ঢাকায় যারা বাস করেন তারা হয়ত জানেন শতায়ুদের একটা সংগঠন আছে। তাদের বয়স এখনও শততে পৌছেনি যদিও, তারা সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা যেখানে জমায়েত হন তার নাম শতায়ু অঙ্গন। কিভাবে শতবর্ষী হওয়া যায় তার উপায় বের করা হয় সেখানে। তাদের দলে যোগ দেয়ার নিয়মকানুন আমার জানা নেই তবে দুচারজনকে দেখেছি যারা কদিন আগেও মুষ্ঠি আষ্ফালন করতেন। এখন শরীরে সম্ভব না বলে কাজটি মুখে করেন। শরীরে সম্ভব না, আর কখনো সে সুযোগ পাওয়া যাবে না, এটা বোঝার পরই উঠেপরে লেগেছেন সেটা ফিরে পেতে। জীবনের তিনভাগ পার করে বুঝেছেন স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। এটারই চর্চা করা প্রয়োজন। এই বয়সে জ্ঞানচর্চা, ধর্মচর্চা, বুদ্ধিচর্চার কোন অর্থ নেই। শিব্রাম নাকি বয়স বাড়ার পর একদিন অন্যদের সামনেই পথে পড়ে গেলেন। সাথেসাথে উঠে নিজের গা ঝেড়ে বললেন, ফিটনেস ঠিক আছে কি-না দেখলাম। এদের কসরত সেকথাই মনে করিয়ে দেয়। যেভাবেই হোক শততে পৌছুতে হবে।
বলছিলাম শতপুর্তির কথা। ক্রিকেটে শতরান করা একজন ব্যাটসম্যানের স্বপ্ন। সারা জীবনে কে কতবার শতরান করেছে সেটাই তার যোগ্যতার পরিচয়। এখানে সচীন তেন্ডুলকারের জুড়ি নেই। একাই যতবার শতরান করেছেন বাংলাদেশের সব ব্যাটসম্যান মিলেও তারধারেকাছে নেই। বোলারের ক্ষেত্রেও তাই। শতবার ব্যাটসম্যানকে আউট করার কৃতিত্ব কম বোলারেরই হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে, ক্রিকেটের ইতিহাসে পাচশ ছাড়িয়েছে মাত্র তিনজন। তাদের মধ্যে আবার মুত্তিয়া মুরলিধরনের জুড়ি নেই।
আর ক্রিকেট ছেড়ে যদি ফুটবলের দিকে যাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। একজন খেলোয়ার সারাজীবনেও দেশের জন্য শতগোল করার সুযোগ পান না। তেমনি অন্য যায়গাতেও। একজন বক্সার সারা জীবনে একশবার রিংএ নামার সুযোগ পান না। একজন দৌড়বিদ একশবার দৌড়ানোর সুযোগ পান না। যেদিকেই তাকান শতপুর্তি কঠিন বিষয়।
সবচেয়ে সহজে শতপুর্তি করতে পারেন সম্ভবত লেখক। প্রকাশক যদি মনে করেন অমুক লেখক বেষ্ট সেলার, পাঠক যদি শুনতে পান তমুক লেখক ভাল লেখেন তাহলে তাগাদা বাড়ে। সাথেসাথে বাড়ে লেখার গতি। গতির জোরে ছোটখাট খানাখন্দ-নালানর্দমা অনায়াসে পেরনো যায়। ছোটখাট ভুলভালে কিছু যায় আসেনা।
অনেকে বলেন লেখক নাকি ব্যাঙের ছাতার মত গজায়। যারা ব্যাঙের ছাতা আবাদ করেন তারা জানেন শততম ব্যাঙের ছাতা তৈরী করতে কি পরিমান কষ্ট করতে হয়। আর তার ফলই বা কি। এক টুকরো ব্যাঙের ছাতা ফুটপাতে বসে ভেজে বেচলে দাম কমপক্ষে পনের টাকা (বড় দোকানে আরো বেশি)। একশর দাম পনেরশ। লেখালেখি সেতুলনায় অনেক সহজ। যদি কম্পিউটার থাকে তাহলে তো কথাই নেই। কাগজ-কলম পর্যন্ত কিনতে হয় না। ফিল্মছাড়া ক্যামেরায় যেমন বিনেপয়সায় ছবি তোলা যায় তেমনি কম্পিউটারে বিনে পয়সায় লেখা যায়।
যারা নিজের লেখা ছাপতে চান তারা খুব ভাল করেই জানেন পত্রিকাঅলা, প্রকাশক, ছাপাখানার লোকেদের ধানাই-পানাই। আগে নিজের প্রচার নিজে করে বেষ্টসেলার হতে হয়। তবে তারা ধর্না দেন তাদের কাছে। তারআগে ধর্না দিতে দিতে জুতার তলি ক্ষয় ছাড়া অন্য লাভ হয় না।
তবে সুখের কথা এটাই, কম্পিউটারে বিনে পয়সায় যেমন লেখা যায় তেমনি ইন্টারনেট থাকলে বিনে পয়সা প্রকাশ করাও যায়। ইন্টারনেট বিনে পয়সায় পাওয়া যায় সেকথা বলিনি, বলেছি ছাপার কথা। ছাপার জন্য কারো কাছে ধর্না দিতে হয়না, কেউ টাকাপয়সাও চায় না। কাজেই মন চাইলে শতশত, হাজার হাজার লেখা লিখতে পারেন, ছাপতে পারেন।
প্রমান বকারাম। এটা বকারামের শততম লেখা।