মোটাতাজা

Nov 29, 2009

মোটাতাজা বিষয়টি সকলের পছন্দ। যত মোটাতাজা তত দাম বেশি। সে ফলমুল-শাকসব্জি হোক, হাসমুরগি-গরুছাগল হোক আর মানুষই হোক। এমনকি নির্জীব পকেটই হোক আর ব্যাংকের খাতাই হোক। যত বেশি ঢুকাবেন তত ফুলবে। কাজেই মোটাতাজাকরন প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি এতে সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় আবিস্কার। সবচেয়ে বেশি মেধা প্রয়োজন এখানেই। সমস্যা একটাই, অন্য সব প্রযুক্তির মত এখানেও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে হয়। সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। গরু মোটাতাজাকরনের পদ্ধতি নিজের ওপর প্রয়োগ করে একজন নাকি প্রাণ হারিয়েছে। খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে। কাজেই এখানেও গবেষনা প্রয়োজন। আশা করা যায় অচিরেই নিরাপদ মোটাতাজাকরন পদ্ধতির সন্ধান পাওয়া যাবে।
এজন্য যথেষ্ট পরিমান গবেষক নিশ্চয়ই আছেন। সারা দেশের মানুষ হাহাকার করছে ফরমালিন দেয়া খাবার নিয়ে, ওষুধ দিয়ে পাকানো ফল নিয়ে। একজন ফল বিক্রেতা রসায়ন পড়ে বলে মনে হয় না, একজন গোয়ালা কিংবা মেছুয়া কেমিষ্ট্রির মিষ্ট্রি বোঝে না। তারপরও তারা জানে কি পরিমান ফরমালিন কোথায় ব্যবহার করলে কি হবে। এর পেছনে রীতিমত মেধাবী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। ফরমালিন জিনিষটা পাওয়াও যায় পানির মতই। ওয়াসার পানির স্বল্পতা হলেও হতে পারে, ফরমালিনের স্বল্পতা নেই। যারা তৈরী করেন তাদের ব্যবসা রমরমা।
খোদ আমেরিকায় নাকি লোকজন বলাবলি করছে খাদ্যের মান নিয়ে। একটা মুরগি জীবনে কখনো আলোর মুখ দেখে না এটা নাকি অমানবিক। এত দ্রুত বড় হয় যে নিজের ওজন নিয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে না। দরীদ্র দেশের হিসেব অবশ্য আলাদা। মানুষকে নিজের পায়ে দাড় করানোর স্বার্থে যদি মুরগি নিজের পায়ে না দাড়ায় ক্ষতি নেই। আমেরিকানদের হিসেব অন্যরকম। বড়লোকের খেয়ালখুশি আরকি। তারা নাকি গবেষনা করে বের করেছে এইসব নিজের পায়ে না দাড়ানো মুরগি খেয়ে মানুষও এখন নিজের পায়ে দাড়ানোর ক্ষমতা হারাচ্ছে। বিবর্তনের শুরু থেকে মানুষের ওজন নাকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর বর্তমানে সেটা সবচেয়ে গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। আমেরিকা হাচি দিলে নাকি সারা বিশ্বের সর্দি লাগে। এই বিষয়টাই বা সেখানে থেমে থাকবে কেন ? ছোয়াচে রোগের মত, সোয়াইন ফ্লু-বার্ড ফ্লুর চেয়েও দ্রুত ছড়িয়েছে বাকি দুনিয়ায়। এখন সকলেরই প্রয়োজন মোটাতাজা খাবার। বিশ্বে নাকি পুষ্টিহীন মানুষের চেয়ে স্থুলরোগির সংখ্যা বেশি। সমাজ যত উন্নত হচ্ছে মানুষ নাকি তত বেশি করে হাসপাতালে যাচ্ছে।
মোটাতাজা গরু খেলে নাকি লিভার-কিডনি পচবে। দেশে অর্ধেক মানুস ক্যান্সারের ঝুকিতে। কতদিনে ?

দশ বছর বিশ বছর পর।

দশ বছর বিশ বছর পর কি হবে সে ভেবে এখন ফায়দা কোথায় ? মোটাতাজা না হলে কেউ পাত্তা দেয় না সেটা জানেন না ? একনজর দেখেই সবাই জেনে যায় কারসাথে লাগা যাবে, কারসাথে যাবে না। আর ওসব খাবারের টেষ্ট কি অন্যতে পাওয়া যায় ? একেবারে ঘরে বসে আমেরিকান খাবার।

নিজের সামান্য অভিজ্ঞতার কথাই বলি। এক বৃদ্ধাকে দেখলাম দুপাশ থেকে দুজন ধরাধরি করে কেফসিতে নিয়ে যাচ্ছে।

হজের সময়। মৃত্যুর আগে এই সামান্য হজটুকু পালন করা উচিত।

পুনশ্চ : আরেকটা উদাহরন দিতে হচ্ছে। টেম্পো নামের বাহনে একটামাত্র সিট খালি। মোটাতাজা এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন উঠবেন বলে। টেম্পোর হেলপার বলল, উইঠেন না। আপনার সাইজ ঠিক নাই।

পুনশ্চ ২ : একে বিপরীত উদাহরন কিংবা উপদেশ বলতে পারেন। ধাক্কাধাক্কির কারনে যদি ভিড়ের মধ্যে ঢুকতে ব্যর্থ হন তাহলে কাজে লাগাবেন। একপাশে দাড়িয়ে অপেক্ষা করবেন। যখন দেখবেন মোটাতাজা একজন ঢুকছে সাথেসাথে তার ঠিক পেছনে গিয়ে দাড়াবেন। ব্যস, পথ ক্লিয়ার।

অভাব এবং স্বভাব

Nov 25, 2009

অভাবে নাকি স্বভাব নষ্ট হয়। প্রচলিত কথা। এধরনের প্রচলিত কথার ওপর অগাধ বিশ্বাস থাকার পরও বলতে হচ্ছে, অন্তত এই কথার সাথে একমত নই। বিপরীত যুক্তিতে যদি বিচার করেন, অভাবে স্বভাব নষ্ট হলে ধনসম্পদ লাভের সাথে স্বভাব ভাল হওয়া উচিত ছিল। সেটা হয়না তার সবচেয়ে বড় প্রমান বাংলাদেশ। শতকোটি-হাজারকোটি টাকার মালিক হওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে স্বভাব খারাপ হতে থাকে। চুরি-বাটপারির যোগ্যতা লাভ হয়েছিল অভাবের সময়, অর্থপ্রাপ্তির সাথে প্রাত্তি ঘটেছে দিনেডাকাতি-খুন করার অধিকারের। খুন শব্দটা আপত্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু সত্য এটাই। শতকোটির টাকার মালিক হবেন অথচ দুচারটা খুনের সাথে জড়াবেন না তা হয়না। অন্তত বাংলাদেশে। তারপরও এর প্রচারের পেছনে কারন অনেক।

প্রধান কারন, ওরা অভাবী। ওদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। আমি সেটাই করছি। ছাত্রজীবনে এক কম্যুনিষ্ট ভাবাদর্শী বলেছিল নিজে ভাল না থাকলে অন্যের ভাল করব কিভাবে ? ভাল থাকার জন্য দুটাকার (তখনকার দিনে) সিগারেট খেতে হয়। অন্যভাবে বললে, পরের ভাল করার জন্য সবচেয়ে দামী সিগারেট থেকে হয়। কোটিপতি হওয়ার বিষয়টিও তেমনই। কোটিপতি যদি না হবেন তাহলে অভাবীকে সাহায্য করবেন কি দিয়ে ? আগে আমাকে কোটিপতি বানান, তারপর দেখুন আমি গরীবের জন্য কতকিছু করি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যারা শতশত কোটি টাকা দিয়ে হাসপাতাল বানিয়েছেন তাদেরও দায়িত্ব গরীবদের সেবা দেয়া। শুধু টাকা কামালেই চলবে না, সপ্তাহে অন্তত একদিন বিনামুল্যে সেবা দিন। দরীদ্র দেশের জনস্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারী হাসপাতালের না বেসরকারী হাসপাতালের সেপ্রশ্ন তুলবেন না, দেশের প্রসাসনিক প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য কি সেকথা বলবেন না। দায়িত্বপালনের চেয়ে উপদেশে এদেশে বেশি বিক্রি হয়। প্রতিদিনই বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন বিষয়ের আদেশ, নির্দেশ, গুরুত্বআরোপ, প্রয়োজনীয়তা সকলের সামনে তুলে ধরা এসব করা হচ্ছে। আপনারা কাজ করে যান।

গ্রামের একজন শিক্ষক হবেন গ্রামের তথ্যভান্ডার, সকলে পরামর্শের জন্য তারকাছে যাবে। অথচ দেখুন, মুদি দোকানী তার কাছে টাকা পাবে। সে মাথা নিচু করে চলে। একথা বলেছিলেন চেখভ, বিপ্লবের আগের রাশিয়া সম্পর্কে। একশ বছরে রাশিয়ায় কি হয়েছে সবারই জানা। বাংলাদেশ শুধু যে সেই পথে গেছে একথা বলাও যথেষ্ট না। প্রতিদিনই দ্রুতগতিতে যাচ্ছে। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের বেতন কয়েকবছর ধরে বকেয়া এটা পুরনো খবর। ঘুষ না দিয়ে সেটা পাওয়ার আশা নেই। আর যে শিক্ষক ঘুষ নিয়ে নিজের বেতন উঠান তিনি মাথা সোজা করবেন কিসের জোরে ? নৈতিকতা শেখাবেন কাকে ?

কাজেই অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। শিক্ষা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে যার জন্ম তাকে নিরাপদ পেশা খুজতে হয়। যার সেটা জোটেনা সে নেতা ধরে স্কুলে-কলেজে চাকরী জুটিয়ে নেয়। তারপরও অন্য আয়ের পথ খুজতে হয়। জীবন ধারনের জন্য স্বভাব নষ্ট করতে হয়। কারো কারো জন্য সেটা ছাত্রধরা দালালী ব্যবসার মত।

জীবনধারনের মত কারন ছাড়াও স্বভাব নষ্ট হয়। একেবারে টাটকা উদাহরন দেয়াই উত্তম। হকার খবরের কাগজ দিয়ে গেছে দরজার তলা দিয়ে। ৯০ ভাগ ভেতরে, ১০ ভাগ বাইরে। সেটা ধরে টান দিয়ে কেউ নিয়ে গেছে। কে নিয়েছে সেটাও জানা। নিশ্চিতভাবেই ওপরতলার বাসিন্দা।

এখানে জীবনধারনের বিষয় নেই। অভাবের বিষয়ও নেই। পুরোটাই স্বভাব। একজন দুঃখ করে বলেছিলেন, কোন বাঙালী সুযোগ পেলে চুরি করবে একথা বিশ্বাস করি না। কথাটা বাতিল না করে ভেবে দেখা প্রয়োজন কতদুর দেখার পর কেউ এমন মন্তব্য করতে পারেন, নিজে সেই দলে থেকে।

আসলে অভাবের ব্যাখ্যাটাই করা হয় ভুলভাবে। যার অর্থ নেই সে অভাবী এটা ভুল ব্যাখ্যা। ভাবের অভাব হলে তাকেই অভাব বলা উচিত। অর্থপ্রাপ্তির সাথে ভাবের উন্নতি হয় না, বরং অবনতি হয়। সেকারনে বিত্তশালী হওয়ার পর নষ্ট স্বভাব আরো নষ্ট হয়। আর অর্থের অপ্রাপ্যতা থাকলে ভাবের অনুশীলণ করা সহজ। কবি বলেছেন, হে দারীদ্র তুমি মোরে করেছ মহান।

কাজেই আগের কথা ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে। অভাবে স্বভাব নষ্ট কথাটাই ঠিক। ব্যাখ্যাটা ভুল।

ভবিষ্যতবানী

Nov 23, 2009

ভবিষ্যত জানার আগ্রহ সবারই কমবেশি থাকে। রীতিমত পয়সা খরচ করে জিজ্ঞেস করতে হয়, বলুন তো বিদেশ যেতে পারব কিনা, বিয়ে কতদিনে হবে, মামলায় কি জিতব, অসুখ কি সারবে না খরচ বন্ধ করে দেব এইসব। অন্যের এধরনের ব্যক্তিগত ভবিষ্যতবানী নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভাল। কখনো পরনিন্দা-পরচর্চ্চা করতে নেই, এটাই উপদেশ। বরং আরো বড় ভবিষ্যতবানী নিয়ে কথা বলা যায়। পকেটের টাকা যখন খরচ করতে হচ্ছে না তখন ছোট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে নিজেকে ছোট করে লাভ কি।

জিন ডিকসন বলেছিলেন ১৯৮০ সালে বিপর্যয় হবে। বিশ্বযুদ্ধ লাগবে কিংবা ওইজাতিয় কিছু হবে। সেসময় পার হয়ে গেছে। কাজেই তার কথা ভুল ছিল। বরং নষ্ট্রাডামুসের কথা বিবেচনায় আনা যায়। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর নাকি বিশ্ব ধ্বংশ হবে। তার কথা একেবারে ফেলে দেয়া যায় না কারন আগের অনেক বিষয়ের সাথেই তার কথা মিলে গেছে। অন্তত তার কথায় যারা বিশ্বাসী তারা সেটাই দাবী করেন। ফরাসী বিপ্লব থেকে ইরাক যুদ্ধ সবই নাকি তিনি বলে গেছেন। তার কথা অনুযায়ী দখলদারদের ইরাক থেকে পরাজয় মেনে ফেরত যাবার কথা। এটাও পরখ করে দেখা যেতে পারে।

সত্যিকারের চিন্তার বিষয় আসলে বিশ্ব ধ্বংশ হবার খবর। বিজ্ঞানীরাও বলছেন এর ব্যাখ্যা আছে। ওই নির্দিষ্ট তারিখে পৃথিবী এই গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে পৌছুবে। তার কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটলে ঘটতেও পারে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সুনামী, আমেরিকায় হ্যারিকেন এসবের বর্ননাও নাকি মিলে যায় তার কথার সাথে। আবার প্রাচীন সভ্যতাগুলিও একই সময়ের উল্লেখ করে গেছে। ভারতীয়, চীনা, মিশরীয়, মায়া, এজটেক, ইনকা সকলেই। মায়া ক্যালেন্ডার শেষ হয়ে গেছে ওই ২১ তারিখেই। তারপর আরকিছু নেই।

সবাই অবশ্য এসব ভয়ংকর ভবিষ্যতবানী করেন না। আশার বানীও শোনান। যেমন ধরুন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ২০২০ সালে বাংলাদেশ দারিদ্র এবং ক্ষুধামুক্ত হবে। সময় ১০ বছর এগিয়ে আনা হয়েছে কারন বিশ্বখ্যাতিসম্পন্ন এই বক্তা মিলেনিয়াম গোলের সময় বলেছিলেন ২০৩০ এর কথা। কিভাবে সম্ভব ? বিবিসি প্রশ্ন করায় চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে যদি অর্ধেক দারিদ্র কমানো যায় তাহলে বাকী ১৫ বছরে বাকি অর্ধেক। এমন সহজ হিসেব বুঝলেন না। অর্থনীতি পড়েছেন ?

এবারের ভবিষ্যতবানী আরো চিন্তিত। প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। ২০২০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর যদি দেখেন দেশে কোন দরীদ্র নেই, কারো খিদে পায় না তাহলে জানবেন ভবিষ্যতবানীর জোরেই সেটা হয়েছে। হে-হে-হে। সময়মত ওকথা না বললে কি হত!

আর যদি না হয় ?

সে-তো বক্তব্য দেয়ার সময়ই বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা ভুলে গেলেন ? সেটা নেয়া হয়নি।

অরণ্যে রোদন

Nov 22, 2009

ইংরেজিতে বলে ফার-ক্রাই অন্যদের অগোচরে কাঁদা বাংলায় একেবারে কাব্যিক নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া, বনবাসী হয়ে কাঁদবেন বক্তব্য অবশ্য একটাই, তাতে কোন লাভ নেই যার কারনে আপনার দুঃখ-কষ্ট তাকে যদি না শোনান তাহলে কাঁদায় কোন ফল ফলবে না বনের পশুপাখি-গাছপালা আপনার কান্নার গুরুত্ব বুঝবে না

যদি সেকথাও মানতে চান, মনের দুঃখে বনে যেতে চান তাহলে-

বলতেই হচ্ছে বন বলে কিছু নেই সুন্দরবন চোর-ডাকাতের আড্ডা সরকার আইন করে দিয়েছে সেটা সংরক্ষিত এলাকা যাওয়া নিষেধ চোর-ডাকাত না হয়ে সেখানে গেলে জেলে যেতে হবে আর অন্যকোথাও বন বলে কিছু নেই যার অর্থ আপনার অরন্যে রোদনের সুযোগ নেই আপনার এলাকায় আপনি বন্দি

তাহলে বন্দির পথ অবলম্বন করা যাক ঘরের মধ্যে থেকে বাইরের মানুষকে কান্না শোনানোর ব্যবস্থা করা যাক ডিজিটাল বাংলাদেশে, ফেসবুক-গুগল-ওয়ার্ডপ্রেসের কল্যানে সেটা সম্ভব আপনার কান্না পৌছে দেবেন সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অরন্যে রোদনের চেয়ে তাতে বেশি ফল ফলবে সারা বিশ্ব সেটাই বলে ইরানে নির্বাচনের ইন্টারনেট প্রতিবাদ নাকি ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ১০ ঘটনার একটা কাজেই-

একটু থামুন

আপনি বনে কাঁদলে পশুপাখি কৌতুহলী হয়ে উকি দেবে সন্দেহ নেই ইন্টারনেটে আপনার কাঁদায় আগ্রহ দেখাবে এটা ধরে নিচ্ছেন কেন ? কার শখ হয়েছে নিজের টাকা খরচ করে আপনার কাঁদা শোনার ইন্টারনেটের জগত বিশাল আনেন্দর খোরাক সেখানে কমতি নেই সেগুলি রেখে আপনার কান্না শুনতে যাবে কে ?

কথাটা বকারামকে বলতে হচ্ছে অভিজ্ঞতা থেকে বকারামের আশা ছিল ইন্টারনেটের অরন্যে রোদনের কিছু কাকপক্ষি নিশ্চয়ই উকি মারবে মারেও রীতিমত নিজের সময় ব্যয় করে আধঘন্টা-একঘন্টা পর্যন্ত সময় কাটায় তারপরই, সংখ্যায় তাদের চেয়ে অনেক বেশি, একবার চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে রওনা দেয় কোন শব্দ শুনে তাদের আগ্রহ হয়েছিল সেটাও একধরনের পরিচিতি বহন করে বৈকি রীতিমত বাংলায় কুত্তার বাচ্চা লিখে সার্চ করে যদিও বকারাম নিশ্চিত করে বলতে পারে এই শব্দটি সে ব্যবহার করে না বরং এই প্রানীটিকে রীতিমত স্রদ্ধার চোখে দেখে মানুষে এতটাই বিশ্বস্ত বন্ধু যে দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে বন্ধুর জন্য জীবন দিতে পারে বিশ্বাসভঙ্গের কোন উদাহরন নেই ছোটবেলায় কিছু ভুল ধারনা ছিল গোর্কির লেখায় মিখাইলের গান, মিখাইল যদি হত এক ছোট কুকুরের ছানা শুনে অবাক হওয়ার বিষয় ছিল এখন সেটা নেই

সার্চ করার বিষয় আরো আছে আমি সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চের কথায় যাচ্ছি না সেটা সারা বিশ্বের সব যায়গার মানুষই করে ইন্টারনেটের মুল ব্যবহারই নাকি সেখানে বরং অন্য কিছু বিষয় অবাক করা যেমন খাসি কিংবা গরু কিংবা আমার বউ ইত্যাদি ইত্যাদি

সত্যিকার অরন্য নেই আগেই বলেছি যদি ইন্টারনেট অরন্যে কাঁদতে চান তাহলেও ভেবে দেখুন

সৌজন্য

Nov 20, 2009

শব্দটির সাথে আমরা ভালভাবেই পরিচিত। টিভিতে নাটক দেখানো হয় এক বা একাধিক কোম্পানী সৌজন্যে। যার অর্থ সেটা দেখানোর টাকা দেবে সেই কোম্পানী। আপনাকে নাটক দেখতে পকেটের টাকা খরচ করতে হবে না। এই টাকার ভাগ যাবে টিভি কোম্পানীর পকেটে, যিনি নাটক লিখেছেন, যারা বানিয়েছেন, যারা অভিনয় করেছেন তাদের সকলের পকেটে। বিনিময়ে তাদের বিজ্ঞাপন দেখতে হবে দর্শককে। সৌজন্যের সাথে বিনিময়ের বিষয়টিও তাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একজন নেতা যখন আরেকজনের সাথে সৌজন্যসাক্ষাত করেন তার বিনিময়টা অবশ্য ততটা স্পষ্ট না। তবে ধরে নেয়া যায় কিছু হিসেব নিকেশের ব্যাপার-স্যাপার আছে। অন্তত আইনের হিসেবে পলাতক নেতা যখন জামিন পাওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

সৌজন্যতা বিষয়টির হিসেবও কিছুটা গোলমেলে। সাধারনভাবে জনমনে বিশ্বাস করানো হয় অন্যকে খুশি রাখার বোধশক্তি যার থাকে তার সৌজন্যবোধ থাকে। অর্থাৎ সৌজন্যবোধ হচ্ছে অপরকে মনকষ্ট না দেয়া। অকারনে শত্রু তৈরী না করা। কখন কে কোন কাজে লেগে যায় আগাম বলা তো যায় না। দেখা হলেই সালাম দিয়ে বললেন, কেমন আছেন ? যদি গালাগালি দেয়ার কারন থাকে সেটা মনে মনে দেবেন।

এথেকে সৌজন্যতার আরেকটা পরিচয় স্পষ্ট। এটা প্রকাশ করতে হয়। যা অপ্রকাশ্য তা ঢেকে রাখবেন আর সৌজন্য প্রকাশ করবেন। নিজের চেহারা ঢেকে রেখে ওপরের মুখোসটা দেখানোর মত। অবশ্য এই নিয়মে মুখে রং লাগানো, বাহারী অলংকার-পোষাক এগুলোও সৌজন্যের পর্যায়েই পড়ে। কাজেই সামাজিকতার স্বার্থে এগুলি প্রনিধানযোগ্য। এর দুর্বলতা একটাই, কার সৌজন্যে- এই কথা প্রকাশ করার ব্যবস্থা সাধারনত থাকে না। সাধারনত বলতে হচ্ছে এই কারনে যে যার সামর্থ্য আছে সে এখানেও সৌজন্য দেখানোর পথ করে নেয়। অমুক বিখ্যাত কোম্পানীর সার্ট-প্যান্ট একথা প্রচার করতে অনেকেই গর্ববোধ করেন। একসময় কোম্পানীর লেবেল পোষাকের নিচের দিকে থাকত, এখন থাকে ওপরদিকে। এখানে ওখানে কোম্পানীর নাম লেখা থাকে বড় করে। ফুটপাতে দুটাকায় যে প্লাষ্টিকের মগ কিনতে পাওয়া যায় তাতেও গ্রামীন-বাংলালিংকের নাম-ছবি থাকে। যদিও এতে সরাসরি তাদের কোন হাত নেই। সবাই বড়র সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় তারই প্রকাশ মাত্র।

নিজের টাকায় সৌজন্য প্রকাশের সাথে নিজের নাম লেখার প্রচলনের সবচেয়ে বড় উদাহরন নিশ্চয়ই রাজনীতি। অন্তত বর্তমান রাজনীতি এই সৌজন্য ছাড়া অচল। পথেঘাটে-দেয়ালে-আকাশে যত ব্যানার-পোষ্টার-দেয়াল লিখন দেখুন না কেন, সেখানে সৌজন্য শব্দটির দেখা পাবেনই। শ্লোগানের পরই লেখা থাকে প্রচারে অমুক, সৌজন্যে অমুক-তমুক-সমুক। বর্তমান রাজনীতির কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে এই কারনে যে বর্তমানে এই সৌজন্যের সংখ্যা অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশি। মুল বক্তব্য কয়েক দশকের পুরনো, যিনি প্রচার করেছেন তার নামটিও জানা। এরপরই একঝাক নাম যাদের সৌজন্যে প্রচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে দেখতে দেখতে একসময় এ নামগুলিও মগজে গেথে যায়। এলাকার লোক জেনে যায় অমুক নামে এলাকার এক ভাই রয়েছেন। তিনি অমুক পার্টির কাজ করেন। একসময় সেই নাম সৌজন্য থেকে প্রচারের ধাপে উঠে আসে। তারপর একসময় মুল শ্লোগানে।

কাজেই- সৌজন্য বিশ্লেষনের ফল যা দাড়াচ্ছে তা হল এটা অগ্রগতির প্রাথমিক ধাপ। প্রচারেই প্রসার এই নিয়মে এরও প্রসার ঘটে। ব্যক্তিগত, কোম্পানীগত, দলগত, সমাজগত সব ধরনের সৌজন্য ব্যক্তি-কোম্পানী-দল-সমাজকে আরো এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। এক সমাজের সাথে আরেক সমাজের পার্থক্য সম্ভবত এটুকুই, সব সমাজ একে সমাজ পর্যায় পর্যন্ত নেয় না। কখনও ব্যক্তি কিংবা কোম্পানী পর্যায়ে, কখনো দল পর্যায়েই গতি থেকে যায়।

নখদর্পন

Nov 18, 2009

সবসময় গাড়িচড়ার সৌভাগ্য যাদের নেই তারা অন্তত এটা বিষয়ে এগিয়ে। নানারকম অভিজ্ঞতালাভ হয়। নিজের এবং পরের। পরেরটাই শুনুন।

রাস্তায় রিক্সা-গাড়ি থমকে রয়েছে। এটা সাধারন ঘটনা। এখানে ওখানে পুলিশ রয়েছে। এটাও সাধারন ঘটনা। সাথে অতিরিক্ত যোগ হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা রায়ের জন্য শতর্কতামুলক নিরাপত্তা। রীতিমত জোরদার করা হয়েছে। যদিও খবরের কাগজ আর টিভির বাইরে এনিয়ে একজনের কাছেও কোন মন্তব্য শুনিনি। আমার ধারনা অধিকাংশ (হ্যা, অধিকাংশ) মানুষ জানেই না বিষয়টি কি। তারপরও, সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। কাজেই-

রিক্সায় বসে এক ভদ্রলোক। শুধু পোষাকে না, চেহারা, মুখভঙ্গি দেখে ভদ্রলোক ছাড়া অন্যকিছু বলার উপায় নেই। পায়ের কাছে ট্রাভেল ব্যাগ রাখা। উদাসভাবে সামনের দিকে চেয়ে অপেক্ষা করছেন কখন জট নড়বে। হঠাৎ শুনতে পেলেন, ব্যাগ দেখি ?

তাকেই কথাটা বলেছে পাশে দাড়ানো পুলিশ। ঠিক কি বলেছে তিনি বুঝে উঠতে পারেননি তখনো। তখনই শোনা গেল পরবর্তী বাক্য, ওই ##৳!!##%#, ব্যাগ খোল।

তার বুঝতে সময় লাগল না বিষয়টি কি। তিনি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিচ্ছেন নাকি এটম বোমা নিচ্ছেন সেটা দেখাতে হবে। তিনি ব্যাগের চেন খুললেন। আর তার লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে আমার অভিজ্ঞতা, এই দেশে জন্মগ্রহন করিয়া আমি ধন্য একথা ভুলে গেলে চিরদিনের জন্য।

পুলিশকে দোষারোপ করা উচিত না। তারা সামান্য বেতনে কাজ করে। রীতিমত জীবনের ঝুকি নিয়ে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের সমালোচনা করা কি উচিত ?

কদিন আগে একজন নাকি রীতিমত মামলা করেছিল পুলিশ তারসাথে খারাপ ভাষা ব্যবহার করেছে। রীতিমত তোলপাড়। সরকার থেকে ক্ষমা চেয়ে বলা হল, পুলিশের আচার-ব্যবহার আরো উন্নত করা উচিত।

আগে বলতে ভুলে গেছি, এটা বৃটেনের কথা।

যাকগে সেসব। ঢাকার কথা বলি। সিডি-ডিভিডি পাইরেসিতে দেশ বিশ্বসেরা খেতাব পেয়েছে এরই মধ্যে। এর পেছনের কারিগরদের কথা হয়ত জানা নেই অনেকেরই। যারা মাঝখানে থেকে কাজ করেন তাদের কথাই বলি। এদের কাজ হল বিশাল ব্যাগে করে সিডি-ডিভিডি নিয়ে দোকানে দোকানে সাপ্লাই দেয়া। একবার পরিচিত একজনের ব্যাগ উচু করতে চেষ্টা করেছিলাম। মনে হয়েছে তার ওজন আমার চেয়েও বেশি।

এমনই ভার বওয়া একজনকে থামাল দুজন পুলিশ।

এই, ব্যাগে কি ?

সিডি-ডিভিডি।

দেহি।

তারপর চলল দেখার পালা। সফটওয়্যার-গেম এসবের সিডি-ডিভিডির বান্ডিল বেরতে শুরু করল। একসময় বিরক্ত হয়ে গেল পুলিশ,

দুই নম্বর জিনিষ আছে ?

না।

ঠিক কইরা ক-

ঠাস করে একটা চড় পড়ল তার গালে। নিশ্চিত হওয়া কঠিন চড়ের কারন কি। সেই বস্তু নাথাকা নাকি সে দুনম্বরি ব্যবসা করে সেটা।

এদেশে পুলিশ সত। শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তাদের আদর্শ। তাদের শ্লোগান সেকথাই বলে। তাদের যোগ্যতা দেখেই চাকরী দেয়া হয়। শুধু দলের সার্টিফিকেট দিলেই হয়না, পড়াশোনার সার্টিফিকেটও দিতে হয়। তারপর সারদায় ট্রেনিং নিতে হয়। তারপর আরো ব্যাপার-স্যাপার আছে। এক এসআই মারা গেল চাকরীতে যোগ দেবার কয়েক মাসের মধ্যে। তার সহকর্মীদের মন্তব্য, ছয় লাখ দিয়া চাকরী নিছিল। ট্যাকাডা উঠাইতে পারল না।

এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি ছদ্মবেশে মাদকের দোকানে গিয়েছিলেন নিজের চোখে দেখার জন্য। সবগুলি খবরের কাগজে ছাপা হয়েছিল। এযুগের খলিফা ওমর আরকি। তবে সবাই তার মত নন। নিজের ঘরে বসেই তারা দিব্যদৃষ্টিতে দেখেন সবকিছু। সারাদেশ, সারাবিশ্ব, মহাবিশ্ব। কোথায় কি ঘটছে দেখার জন্য নখদর্পন ব্যবহার করাই যথেষ্ট।

আপনার নখ যদি দর্পনের কাজ না করে তাহলে দেখার পথ একটাই। গাড়ি ছাড়া চলাফেরা করা।

একেই কি বলে সভ্যতা

Nov 17, 2009

মধুসুদন দত্ত তার সময়ে এই প্রশ্ন করেছিলেন। তার সময়ে সভ্যতার মাপকাঠি ছিল শিক্ষায়। জ্ঞানীগুনি ব্যক্তিরা সমাজ নিয়ে কথা বলতেন। রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতেন না। এমনকি বৃটিশদের সম্পর্কে কথা বলার সময়ও যাকিছু দোষ তা তুলে ধরতেন। ভাল কাজের প্রশংসা করতেন। নিজে নেতা বনে যেতেন না। ধরে নেয়া হত রাজনৈতিক নেতা আলাদা আর সমাজ সংস্কারক আলাদা। যে যার কাজ করে যাবেন। তারপরও তাকে প্রশ্ন করতে হয়েছিল, একেই কি বলে সভ্যতা ?

তারপর বহুদিন গত হয়েছে। সভ্যতা অনেকদুর এগিয়েছে। আমরা সভ্যতার স্বর্নযুগে বাস করছি। এখন নিশ্চয়ই এপ্রশ্ন করা যায় না। লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে, এর মধ্যে সভ্যতা থেমে নেই। আরো অনেকের কাছে গাড়িঘোড়া পৌছে গেছে। একসময় গোয়ালভরা গরু যাদের থাকত তাদের প্যারেজভরা গাড়ি। সাংসদরা দেশের সেবা করবেন, দ্রুতগতিতে চলাফেরা করবেন এজন্য বিনাশুল্কে গাড়ি আনার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। গাড়ি তারা এনেছেন। যার যতগুলি খুশি। শুধু নিজেরাই দ্রুতগতিতে চলবেন তাতো হয় না, তারা জনগনের প্রতিনিধি। জনগনের জন্য তাদের কিছু করার থাকে।

গাড়ি কেনার নিয়ম পাল্টানো হয়েছে। বর্তমান নিয়মে সরকারী টাকায় গাড়ি কিনে দেয়া হবে। ২৫ লক্ষ টাকার গাড়ি। কিন্তু তাদের প্রবল আপত্তি। এত সস্তা গাড়িতে চললে সাংসদের মান থাকে না। চাল ব্যবসায়ী চিনি ব্যবসায়ী যখন কোটি টাকার গাড়ি হাকায় তখন তাদের মান থাকেই বা কিভাবে ? দেশে বিএমডব্লিউ-লিমোজিন সবার শোরুম রয়েছে। কিনতে আপত্তি কোথায় ? বাইরে থেকে আনলেই বা সমস্যা কোথায় ? ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ যখন আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে তখন সেগুলো জমা রেখে কাজ কি ? সেটা অর্থনীতির জন্য ভাল না। শহরের মর্যাদা বলেও কথা আছে। রাজপথে দামী গাড়ি না থাকলে কি রাজধানী মানায় ? যারা রাজত্ব করবেন তারা দামী গাড়ি চালাবেন নাতো চালাবে কে ?

আর গাড়িগুলোর মেয়াদও ৫ বছরেরই। একেবারে সংসদের মেয়াদের সাথে মিল রেখে। নতুন সরকার আসার সাথেসাথে নতুন করে গাড়ি কিনতে হয়। আগেরগুলো হাওয়া হয়ে যায়।

গাড়ি চড়ার যোগ্য মানুষ কি কম ? এক এলাকায় একাধিক জন। পার্টি অমুককে নেতা বানিয়েছে তাতে কি, আমার কি সমর্থক কম আছে ? দেখবেন ডাকলে কতজন আসে ? আমার এলাকার নেতা আমিই। কথা বাড়ালে শক্তি পরীক্ষা দিতে হবে।

লোকে বলে সুর্য যখন মাথার ওপর থাকে তখন তার সামনে একটাই পথ, নিচের দিকে নামা। আমাদের সে ভয় নেই। উঠতে হবে উচুতে। আরো উচুতে। এই উচ্চতার শেষ নেই। আমেরিকায় নাকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে মেডিকেল সার্টিফিকেট, আগের সব রেকর্ড জমা দিতে হয়। আমাদের মৃত্যুও মৃত্যুভয়ও নেই। অর্ধমৃত অবস্থায় হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাতে কি, এখন তো ফিরে এসেছি। ক্ষমতা আমার চাই। আমি না থাকলে আমার ছেলেমেয়ে-ভাগ্নে-ভাতিজা তো আছে। দেখেন না তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতে রাখার জন্য এলাকার মানুষ বাধ্য করেছে। করকারখানার মালিক হিসেবে দেখার জন্য আন্দোলন করছে।

আলোর উল্টোদিকে নাকি অন্ধকার থাকে। এই সভ্যতার উল্টোদিকে অন্ধকার সামান্যই। উল্লেখ না করলেও চলে।

সততা এবং নীতিবোধ নিয়ে যারা চলেন তাদের মাথা নিচু করে থাকতে হয়।

রাম! রক্ষা করো

Nov 16, 2009

বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুত কিনতে যাচ্ছে। চুক্তি তৈরী, শুধু সই করার অপেক্ষা। কারন ?

নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন। বিদ্যুত একঘন্টা থাকে আরেকঘন্টা থাকে না। কলকারখানা অচল, জনজীবনে দুর্ভোগ। সরকার সব বিষয়ে সচেতন। জনগনের কষ্ট কোনমতেই হতে দেয়া হবে না। কাজেই জনগনের স্বার্থে, দেশের কল্যানে বিদ্যুত আমদানী করা হবে। এবং ভারত থেকেই।

শুধু আমদানীই না, রপ্তানীও করা হবে। যখন বাড়তি থাকে তখন। যেমন ধরুন শীতকালে এবং সকালে।

নভেম্বরের অর্ধেক পেরিয়ে গেলে তাকে শীতকালই বলা উচিত। আর সকাল প্রতিদিনই হয়। ঘুম ভেঙে যখন দেখা যায় কম্পিউটার চালু করার অবস্থা নেই তখন আরেকদফা শীতের ঘুম উপভোগ করা যায়।

তাহলে শীতের সকালে রপ্তানী হচ্ছে কিভাবে। যতদুর জানা যায় বাংলাদেশের শীতের সকাল ভারতেরও শীতের সকাল। তারাও শীতের সকালে ঘুমায় বৈকি! প্রাকৃতিক আধঘন্টার পার্থক্য ডিজিটালে এক ঘন্টা হয়েও আমাদের শীত তাদের গ্রীষ্ম হয়নি, কিংবা আমাদের সকাল তাদের দুপুর হয়নি। অবশ্য আরো ৫ ঘন্টা ঘড়ির কাটা ঘুরালে সেটা সম্ভব। কিন্তু সেকথা থাক-

অনেকদিন ধরেই মানুষ লোডসেডিং এর কথা ভুলে গিয়েছিল। দিনে একবার বিদ্যুত যাওয়াকে লোড সেডিং বলে না। তারপর হঠাৎ করে সেটা শুরু হল কেন। ভারতীয় কর্তারা দেশে আশার পর, দেশের কর্তা বিদেশে যাবার মুহুর্তে ? অন্যসময় গ্রীড বিপর্যয় জাতিয় কথাবার্তা শোনা যেত। খবরের কাগজেও তেমন কিছু চোখে পড়ছে না।

ও। সেজন্যই তো আমদানী। আমদানীর কথা আগে বলেছি কি-না ? জানেন না পশ্চিমের দেশগুলি কিভাবে একে অন্যের বিদ্যুত ব্যবহার করে ?

পশ্চিমের দেশগুলি যেভাবে বিদ্যুত ব্যবহার করে তারচেয়ে দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির বিদ্যুত বিতরন ব্যবস্থা উন্নত করা বেশি জরুরী। এখানে মানুষের প্রয়োজন অনেক বেশি। কিন্তু তিন দশকের সার্ক কি ফল এনেছে ? লোকে বলে দাদাগীরি সার্কের কোন সিদ্ধান্ত কাজে আসতে দেয়নি। আপনি ভারত থেকে আমদানী করবেন, উদারভাবে করুন। ভারতে রপ্তানী করবেন ? বর্ডারে নমুনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেখিয়ে আনুন। নমুনা পরীক্ষা করবেন কোথায় ? সেটা ১০০ মাইল ভেতরে। সেখানে কিভাবে পৌছাবেন সে দায়িত্ব আপনার। আমরা মাশুল ধরছি না। তবে অন্যভাবে সেটা উসুল করব না সেটা ধরে নিচ্ছেন কেন ?

পশ্চিমের দেশের মত এই অঞ্চলে সমঝোতার ভিত্তিতে বিদ্যুত-পানি-বানিজ্য-শ্রমের আদানপ্রদান হওয়ার কোন বাধা ছিল না। আর ভারতের মত দেশ যে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, প্রায় ১ কোটি মানুষকে বিপদের সময় আশ্রয় দিয়েছে, অন্যদেশের মাটিতে এসে যে দেশের সেনারা জীবন দিয়েছে তারসাথে বন্ধুত্বের বিষয়টি প্রশ্নাতিত হওয়ার কথা ছিল। অথচ-

বাস্তবতা জানার জন্য ভারতীয় পত্র-পত্রিকা একনজর দেখাই যথেষ্ট। বাংলাদেশ মৌলবাদী রাষ্ট্র। এখানে সরকারীভাবে পাকিস্তানী এবং ভারতীয় সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়া হয়, এদেশে হিন্দু ধর্মের মানুষ টিকতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারেন এই অবস্থার পবির্তন করতে।

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার খবর কখনই শোনা যায়নি। দুর অতীতে না, বর্তমানেও না। আর ভুলে যাওয়া হয়ত ঠিক হবে না আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষন। বিশেষ করে বিবিসি যখন যথেষ্ট জনপ্রিয় দুপারেই। ইসরাইল-প্যালেষ্টাইন যুদ্ধে যতজন মারা গেছে তারচেয়ে কয়েকগুন বেশি মারা গেছে ভারতে দাঙ্গায়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অনাহারী মানুষ বাস করে ভারতে।

সে যাকগে। ভারত বিশ্ব নেতৃত্বে যাচ্ছে। বেঙ্গালুরু-চেন্নাই-মুম্বাই আন্তর্জাতিক শহর। সেখানে সব মানুষের জন্য বিমানে চলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আসাম-ত্রিপুরার মত যায়গা নিয়ে ভাবার কিছু নেই, বেঙ্গালুরু-চেন্নাই থাকলেই চলবে। কদিন পরই তারা আমেরিকাকে পেছনে ফেলবে। তাদের ছাড়া কি চলবে ?

রাম। রক্ষা করো।

গোলকধাধা

Nov 14, 2009

গোলকধাধা খুব জটিল জিওমেট্রি।এর প্রতিটি বাক যার জানা তারকাছে সেটা জিওমেট্রি। আর যার জানা নেই তারকাছে গোলকধাধা। রীতিমত মাথা ঘুলিয়ে যায়। তারপরও উপভোগ করে সকলেই। মোগল বাদশারা নাকি গোলকধাধা তৈরী করেছিল বেগমদের সাথে লুকোচুরি খেলার জন্য। ভুলভুলাইয়া নামের সেই গোলকধাধা সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে যায় ভারতে। তারমানে মোগলদের কাছে যেমন প্রিয় ছিল কয়েকশ বছর আগে বর্তমানের মানুষের কাছেও বিষয়টা ততটাই প্রিয়। উল্লেখ করা হয়ত প্রয়োজন হয় না, একজন শিশুর সবচেয়ে প্রিয় খেলা লুকোচুরি।

একেবারে সংসারী মানুষ আবার এসব এড়িয়েই চলে। আর কাউকে কাউকে সংসারী হতেই হয়। দাম যাই হোক বাজার থেকে খাবার কিনতে হয়। ভাড়া যাই হোক বাসে-রিক্সায় চলাফেরা করতে হয়। কথায় বলে বাবা মারা গেলে তখনও খেতে হয়।

তার ওপর যদি গোলকধাধা সামলাতে হয়, সমাধান খুজতে হয়, সেটা তারজন্য রীতিমত কঠিনই। অথচ সেটাই করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকার বলছেন পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রনে, সবকিছু স্বাভাবিক, দেশ ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছে, কদিন পর এদেকে আর কেউ অবহেলা করার সাহস পাবে না। একই সাথে ছবি ছাপা হচ্ছে, খবর বেরচ্ছে বাজারের অবস্থা, যানজটের চিত্র, চাদাবাজি-ছিনতাই-খুন। আর জঙ্গি। জঙ্গি বিষয়টা সংবাদ মাধ্যমের খুব প্রিয়। খবর বেরুল কোথায় কোন মাদ্রাসায় বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসলে পুলিশ অভিযানের আগেই সেখানে সাংবাদিক পৌছে গেছে। টিভিতে দেখানো হয়েছে। অন্তত ঘড়ির কাটা সেকথাই বলে। পাকিস্তাণি জঙ্গি ধরা পড়েছে, পাশপোর্টের নাম্বার ছাপা হয়েছে। কোন গোজামিল নেই। কোন ভুল নেই। দেশের মানুষ জানুক, বিদেশের মানুষ জানুক। অন্তত আমেরিকা জানুক সরকার কত তৎপর। আমেরিকান এমবাসিতে হামলার পরিকল্পনা করেছে এটা কোনমতেই বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে পথেপথে কামান বসানো হবে। একবার বসানো হলোও। বিদেশী স্কুল, অফিসের সামনে রীতিমত বালুর বস্তা ফেলে মেসিনগান নিয়ে সকলে তৈরী। জঙ্গি দেখামাত্র আক্রমন করা হবে। দেশে-বিদেশে ছবি ছাপা হল।

আর গোলকধাধাটা সেখানেই। দেশের সবকিছু যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে রাস্তায় মেসিনগান কেন ? প্রধানমন্ত্রীকে মাথার ওপর হেলিকপ্টার নিয়ে চলতে হয় কেন ? যে মাদ্রাসার অস্ত্র নিয়ে দেশে বিদেশে এত তোলপাড় সেখবর কদিন পর মিইয়ে গেল কেন ? পাকিস্তানী জঙ্গির পাশপোর্টের নাম্বার জানা গেছে, তারা অমুক নামের জঙ্গি দলের সদস্য তা জানা গেল কিভাবে? রিমান্ডের ভয়ে তারা ফাস করে দিয়েছে ? ধরা পরার সাথেসাথেই এখবর সারাবিশ্বে প্রচার করা হল কেন ? কদিন পর কি সবকিছু মিইয়ে গেলে কি জানা যাবে তারা সাধারন নাগরিক! ভারত যখন সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে ধরার পর কখনও কোনমতেই প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি তারা কোন সংগঠনের। এখানে তারা নিজে থেকে এসব কথা আগেভাগে ফাস করল কেন ?

এসব খবর প্রচারমাধ্যমে তখনই আসা সম্ভব যখন সরকার চায় এগুলি প্রচার পাক। ক্যামেরার সামনে এনে পোজ দেয়া হয়, যাকিছু নমুনা দেখানো প্রয়োজন সেগুলো দেখানো হয়। তারপর সব হারিয়ে যায়। তারচেয়ে চমকপ্রদ খবর হাজির হয় ততদিনে।

শংকার কারন সেখানেই। পাকিস্তান এদের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করছে। তারপরও প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকার ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছে একথা যত জোর দিয়েই বলুন না কেন, নিজের স্ত্রী কিভাবে খুন হয়েছেন সেটা অন্তত জারদারী ভোলেননি। যদি আমাদের সেই অবস্থা দেখতে হয় তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। বিষয়টি আরো অনেক গভীরে চলে গেছে। যে দেশে সরকার পরিবর্তনের সাথেসাথে আগের মন্ত্রী-পুলিশ-গোয়েন্দাদের জেলে যেতে হয় তাদের দক্ষতা এবং নৈতিকতা প্রশ্নাতীত না।

নিত্যদিনের গোলকধাধা নিয়ে আমরা নাজেহাল। সেখানে নতুন গোলকধাধা আমাদের প্রয়োজন নেই। জঙ্গিবাদ যদি হামলার পর্যায়েই যায় সেটা সংবাদমাধ্যমে ফলাও না করে যা ব্যবস্থা নেয়ার সেটাই নিন।

মাতব্বরি করবেন না

Nov 13, 2009

মাতব্বরি জিনিষটা কি হাড়ে হাড়ে টের পেলেন ডিডো বাংলাদেশ দলের ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কোচ মনে করেছিলেন মাতব্বরি করে নিজের পছন্দমত খেলোয়ারদের নিয়ে দল বানাবেন ভুলেও বোঝেননি আসল মাতব্বর কে তার আগে যারা বিদায় নিয়েছে, অটো ফিস্টার, কার্শিযানি, সামির সাকির কাউকে দেখে শেখেননি এমনকি ক্রিকেটের গর্ডন গ্রীনিচকে দেখেও না এখন বোঝ ঠেলা এক কথায় চাকরী নট ব্রাজিয়াল কোচের অবস্থা দেখে আর্জেন্টিনার ট্রেনার পর্যন্ত আগেই চাকরী ছেড়ে ছুট মেরেছে মাতব্বরের ওপর মাতব্বরী করা দরকার নেই বাবা!

এখানে ফুটবল বোঝে না কে ? খেতের মজুর আর রিক্সাচালক থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত, সকলেই জানেন কিভাবে ফুটবল খেলতে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটে টেষ্ট ষ্ট্যাটাস পাওয়ার পর পত্রিকায় মন্তব্য ছাপা হল, বুলবুল একাই দুগোল করেছে এখানে ফুটবল শেখাতে চান ?

আমরা না খেলতে পারি, অন্যেরা যখন বিশ্বকাপে খেলে আমরা রাত জেগে দেখি সারা দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে যায় যখন বাছাই পর্বের খেলা চলে বছর ধরে তাতেও আমাদের মনোযোগ কম নেই গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাক্ষাকার ছাপা হয় পত্রিকায় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা কি খেলার সুযোগ পাবে ? হেরে যাওয়ায় আপনার অনুভুতি কি ?

বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামানোর কি আছে ? বাছাই পর্বের বাছাই পর্ব কখনো পেরতে পারেনি! তাতে কি আমরা ফুটবল নিয়ে মাথা ঘামাই না। ঘামালে আমাদের সাথে কেউ পেরে উঠত না। আমাদের খেলা ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা জানেন পৃথিবীর কয়টা দেশ টেষ্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ পায়? কদিন পর বিশ্বকাপ হবে ঢাকায় আমাদের ফুটবলে দরকার কি স্কুলে হুজুর বলেছেন ওটা হল শয়তানের মাথায় লাথি মারা হাঙ্গামার খেলা আর রাজনীতি তো আছেই আবাহনী আওয়ামী লিগের তো মোহামেডান বিএনপির তারপর বাকি দলগুলোর জন্য আর রাজনৈতিক দল পাওয়া যায় না তারচেয়ে ক্রিকেটই ভাল ফুটবল অন্যদের জন্য থাকুক। ইরাকে যুদ্ধ চলছে এরইমধ্যে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন এটুকু সুযোগ না দিলে ওরা করবে কি ? আমাদের সাফ আছে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকা-নেপালের মত শক্তিশালী দলের সাথে অবশ্যই আমরা ভাল ফল করব শোনেননি বসুন্ধরা ফুটবল ফেডারেশনকে দুখানা খেলার মাঠ দিয়েছে ফুটবল টিকে থাকবেই

কোন মানের ফুটবল হবে জিজ্ঞেস করছেন ? একসময়ের কীর্তিমানরা যেভাবে দেশের ফুটবলের সন্মান আকাশে তুলে রেখেছিলেন, এখন কর্মকর্তা হিসেবে রাখছেন, সেভাবেই রাখবেন এখন যারা খেলছেন তারাও আগামীতে কর্মকর্তা হবেন, তারাও টিকিয়ে রাখবেন শুধূ মাঠেই বা কেন, মাঠের বাইরেও কীর্তিমানরা কম যান না। একসময়ের যুগান্তকারী এক ফুটবলার পেট্রোল পাম্পের লাইন না মেনেই তেল নেবেন। লাইনের একজন প্রতিবাদ করার পিস্তল বের করলেন, তাকে হাসপাতালে পাঠালেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করায় গর্ব করে বললেন, আমরা- বিখ্যাত ব্যাক্তিরা এসব সুযোগ নিয়ে চলি। কথা বাগাবেন না।

ব্যস, সেখানেই শেষ। অন্য দেশ খেলোয়ারদের সন্মান দিতে জানে না। দক্ষিন আফ্রিকার গিবসকে হাজতে রাত কাটাতে হল। সে নাকি মদ খেয়ে গাড়ি চালিয়েছে। একসিডেন্ট করেনি তাতে কি, করতে তো পারত। হুহ, ওটা একটা দেশ হল! সারা পৃথিবীতে মদ সাপ্লাই দেয় আর মদ খেয়ে নিজের গাড়ি চালাতে পারবে না।

আমরা জানি কিভাবে খেলোয়ারদের সন্মান করতে হয়। সিনিয়রদের মান রাখতে হয়। আমরা জানি কিভাবে ফিফার তালিকায় তরতর করে ওপরদিকে উঠতে হয় বাংলাদেশের নাম কখনো নিচে নামে না, সবসময় ওপরদিকেই থাকে আগেও কখনো ছিলনা, এখনও নেই তাহলে ভবিষ্যতে থাকবে কেন ? এক, দুই, দশ, পনের, বিশ ওসবে আমাদের মন ভরবে না আমাদের প্রাপ্য একশবিশ, একশত্রিশ এসব

আমরা সেটাই করে যাচ্ছি। যা হচ্ছে দেখে যান মাতব্বরি করবেন না

নয়-ছয়

Nov 11, 2009

৯ এবং ৬ সংখ্যাদুটি কি অপরাধ করেছে আমার জানা নেই মানুষ কারনে অকারনে এই সংখ্যাদুটিকে গালাগালি করে লোকে বলে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়, অযোগ্য মানুষের হাতে যায়, কাজের নামে টেন্ডারের নামে দলের সমর্থকরা পায় সরাসরি টাকা কারো হাতে দেয়ার সরকারী নিয়ম নেই কাগজে কলমে হিসেব দেখাতে হয় অথচ গালাগালি করার সময় টাকা যার হাতে গেছে, যে দিয়েছে তাদের কারো দোষ নেই সব দোষ ৯ আর ৬ এর হিসেবে নাকি নয়-ছয় করা হয়েছে একেবারে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের মত

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে চুরি হয়েছে সকালে খবর পেয়ে রীতিমত একটা দলই হাজির তাকে গালাগালি করার জন্য কেমন মরার মত ঘুমাও, দরজা-জানালা ভাল করে বন্ধ রাখনি কেন, উচু দেয়াল দাওনি কেন, একটা কুকুর পোষনি কেন- এইসব একসময় মোল্লাকে হাতজোড় করে বলতে হল, ঠিক আছে বাবারা, সব দোষ আমার যে চুরি করেছে তার কোন দোষ নেই

যদি হত ইরেজি 9 আর 6 তাহলেও মেনে নেয়া যেত তারা ডিগবাজি মারলে চেনা যায়না কোনটা কে চার্লি চ্যাপলিন নাকি গাড়িতে যেতে যেতে দেখলেন পথের ধারে মরা কুকুর ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন তারপর নেমে গিয়ে মারলেন সজোরে লাথি লাথি খেয়ে কুকুরটা ঘুরে গেল তখন সালাম করে গাড়িতে এসে উঠলেন ড্রাইভার তো অবাক রীতিমত গো ধরে বসল, এর কারন সে শুনবেই লাথি মারাই বা কেন, সালাম করাই বা কেন বাধ্য হয়ে চ্যাপলিনকে প্রশ্ন করতে হল, আমি কি দেখে নেমেছি ?

ড্রাইভার বলল, DOG

লাথি মারার পর কি হল ?

উল্টে গেল।

DOG যদি উল্টেগিয়ে GOD হয় তখন সালাম না করে উপায় থাকে না অথচ ইংরেজিতে এধরনের গালাগালির প্রচলন নেই

মানুষ শুধু ৯ আর ৬ কেন, এদের গুনে যে ৫৪ হয় তাকেও গালাগালি করতে ছাড়ে না যেন গালাগালি তাদের বংশানুক্রমিক প্রাপ্য পুলিশ কাকে কারন ছাড়া ধরেছে, হাজতে নিয়ে পিটিয়েছে, মহামান্য বিচারক তিনদফা/চারদফা রিমান্ডে পাঠিয়েছেন, সব দোষ ওই ৫৪ ধারার যেন সেটা না থাকলে পুলিশ, বিচারক, উকিল সবাই হাত গুটিয়ে বসে থাকত

যদি সেটাই হয় তাহলে গালাগালি না করে ৫৪ ধারাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত এতগুলি মানুষকে দিয়ে সময়মত কাজ করাচ্ছে যেখানে বিচারকরা রায় দেয়ার সুযোগ পান না, একটা মামলা দশকের পর দশক টানতে হয় সেখানে তারা মুহুর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছেন চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে-র মত দিনে নাকি ৩৫টা করে রিমান্ড দেয়া হচ্ছে বাপরে এই রেটে বিচার চালালে কি লক্ষ লক্ষ মামলা জমে থাকত!

লোকে বলে সংসদ নাকি আইন তৈরীর যায়গা ৩০০ জনকে নির্বাচিত করে সেখানে পাঠানো হয় কোথায় কোন আইন প্রয়োজন সেটা ঠিক করবেন তা তাদের সে সময় কোথায় ? এলাকার উন্নয়ন করবেন না আইন নিয়ে বসে থাকবেন ? তাতে কি দেশ চলবে ?

পুলিশের আইন নাকি ১০০ বছর-দেড়শ বছর আগে তৈরী ইংরেজরা এই আইন তৈরী করেছিল, পুলিশ বানিয়েছিল খারাপ মানুষকে পেটানোর জন্য তারা আইন ভাল বোঝে সারা পৃথিবী শাসন করেছে তাদের আইন পাল্টানো দরকার কি ? দেশে কি খারাপ মানুষ নেই ?

শোনা যায় ইরেজ আমলে নাকি পুলিশ গুলি খরচ করলে হিসেব দিতে হত, এখন সেটাও হয় না এটা যুগোপযোগি পরিবর্তন ক্রশফায়ারের নামে ভয় পায়না কে ?

আর শুধু ক্রয়ফায়ার কেন, পোষাক-চেহারা দেখেই তো ভড়কাতে হয় কালো কুচকুচে পোষাক, চোখে কালো চশমা, মাথায় কালো রুমাল বাধা, কাধে অস্ত্র এসব না হলে কি খারাপ মানুষ বাগে আনা যায় ? দেশ চালানো যায় ?

কাজেই ওসব কথাবার্তা বন্ধ করুন নয়-ছয় সব দেশেই হয় পৃথিবী চলবে একদিকে আমরা চলব আরেকদিকে তা হয় না গালাগালি করবেন ৯ আর ৬ কে করুন। যে করেছে তাকে না। করলে টের পাবেন নয়ে-ছয়ে কত হয়।

একটুখানি হিসেব

Nov 9, 2009

বাংলাদেশে বছরে লোকসংখ্যা বাড়ছে ২৫ লক্ষ। চার বছরে ১ কোটি। কে জানে কতটা ঠিক। জরিপ সবসময়ই হয় ভাগ্নে-ভাতিজাদের পার্টটাইম চাকরীর ব্যবস্থা করে। তারপরও, সরকারী ভাবে জানানো। ধরে নিচ্ছি সেটাই ঠিক।

বাংলাদেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধি বছরে ২৫ লক্ষ, ভারতে ১ কোটি ৭০ লক্ষ-

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধি দিয়ে আমার কাজ কি ? জনসংখ্যার বৃদ্ধির হারে তারা বিশ্বে ১ নম্বরে, একসময় সংখ্যায়ও চিনকে ছাড়িয়ে ১ নম্বরে যাবে। তাতে আমার কি ?

তাহলে অন্য প্রসংগে যাই। তেলের দাম দেড়শ ডলার হয়েছিল দেড় বছর আগে। সারা পৃথিবীতে হাহাকার পড়েছিল খাদ্যের জন্য (তেলের জন্য না)। অনেক দেশে পথেপথে আন্দোলন হয়েছে, মারামারি হয়েছে, সরকারের পতন পর্যন্ত হয়েছে। চালের দাম ৩০০ ডলার থেকে দুইলাফে হাজার ডলারে গেছে। ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

আবার ভারত। অন্য প্রসংগে যাওয়া যাক।

সারা বিশ্বে বিশুদ্ধ পানির পরিমান কমছে। কেনিয়ার শতশত মাইল জমি মরুভুমিতে পরিনত হয়েছে। খাবার না পেয়ে গরুগুলো মরে কংকাল হয়ে পড়ে রয়েছে। মানুষ টিকে আছে সাহায্যের ওপর। পাঞ্জাবে প্রতিবছর পানির স্তর নামছে ১ মিটার। ভারতের ২০ ভাগ ফসল সরবরাহ দেয়া পাঞ্জাবে প্রতিবছর ফসলের পরিমান কমছে। কৃষক আত্মহত্যা করছে।

আবার ভারত!

এবারে আর অবহেলা করা যায় না কারন সেখান থেকে আমদানী করতে হয়। সেখানে যদি ফসল না ফলে, তারা যদি রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তাহলে আনতে হবে থাইল্যান্ড-ভিয়েতনাম-চিন থেকে। আনার খরচা বেশি। তাহলে বিষয়টা আরেকটু ভালভাবে জানতেই হয়।

পৃথিবীর জনসংখ্যা সাড়ে ছয়শ কোটি। ২০৫০ সালে হবে নয়শ কোটি। এই হিসেবে গড়মিল নেই কারন শতশত বছরের তথ্য একসাথে করে বের করা। এই সময়ে পৃথিবীর জমির পরিমান বাড়বে না ১ ইঞ্চিও। বরং এই মানুষগুলোর থাকার জন্য প্রয়োজন হবে বাড়ি, পড়াশোনা জন্য স্কুল, খেলার জন্য মাঠ, কাজের জন্য কারখানা। তারমানে যায়গা আরো কমবে। আবার বলা হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। অনেক জমি নাকি তলিয়ে যাবে সমুদ্রে। যেটুকু থাকবে তাও নাকি লবনাক্ত হবে। ফসল আরো কমবে। আর মানুষের খাবার অভ্যেসও নাকি পাল্টাচ্ছে। সামর্থ্য বাড়ছে। এখন শুধু শাকসবজি আর মাঠের ফসলে চলে না। নিয়মিত মাংশ খেতে হয়। মার্কিনীরা খাবারের খুব ভালভাল পদ্ধতি বের করেছে। এখন দেশেই পাওয়া যায়। চারিদিকে একবার দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায় খাদ্যে ভিটামিনের পরিমান কতটা বেড়েছে। মুরগীর খামারে নাকি মুরগীকে বিশেষ খাবার দেয়া হয়। যে ওজন হবার কথা ৩ মাসে সেই ওজন হয় ১৫ দিনে। তখন তার নিজের ওজন নিয়ে নিজের পায়ে দাড়ানোর শক্তি থাকে না। এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে মানুষের মধ্যেও। শরীরের ওজন বয়ে নেয়ার শক্তিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্ভর করতে হচ্ছে গাড়ির ওপর। ১৫ মিনিটের পথ যেতে হচ্ছে ৩ ঘন্টায়।

লোকে বলে তেলের দাম ২০০ ডলার হওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা। দেড়শ ডলারের যে নমুনা দেখা গেছে তাতে দুশো, আড়াইশ, তিনশ ডলারে কি হবে ভাবলে মাথা গুলিয়ে যায়।

থাক বাবা। এসব ভেবে কাজ নেই। হিসেব ছাড়াই ভাল আছি।

গাছের গোড়ায় পানি দিন

Nov 8, 2009

জরুরী সরকার হঠাৎ করে ঘোষনা করেছিলেন মোবাইল ফোনের রি-রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। অর্থাৎ যারা নিজের নাম-ঠিকানা-ছবি জমা দিয়ে, হাজার টাকা দিয়ে সিম নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে ফোন ব্যবহার করছেন তারা আবার নতুন করে ছবি জমা দেবেন। সাথে আইডি, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এসবের কপি নিয়ে যাবেন। আইডি-র ব্যবস্থা আমরা করছি। একেবারে সরাসরি সেনাবাহিনীর তদারকিতে। আমার নাম ওঠেনি, কার্ড পাইনি এসব কথা চলবে না। কোনরকম সমালোচনা করবেন না।

কাজেই, যারা কয়েক বছর ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অপরাধ করছিলেন তাদের ছুটতে হল। এই নাম্বার পরিচিতদের জানা, কাজেই নাম্বার হাতছাড়া করার উপায় নেই। আর যাদের সে বালাই নেই, যারা মোবাইল ব্যবহারে তত পুরনো নন, ফুটপাত থেকে কিনেছেন, কিংবা একটা কিনলে একটা ফ্রি পেয়েছেন তাদের এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। তাদের লাইন ঠিক থাকবে। আর যদি কাটা পরেও তাতেও ভাবনা নেই। ফুটপাত খোলা আছে। যখন খুশি, যত খুশি কিনে নেবেন। ওদেরও ব্যবসা করার হক আছে।

ফল যা হবার তাই হল। কারো কারো ফোন মিলিটারী নিয়মে কাটা পড়ল (আমারটাও। রীতিমত নিজের ছবি, নাম-ঠিকানা দিয়ে বছর পাচেক আগে কেনা। তবে আমি কখনই হতাস নই। ফুটপাত থেকে কেনা সিম চালু আছে। আছে বলিউডের নায়িকার ছবি জমা দিয়ে কেনাটাও।)

মোবাইল ফোন, খুব খারাপ জিনিষ। চাদাবাজির হাতিয়ার। প্রতিদিন চাদাবাজি হচ্ছে মোবাইল ফোনে। যদিও আমি জানিনা টাকাটা পাঠায় কিভাবে। মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা যখন বন্ধ করে রাখা হয়েছে তখন সেটা হাতেহাতেই দিতে হয়। তখন তারা হাতছাড়া হয় কিভাবে ?

অপ্রয়োজনীয় কথা থাক। চাদাবাজি এড়াতে ফোন বন্ধ করুন। নয়ত চাদাবাজির টাকা তৈরী রাখুন। চাদাবাজি এমনই একটা জিনিষ যা বন্ধ করা যায়না। দলের প্রধানের পদ ছেড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কই, ছাত্রনেতাদের কীর্তি তো থামেনি, কমেনি। বরং বেড়েছে। এখন মারামারি-খুনাখুনির পক্ষ-বিপক্ষ দুটোই ছাত্রলীগ।

সে যাকগে। বলছিলাম মোবাইল ফোনের কথা। একসময় মানুষকে নিয়ম মেনেই সিম কিনতে হত। তারপর হঠাৎ করেই শুরু হল সেই খেলা। একটা কিনলে একটা ফ্রি। ছবি নেই তাতে কি, আমরাই ষ্টুডিও থেকে ছবি কিনে এলবামে সাজিয়ে রাখব। ষ্টুডিওঅলারাও দুটাকা কামাই করুক।

ষ্টুডিও থেকে ছবি নিয়ে মোবাইল কোম্পানীতে বিক্রি করাও একটা পেশা দাড়িয়ে গেল। এক টাকায় কিনে দুটাকায় বিক্রি। একশ কপিতে একশ টাকা। পাচশ কপিতে পাচশ। ছবির অভাব নেই।

আমি এর বিপক্ষে নই। কাশ্মিরে প্রি-পেইড ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, সেটা তাদের জন্য যুক্তিসংগত। বাংলাদেশে এই নিয়ম চালু করলে অধিকাংশ মানুষ ফোন ব্যবহার ছেড়ে দেবে। তাদের জন্য দুশো টাকার টকটাইমসহ একশ টাকার সিম মানানসই। আর চাদাবাজির কারনও মোবাইল ফোন না। চাদাবাজি-টেন্ডারবাজি-ছিনতাই-জঙ্গিবাদ সবকিছুর মুল এক যায়গায়। অনিয়ম এবং ভন্ডামি। মানুষ যখন দেখে যে যত বড় চোর তার ক্ষমতা তত বেশি। যে যত ভন্ড সে তত বড় আসনে বসার সুযোগ পায় তখন তার সামনে সেটাই লক্ষ্য হয়ে দাড়ায়। আগের সরকারের সময় মন্ত্রী, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কি করেছে সেটা যখন মানুষ জানে তখন তাদের উত্তরসুরীরা কেমন অনুমান করে নেয়। নীজের নীতিবোধ লোপ পায়। কেউ সেপথে রওনা দেয়, কেউ সুযোগ না পাওয়ায় আফসোস করে, কেউ বিকল্প খোজে।

আর নীতিবোধ যখন লোপ পায় তখন তাদের সব কাজেই লাগানো যায়। দলের মিছিলেই বলুন, দখলদারিত্বই বলুন, জঙ্গিবাদই বলুন আরে কারো মাথা ফাটানো-খুন করাই বলুন।

ফল পাওয়ার জন্য গাছের গোড়াতেই পানি ঢালতে হয়। সেটা না করে র‌্যাব পুলিশ গোয়েন্দা দিয়ে সন্ত্রাস-চাদাবাজি-টেন্ডারবাজি, জঙ্গিবাদ কিছুই বন্ধ করা সম্ভব না।

আন্তর্জাতিক মানুষ

Nov 6, 2009

ট্যাক্সির শহর বলে পরিচিত নিউ ইয়র্কে যদি ট্যাক্সি ধর্মঘট হয় তাহলে অবস্থাটা কি দাড়াতে পারে তা তারাই বলতে পারেন। অন্যরা যখন ভিডিওতে পিপিলিকার সাড়ির মত ট্যাক্সির সাড়ি দেখেন, গোলকধাধার মত রাস্তা দেখেন তখন শুধু অনুমানই করতে পারেন। সেটা একটা বিপর্যয়।

সেই বিপর্যয়ের খবরই একবার শোনা গেল। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা ঘর্মঘটে যাবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। কারন সরকারী সিদ্ধান্ত। সরকার বলেছে তারা যাত্রীর কাছে যাকিছু অর্থ লেনদেন করবে তা ক্রেডিট কার্ডে করতে হবে। ক্যাশ টাকা নেয়া চলবে না। সেটা করলে হিসেবে গড়মিল করার সম্ভাবনা থাকে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে সাথেসাথে সেটা চলে যায় সরকারের হিসেবের আওতায়। ফাকি দেবার কোন পথ নেই।

আমেরিকা নাকি পৃথিবীর একেবারে উল্টোদিকে। উল্টোদিকের মানুষ উল্টো নিয়মে চলবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা বাপু উল্টো নিয়মে চলি না। কম্পিউটারের সামনে বসে টাকা পাচার করবেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অর্থ যোগাবেন আর সরকার চুপ করে বসে থাকবে তা হয় না। সরকার এসব বন্ধে বদ্ধপরিকর। কাজেই, ওসব অনলাইন লেনদেন বন্ধ। যা করার ক্যাশ টাকায় করবেন। হিন্দুধর্মে বলে, ইদুর-পিপড়ে এদেরও হক আছে। তাদের জন্য কিছু খাবার ছেড়ে দেবেন। ছিনতাইকারীরও কিছু হক আছে। ওদের জন্য কিছু রেখে তবেই-

তারপর হঠা করেই সরকারী ঘোষনা, ব্যাংকগুলো অনলাইনে লেনদেন করতে পারবে। অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল বাংলাদেশে আপনারাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলবেন। মাথায় করে ধান নিয়ে হাটে যেতে হবে না। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাড়াতে হবে না। টাকা নেই একথা বলার কোন সুযোগ নেই, যতইচ্ছে খরচ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এটা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, বলছেন প্রযুক্তি জগতের দিকপালরা।

নিয়মগুলো একটু জেনে নিন। চারধরনের লেনদেন অনলাইনে করতে পারবেন। অনলাইনে বিভিন্ন সেবার মুল্য পরিশোধ করতে পারবেন। অন্য কাউকে টাকা দিতে পারবেন, অন্যের কাছ থেকে নিতে পারবেন। অনলাইনে জিনিষের দাম দিতে পারবেন, এবং স্থানিয় মুদ্রায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রথম নিয়মে গ্যাসবিল, ইলেকট্রিক বিল, পানির বিল এসব দেয়ার জন্য লাইনে দাড়াতে হবে না, ঘুষ দিতে হবে না। বিল আপনার হাতে আসুক বা না আসুক, টাকা পরিশোধ করে দেবেন।

দ্বিতীয় নিয়মে, অন্যের কাছে টাকা নেবার বা অন্যকে টাকা দেবার সময় আর ছিনতাইয়ের ভয় করতে হবে না। কম্পিউটারের সামনে বসেই টাকা দিয়ে দেবেন। তবে একটু কথা, তার ব্যাংক এবং আপনার ব্যাংক একই হতে হবে। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা পাঠানো অবৈধ।

তৃতীয় নিয়মে, আপনি ঘরে বসেই যাখুশি কিনবেন এবং দাম দিয়ে দেবেন। তখনও একই কথা, সেই দোকান কোন ব্যাংকের একাউন্ট ব্যবহার করে জেনে নেবেন। আর আপনি যদি বিক্রেতা হন তাহলে সব ক্রেতাকে জানিয়ে দেবেন ক্রেতা হওয়ার জন্য কোন ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে।

চতুর্থ নিয়মে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করতে পারবেন। মোটেই টাকার হিসেব করতে হবে না। অফুরন্ত খরচ। অন্তত ক্রেডিট কার্ডের বিজ্ঞাপন সেটাই বলে, খরচ করার স্বাধীনতা। পত্রিকায় ছাপা তাদের বিজ্ঞাপন কেটে পকেটে রেখে দেবেন। সেখানে তালিকা দেয়া আছে কোন ফাষ্ট ফুডের দোকান, কোন ফ্যাসান হাউজ, কোন সুপার ষ্টোর তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। কেনার আগে মিলিয়ে নেবেন।

ইন্টারনেটে বসে ডলার পাঠিয়ে একটা এন্টিভাইরাস কিনে ডাউনলোড করে নেবেন, কিংবা সফটওয়্যার সমস্যার সমাধান করে কিংবা ফটোগ্রাফ বিক্রি করে ডলার কামাবেন, সেকথা ভুলে যান। দেশের টাকা বিদেশে পাঠানো বরদাসত করা হবে না। আর সরকারকে ফাকি দিয়ে টাকা আনবেন সেটাও চলবে না।

আর যদি নিতান্তই সেটা করতে চান তাহলে আগে তার যোগ্য হোন। কয়েক কোটি টাকার মালিক হোন আগে। তখন আপনি আন্তর্জাতিক মানুষ। এসব নিয়ম আপনার জন্য না।

কালো – কতটা কালো

Nov 5, 2009

লোকে বলে চাদের গায়ের দাগগুলি নাকি চাদের কলংক বিজ্ঞানীরা বলেন এমন কলংক সুর্যের গায়েও রয়েছে সুর্য্যের তেজ বেশি বলে আমরা খালি চোখে দেখি না আর ইতিহাসবিদ বলেও ইতিহাসেও রয়েছে কলংক ঘটনা যখন ইতিহাস হয় তখন তার তেজ কমে যায় চাদের কলংকের মতই তা দেখা যায় চেঙ্গিস খা মধ্যপ্রাচ্যে কতলক্ষ মানুষ মেরেছিলেন সেকথা বলতে ভয়ের কিছু থাকে না সাথে একথাও মনে করিয়ে দেন, সেটা শুধু মানুষ হত্যাই ছিল না, ছিল একটা সভ্যতাকে ধ্বংশ করা কারন তাদের জ্ঞানের যাকিছু সঞ্চয় তা নষ্ট করা হয়েছিল সবগুলি গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল

চেঙ্গিস খা নিজে অশিক্ষিত ছিলেন তার সময়ে তার দেশে তরবারির ভাষাই ছিল একমাত্র ভাষা এই ভাষায় কথা বলে টিকে থাকতে হত তিনি শুধু টিকে থাকায় বিশ্বাসী ছিলেন না তার হাতে নাকি জন্মগত এমন চিহ্ন ছিল যা বুঝায় তিনি সারা বিশ্ব শাসন করবেন নিজের জীবনের শেষপ্রান্তে এসে যখন বুঝলেন এক জীবনে সেটা সম্ভব না তখন সন্তানকে সে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন

সেটা এখন ইতিহাস মায়া, এজটেক, ইনকার মত সভ্যতাও ধ্বংশ হয়েছে শুধু মানুষ মেরে, ধনসম্পদ লুট করেই থামেনি স্পেনিয়রা, ধ্বংশ করেছে সভ্যতা, জ্ঞানের ভান্ডার সবশেষ উদাহন এই দেশেই স্বাধীনতার ঠিক আগ মুহুর্তে খুজে বের করা হয়েছে জ্ঞানের পথযাত্রীদের একটা জাতিকে ধ্বংশ করার জন্য এদের খুজে বের করাই ছিল যথেষ্ট

এখন আমরা বাস করি সভ্যতার সবচেয়ে উচু সিড়িতে আগে কখনোই মানুষ এত জ্ঞানী ছিল না, এত সভ্য ছিল না প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করতেই পারি কিন্তু তারা কখনোই আমাদের চেয়ে উন্নত ছিল না গনতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগনের সমান অধিকার থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব ধরনের ভাল গুনের ব্যাখ্যা আমরা পুংখানুপুংখভাবে জানি অতীতের কেউ কখনোই আমাদের চেয়ে ভাল হতে পারে না পারলে এসে দেখিয়ে যাক-

দীর্ঘ্য এই বক্তৃতা দিতে হল একটি সামান্য কারনে একেবারেই তুচ্ছ কারনে রবীন্দ্রনাথের সামান্য ক্ষতির মত সামান্য ঘটনা ঘটায় কাকতালীয়ভাবে এখানেও আরেক রবীন্দ্র রয়েছে

সোনারগায়ে রয়েছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের গ্রন্থাগার তাদের কিছু বই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এমন খবর চাপা থাকে না যখন প্রকাশ পায় বইগুলির দাম ৫ লক্ষ টাকার মত অন্তত টাকার মুল্য তো আছে কেজিদরে বেচলে টাকাগুলো কাজে লাগত

কাজেই ব্যাখ্যা দিতে তাদেরকে মুখ খুলতে হল পরিচালক রবীন্দ্র গোপ (এমন নামের সৌভাগ্য সকলের হয় না) জানালেন আসলে বিষয়টি কি তিনি বললেন, কিছু পুরনো কাগজপত্র এবং অপ্রয়োজনীয় বই আমার উপস্থিতিতে পোড়ানো হয়েছে

পরিচালক দায়িত্বশীল ব্যক্তি পুরনো কাগজ পোড়ানোর দায়িত্ব নিতেই পারেন নিজে উপস্থিত থেকে পোড়াতেই পারেন শীত এসে গেছে, কাগজের আগুনে ভাল তাপ পাওয়া যায় গ্যাসের শাস্রয় হয় কিন্তু কোন লাইব্রেরীর কোন বই অপ্রয়োজনীয় সেটা নির্ধারনের দায়িত্ব তাকে দিল কে ? অপ্রয়োজনীয় বই এতদিন সেখানে ছিলই বা কেন ?

কাজেই আরো উত্তর খুজতে হল উত্তর দিলেন গ্রন্থাগারিক দিলরুবা আক্তার তিনি বললেন, জঙ্গিবাদের কিছু বই পোড়ানো হয়েছে

সরকার যখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনা করেছেনই তখন সেটা করা যেতেই পারে সরকারের মংগল, জনগনের মংগল, দেশের মংগল তারা সকলের মংগলের লক্ষ্যে কাজ করেছেন

এই লাইব্রেরীতে রাখা হয় মুলত বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা বই দেশ-বিদেশের লেখক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিবীবী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত সেখানে জঙ্গিবাদের বই তিনি পেলেন কোথায় সে প্রশ্ন হয়ত করার প্রয়োজন নেই হঠা করেই একদিন মনে হল এগুলি-

যাকগে, এমন খবর যখন প্রচার পায় তখন আগ্রহ দেখায় অনেকেই বই পোড়ানো শব্দটিতে নতুনত্ব আছে অনেকে দেখতে গিয়েছিলেন স্থাণীয় সাহিত্যিকের নাম ছাপা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবং আওয়ামী লিগ নেতার নাম ছাপা হয়েছে আর বিএনপির মত বিএনপির আদর্শিক নেতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে লেখা বই-পত্রিকা-সাময়িকী পোড়ানো হয়েছে

দেশে সচেতন মানুষের অভাব নেই ঘটনা ঘটার আগেই অনেক সাংবাদিক ছুটে যান টাটকা খবর সাথেসাথে প্রচার করার জন্য এখবরটা কি কেউ খোজ নিয়ে দেখবেন সামান্য কাজ, পোড়ানোর আগের ক্যাটালগ এবং পরের ক্যাটালগ যাচাই করা যা পোড়ানো হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করা

অভিজ্ঞতা বলে, সেটা হবে না এরচেয়ে মেহনাজ-বারীর গল্প বেশি গুরুত্বপুর্ন দিনের পর দিন ছেপে গেলেও মানুষ বিরক্ত হয় না, বরং আনন্দ পায় পত্রিকার কাটতি বাড়ে

আর এই ঘটনা কতটা সত্য তা নিয়েও সন্দেহ আছে নিশ্চয়ই অপপ্রচার ষড়যন্ত্র বিরোধী দলের কাজ তাদের কাজই বিরোধীতা করা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করা সুযোগ পেয়ে এসব কুকথা ছড়াচ্ছে যদি সত্যি হয় তাহলে তদন্ত করা হবে প্রকৃত তথ্য বের করা হবে ছাই পরীক্ষা করে বের করা হবে সেগুলি আসলে কি ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, অপরাধী যেই হোক কঠোর শাস্তি দেয়া হবে যদি অপরাধ হয়ে থাকে

কথা হচ্ছে, কাজটি যারা করেছেন শাস্তি পাওয়ার আশায় করেননি এমন কাজ করলে পুরস্কার পাওয়া যায় এটাই তাদের অভিজ্ঞতা দুচারদিন যাক, নতুন কিছু ঘটুক মানুষ এসব তুচ্ছ বিষয় ভুলে যাবে তারপর পুরস্কার মিলবেই এই বিনিয়োগ বৃথা যায় না

অন্ধকার তুমি কালো কতটা কালো ?

 

Browse