মোদের গরব মোদের আশা

Jun 11, 2009

এই খালি যাইব ?

একথা পথেঘাটে সবসময় শুনতে পাওয়া যায়। উত্তরে দুরকমের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা সে একনজর চেয়ে দেখতে পারে। দেইখ্যা কি মনে হয় ভাড়া দিতে পারব। মনে তো হয় না। খালি দামাদামি করব।

ফল হচ্ছে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে চেয়ে অন্যদিকে মুখ করে চলে যাওয়া।

তবে উত্তর শোনাও যায়। যদি মনে হয় সত্যিসত্যি পকেটে টাকা আছে, দিতে কার্পণ্য করবে না তখন শোনা যায় উত্তর, কই ?

বিপরীত অবস্থা উল্লেখ না করলে অবিচার হয়। আপনি রিক্সা থেকে নামলেন বাড়ির সামনে। ভাড়া মিটিয়ে দিলেন। আপনার কাজ শেষ হওয়ার আগেই আরেকজন এসে থামল, কই যাইব ?

এবারে আপনার তাচ্ছিল্য দেখানোর পালা। ব্যাটা দেখলি না তর সামনে নামলাম। আবার জিগাস।

আমার বক্তব্য এই ঘটনা সম্পর্কে না। কথোপথন সম্পর্কে। রিক্সাচালকরা কঠোর পরিশ্রম করে। ধর্মে বলেছে, তোমরা কঠোর পরিশ্রম কর। এরা ধর্মের কথা মেনে সমসময় ধর্মপালন করে। এর প্রভাব তাদের কথাবার্তায়, আচরনে পড়তেই পারে। আর মাননীয় যাত্রীসকল, তাদের প্রতিপদে গাটের টাকা গুনতে হয়, তোষামোদ করতে হয়, ভাই-চাচা-মামা-দুলাভাই ডাকতে হয়, তাদের ওপরও প্রভাব পড়তেই পারে। কারো কোন দোষ নেই। দোষ পরিবেশের। দায়ী করতে হলে করবেন-

কাকে জানি না। প্রবাদ আছে ছেলে ভাল মাটির দোষ। তাকে দোষ দিলে অন্তত প্রতিবাদে গালাগালি শুনতে হবে না।

বলছিলাম ভাষার কথা। পরিচিত একজনের এক ছেলে এক মেয়ে। বয়স ৩ আর ৬। একেবারে আদর্শ পরিবার। সেদিন চমকে উঠলাম ওদের কথা শুনে, আমাগো বাড়িত মেহমান আইছে। কইছে এইহানে থাকব। বসেন, মায়ে জিগাইছে আপনে চা খাইবেন ? না কোক খাইবেন ?

আমার চমকে ওঠার কারন তার বক্তব্য না। কারন এরা যার পুত্র-পুত্রী সেই ব্যক্তিকে কখনো এই ভাষা ব্যবহার করতে শুনিনি। গলা নামিয়ে পাশের আরেকজনকে জিজ্ঞেস করতে হল, এরা এভাষায় কথা বলে কেন ? ওর বাবা তো এভাবে কথা বলে না।

উত্তর হল, শিখাইতাছে।

আমার মাথায় ঢুকল না বিষয়টা। শুনেছি সারা পৃথিবীতে শেখানো হয় মানুষ যেন ভাল করে সুন্দর করে কথা বলে। স্কুলে শেখায়, বাড়িতে শেখায়, মিডিয়ায় শেখায়। এমনকি সিনেমা-নাটক-গল্পেও খারাপ ভাষা ব্যবহার করলে সমালোচনা হয়। আর এই ব্যক্তি ইচ্ছে করে শেখাচ্ছেন এইসব-

মনে পড়ল টিভির কথা। নেতা-মন্ত্রী-বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য সবসময় সেখানে শুনতে হয়। খবরের কাগজের সাংবাদিকরা ভাষা সংশোধন করে নেন, টিভি সাংবাদিকরা সেটা করেন না। ফলে একেবারে টাটকা ভাষা শোনা যায়। তারাও গর্ববোধ করেন এই ভাষায় কথা বলে। এক অর্থমন্ত্রী গর্ববোধ করতেন তার এলাকার ভাষা দেশের মানুষকে জানাতে। তার যায়গা যিনি দখল করেছিলেন তিনিও শুনিয়ে গেছেন, এটা করতে লাগবে। চ্যাষ্টা করতেছি, দ্যাখতাছেন না, এই কথাগুলো অহরহ শোনা যায়। আজকাল টিভি নাটকেও প্রতিযোগীতা চলছে কে কত নিখুত ভাবে এই ভাষা প্রয়োগ করতে পারে। কোন কোন নির্মাতা নাকি আগে থেকে ডায়ালগ লেখেন না। যারা কথা বলবেন তাদের ওপরই ছেড়ে দেন এসবের।

প্রশ্ন জাগল, এরা শিখছে কার কাছ থেকে। পিতার কাছ থেকে নাকি যারা সমাজের নেতৃত্বে রয়েছেন সেই অভিভাবকের কাছ থেকে। এর কারনটা আসলে কি ?

উত্তর পেতে খুব দেরী হল না। পুরো এলাকা লোডসেডিংএ। বাড়ি ফিরে অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করেছি। না দেখেই বোঝা গেল আরেক ব্যক্তি নামছেন। অবয়ব দেখে ধারনা করতে অসুবিধে হল না ব্যক্তিটি কে। আমার ওপরতলায় থাকেন। দুখানা গাড়ির মালিক। প্রায়ই দারোয়ানের সাথে সিগারেট ভাগাভাগি করতে দেখি। কখনো আলাপ হয়নি।

হঠাৎ করেই, ভদ্রলোকের কি মনে হল কে জানে, দাড়িয়ে গেলেন। প্রশ্ন করলেন, কে ?

কে প্রশ্নের একটাই উত্তর হতে পারে, আমি। সে উত্তরে কি কিছু যায় আসে ? প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যায়। ফল কথা চালাচালি। আমি দুরত্ব রেখে চলতে পছন্দ করি।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, আপনে ক্যাডা ?

সাথেসাথে ফল ফলল। ভদ্রলোক অন্ধকারে কোথাও বিন্দুমাত্র হোচট না খেয়ে তরতর করে নেমে গেলেন নিচের দিকে।

এই তবে ভাষার কৃতিত্ব। আমরি বাংলা ভাষা।

0 comments:

 

Browse