বাগাড়ম্বর

Jun 21, 2009

বাগাড়ম্বরের শুরু শিশুকাল থেকে একদিন আপনার শিশু সন্তানের হাতে আচড়ের দাগ তেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে উত্তরে সে বলল, বাইরে বের হয়েছি আর হালুম করে একটা বাঘ এসে হাজির তখন সোজা মুখের ওপর ঘুসি বাঘের সাথে মারামারি করে এখানে লেগেছে আপনি তখন মহাখুশি আপনার সন্তান বাঘকেও ভয় পায়না তার পিঠ চাপড়ে বললেন, সাবাস বেটা

ব্যাস সেখানেই শুরু তারপর আর থামাথামি নেই যত দিন যায় সেটা তত গতিপ্রাপ্ত হয় নানারকমভাবে গ্রহনযোগ্য করার পদ্ধতি শিখে নেয় নানারকম ব্যাখ্যা, নানারকম কারন অমুক কারনে তমুক হয়নি, নইলে

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে তিনদিকে সব অপরাধী ধরে ফেলতাম, এটা পুলিশের বক্তব্য সেই সব অপরাধীদের মধ্যে পুলিশও পরে কিনা জানা নেই, তবে ধরতে না পারার ওটাই মুল কারন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আগের সরকার হস্তক্ষেপ করে কাজ করতে দেয়নি আমরা উন্নতির জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি বর্তমান সরকার সবরকম সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন অচিরেই আপনারা ফল দেখতে পাবেন

ফল ফলার আগেই যদি গাছ উপড়ে যায়, কিংবা বদল হয় তখন নতুন আরেক পর্ব শুরু নাটকের ভাষায় বলে সিজন পাচ বছরের এক সিজন কখনো কখনো সেটা বাড়তে বা কমতেও পারে

নির্বাচনের আগে শোনা যায় এক ধরনের বাগাড়ম্বর আমরা নদীর ওপর সেতু বানাব, নিচে টানেল বানাব বিনামুল্যে সার দেব, দশ টাকা কেজি চাল খাওয়াব। নির্বাচনের পর শোনা যায় আরেক রকম বাগাড়ম্বর, ঢাকা শহরে উড়ুক্কু রেল বসাব, দোতলা রাস্তা বানাব আকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট পাঠাব, নাম ঠিক করে রেখেছি আমাদের পরিকল্পনায় সব আছে

ঢাকা শহরে পানি সমস্যা ? পানির স্তর নেমে যাচ্ছে হুড়হুড় করে? আপনারা ভাববেন না প্রয়োজনে বঙ্গোপসাগর থেকে পানি এনে খাওয়াব আপনারা ঢাকা চলে আসুন

বিদ্যুতের সমস্যা আর কদিন ঘড়ির কাটা ঘুড়িয়ে দিয়েছি, আর বিদ্যুত সমস্যা থাকবে না আপনারা দিন থাকতে কাজ শেষ করে রাতে শান্তিতে ঘুমান

স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বাগাড়ম্বরের আকার-আকৃতি পরিবর্তিত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যারে এর আকার সর্বোচ্চ। আলবারাদে-ব্লিকস ইরাকের অস্ত্র বের করছে না। তারকাছে রাসায়নিক অস্ত্র, জীবানু অস্ত্র, পারমানবিক অস্ত্র সব আছে। আমাদের কাছে প্রমান আছে। স্যাটেলাইটের ছবি, রেকর্ড করা কথাবার্তা সবকিছু। আমরা তিনদিনে ওসব বের করে ফেলব, এটা হচ্ছে সেই পর্যায়ের বাগাড়ম্বর। সেতুলনায় ব্যক্তি পয্যায়ের বাগাড়ম্বর নিতান্তই তুচ্ছ। আমি একদিন না থাকলে কোম্পানী অচল হয়ে থাকে, এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

বাগাড়ম্বরে শুধূ যে সাধারন মানুষ পটু এমন তো নয় দেশে-বিদেশে মহাপুরুষের অভাব নেই মহাজ্ঞানী মহাজন সেইসব মহাপুরুষ টিভি ক্যামেরার সামনে এসে বলেন, আমি সবসময়ই আশাবাদী আশা ছাড়া কিছু হয় না এই দেশ একদিন অন্য সব দেশকে ছাড়িয়ে যাবে আমি স্পষ্ট সে লক্ষন দেখতে পাচ্ছি কয়েখ বছরের মধ্যে দেশ উন্নয়নশীল থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে। দেশের মানুষের আয় দ্বিগুন-তিনগুন পাবে। কেউ যদি কটাক্ষ করে প্রশ্ন করেন, সেদিন কি আপনি পর্বতের চুড়া থেকে নেমে সাধারন মানুষের পাশে দাড়াবেন ? তাহলে উত্তর শুনতে পান, সেটা আমি সবসময়ই করি সবসময় সব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাই, সবকিছু নিয়ে কথা বলি কাউকে না কাউকে তো ভাবতে হয়, মাথা ঘামাতে হয় শোনেন নি ভানু কি বলে গেছে আমার চোখের সামনে সর্বস্ব চুরি হয়ে যাচ্ছে আর আমি ভাবব না, আপনি ভাববেন ?

তারা ভাবছেন আর বাগাড়ম্বর করছেন সকলেই তার শ্রোতা তারপর কিছুটা আত্বস্থ করে নিজেই ওপথ ধরছেন। কেউ কেউ এটা ওটা বলে বিষয়কে আরো উসকে দেন তবে কথা হচ্ছে, দেশে মানুষের অভাব নেই একশজনে একজন যদি কারো পক্ষ নেন তাহলে এতবড় সংখ্যা হয় যার সমান জনসংখ্যা অনেক দেশে নেই

ফলে এই বাগাড়ম্বর দ্রুত ছড়িয়ে পরে একসময় ছড়িয়ে যায় পুরো সমাজে দলবদ্ধভাবে সবাই ভাবতে থাকে, সত্যিই তো দেশটা তরতর করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ভাবতে গর্ব হয়, এখন দেশেই তৈরী হয় আন্তর্জাতিক মানের গাজি ট্যাংক এই দেশের তুলনা নেই এমন প্রতিভাবান কোথাও জন্মেনা প্রয়োজন শুধু প্রতিভাকে কাজে লাগানো একদিন সেটা হবেই দেখছেন না পৃথিবীজুড়ে কত বাঙালী কাজ করছে। দেশের সবচেয়ে বড় আয় আসছে ওদের কাছ থেকে।

সমস্যা একটাই ওইসব ধনী দেশগুলো ওরা কোনমতে পরের ভাল সহ্য করতে পারে না এই দেশগুলো উন্নত হোক সেটা ওদের ধাতে সয় না প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে দেয় না যতরকমভাবে সম্ভব দমিয়ে রাখে ষড়যন্ত্র আর ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্র করে দেশটা দুশো বছর দখল করে রেখেছিল এখনো স্বভাব পাল্টায়নি

ষড়যন্ত্র ছাড়া কি পারত আমাদের সাথে ?

0 comments:

 

Browse