মশার কয়েলের দাম বাড়াবেন না

Jun 12, 2009

দুধরনের মিছিল দেখেই আমি অভ্যস্থ। উন্নয়নের বাজেটের জন্য আনন্দ মিছিল এবং গরীব মারার বাজেটের কারনে প্রতিবাদ মিছিল। দুদলই আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। ব্যানার তৈরীর জন্য সময় দিতে হয়। অন্তত দুদিন-তিনদিন আগে থেকে কাজ শুরু করতে হয়। ব্যানারে কি লেখা হবে, শ্লোগানে কি বলা হবে, মিছিলে কি পরিমান লোক থাকবে, মিছিল কোথা দিয়ে কোথায় যাবে, ছবি কোন এঙ্গেল থেকে তোলা হবে, কোন কাগজে ছাপা হবে, কোন চ্যানেলে দেখানো হবে- সবকিছু হিসেব করতে হয়। ছোটখাট বিষয় না।

বাজেটে গাড়ির দাম বাড়লে আমার কিছু যায় আসে না। ফ্রিজ-এসির দাম বাড়লেও না। এমনকি খবরের কাগজ, বিস্কুট-চানাচুর, মশার কয়েল, টুথব্রাস কিংবা চুলের ক্রিম কিংবা কলপের দাম বাড়লেও আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কাজেই আমার উচিত আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়া। তবে সমস্যা হচ্ছে, এই মিছিলে কারা যোগ দেবেন সেটা আগেই নির্ধারিত।

বাকি থাকে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেয়া। অন্তত একটু ভুল হয়েই গেছে আগের লিষ্ট তৈরী করতে। আমার অন্যকিছুতে আপত্তি না থাকলেও মশার কয়েলের দাম বাড়ায় আপত্তি থাকা উচিত। অন্তত সময় থাকতে। এবং আমার ধারনা যারা মিছিলে যোগ দিয়েছেন তারাও লক্ষ্য করলে যোগ না দিয়ে বিয়োগ দেবেন।

বিষয়টা হচ্ছে, বাড়িভাড়া। বর্তমানে কোন বাড়ির বাড়িভাড়া কি দেখে ঠিক করা হয়, সেটা কত হওয়া উচিত কেউ জানে না। বাড়ির মালিক চাইবেন আপনার সামর্থ্য থাকলে দেবেন। মাসশেষে আপনার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়া হলেও হতে পারে। অর্থাৎ আপনি কত টাকা দিলেন সেটা আপনি জানবেন আর বাড়ির মালিক জানবেন। সরকারের সেটা জানা প্রয়োজন নেই। শুনেছি এবিষয়ে সরকারের একটা মন্ত্রনালয় রয়েছে, তবে শোনা কথায় বিশ্বাস করতে নেই।

কথা সেখানেই। সরকার যদি ভাড়ার ওপর ১৫ ভাগ কর নিতে চান তাহলে সরকারকে জানতে হবে ভাড়া কত। সরকারকে যে হিসেব দেয়া হয়েছে সেই হিসেবের কথা বলছি না, বলছি ভাড়াটিয়াকে কত দিতে হয়। আর সেটা করতে গেলে প্রশ্ন উঠবে কোন বাড়ির ভাড়া কত হওয়া উচিত। ১০ হাজার টাকার বাড়িতে কতটুকু যায়গা থাকা উচিত, আলো-বাতাস কতটা থাকা উচিত, বিদ্যুৎ-পানি কতক্ষন থাকা উচিত, যাতায়াতের রাস্তা কতটুকু চলনসই হওয়া উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি। তালিকাকে আর লম্বা না করেই বক্তব্য শেষ করি, যেখানে ৬ তলার অনুমতি নিয়ে ৯ তলা বাড়ি হয়, সেই বাড়ি ভেঙে পড়ার পর জানা যায় নক্সার সাথে তার কোন মিল নেই তখন একটামাত্র ব্যাখ্যাই আমরা শুনতে পাই, এসব দেখার মত জনবল নেই। সত্যিই তাই। এতবড় একটা দেশ কি এই কজন মানুষ দিয়ে চালানো যায় ? বিদেশ থেকে কিছু আমদানী করলে হত।

সে যাকগে। কথা হচ্ছে কোন বাড়ি কিভাবে, কত তলা তৈরী হল দেখার মানুষ যখন নেই তখন বাড়ির ভাড়া কত সেটা জানার লোকবল আসবে কোথা থেকে ?

আমার আশংকা সেখানেই। এই আনন্দ মিছিলের এবং প্রতিবাদ মিছিলের যারা আয়োজক তাদের একজনও ভাড়াটিয়া নন, একাধিক বাড়ির মালিক। এবং বাড়িঅলা। এবং মিছিলে যারা শ্লোগান দিচ্ছেন মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে তারা, সবাই না হলেও অধিকাংশই ভাড়াটিয়া। দিনবদলের সাথেসাথে এদের ভাগ্য পাল্টায়। অবস্থান পাল্টায়। আমি যেহেতু কোন মিছিলেই নেই সেহেতু আমার ভাগ্য নির্ধারিত।

এখনই আয়ের চারভাগের তিনভাগ দিতে হয় বাড়িভাড়া। এরসাথে আরো পনের ভাগ যোগ করলে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হবে ফুটপাতে।

সেকারনেই আমার এই বক্তব্য। মাননীয় অর্থমন্ত্রী, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সাংসদগন, অন্তত মশার কয়েলের দাম বাড়াবেন না।

0 comments:

 

Browse