তিনি দশটাতেই পৌছলেন এবাং দোকান খুললেন। কিন্তু একেই বলে কপাল। লোড সেডিং। পাক্কা দুই ঘন্টা। লোড সেডিং মানে তার দোকান খোলা আর না খোলা সমান। বাড়ি থেকে খেয়ে বেড়িয়েছিলেন, ভাবলেন এই সুযোগে দুপুরের খাবারটা সেরে নেই। সময় বাচবে।
তারপর, দোকান যথারীতি শুরু হল ওই বারোটার সময়। বারোটা থেকে দুটা। এসময় আর কাষ্টমারই বা কজন ? তাদেরও আরাম আয়েস আছে। দুটা বাজতে না বাজতেই আবার ফুরুত।
আবার ব্যবসা শুরু হল চারটেয়। আরো দুই ঘন্টা। ভবঘুরে আর চোর ছাড়া এসময় কেউ দোকানে দোকানে ঘোরে না। কি আর করা। ওদের নিয়ে ব্যবসা।
তারপর বাজল ছটা। বাবার ফুরুত। এবার ফিরবে আটটায়। আর আটটা মানে দোকানপাট বন্ধ। আটটায় দোকান বন্ধ করলে বিদ্যুত সাস্রয় হয়। ভবিষ্যতের জন্য জমা হয়।
দোকানদারী আসলে ওই দুয়ে দুয়ে চার ঘন্টাই।
তিনি অবশ্য সরকারী চাকুরে হিসেবে সুখে আছেন। কারেন্ট নাই তো হাওয়া খাই। ফ্যানের হাওয়া নাই তো প্রকৃতির হাওয়া তো আছে। অন্তত কষ্ট করে পরের কাজ করতে হচ্ছে না। আর চাকরীও এমন না যে পানির দাবী নিয়ে, গ্যাসের দাবী নিয়ে, বিদ্যুতের দাবী নিয়ে মিছিল হাজির হবে। সে তাদের চাকরী তারা সামলাক।
বরং একটু সুবিধেই হয়েছে। ছুটির সময় গিন্নি ফোন করেন, কখন আসছ ?
বাড়িতে কারেন্ট আছে ?
না।
পানি আছে ?
না।
তাহলে গিয়ে কি করব। দুঘন্টা পর যাই।
এই হিসেবও দুই ঘন্টার। অতিরিক্ত দুঘন্টা মনের সুখে ঘুরে বেড়ানো।
আর সারাদিন বিদ্যুত ছাড়াই যার চলে তিনি তার সারাদিনের পরিশ্রমের পর রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন, আহ, এবার একটু ঘুম।
এখানেও ফুরুত। ফ্যান বন্ধ। চৈত্রের গরমে গা ঘামতে লাগল। এতদিন মনকে বুঝান যেত একঘন্টা কোনমতে কেটে যাবে। দুঘন্টা অনেক লম্বা সময়। এই নিয়মে দুঘন্টা কাটে না। অস্থির হয়ে এদিক ওদিক করতে হয়। কোন ফাকে যদি একটা হাওয়া মেলে।
একসময় দুঘন্টাও পার হয়। ফ্যান চলতে শুরু করে। ততক্ষনে মাথায় যন্ত্রনা শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসে জুড়িয়ে যেতে থাকে।
কিন্তু সুখের সময় কাটে খুব দ্রুত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার, আরো দুই ঘন্টা। মাথার যন্ত্রনা তখনো পুরো যায়নি। আবার দ্রুতবেগে বাড়তে শুরু করে।
একসময় রাত যায়। মাথা ব্যথা যায় না। মাথার ওজন বেড়ে যায়। সেটা নিয়েই মাতালের মত ঢুলতে ঢুলতে, টলতে টলতে সারাদিন। সারারাত। সেই লোড সেডিং, সেই গরম, সেই মাথাব্যথা।
একটা পথই খোলা থাকে তখন, প্রানভরে গালাগালি। না খেয়ে থাকতে পারি। ছেড়া কাপড়ে চলতে পারি। পেটালে সেটাও মুখবুজে সহ্য করতে পারি। কিন্তু দুঘন্টা পর দুঘন্টা ঘুম। ২৪ ঘন্টা যন্ত্রনা।
একমাত্র রিমান্ডের নির্যাতনের সাথেই তুলনা চলে।