ্যিক যত ধরনের ব্যাংক আছে তাদের সবার থেকে বেশি। আসলে সেই হার কত কেউ জানে না। হোয়াইটহাউজ-পেন্টাগন কবে কোন চিঠিতে কি লিখেছে সেখবরও সারা পৃথিবীর মানুষ জানার সুযোগ পায়, কিন্তু কয়েক দশক ধরে একটি প্রতিষ্ঠান ঋন দিচ্ছে, বহুকোটি মানুষ ঋন নিয়েছে, প্রতিনিয়ত নিচ্ছে, তারপরও সেই ঋনের হার কত জানা যায় না।  
থলের বেড়াল যদি বেড়য় তাহলে বিপত্তি ঘটার সম্ভাবনা থাকেই। আর হয়েছেও তাই। এখানেও নানা মুনীর নানা মত। নরওয়ের সরকার চক্রান্ত করে এটা করেছে থেকে শুরু করে টেলিনরের সাথে গ্রামীনের বিরোধ সব কারনই উঠে এসেছে। এবং আগামীতে যা আসতে বাকী আছে তা হচ্ছে সরকার এবং বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থান। অন্তত লক্ষন বলে দিচ্ছে বিষয়টি সেদিকেই যাচ্ছে। দুপক্ষ থেকেই খোচা মেরে পরীক্ষা করা হচ্ছে কোনপথে অগ্রসর হওয়া যায়।
আমাদের সবই সয়ে গেছে। দরীদ্রদের সেবা করে ধনী হওয়া কোটিপতি আমরা দেখেছি, দেশ এবং জনগনের সেবা করে কোটিপতি হওয়া নেতাও দেখেছি, আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে কোটিপতি হওয়া ব্যবসায়ী-শিল্পপতিও দেখেছি। যাদের সেবা করা হয় তারা ধনী হয়নি এটাই বিষয়। তাতেও আমাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু ওই যে, ভাবমুর্তির গায়ে নতুন পালক লাগানো, সেটাতেই যা সামান্য আপত্তি। চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড় ধরা।
চুরি করবেন করুন, ধরা পরেন কেন ?

মহাশয়, যা সহায় তাই সয়

Dec 3, 2010
শরীরের নাম নাকি মহাশয়, যা সহায় তাই সয় প্রবাদ সেটাই বলে গরম সহ্য করুন সয়ে যাবে, ঠান্ডা সহ্য করুন সয়ে যাবে আধুনিক কালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি এককালে মানুষ তালপাতার পাখা ব্যবহার করেও সুখে দিন কাটাত, বলেছেন মন্ত্রী তাহলে আমরা পারব না কেন ?
বাংলাদেশে অনেক বিদেশী আনাগোনা করেন নানা কারনে তাদের প্রথম লক্ষ্য, খাবার পানি অনেকে বিদেশী বোতলের পানি ছাড়া খান না দেশের বোতলের পানিও না ওটা নাকি তাদের সহ্য হয়না কারন তো একটাই, ওই সয়ে নেয়া ধীর্ঘদিন থাকলে একসময় সেটাও সয়ে যাবে নিশ্চয়ই শুধু পানি কেন, ফরমালিন থেকে শুরু করে আর্সেনিক পর্যন্ত দেখছে না আমরা কেমন সয়ে গেছি
একসময় বিদ্যুত গেলে মানুষ ফোন করতে বিদ্যুত অফিসে, আমার বাড়িতে বিদ্যুত নেই কেন, ব্যবস্থা নিন তারাও সাথেসাথে লোক পাঠাত খবর নিতে আজকাল ওসব হয় না মানুষ জেনে গেছে বিদ্যুত যাওয়াটাই নিয়ম কখনো একঘন্টা, কখনো দুঘন্টা বরং একঘন্টা বিদ্যুত থাকলে ঘন্টা পেরনোর আগেই প্রস্তুতি নিতে পারেন আরেকবার যাওয়ার জন্য এটাও ওই সয়ে নেয়ার গুন
জিনিষের দাম বাড়তি, এটাও সয়ে নেবার বিষয় একদিনে যদি তেলের দাম ২০ টাকা বাড়ে তাহলে খারাপ লাগে বটে তারপর সেটা যখন স্থায়ী হয় তখন আর খারাপ লাগে না বানিজ্যমন্ত্রীর সাথে যতবার বৈঠক হয় ততবার যখন ১০-১৫ টাকা করে বাড়ে সেটাও মানিয়ে যায় বরং পত্রিকায় যদি বৈঠকের খবর পাওয়া যায় তাহলে আগাম প্রস্তুতি নেয়া যায়
রাস্তায় যানজট এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা অফিসে যেতে দুঘন্টা আগে বেরবেন তারপরও একঘন্টা লেট আপনারও মানিয়ে গেছে অফিসেরও মানিয়ে গেছে আপত্তি করছেন কেন ?
ভাড়া নিয়েই বা এত ভাবছেন কেন ? আপনার বয়স বাড়ছে, দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে সবকিছুই যখন বাড়তি তখন ভাড়াটাই বা উল্টোদিকে যাবে কেন ? মেনে নিন, ওটাও বাড়তে থাকবে টাকা কোথা থেকে সেনিয়েই বা ভাবার কি আছে ? টাকাও বাড়তি গত দুবছরে নাকি সরকার আগের সব রেকর্ড ভঙ্গ করা সুদে ঋন নিয়েছে আগামী ৩ বছরে আরো নিতে যাচ্ছে সব মিলিয়ে লক্ষ কোটি টাকার মত সে টাকা তো দেশেই থাকবে তারমানে আপনার হাতে আসবে কোন সুত্রে সেটা খুজে বের করাটাই বিষয় এখনই জ্যাক লাগান
সয়ে নেয়াটাই আসলে কথা। শুধু শরীরেই না, সবখানেই। বর্তমানের সাথে মানিয়ে নিন আর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিন। দেশ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ধনী হতে যাচ্ছে। দেশের প্রধান আয় হবে আউটসোর্সিং। লক্ষ লক্ষ কোটি ডলার আসবে সেখান থেকে। কাজেই প্রস্তুতি নিন।
যদি প্রশ্ন করেন ইন্টারনেটের গতি কমে ১ কিলোবাইটের নিচে গেছে কেন, দিন পেরিয়ে সপ্তাহ, সপ্তাহ পেরিয়ে মাস তারপরও ওই সাবমেরিন কেবলে সমস্যা নামের ভুত কাধ থেকে নামছে না কেন, কিংবা যে আউটসোর্সিং এর কল্যানে দেশ পরিনত হবে বিদেশে, সেই ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইদথ বিক্রি করা হচ্ছে কেন,,
ও আপনি তো দেখি সত্যিকারের বাঙালী। কথা বেশি। এত কথা বলেন কেন ? দেশ যেভাবে চলছে তারসাথে মানিয়ে নিন। দেখবেন একসময় ইন্টারনেট ছাড়াও চলবে। আগেকার দিনে তো মানুষ চলত এখন চলবে না কেন ?
সহ্য করতে না পারলে সমস্যা আপনার। কদিন সহ্য করেই দেখুন না। সেই মোল্লা নাসিরুদ্দিনের কথা মনে নেই!
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বাজার থেকে একটা গাধা কিনে আনলেন তারপর এক অদ্ভুত কাজ শুরু করলেন তাকে একদিন যা খাবার পরদিন দেন তারথেকে কম, তার পরদিন তার থেকেও কম একসময় বেচারা গাধাটা মরেই গেল পাড়াপ্রতিবেশিরা এসে হোজ্জাকে রীতিমত ধমকাতে শুরু করল, মুতি কেমন মানুষ হে খাবার না দিয়ে গাধাটাকে মেরে ফেললে
হোজ্জা বলল, খাবার কমানোর অর্ভেস করাচ্ছিলাম গাধাটা মরে গেল তাই নইলে দেখিয়ে দিতাম একেবারে না খেয়েও গাধা বেচে থাকতে পারে
গাধাটা পারেনি সে গাধা বলেই। আপনি সেটা করে দেখান।
 

Browse