মাইরের উপরে ওষুধ নাই

Jun 28, 2009

দৃশ্যটি আমাকে প্রতিদিন দেখতে হয় মোড়ের ওপর ডজন ডজন রিক্সা এসে দাড়াচ্ছে আর তিনচারজন ট্রাফিক পুলিশ সেগুলি সরানোর জন্য ঠেলাঠেলি করছে ধাক্কা মেরে একটা রিক্সাকে হয়ত সরানো গেল সাথেসাথে আরো দুজন এসে হাজির নানারকম চেষ্টা কসরত চলে রিক্সা সরানোর হাতে লাঠি থাকলে রিক্সার ওপর ঠকাস ঠকাস বাড়ি, পাম্প ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখানো, কখনো কখনো ছেড়ে দেয়া, কখনো রিক্সার সিট খুলে একপাশে রেখে দেয়া, সবকিছুই কিন্তু ফল একই ঠিক মোড়ের ওপর থেকে রিক্সার ভীড় কমে না এর প্রভাব ছড়িয়ে যায় রাস্তায় চলা গাড়ি, ট্যাক্সি থেকে শুরু করে হেটেচলা মানুষ সবখানে সবাই কোনমতে থেমে, ধাক্কা খেয়ে, একেবেকে চলে

একসময় ট্রাফিক পুলিশের অনেক দুর্নামের কথা শোনা যেত তারা রিক্সাচালকদের কাছে ঘুষ নেয়, না পেলে দুর্ব্যাবহার করে কোন অদৃশ্য যাদুবলে সেটা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে এমন সাফলের উদাহরন সম্ভবত দেশে আর একটিও নেই তারা ঘুষ নেয় না, মারা তো দুরের কথা ধমক দেয়া, গালাগালিও করে না গায়ের ওপর রিক্সা উঠিয়ে দিলেও না পুরো ঢাকা শহর জুড়ে ট্রাফিক পুলিশ দৃষ্টান্তযোগ্য ধৈর্য্য লাভ করেছে প্রচন্ড রোদে, বৃষ্টির মধ্যে সারাদিন দাড়িয়ে ভিড়-ঠেলাঠেলি সামলানোর পরও সামান্যতম বিরক্তি দেখা যায় না কাজে গাফিলতি নেই

আমি অবশ্য ট্রাফিক পুলিশের কথাই বলছি মোটরসাইকেল নিয়ে যেসব ষাড়-জেন্ট তাদের হিসেব কিছুটা অন্যরকম তারা আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীল হলেও এত কঠোর পরিশ্রম করতে হয় না তাদের দায়িত্ববোধের প্রশংসাই শুধু করতে হয়। মোড়ের একপাশে মোটরসাইকেল থামিয়ে তার ওপর বসে নজরদারী করেন কোন গাড়িতে ভুয়া কাগজ, কোন গাড়িতে অতিরিক্ত মাল, কোন গাড়িতে অবৈধ মাল কোনটি তাদের দৃষ্টি এড়ায় না সাথেসাথে ইসারা করেন গাড়ি থাকে ড্রাইভার অথবা অধীনস্থ পুলিশের মাধ্যমে কাগজ এসে পৌছে তার হাতে তারপর সেটা ফেরত যায় গাড়ি চলে যায় তার পকেট ফুলে ওঠে তিনি নতুন গাড়ির সন্ধান করেন পকেটের রেডিওতে যদি বেজে ওঠে কোন ভিআইপি আসবেন সাথেসাথে তারা লাফিয়ে ওঠেন। সব অলিগলি বন্ধ, রাস্তা ফাকা। ভিআইপি যেন তীরবেগে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা হয়ে যায়। দায়িত্ব পালনে তারা এতটাই দায়িত্বশীল যে কাজ শেষে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রামের কথাও ভাবেন না আবারও মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হন পথের মোড়ে কয়েকজন একসাথে মোটরসাইকেল থামিয়ে বসে সেখানেই আড্ডা গাড়েন এবং রাস্তার দিকে চোখ রাখেন এবং বিনা টাকায় ওভারটাইম ডিউটি করেন

বলছিলাম আমার দেখা নিত্যদিনের রিক্সা ঠেলার কথা হঠাৎ করেই একদিন দেখলাম ব্যতিক্রম ঠেলাঠেলির যায়গাটা একেবারে ফাকা মানুষজন ধাক্কাধাক্কি না করেই হাটছে রাস্তার গাড়িগুলো আটকে নেই।

কারন কি এ অসাধ্যসাধন হল কিভাবে ?

পরমুহুর্তেই কারনটা দৃষ্টিগোচর হল একজন রিক্সাচালক, সম্ভবত আত্মবিশ্বাস অন্যদের থেকে বেশি, এসে দাড়াল তখনই দেখলাম তাকে একনজরই বলে দেয় নতুন ঢুকেছে পুলিশে গ্রাম্য চেহারা ছেড়ে এখনো শহুরে হয়নি সে অপেক্ষা করছে চুপচাপ রিক্সাচালক এসে সবে আরাম করে বসার উদ্দ্যোগ নিয়েছে, লাঠিটা গিয়ে পড়ল তার ওপর রিক্সাচালক রেগে ঘুরে দাড়াল মুখ খুলতে যাবে, তখনই আরেকবার মুখ খুলে কিছু বলল, সাথেসাথে আরেকবার আবারও লাঠি উচু হয়েছে সেটা নামার আগেই সে রনেভঙ্গ দিল যায়গাটা খালি হয়ে গেল অন্যরা দুরে থেকে হাসাহাসি করছে

রিক্সা সরালে গাড়ি-ট্যক্সিঅলারা ধরেই নেয় তাদের কারনেই এগুলি করা হয়েছে তাদের গাড়ি রাখতে সমস্যা হয়, এটা তারই সমাধান সম্ভবত সেকথা মনে করেই একজন ট্যাক্সীচালক রীতিমত চ্যাগাইয়া বসার মত গাড়ি রেখে তাতে হেলান দিয়ে হাওয়া খাচ্ছিল একজন ভদ্রমহিলা এসে জিজ্ঞেস করল, যাবেন ?

সে ভদ্রমহিলাকে একবার আপাদমস্তক দেখল কোন উত্তর দেয়াও প্রয়োজন করে করল না তখনই ঘটল ঘটনা

সে মাত্র মুখ ঘুরিয়েছে আমার পাশেই দাড়িয়েছিল এক যুবক সে গিয়ে তার কলারটা চেপে ধরল কিছু বুঝে ওঠার আগেই, টাল সামলানোর আগেই ধাক্কা খেল নিজের গাড়ির সাথে কোনমতে সামলে হয়ত কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু যুবকটি, সেই ট্রাফিক পুলিশের মতই কোন কথা না বলে আঙুল দেখাল ড্রাইভিং সিটের দিকে সে মুখ না খুলে সোজা সেখানে গিয়ে বসল আর যুবক নিজেই গাড়ির দরজা খুলে ভদ্রমহিলাকে ঢোকার যায়গা করে দিল ভদ্রমহিলা শসংকোচে উঠে বসলেন

আমি ভেবেছিলাম যুবক তার সঙ্গি কিন্তু সে ড্রাইভারের দিকে হাত নেড়ে রওনা হতে বলল তারপর এসে দাড়াল চায়ের দোকানে গাড়িটা চলে গেল।

আমার মনে পড়ল বহুদিন আগে একজনের দেয়া একটা ষ্টিকারের কথা মাইরের উপড়ে ওষুধ নাই দেখতে দেখতে চাক্ষুস প্রমান মিলল একে একে দুইবার

কথাটা ভাবতে ভাবতে চা খাচ্ছিলাম তখনই কানে এল, পোলাডা প্রধানমন্ত্রী হইলে কি করত কন তো ?

চমকে উঠে দেখলাম এ সেই রসিক আলী আরে আপনি ? এতদিন ছিলেন কোথায় ?

রসিক আলী সেকথার উত্তর না দিয়ে হাসল সে যে প্রশ্ন করেছিল সেটার কথাও ভুলে গেছে ততক্ষনে তাকে দেখার সাথেসাথে আরেকটা চা তৈরী হচ্ছে ঘুরে দেখলাম যুবকটি উধাও রসিক আলী সেই যুবকের কথা বলল না পুলিশের কথা বলল ধরতে পারলাম না

জিজ্ঞেস করলাম, ব্যাপার কি ? ব্যায়াম করছেন নাকি ?

রসিক আলী অবাক হল প্রশ্ন শুনে, ক্যামনে বুঝলেন কনতো ? মোটা হইছি ?

উল্টো তাকে প্রশ্ন করলাম, ব্যায়াম করলে কি মানুষ মোটা হয় ? তাহলে মোটারা ব্যায়াম করে কেন ?

রসিক আলীর অবাক ভাব যায়নি ব্যাখ্যা করে বলতে হল, পাতলা থেকে মোটাও হননি, মোটা থেকে ভুড়িও কমেনি আসলে আপনার নড়াচড়া দেখে বোঝা যাচ্ছে কেমন যেন একধরনের, সেই যাকে বলে ক্ষিপ্রতা চোখে পড়ছে

রসিক আলী আরো অবাক হয়ে বলল, কি চোখ রে বাবা দেইখাই বুইঝা ফালাইলেন ?

শান্তভাবে বললাম, বুঝতে হয় কারো সাথে গুতাগুতি লাগলে তার শক্তি কতখানি সেটা জানতে হয় এটা একজন শিখিয়েছে বলদ যত তাগড়াই হোক তারচেয়ে রোগা ষাড় ভয়ংকর

রসিক আলী বলল, ভাল কথা শিখাইলেন ওইযে পোলাডা তার প্রমান গায়েগতরে বড় না হইতে পারে কেমনে কাজ হইব জানে একাই সব কন্ট্রোল করতাছে

এতক্ষনে বুঝলাম পুলিশের কথা বলছে আমাকে বলতে হল, আর কদিন দুচারদিন গেলে শিখে নেবে কি করতে হয় আপনার বিষয়টা কি বলুন এতদিন দেখলাম না কেন ? আমি প্রতিদিন এখানে আসি আর মনেমনে আপনাকে খুজি

রসিক আলী বলল, আর কইয়েন না একটু সমস্যায় ছিলাম

চা তৈরী হওয়ায় কাপটা হাতে নিল রসিক আলী তখনই চোখে পড়ল তার হাতের দিকে সাথেসাথে মুখে আন্তরিকতা এনে জিজ্ঞেস করলাম, হাতে কি হয়েছে ?

রসিক আলী চায়ে চুমুক দিয়ে হাতটা একবার উল্টে দেখল তারপর বলল, এরই জন্য এতকিছু এইডারে কয় মাইরের উপড়ে ওষুধ নাই সেই ওষুধ দিতে গিয়া ব্যথা পাইছি আপনের সেই ব্যায়ামটাও শুরু করছি সেইদিন ঠিক করছি ডাক্তারি যহন করতেই হইব ভালভাবেই করমু

জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আবার কার চিকিৎসা করলেন ?

রসিক আলী বলল, কয়দিন আগের একটা ঘটনা রাস্তা দিয়া যাইতাছি দেখি একটা স্কুলের পোলা হাইটা আসতাছে কান্ধে ব্যাগ আনমনা মনে হয় কি জানি ভাবতাছে দেইখা নিজের ছোটবেলার কথা মনে হইল তখনই দেখি একটা গাড়ি পিছন থিক্যা ধাক্কা দিয়ে তারে ফালাইয়া দিল ফাকা রাস্তা, পোলাডা রাস্তায়ও ওঠে নাই, ধার দিয়া হাটতাছে, তারই মইধ্যে এই ঘটনা গাড়িডা থামাইলাম ড্রাইভাররে জিগাইলাম তুমি যে রাস্তায় গাড়ি নামাইছ, পরীক্ষা দিয়া লাইসেন্স পাইছ, এইগুলানের কোন দাম আছে ? একটু হইলে পোলাডা মারা যাইত ব্যাটায় আমার উপর উল্টা ঝাড়ি লয় কয় ঠিকই আছে সাবধানে হাটে না ক্যান তার ওপর আবার আরেক ব্যাটা, গাড়ির মালিক-টালিক কিছু হইব, গাড়ি থিক্যা নাইমা আমারে গালাগালি গাড়ি থামাইছি ক্যান পকেট থিক্যা ফোন বাইর করছে আমার কি করব আর সহ্য হইল না বুঝলেন দিলাম কয়ডা উল্টাপুল্টা ঘুসি রাস্তার কয়জন আইসা যোগ দিল গাড়ির কাচ ভাঙল তারপর সব ঠান্ডা এজন পুলিশ আগাইছিল, সেও অবস্থা দেইখা ভাগছে গাড়ির মালিক-ড্রাইভার হাতেপায়ে ধইরা মাফ চাইছে তহন মনে হইল এইডা হইল সত্যিকারের ডাক্তারী নিজে অন্যায় করমু না আরেকজনের অন্যায় সহ্য করমু না সেইজন্য ব্যায়াম কইরা চিকিৎসা শিখতাছি দেহেন না, আরো আগে প্রাকটিস শুরু করলে হাতের এই অবস্থা হইত না

জয় বাবা মাইর সত্যিই, মাইরের উপরে ওষুধ নাই

পর্যবেক্ষন মানে বিজ্ঞান

Jun 27, 2009

পর্যবেক্ষন মানে বিজ্ঞান তা কমবেশি সবাই জানি পরীক্ষা এবং পর্যক্ষেনের পর যে ফল পাওয়া যায় তাহাকে বিজ্ঞান বলা হয়, মুখস্ত করতে হয় স্কুলে আধুনিক বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে নিউটন, গ্যালিলিও, আইনষ্টাইনের হাত ধরে সেটাও আমরা জানি কেউ কেউ বড়জোর লিওনার্দোর নাম এনে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেন আমরা অনেকেই হয়ত জানি না যে অ্যালজেব্রা শব্দটি এসেছে আরবী শব্দ আল-জবর থেকে এর উৎপত্তি ইরাকের বসরায় আধুনিক অংকের শুরু হয়েছে সেখানে। নিউটনের কয়েকশ বছর আগে তিনি বর্ণালী নিয়ে প্রবন্ধ লিখে গেছেন এবং তিনিই বলে গেছেন বিজ্ঞান আসলে পর্যবেক্ষন শুধুমাত্র তাত্ত্বিক আলোচনা নয়

তবে আমার বক্তব্য এখানে না একেবারেই নিতান্ত প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষন নিয়ে প্রাত্যহিক বিজ্ঞানও বলতে পারেন প্রতি মুহুর্তে আমরা যা চোখে দেখি, পর্যবেক্ষন করি, আমাদের মস্তিস্ক বিশ্লেষন করে এবং আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনিত হই, ফল পাই সেই বিজ্ঞান নিয়ে

একটা উদাহরন দিয়ে দেখা যাক

ধরুন আপনি হেটে যাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে ফুটপাত বলে যে যায়গা থাকার কথা ছিল সেখানে চায়ের দোকান, পুরনো জামাকাপড়ের দোকান, চটপটি-পুরি-আলুর চপের দোকান, তারপর গাড়ি পার্কি, এক কিংবা দুই সারি তারপর মানুষের মিছিল এই সবকিছু হিসেব করে এগোচ্ছেন একটু সামনে চলন্ত গাড়ি আর পার্ক করা গাড়ির মাঝখানে যে ফাকা যায়গাটুকু রয়েছে সেটা তাক করে এগিয়ে যাচ্ছেন অনেকটা এগিয়ে গেছেন তখনই আতংকিত চোখে দেখলেন ওদিক দিয়ে আরেকটা দেহ ঢুকছে

যেপথে গরু চলে সেপথ থেকে সরে দাড়াতে হয় বপুটা দেখে আপনাকে বাধ্য হয়ে পিছিয়ে এসে দাড়াতে হল সেই বিশাল বপু পার হবেন তারপর আপনি সুযোগ পাবেন

তবে সবকিছু সেভাবে ঘটল না সেই বিশাল বপু মাঝপথে আসার পথ থামলেন একটু ঘুরলেন হাতটা পকেটে ঢুকালেন মোবাইল ফোন বের করলেন সেটা দেখলেন টিপলেন কানের কাছে ধরলেন কথা বলতে শুরু করলেন এবং কথা বলতেই থাকলেন

ততক্ষনে আপনার পিছনে দাড়িয়ে গেছে কয়েকজন ওদিকে আরো কজন এই অবস্থায় আপনার একটামাত্র কাজই করার থাকে পর্যবেক্ষন অন্য ভাষায়, বিজ্ঞানচর্চ্চা সেখানে দাড়িয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করুন

প্রথমেই আপনার পর্যবেক্ষনের বস্তু তার দেহ ওটা অমন হল কিভাবে ? এদেশে নাকি অধিকাংশ মানুষ খেতে পায় না পেট ভরার জন্য খায় ভাত নয় রুটি আফ্রিকার মানুষের খাবারে নাকি পুষ্টিগুন এরচেয়ে বেশি। দেশের পরিচয় দেবার সময় বলা হয় সবচেয়ে দরিদ্র একটি দেশ।

পরমুহুর্তে এই অনর্থক প্রশ্ন বাতিল করে দিলেন চাইনিজ-থাই-ইতালিয়ান-ফ্রেঞ্জ সবধরনের ডিস পাওয়া যায় বহুদিন থেকে তারপর বার্গার-হটডগ-পিজ্জা রীতিমত সেকেলে। সরমা-গ্রীল-বটি-শিক এসব তো আছেই তারপর আছে কেফসি-পিজাহাট এমনটা হতেই পারে পথেঘাটে বিস্তর দেখা যায়

পোষাকটা একবার দেখলেন এতেও নতুনত্ব নেই যে কোন এসি মার্কেটে ঢুকলে এসব পাওয়া যায় গুলশান-বনানী-পান্থপথ-হাতিরপুল-ধানমন্ডি-সাইন্সল্যাব সবখানে আবার ফুটপাতেও পাওয়া যায় একই জিনিষ

পায়ের জুতা, হাতের চুড়ি, কোমড়ের বেল্ট এসব একনজর দেখে নিলেন এগুলির ক্ষেত্রেও একই কথা ফুটপাতে, রাতের মার্কেটে পাওয়া যায় আবার এসি মার্কেটেও পাওয়া যায় দেখে চেনার উপায় নেই

এরপর আপনার মনোযোগ গেল সত্যিকারের পর্যবেক্ষনের দিকে

উনি অন্যের পথ বন্ধ করে চির উন্নত মম শির করে কথা বলে চলেছেন কেন ? একটু সরে দাড়ালে আরো নির্বিঘ্নে কথা বলতে পারতেন, অন্যরাও বাধাগ্রস্থ হত না।

অন্যদের দেখাচ্ছেন, দেখ আমি কি করতে পারি ? সাধ্য আছে আমার সামনে যাবি ? দেখি কেমন বাপের ব্যাটা জানস আমি কেডা ? ফোনে কেডা আছে শুনবি ? শুনলে তর-

আপনার পর্যবেক্ষন আর এগোল না কারন কারো কারো এত পর্যবেক্ষনের ধৈর্য্য নেই তারা গুতোগুতি শুরু করেছে কথার তুবড়ি ছুটছে সেদিকটা একবার দেখলেন। প্রতিমুহুর্তে নতুন নতুন শব্দ যোগ হচ্ছে ভাষার ভান্ডারে। সেই শব্দের তোড়ে আপনার পর্যবেক্ষনের খেই হারিয়ে গেল।

বরং আরো নিরাপদ পর্যবেক্ষনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। মোটামুটি নিরাপদে দাড়ানো যায় এমন যায়গায় দাড়িয়ে। কোনমতে সে ব্যবস্থা করা গেল। আপনার পর্যবেক্ষনের বিষয়;

একজন পুলিশ চায়ের দোকানের কাছে এসে দাড়ালেন চারিদিকে দেখলেন তার সঙ্গি আরো দুজন, তারা কিছুটা দুরে। আপনার দৃষ্টি কাড়ল একজনই। তার দৃষ্টি, অঙ্গভঙ্গি পর্যবেক্ষন করে তার মনের ভাষা পড়ার চেষ্টা করতে থাকলেন।

এই ব্যাডা করে কি ? খাড়ায়া খাড়ায়া চা খাইত্যাছে। সাথে মনে হয় আর কেই নাই। একাই। আবার এইদিক-ওইদিক চায়। কারো অপেক্ষা করতাছে মনে হয়। জামাকাপড় কি গুলশান থিক্যা কেনা ? আইজকাল গুলশান আর ফুটপাতের পার্থক্য ধরা যায় না। পায়ের জুতাডাও ফুটপাতে পাওয়া যায়। চুল চেহারা দেইখাও চেনার উপায় নাই। চিনতে ভুল করলে মুসকিল।

শরীলে দামি কি আছে ? স্বাস্থ্যডা ভালই কিন্তু চকচক করতাছে না। ভাল খাইতে পাইলে চকচক করত। জুতাডাও ময়লা। কয়েক মাইল হাটছে। তারমানে গুলশান-বনানীর পোলা না। তারা এত হাটে না। পকেটে উচা হইয়া রইছে ওইডা কি ? মোবাইল ? দেইখ্যা বড় মনে হয়। আইজকাল বড়-ছোট দেইখা দামী-কমদামী বোঝা যায় না। চাইনিজ মাল সব।

দোকানে কয়টাকার নোট দ্যায় দেহি। অ, ট্যাকাপয়সা আছে দ্যাহা যায়। কি সিগারেট ধরায় ? সোনালী সিগারেট ? না-তো।

পাইছি। এইডা বড়লোকের পোলা হইতেই পারে না। হ্যারা কমদামী সিগারেট খায় না। থানার কথা কইয়া অর্ধেক রাস্তা নিলেই-

এই-যে !!!

পর্যবেক্ষন সব যায়গায় চলতে পারে। অফিসে, দোকানে, রাস্তায়, বাসে, সবখানে, সবসময়। আপনি দেখলে একজন তিনজন বসার মত সোফার মাঝখানে বসে রয়েছেন। যাকে বলে ঠ্যাং চ্যাগাইয়া, কনুই চ্যাগাইয়া বসা সেই ধরনে। আপনাকে স্পষ্ট বলে দিচ্ছে আপনি কোনদিকে বসার সুযোগ পাবেন না। মাঝখানে তো নয়ই, দুপাশে বসতে হলে কনুই ঠেলে বসতে হবে। সেইসাথে এটাও জানিয়ে দিচ্ছেন আপনাকে, আপনার দৌড় দেখান। আরো এলাইয়া বসমু, সইরা বসমু, না উইঠ্যা যামু।

আপনার পর্যবেক্ষনক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে আপনার প্রতিক্রিয়া।যদি পুরোপুরি ভদ্র মনে করেন দুর্গন্ধ এড়ানোর মত দুরে থাকবেন এবং তাকে আরো বসার সুযোগ করে দেবেন, যদি ভদ্রতার গন্ধ লেগে থাকে তাহলে তাকে সরে বসতে বলবেন এবং সেটাই আশা করবেন। আর যদি সত্যিকারের অভিজ্ঞ হন তাহলে অনিচ্ছায় একটা লাথি মেরে, কনুইয়ের গুতো দিয়ে বসে পড়বেন। ক্ষেত্র বিশেষে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায় এতেই, কারন তিনিও পর্যবেক্ষনগুনে বুঝে যান যায়গা ছেড়ে দেয়াই উত্তম।

এই পর্যবেক্ষন চলতে পারে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। প্রাকটিস মেকস এ ম্যান পারফেক্ট। একসময় নিখুতভাবে বুঝে যাওয়া সম্ভব কার মনে কি চিন্তা চলছে। এরপর কি ঘটতে যাচ্ছে। কখন, কোথায়, কারসাথে কি আচরন করতে হবে।

তবে সবাই এত ধৈয্য নিয়ে দিনের পর দিন পর্যবেক্ষন চালায় না। সেকারনে অনেক সময় পর্যবেক্ষন সাধারন ঘটনা দর্শনে পরিনত হয়। এমনকি বিপদের সম্ভাবনাও তৈরী করে।

চায়ের দোকানের পাশে দাড়িয়ে সিগারেট টানছেন এক ভদ্রলোক একেবারেই রোগা দুবলা, সার্ট প্যান্ট ময়লা, পায়ে স্যান্ডেল চোখে উদাস দৃষ্টি পকেটের অবস্থা নিশ্চয়ই মাঝারী এক যুবক এগিয়ে গেল কাছে

আরে ভাই ক্যামুন আছেন ?

ভদ্রলোক একবার তাকিয়ে দেখলেন তার উদাস দৃষ্টি পাল্টাল না

আপনারে প্রায়ই দেহি ওই দিক দিয়া হাইটা যান রফিক ভাইরে চিনলেন ? ওই যে আমাগো বড় ভাই হগ্গলে হিরঞ্চি রফিক কয় আমাগো পাড়ার আর কি আপনারে তো চেনে

ভদ্রলোক আরেকবার দেখলেন বক্তাকে

সেদিন হইছে কি জানেন ঈদের আগে মতিন সাবে আইসা ট্যাকা দিয়া গ্যাছে কইছে ভাগ-বাটোয়ারা কইরা ল ঈদ কর আমারে দিছে মাত্র দুইশ বড় ভাই দেইখা কিছু কই নাই আমার আবার রাগ খুব বেশি কেউ আমার চোখের দিকে চাইয়া কথা কয় না ওইযে খবরে দ্যাখছেন না, তিনজন হাসপাতালে গ্যাছে এইডা হইল- আচ্ছা থাউক সেসব কথা আমারে পাচশ ট্যাকা দ্যান তো হাতটা খালি একটু মিরপুরের দিকে যামু আমার বইন হাসপাতালে রইছে-

ভদ্রলোক হাতের সিগারেটটা ফেলে দুহাত পকেটে ঢুকালেন

আপনারে আমি খুব মান্য করি আমি সবাইরে মান্য করি রফিক ভাই শিখাইছে বড়রে সন্মান কইরা কথা কইতে হয় আখেরে-

‌‌কথা শেষ হয়েছে ?

এবার যুবকের মুখে উত্তর শোনা গেল না সে অবাক হয়ে তাকাল

ভদ্রলোকের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত, ‌ভাগ

এতক্ষনে যুবকের বোধোদয় হল, তার পর্যবেক্ষনে ভূল ছিল

অধিকার

Jun 25, 2009

একজন সাংসদ বহু মানুষের ভোট নিয়ে, গনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে তবে সাংসদ হন এজন্য কাঠখড় পোড়াতে হয় অনেক কর্মী-সমর্থক তৈরী করতে হয় সেখানে খরচাপাতি আছে এলাকায় খরচাপাতি করতে হয় জনগনের মন জয় করতে হয় এখানে ওখানে এরজন্য-তারজন্য সুপারিশ করতে হয় অমুক নেতা তমুক নেতার সাথে প্রতিদ্বন্দীতা করতে হয় তারপর পার্টির নমিনেশন রীতিমত তেলমালিশ করতে হয় আজকাল খাটি তেল পাওয়া দুষ্কর, দুর্লভ। তারপরও করতে হয় নির্বাচন কমিশন কি নিয়ম করে দিয়েছে পার্টি থেকে একজন দাড়াতে পারবে কেন বাবা, বেশি দাড়ালে তোমাদের ক্ষতি কি হচ্ছে তোমাদেরই তো লাভ তোমরাই তো টাকা পাচ্ছো আবার নির্বাচনের ব্যয়, সেখানেও বাধা প্রেসের লোকজন কদিন টাকা কামাবে, লোকজন কদিন আমোদ ফুর্তি করবে তাতেও বাধা

কাজ এখানেই শেষ হয় না নির্বাচনের দিন তক্কেতক্কে থাকতে হয় কখন কোন ব্যাটা কি করে বসে ইনভেষ্টের পুরো টাকাটাই জলে যাবে তাহলে লোকজন তৈরী রাখতে হয় আবার ইলেকশনের সাথেসাথে যে ঝামেলা মিটে যাবে তাও না অনেক সময় কারচুপি করে অন্যকে জিতিয়ে দেয় তখন লড়াই করতে হয় এতসব বাধা পেরিয়ে তবেই না এমপি

তিনি পুলিশ পেটাতে পারেন, উকিল পেটাতে পারেন, সাংবাদিক পেটাতে পারেন দেশ পেটানোর ক্ষমতা যার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে সেখানে এগুলো তো তুচ্ছ এটুকু অধিকার তার থাকা উচিত

আর এই অধিকার শুধু সাংসদের হাতে থাকবে কেন ? যারা তাদের নির্বাচনে সহায়তা করল, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে জিতিয়ে দিল তাদের কি কোন পাওনা থাকতে নেই টেন্ডারের কাজ পাওয়ার মত সামান্য অধিকারও কি তাদের নেই সে কাজে বাধা দিলে পেটানোর অধিকার কি নেই তারা নিঃস্বার্থ হতে পারেন কিন্তু তাদের পরিবারের স্বার্থ, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধবের স্বার্থ তাদেরকেই দেখতে হয় তারাইতো পেছনে থেকে সবরকম সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, উৎসাহ জুগিয়েছেন এই সামান্য অধিকার তারা অর্জন করবেন না কেন ? কথায় বলে অধিকার কেউ দান করে না, নিজেকেই অর্জন করতে হয় অধিকার পাওয়া মানুষ না থাকলে নাহলে দেশ চালাবে কে ?

একবার চোখ খুলে দেখুন বৃটেনের কি হাল সরকারের তহবিল থেকে কয়েক পেন্স দিয়ে কুকুরের খাবারের বিল দিয়েছে তাতেই চাকরী নট একবারও ভেবে দেখেছে এভাবে চাকরী নট হলে দেশে থাকবে কি ? দেশ চালাবে কে ? ওরাই তো একবার হিসেব করে দেখাল শতকরা ৯৪ জন নাকি ৯৬ জন জীবনে কখনো না কখনো চুরি করেছে নিজেরাই স্বীকার করেছে তাহলে চুরি করেনি এমন মানুষ পাবেন কোথায় ?

ওসব কথার কথা কেউ যখন জনগনের সমর্থন পায় তখন সবাই উঠেপড়ে লাগে তার পেছনে যে কয়েক পেন্স হিসেবে গড়মিল করেছে তাকেই টেনে সামনে আনে যারা বড়বড় কথা বলছে তারা যেন ধোয়া তুলসীপাতা। সব দেশেই তাই হয় আর মানুষ খারাপটাই শেখে

মানুষকে তার অধিকার দিতে শিখুন নেতা হলে তার কিছুটা অগ্রাধিকার থাকতে হয় নেতা সামনে থাকে আপনারা পেছনে থাকেন সেজন্যই তিনি নেতা এই অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে নেতৃত্ব শুন্য করার ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত তাদের কথায় কান দেবেন না। কতজন কতভাবে উপকৃত হচ্ছে জানেননা তো।

পরিচিত একজন এসে বলল, বস সুন্দর কইরা একটা অফিসের নাম প্রিন্ট কইরা দ্যান। দরজায় লাগামু।

জিজ্ঞেস করলাম, দরজায় নাম লাগানো প্রয়োজন হল কেন ?

সে বলল, একটা ফান্ড পাইছি। অফিস দ্যাখতে আইব না, তবু যদি আইসা পড়ে। একদিনের জন্য লাগামু।

ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, আমার দরজায় লাগিয়ে আমাকে বিপদে ফেলবেন!

সে বলল, আরে ঘাবড়াইয়েন না। আমার দল ক্ষমতায়। কিছু করার থাকলে কণ।

কাজেই নেতাকে নেতৃত্ব করার অধিকার দিন দেশ এবং দশের উপকারের স্বার্থে তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিন অনুসারীদের উপকার করতে না দিলে, দুচারজনকে শাসন করতে না দিলে তিনি নেতৃত্ব করবেন কিভাবে ?

ডাক্তার আসিবার পুর্বে

Jun 24, 2009

সেটা ছিল এককাল খবর দিলে ডাক্তার ব্যাগ নিয়ে রোগীর বাড়ি যেত আজকাল ডাক্তার কারো বাড়ি যান না রোগ হলে আপনিই ছোটেন ডাক্তারখানায় ডাক্তারখানা মানে হাসপাতাল আরকি আজকাল কোন ডাক্তার একা কাজ করেন না নানা রঙের বোতল থেকে মিকচার বানান না ওগুলো ফ্যাক্টরী বানিয়ে দেয় কোন ওষুধে কি কাজ হবে জানিয়ে দেয় হাসপাতালের কাজ সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে একসাথে করা সব বিশেষজ্ঞ একসাথে বসে একই ছাদের তলায় রোগী দেখেন একজন নখ বিশেষজ্ঞ, একজন আঙুল, একজন তালু, একজন কব্জি, আরেকজন হাত একজন দেখবেন তারপর আরেকজনের কাছে পাঠাবেন তিনি পাঠাবেন তার পরের জনের কাছে সাতদিন ধরে চৌদ্দ যায়গায় যতরকম টেষ্ট করা সম্ভব করলেন তারপর শুনলেন, ভয় পাবার কিছু নেই ওঠা আপনিই ধীরে ধীরে সেরে যাবে

না সারলে ?

না সারলে সাতদিন পর আসবেন আবার পরীক্ষা করা হবে

আমার এতগুলান টাকা ?

আরে পরীক্ষা না করলে কি রোগ জানা যায় রোগ বলে কথা, জীবন বলে কথা রোগকে কখনো অবহেলা করতে নাই জানেন একজনের সামান্য দাতব্যথা থেকে কি হয়েছিল -

আপনি আবারও শুনলেন সেই বিখ্যাত কাহিনী

যারা বিদেশী সংস্থায় কাজ করেন তারা দেশেই বিদেশীর মর্যাদা পানে কেউ কেউ বেতন পান ডলারের হিসেবে দেশে বিদেশী প্রতিষ্ঠানেরও অভাব নেই তেমনই এক সৌভাগ্যবানের কথা গাড়ি দুর্ঘটনায় পা ভাঙল তার সাথেসাথে ঢাকায় নিয়ে নামকরা এক হাসপাতালে ভর্তি, সাথেসাথে নানারকম পরীক্ষা, এক্সরে একসময় এক্সরে রিপোর্ট দেয়া হল বিদেশী বড় কর্মকর্তাকে তিনি দেখলেন সেটা বাম পায়ের, আসলে ভেঙেছে ডান পা

সাথেসাথে প্রতিক্রিয়া হেলিকপ্টার এসে রোগীকে নিয়ে গেল সিংগাপুরে তাদের কর্মী বলে কথা

তবে তাদের কর্মী আর কয়জনই বা বাকীদের ভাগ্যে আছে পরীক্ষার খরচ, তারপর কিছু বাচলে কটা ট্যাবলেট সেটাই বা কম ঝক্কি না-কি ১০ ট্যাবলেটের এন্টাসিডের স্ট্রিপের দাম এক দোকানে ১০ টাকা, আরেক দোকানে ২০ আরেক দোকানে ৩০ তারপরও সেটা আটার গুলি কিনা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই

দেশে ডাক্তারের সংখ্যা কত হাজারে কত তা নিয়ে বিতর্ক তৈরী করতেই পারেন। অন্তত হাতে সময় যখন অফুরন্ত তখন যেকোন কিছূ নিয়েই বিতর্ক করতে করতে পারেন। তবে কথা হচ্ছে, দেশে, অন্তত ঢাকা শহরে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের ঘাটতি নেই। বানির্জিক এলাকা বলুন আর আবাসিক এলাকাই বলুন আর শিল্প এলাকাই বলুন, যে পরিমান হাসপাতাল জন্মেছে তাতে অনায়াসে হাসপাতাল এলাকা তৈরী করা সম্ভব। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু এলাকা হাসপাতাল এলাকা হিসেবে পরিচিতিলাভ করেছে। রাস্তায় গাড়ির লাইন, ভেতরে রোগীর লাইন। বর্তমানের গার্মেন্টস শিল্প, আগামীর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পর মত দ্রুতই প্রসার লাভ করছে হাসপাতাল শিল্প। এমন কোন প্রযুক্তি নেই যার অভাববোধ করতে হবে। কথা একটাই, এটা বড় হাসপাতাল, বড়জোর মাঝারি হাসপাতালের কথা। ছোটদের কথা আলাদা।

কোন কোন নিন্দুক বলে সরকার নাকি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করে না। তা নিন্দুকের কাজইতো নিন্দে করা। তারা কোনকিছু ভালচোখে দেখে না। চশমার বাকা কাচের মধ্যে দিয়ে বাকাভাবে দেখে। নইলে অন্তত খরচের কথা উঠত না। একবার এয়ারপোর্ট গিয়ে দেখুন না চিকিৎসাভ্রমনের লাইনটা কতবড়। এর খরচ কি আপনি দেন ? সরকারই তো দেয়। সবাইকে দেয়া সম্ভব না বলেই তো এখানে বিদেশী মানের হাসপাতাল করা হচ্ছে। এটা গরীব দেশ। সব যায়গায় হিসেব করে চলতে হয়।

কথা হচ্ছে, হাসপাতাল বলুন আর যাই বলুন, মুল কথা হচ্ছে ডাক্তার আর রোগী। এদেশে ডাক্তাররা মোটেই ভাল নেই। জানেন আমেরিকায় একজন ডাক্তার কত কামায় ? ইউরোপে ?

একসময় মুখে মুখে ফিরত, হয় ডাক্তার নয় ইঞ্জিনিয়ার। এদুটোর একটা হতেই হবে। এখন কেউ সেকথা বলে না। এথেকেই প্রমানিত হয় ডাক্তাররা সুবিধেয় নেই। কদিন আইটি নিয়ে কথা উঠেছিল, সেটাও মিইয়ে গেছে। ব্যবসা শিক্ষাও মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি। তাদের সাথে তুলনা করলে ডাক্তাররা অনেক পিছিয়ে। বাপের টাকা খরচ করে ডাক্তার হয়ে এখন হাপিত্যেস করতে হচ্ছে। বড় হাসপাতালে সুযোগ পেলে তবু নামে কাটিয়ে নেয়া যায়। নয়ত দালাল ধরতে হয়।

হাসপাতাল ব্যবসা এখনো লাভজনক হয়ে ওঠেনি। কোনভাবে যদি গতি বাড়ানো যেত। হাজার হাজার লোক এসে লাইন ধরে দাড়াত।

এখনো মানুষ সচেতন হয়নি। এন্টাসিড-প্যারাসিটামল নিজেই কিনে খায়। নিতান্ত মরার দশা না হলে কেউ ছোট হাসপাতালে যায় না। ডাক্তারের হাতেও তাই অফুরন্ত সময়।

পরিচিত একজনের একেবারে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা এমার্জেন্সি রুগী নিয়ে গেছেন হাসপাতালে তার শিশু সন্তান কানের মধ্যে কাগজ ঢুকিয়েছে ওটা বের করতে হবে টাকা দিয়ে টিকেট কেটে বসলেন ডাক তার আর আসে না অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করায় শুনলেন ডাক্তার নেই

ডাক্তারসাব নামাজ পড়তে গ্যাছেন বসেন ঘন্টাখানেকের মধ্যে আইসা পড়ব

বসেই আছি একঘন্টা হল আরো একঘন্টা লাগবে ? কিসের নামাজ পড়তে একঘন্টা লাগে ?

উনি পরহেজগার মানুষ, জামাত ছাড়া নামাজ পড়েন না

তাহলে টাকা ফেরত দ্যান আমি অন্য যায়গায় যাই

যাইতে চান যান টাকা ফেরত দেওয়া হয় না

সবার সেরা

Jun 22, 2009

মানুষ সব প্রাণী থেকে আলাদা কি কি কারনে আলাদা তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে সময় ক্ষেপন করতে পারেন মতবিরোধ দেখা দিতে পারে তবে একটা কথা স্বিকার করতেই হবে, মানুষ যা করতে পারে তা অন্য বণ্য প্রাণী পারে না

পার্থক্যটা হয়ত লক্ষ করেছেন এরই মধ্যে মানুষ মানুষ আর অন্যরা বণ্য এটাই মূল পার্থক্য মানুষের সভ্যতা আছে, আছে প্রযুক্তি অন্যদের কোন কোন কাজকে বড়জোর মানুষের মত বলে উল্লেখ করা যায় তাইবলে মানুষের প্রতিদ্বন্দি কখনোই নয়, মানুষের চেয়ে উন্নত কখনোই নয়, কোন বিষয়েই নয় (কমলাকান্তর মতকে হিসেবের বাইরে রাখলে)

কাজেই, যেহেতু বিষয়টির সমাধান হয়েই গেছে, সেহেতু অন্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে

মানুষের সবচেয়ে বড় আবিস্কার কি ?

আবারও মতভেদ, আবারও বিপত্তি নানা মুনির নানা মত কেউ বলেন ভাষা মানুষের উন্নত ভাষা আছে বলেই সে অন্যদের থেকে আলাদা যুক্তি না মেনে উপায় নেই অন্য প্রাণীর নিশ্চয়ই উন্নত ভাষা নেই কারন তাদের ভাষা আমরা বুঝি না এককালে গ্রীকরা যখন বিশ্বজয় করছিল তখন বহু যায়গার মানুষকে তারা বলত বর্বর কারন তারা বরবর করে কি বলে বোঝা যায় না বাংলায় বর্বর বলুন আর ইংরেজীতে বার্বারিয়ানই বলুন শব্দটা সব দেশেই স্থায়ী হয়ে গেছে যার ভাষা বোঝা যায় না সে বর্বর না হয়ে যায় না আপনি কি যুক্তি দিলেন। এর কোন মানে হয়। আপনে বর্বর।

বোঝা যাচ্ছে যুক্তি দিয়ে সমাধান হবে না তাহলে প্রযুক্তি দিয়ে চেষ্টা করা যাক মানুষের সেরা প্রযুক্তি কি ?

পাথরের যুগ, লোহার যুগ, তামার যুগ, ব্রোঞ্জের যুগ এসব বিবেচনা করলে প্রথমেই যা গুরুত্ব পায় তা হচ্ছে অস্ত্র পাথর ব্যবহার করা হয় অস্ত্র তৈরীতে আর আজকাল ইউরেনিয়ামও ব্যবহার করা হয় অস্ত্র তৈরীতে অন্য প্রানীরা কখনো সেটা করে না সেই প্রাচীন কাল থেকে দন্ত এবং নখই তাদের সম্বল আদিম মানুষরা অসভ্য কারন তারা ঢিল ছুড়ে বড়জোর একজনকে মারতে পারত একেবারে মোক্ষম না হলে মারার চেয়ে আহত করার সম্ভাবনাই বেশি আবার নিজের মারা যাওয়ার কিংবা আহত হওয়ারও সমুহ সম্ভাবনা ছিল আমরা সভ্য কারন আমরা ঘরে বলেই লক্ষ মানুষ মারতে পারি নিজের জীবনের ওপর বিন্দুমাত্র ঝুকি না নিয়ে যে জাতি যত সভ্য সেই জাতির অস্ত্র তত শক্তিশালি তারা তত বেশি নিরাপদ সভ্য মানুষের হিসেবও তাই সভ্য লোকের বাড়িতে দারোয়ান থাকে, কুকুর থাকে, পকেটে পিস্তল থাকে আবার টাকাও থাকে। টাকা থাকলে এসবের সবগুলোই পাওয়া যায়। অসভ্য লোকের এগুলো থাকে না

আচ্ছা মারামারির বিষয়টা থাক অন্যদিকে দেখা যাক এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী কি। সবচেয়ে প্রভাবশালী কি ? সকলের সেরা কে ?

এক কথায়, মোবাইল ফোন।

এর ব্যবহারে কোন সীমারেখা নেই। ধনী-দরীদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বড়-ছোট, জ্ঞানী-মুর্খ ভেদাভেদ নেই। সব মানুষকে এক কাতারে আনার মত এমন যাদুকরী ফল অন্য কিছু দেখাতে পারেনি। প্রিয়জনের সাথে কথা বলতে চান, অপছন্দের কাউকে দুর থেকে গালাগালি করতে চান, নাম্বার টিপুন। যদি গালাগালি করার মত কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে ভাবনা নেই। চিকিৎসকরা বলেন মনের রাগ মনে পুষে রাখলে নিজের ক্ষতি হয়। আপনাকে নিজের ক্ষতি করতে হবে না। চোখ বন্ধ করে টিপে যান, যেখানে লাগে। তারপর ইচ্ছেমত মনের ঝাল ঝাড়ুন। যদি ভাগ্যগুলে মহিলা কন্ঠ শুনতে পান তাহলে তো কথাই নেই। ইচ্ছে পুরন করুন।

গান শুনতে চান। নিজেই ডাউনলোড করুন নয়ত দোকান থেকে ডাউনলোড করে নিন। তারপর পকেটে নিয়ে চলবান বাদ্যযন্ত্র হয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ান। বিনে পয়সায় অন্যকে শোনাতে না চাইলে তারের মাথা কানে গুজে দিন। ভিডিও দেখতে চান। আবার আগের পদ্ধতি। কত যে সুবিধে বলে শেষ করা যায় না। যে কোন যায়গায় বসে ভিডিও দেখা যায়। কেউ বিরক্ত করতে আসছে না। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ভিডিওর পরিমানও বাড়ছে। পড়ার টেবিলে, ক্লাসে বসে, পথের ধারে, পার্কে, বাথরুমে-টয়লেটে যেখানে খুশি দেখুন। খেলতে চান। আবারও একই প্রক্রিয়া। ডাইনলোড। ইন্টারনেট থেকেই হোক আর দোকান থেকেই হোক।

ইন্টারনেটের কথা যখন উঠেই গেল তখন সেটাই বা বাদ থাকে কেন ? ইমেইল করুন অথবা ব্রাউজ করুন। কোন সমস্যা নেই। পথে চলতে চলতে কাজ করবেন, সময় বাচাবেন। সময় মানেই টাকা। সেই অর্থে টাকা বাচাবেন।

যেখানে অন্য সবাই ফেল তখন মোবাইল ফোন। কোন সীমা নেই।

কি বললেন ? টাকা ?

তাহলে অভিজ্ঞতার কথা শুনাই।

ভদ্রলোক বাসে চেপে ফোন বের করে কানে লাগিয়েছেন। কথা শুরু করেছেন। আর থামার লক্ষন নেই। পথ ৫ মাইলের, জ্যাম তিন ঘন্টার। পুরো তিনঘন্টা কাটিয়ে বাস থেকে নামার সময় ফোনটা পকেটে রাখলেন।

একজন প্রশ্ন না করে পারল না, এতক্ষন যে কথা কইলেন কত টাকা কাটল।

তার উত্তর, ধুর মিয়া। আমারে কি ভুতে ধরছে যে মোবাইল কোম্পানীরে ট্যাকা দিমু। কাম নাই দেইখা কানের কাছে রাইখা কথা কইলাম। মোবাইলে এক ট্যাকাও নাই।

এমন যন্ত্রের ওপর আবার সরকার ট্যাক্স বাড়াতে চায়। তাও যেমন তেমন না, একেবারে ২৫ ভাগ। একি সহ্য হয় ?

 

Browse