মোটাতাজা বিষয়টি সকলের পছন্দ। যত মোটাতাজা তত দাম বেশি। সে ফলমুল-শাকসব্জি হোক, হাসমুরগি-গরুছাগল হোক আর মানুষই হোক। এমনকি নির্জীব পকেটই হোক আর ব্যাংকের খাতাই হোক। যত বেশি ঢুকাবেন তত ফুলবে। কাজেই মোটাতাজাকরন প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি এতে সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় আবিস্কার। সবচেয়ে বেশি মেধা প্রয়োজন এখানেই। সমস্যা একটাই, অন্য সব প্রযুক্তির মত এখানেও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে হয়। সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। গরু মোটাতাজাকরনের পদ্ধতি নিজের ওপর প্রয়োগ করে একজন নাকি প্রাণ হারিয়েছে। খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে। কাজেই এখানেও গবেষনা প্রয়োজন। আশা করা যায় অচিরেই নিরাপদ মোটাতাজাকরন পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া যাবে।
এজন্য যথেষ্ট পরিমান গবেষক নিশ্চয়ই আছেন। সারা দেশের মানুষ হাহাকার করছে ফরমালিন দেয়া খাবার নিয়ে, ওষুধ দিয়ে পাকানো ফল নিয়ে। একজন ফল বিক্রেতা রসায়ন পড়ে বলে মনে হয় না, একজন গোয়ালা কিংবা মেছুয়া কেমিষ্ট্রির মিষ্ট্রি বোঝে না। তারপরও তারা জানে কি পরিমান ফরমালিন কোথায় ব্যবহার করলে কি হবে। এর পেছনে রীতিমত মেধাবী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। ফরমালিন জিনিষটা পাওয়াও যায় পানির মতই। ওয়াসার পানির স্বল্পতা হলেও হতে পারে, ফরমালিনের স্বল্পতা নেই। যারা তৈরী করেন তাদের ব্যবসা রমরমা।
খোদ আমেরিকায় নাকি লোকজন বলাবলি করছে খাদ্যের মান নিয়ে। একটা মুরগি জীবনে কখনো আলোর মুখ দেখে না এটা নাকি অমানবিক। এত দ্রুত বড় হয় যে নিজের ওজন নিয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে না। দরীদ্র দেশের হিসেব অবশ্য আলাদা। মানুষকে নিজের পায়ে দাড় করানোর স্বার্থে যদি মুরগি নিজের পায়ে না দাড়ায় ক্ষতি নেই। আমেরিকানদের হিসেব অন্যরকম। বড়লোকের খেয়ালখুশি আরকি। তারা নাকি গবেষনা করে বের করেছে এইসব নিজের পায়ে না দাড়ানো মুরগি খেয়ে মানুষও এখন নিজের পায়ে দাড়ানোর ক্ষমতা হারাচ্ছে। বিবর্তনের শুরু থেকে মানুষের ওজন নাকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর বর্তমানে সেটা সবচেয়ে গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। আমেরিকা হাচি দিলে নাকি সারা বিশ্বের সর্দি লাগে। এই বিষয়টাই বা সেখানে থেমে থাকবে কেন ? ছোয়াচে রোগের মত, সোয়াইন ফ্লু-বার্ড ফ্লুর চেয়েও দ্রুত ছড়িয়েছে বাকি দুনিয়ায়। এখন সকলেরই প্রয়োজন মোটাতাজা খাবার। বিশ্বে নাকি পুষ্টিহীন মানুষের চেয়ে স্থুলরোগির সংখ্যা বেশি। সমাজ যত উন্নত হচ্ছে মানুষ নাকি তত বেশি করে হাসপাতালে যাচ্ছে।
মোটাতাজা গরু খেলে নাকি লিভার-কিডনি পচবে। দেশে অর্ধেক মানুস ক্যান্সারের ঝুকিতে। কতদিনে ?
দশ বছর বিশ বছর পর।
দশ বছর বিশ বছর পর কি হবে সে ভেবে এখন ফায়দা কোথায় ? মোটাতাজা না হলে কেউ পাত্তা দেয় না সেটা জানেন না ? একনজর দেখেই সবাই জেনে যায় কারসাথে লাগা যাবে, কারসাথে যাবে না। আর ওসব খাবারের টেষ্ট কি অন্যতে পাওয়া যায় ? একেবারে ঘরে বসে আমেরিকান খাবার।
নিজের সামান্য অভিজ্ঞতার কথাই বলি। এক বৃদ্ধাকে দেখলাম দুপাশ থেকে দুজন ধরাধরি করে কেফসিতে নিয়ে যাচ্ছে।
হজের সময়। মৃত্যুর আগে এই সামান্য হজটুকু পালন করা উচিত।
পুনশ্চ : আরেকটা উদাহরন দিতে হচ্ছে। টেম্পো নামের বাহনে একটামাত্র সিট খালি। মোটাতাজা এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন উঠবেন বলে। টেম্পোর হেলপার বলল, উইঠেন না। আপনার সাইজ ঠিক নাই।
পুনশ্চ ২ : একে বিপরীত উদাহরন কিংবা উপদেশ বলতে পারেন। ধাক্কাধাক্কির কারনে যদি ভিড়ের মধ্যে ঢুকতে ব্যর্থ হন তাহলে কাজে লাগাবেন। একপাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করবেন। যখন দেখবেন মোটাতাজা একজন ঢুকছে সাথেসাথে তার ঠিক পেছনে গিয়ে দাড়াবেন। ব্যস, পথ ক্লিয়ার।