মানুষ সব প্রাণী থেকে আলাদা। কি কি কারনে আলাদা তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে সময় ক্ষেপন করতে পারেন। মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। তবে একটা কথা স্বিকার করতেই হবে, মানুষ যা করতে পারে তা অন্য বণ্য প্রাণী পারে না।
পার্থক্যটা হয়ত লক্ষ করেছেন এরই মধ্যে। মানুষ মানুষ আর অন্যরা বণ্য। এটাই মূল পার্থক্য। মানুষের সভ্যতা আছে, আছে প্রযুক্তি। অন্যদের কোন কোন কাজকে বড়জোর মানুষের মত বলে উল্লেখ করা যায়। তাইবলে মানুষের প্রতিদ্বন্দি কখনোই নয়, মানুষের চেয়ে উন্নত কখনোই নয়, কোন বিষয়েই নয় (কমলাকান্ত’র মতকে হিসেবের বাইরে রাখলে)।
কাজেই, যেহেতু বিষয়টির সমাধান হয়েই গেছে, সেহেতু অন্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।
মানুষের সবচেয়ে বড় আবিস্কার কি ?
আবারও মতভেদ, আবারও বিপত্তি। নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন ভাষা। মানুষের উন্নত ভাষা আছে বলেই সে অন্যদের থেকে আলাদা। যুক্তি না মেনে উপায় নেই। অন্য প্রাণীর নিশ্চয়ই উন্নত ভাষা নেই কারন তাদের ভাষা আমরা বুঝি না। এককালে গ্রীকরা যখন বিশ্বজয় করছিল তখন বহু যায়গার মানুষকে তারা বলত বর্বর। কারন তারা বরবর করে কি বলে বোঝা যায় না। বাংলায় বর্বর বলুন আর ইংরেজীতে বার্বারিয়ানই বলুন শব্দটা সব দেশেই স্থায়ী হয়ে গেছে। যার ভাষা বোঝা যায় না সে বর্বর না হয়ে যায় না। আপনি কি যুক্তি দিলেন। এর কোন মানে হয়। আপনে বর্বর।
বোঝা যাচ্ছে যুক্তি দিয়ে সমাধান হবে না। তাহলে প্রযুক্তি দিয়ে চেষ্টা করা যাক। মানুষের সেরা প্রযুক্তি কি ?
পাথরের যুগ, লোহার যুগ, তামার যুগ, ব্রোঞ্জের যুগ এসব বিবেচনা করলে প্রথমেই যা গুরুত্ব পায় তা হচ্ছে অস্ত্র। পাথর ব্যবহার করা হয় অস্ত্র তৈরীতে আর আজকাল ইউরেনিয়ামও ব্যবহার করা হয় অস্ত্র তৈরীতে। অন্য প্রানীরা কখনো সেটা করে না। সেই প্রাচীন কাল থেকে দন্ত এবং নখই তাদের সম্বল। আদিম মানুষরা অসভ্য কারন তারা ঢিল ছুড়ে বড়জোর একজনকে মারতে পারত। একেবারে মোক্ষম না হলে মারার চেয়ে আহত করার সম্ভাবনাই বেশি। আবার নিজের মারা যাওয়ার কিংবা আহত হওয়ারও সমুহ সম্ভাবনা ছিল। আমরা সভ্য কারন আমরা ঘরে বলেই লক্ষ মানুষ মারতে পারি। নিজের জীবনের ওপর বিন্দুমাত্র ঝুকি না নিয়ে। যে জাতি যত সভ্য সেই জাতির অস্ত্র তত শক্তিশালি। তারা তত বেশি নিরাপদ। সভ্য মানুষের হিসেবও তাই। সভ্য লোকের বাড়িতে দারোয়ান থাকে, কুকুর থাকে, পকেটে পিস্তল থাকে। আবার টাকাও থাকে। টাকা থাকলে এসবের সবগুলোই পাওয়া যায়। অসভ্য লোকের এগুলো থাকে না।
আচ্ছা মারামারির বিষয়টা থাক। অন্যদিকে দেখা যাক। এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী কি। সবচেয়ে প্রভাবশালী কি ? সকলের সেরা কে ?
এক কথায়, মোবাইল ফোন।
এর ব্যবহারে কোন সীমারেখা নেই। ধনী-দরীদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বড়-ছোট, জ্ঞানী-মুর্খ ভেদাভেদ নেই। সব মানুষকে এক কাতারে আনার মত এমন যাদুকরী ফল অন্য কিছু দেখাতে পারেনি। প্রিয়জনের সাথে কথা বলতে চান, অপছন্দের কাউকে দুর থেকে গালাগালি করতে চান, নাম্বার টিপুন। যদি গালাগালি করার মত কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে ভাবনা নেই। চিকিৎসকরা বলেন মনের রাগ মনে পুষে রাখলে নিজের ক্ষতি হয়। আপনাকে নিজের ক্ষতি করতে হবে না। চোখ বন্ধ করে টিপে যান, যেখানে লাগে। তারপর ইচ্ছেমত মনের ঝাল ঝাড়ুন। যদি ভাগ্যগুলে মহিলা কন্ঠ শুনতে পান তাহলে তো কথাই নেই। ইচ্ছে পুরন করুন।
গান শুনতে চান। নিজেই ডাউনলোড করুন নয়ত দোকান থেকে ডাউনলোড করে নিন। তারপর পকেটে নিয়ে চলবান বাদ্যযন্ত্র হয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ান। বিনে পয়সায় অন্যকে শোনাতে না চাইলে তারের মাথা কানে গুজে দিন। ভিডিও দেখতে চান। আবার আগের পদ্ধতি। কত যে সুবিধে বলে শেষ করা যায় না। যে কোন যায়গায় বসে ভিডিও দেখা যায়। কেউ বিরক্ত করতে আসছে না। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে ভিডিওর পরিমানও বাড়ছে। পড়ার টেবিলে, ক্লাসে বসে, পথের ধারে, পার্কে, বাথরুমে-টয়লেটে যেখানে খুশি দেখুন। খেলতে চান। আবারও একই প্রক্রিয়া। ডাইনলোড। ইন্টারনেট থেকেই হোক আর দোকান থেকেই হোক।
ইন্টারনেটের কথা যখন উঠেই গেল তখন সেটাই বা বাদ থাকে কেন ? ইমেইল করুন অথবা ব্রাউজ করুন। কোন সমস্যা নেই। পথে চলতে চলতে কাজ করবেন, সময় বাচাবেন। সময় মানেই টাকা। সেই অর্থে টাকা বাচাবেন।
যেখানে অন্য সবাই ফেল তখন মোবাইল ফোন। কোন সীমা নেই।
কি বললেন ? টাকা ?
তাহলে অভিজ্ঞতার কথা শুনাই।
ভদ্রলোক বাসে চেপে ফোন বের করে কানে লাগিয়েছেন। কথা শুরু করেছেন। আর থামার লক্ষন নেই। পথ ৫ মাইলের, জ্যাম তিন ঘন্টার। পুরো তিনঘন্টা কাটিয়ে বাস থেকে নামার সময় ফোনটা পকেটে রাখলেন।
একজন প্রশ্ন না করে পারল না, এতক্ষন যে কথা কইলেন কত টাকা কাটল।
তার উত্তর, ধুর মিয়া। আমারে কি ভুতে ধরছে যে মোবাইল কোম্পানীরে ট্যাকা দিমু। কাম নাই দেইখা কানের কাছে রাইখা কথা কইলাম। মোবাইলে এক ট্যাকাও নাই।
এমন যন্ত্রের ওপর আবার সরকার ট্যাক্স বাড়াতে চায়। তাও যেমন তেমন না, একেবারে ২৫ ভাগ। একি সহ্য হয় ?
0 comments:
Post a Comment