ষড়যন্ত্র থাকতে পারে

May 28, 2009

অবশেষে, তিন মাস পর পিলখানা ঘটনার তদন্ত কমিটির রিপোর্টের সারাংশ প্রকাশ পেয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রেখেছেন। আগের সব তদন্ত কমিটির মত এই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অন্ধকারে হারায়নি। পত্রিকায় প্রকাশ, রিপোর্টে বলা হয়েছে নেপথ্যের কুশিলবরা এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। দবিরের কথা শামসুর রাহমান লিখেছিলেন বহু আগে। আধখাওয়া রুটি চিনতে না পেরে সবাই যখন দবিরের স্বরনাপন্ন হল তিনি বহুক্ষন প্রত্যক্ষ করে বললেন, দবির বিনা ধামরাই আন, উইয়ে খেয়েছে পুরান চান। দবিরকে ছাড়া ধামরাই অন্ধকার। এটা পুরনো চাদ, আকাশ থেকে খসে পড়েছে আর এক অর্ধেকটা উইপোকা খেয়ে ফেলেছে। তিন মাসের এই তদন্ত কমিটি ছাড়া আমরাও অন্ধকারে। এতদিনে জানা গেল এটা কেউ ষড়যন্ত্র করে ঘটিয়ে থাকতে পারে। তারা জানিয়ে দিলেন।

আরো কারন রয়েছে। সেনা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল। যেদিন ঘটনার শুরু সেদিনই বিবিসিতে এক বিডিআর সদস্যের বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন কিছু কারনের কথা। সেটা কারো কানে পৌছে থাকে তাহলে বলতে হয়, তিন মাসের এই তদন্ত রিপোর্টে নতুন কিছু নেই। সেই ব্যক্তি তার দুঃখের কথা বলতে গিয়ে কেদে ফেলেছিলেন। তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হয় সেকথা বলেছিলেন। আর বলেছিলেন কর্মকর্তাদের কথা। তারা কিভাবে টাকাপয়সা হাতিয়েছেন, হাতাচ্ছেন সেকথা। পালিয়ে যাওয়া অনেক বিডিআর সদস্যের কাছ থেকে নাকি লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। পালিয়ে যাওয়ার সময়ও নাকি তাদের পকেট থেকে সেই টাকা পড়ে গেছে পথে। কুড়িয়ে পেয়েছে অন্য লোকে। লক্ষ টাকার অলংকার এবং অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

মৃত ব্যক্তির ওপর ক্ষোভ রাখতে নেই। এটা মানবতাবিরোধী। যারা এভাবে নিহত হয়েছেন সেটা অগ্রহনযোগ্য। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই খুনী হিসেবে শাস্তি পাবে (ইহকালে যদি নাও হয়, পরকালে)।

কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। কেউ কি একবার প্রশ্ন করবেন যে অর্থ নিয়ে এই অনর্থ ঘটেছে তার উৎস কি ? কিভাবে তারা এই বিপুল পরিমান অর্থের মালিক হয়েছিলেন ? যদি না করা হয়, আমি দুঃখিত, এই ঘটনার পথ বন্ধ হচ্ছে না।

তবে এখন এটা ষ্পটলাইটে নেই। ইদানিং রসালো বক্তব্য দেয়ার আরো বড় খবর পাওয়া গেছে। বৃটেনের মন্ত্রী-সাংসদ অর্থ কারচুপি করেছে। দেশের নেতা-বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে এনজিও-সংবাদ মাধ্যম সকলেই তাথৈ তাথৈ নাচ নাচছেন। যারা এতদিন আমাদের চোর বলেছে তারা নিজেরাই চোর।

থামুন। তাদের চুরির নমুনাটা একবার দেখুন। একজন সাংসদ কয়েকশ পাউন্ডের হিসেবের গড়মিলে দোষী। তিনি বলছেন তার অগোচরে সেটা ঘটেছে। এত পুখানুপুংখ হিসেব করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

বাস্তবতার নিরিখে তার কথা একবার যাচাই করুন। তিনি যদি সচেতনভাবে চুরি করতেন তাহলে কয়েকশ পাউন্ড চুরি করবেন কেন ? বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশে অর্থের কি এতই অভাব। কই, এদেশে তো অর্থের অভাব নেই। একটা টেন্ডার পাইয়ে দিলে কোটি টাকা পাওয়া যায়। তাদের দেশে কি টেন্ডার বলে কিছু নেই। আমি সেই সাংসদের কথা কিছুটা হলেও বিশ্বাস করে সত্য জানতে আগ্রহী।

আমার বক্তব্য কে দোষী কে নির্দোষ সেখানে না। এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে সেদিকে। তারা দোষি কি নির্দোষ তাতে কিছু যায় আসে না, তাদেরকে বিদায় হতে হয়েছে। বৃটেনের তিনস বছরের সংসদের ইতিহাসে স্পিকারকে বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি কেমন স্পিকার যেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তার স্পিকার পদে থাকার যোগ্যতা নেই। তেমনি যোগ্যতা নেই একজনের মন্ত্রীত্ব দখল করে রাখার যার নামে দুর্নীতির কথা ওঠে।

তবে, ওসব কথা এখানে বলবেন না। চৈত্র মাসের হাদিস পৌষ মাসে চলে না। এখানে যারা সংসদের যান তারা জনগনের ভোট নিয়ে যান। জনগন তাদের ক্ষমতা দিয়েছে। তারা কাকে মারবেন, তাকে চাকরি দেবেন, কাকে কাজ দেবেন সেটা তাদের ইচ্ছে। আপনি বলার কে ? আপনি দেখেন নি সবচেয়ে বড় গাড়ির কোম্পানী যখন নিশ্চিত দেউলিয়া ঘোষনার পথে তখন এদেশে অর্ধলক্ষ গাড়ি আসছে। কোন দেশের ক্ষমতা আছে এই অবস্থায় এমন মেরুদন্ড সোজা করে দাড়ায়। দেখুন। দেখে শিখুন দেশ কিভাবে চালাতে হয়।

বৃটেনের সব গোপন খবর ফাস করে দিয়েছে একটিমাত্র পত্রিকা। খবর ফাস এদেশেও হয়। জরুরী শাসনামলে হয়েছিল। প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা ভরে রঙিন ছবিসহ ছাপা হত কে কি করেছেন তার বর্ননা। তখন ছিল জোয়ার। তারপর যখন ভাটা শুরু হল, খবরের ধরনও পাল্টে গেল। বৃত্ত ঘুরে আবার আগের অবস্থানে।

আগের স্পিকারের, সাংসদের দুর্নীতির তদন্ত হবে। নিশ্চয়ই হবে। সেটাই জরুরী। এরসাথে বর্তমানকে মেলাবেন না। বর্তমান সাংসদ যা করছেন সেটা তার অধিকার। তার সাথে বেআদপি করলে তিনি তো পেটাবেনই। যদি বিচার করতেই হয়, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা করবেন। আমরা বৃটিশ নই যে কথা উঠলেই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। ষড়যন্ত্র করে এসব কথা প্রচার করা হয়ে থাকতে পারে।

0 comments:

 

Browse