তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে

Jun 20, 2009

প্রচন্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ করেই বৃষ্টি। গ্রাম্য ভাষায় বলে কুকুর খেদানো বৃষ্টি। তবে কুকুর যখন নেই তখন মানুষকেই খেদাতে হয়। মুহুর্তে হুলস্থুল শুরু হয়ে গেল। যে যেদিকে পারে ছুটেছে। কারসাথে ধাক্কা লাগল, কে পায়ের নিচে পড়ল তাতে কিছু যায় বাসে না। নিজের জীবন বাচানো বলে কথা।

একটা দাবড়ানি দিয়ে যে বৃষ্টি থামবে সেটা আর হল না। ঝরঝর করে ঝরতেই থাকল। ফল সবসময় যা হয় তাই। রাস্তার পাশের দোকানগুলি ভরে গেল মানুষে। এমন অবস্থায় সবসময়ই জ্ঞানী ব্যক্তিদের দেখা পাওয়া যায়। কোনমতে এক যায়গায় মাথা গুজে আমি সেই জ্ঞান আহরনের চেষ্টা করি। এর চেয়ে বড় পাঠশালা নেই।

বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না। একজনের বক্তব্য শুনলাম, এই অসময়ে বৃষ্টিতে দ্যাশের কত যে ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গরীব মাইনষের। মানুষগুলান কত কষ্ট কইরা রাস্তায় দোকান দিছে তাগো ব্যবসার বারোটা বাজল।

সাথেসাথেই বিপরীত বক্তব্য, বৃষ্টি হইল আল্লার ইচ্ছা। যা ভাল মনে করছে, করছে। আল্লার সমালোচনা করা গুনাহগারী।

প্রথম ব্যক্তি কিছু একটা বলল উত্তরে। কিন্তু সেটা শোনার সুযোগ হল না। একটা রিক্সা এসে থামল, এক ভদ্রলোক সেখান থেকে নেমে এসে যোগ দিলেন ভীড়ে, আর-

আর একদল ছেকে ধরল রিক্সাচালককে।

এই যাবে ?

ওই খালি যাইব ?

এই সামনে।

এই-যে, বাড়ায়া দিমুনে-

রিক্সাচালক বৃষ্টির মধ্যেই দাড়িয়ে শুনল এর ওর কথা। তবে কোন গন্তব্য তার পছন্দ হল না। আমার পরিচিত সব যায়গার নাম ততক্ষনে বলা হয়ে গেছে। কোন যায়গা তার পছন্দ ধরতে পারছি না। একজন ভীড়ের মধ্যে থেকে সেটাই বলে ফেলল, তুমি কই যাইবা তাই কও। দেহি সেইখানে যাওনের লোক পাই কিনা।

রিক্সাচালক বোকা না মোটেই। মনে হয় পড়াশোনা করেছে, মোটামুটি শিক্ষিত। সে বলল, আমার পছন্দমত গেছে তো চলব না। যার যেখানে দরকার সে সেখানেই যাইব।

তবে সেই যায়গা যে কোথায় তা বোধগম্য হল না। একসময় সে খালি রিক্সা নিয়েই চলে গেল।

এরপর এই খেলা চলতে থাকল। রিক্সা, ট্যাক্সি, সিএনজি, মিশুক যতযা আছে সামনে এদিক ওদিক ঘুরছে কিংবা থামছে আর দুর্যোগে আটকা পড়া মানুষ হাকডাক করছে।

একজনকেও রাজী হতে দেখলাম না।

শুনেছি রাস্তায় ট্যাক্সি, অটোরিক্সা ইত্যাদির লাইসেন্স দেয়ার সর্তই হচ্ছে যাত্রীর যেখানে প্রয়োজন সেখানে যেতে হবে। রিক্সা অবশ্য এই আওতায় পড়ে না। অনেক ট্যাক্সি গায়ে লেখা, যাত্রীর প্রয়োজনে যে কোন ন্যুনতম দুরতে যাইতে বাধ্য। মাঝেমাঝে কথা উঠলে পুলিশ-সরকার বলে দেয় এই নিয়ম মানা বাধ্যতামুলক। তবে বেশিরভাগ লেখাই উঠে গেছে। ফলে মানুষও ভুলে গেছে ওসব। এখন যা দেখা যায় তা হচ্ছে ট্যাক্সি, সিএনজি এগুলোর পিছনে খুব সুন্দর করে লেখা, পুকরু তারপর কয়েকটা ফোন নাম্বার অর্থাৎ আপনার সমস্যা হলে পুকরুতে ফোন করবেন আর সাথেসাথে তারা এসে সমাধান দিয়ে দেবে ভুলেও আপনার সামনে দাড়িয়ে যে হাত নাড়ছে আর বাশি বাজাচ্ছে তার কাছে যাবেন না এসব তার দায়িত্বের মধ্যে পরে না জানেন না তারা কত কষ্ট করে ডিউটি করে সামান্য বেতনে খেয়ে না খেয়ে চলে

ট্যাক্সির শহর নামে পরিচিত নিউইয়র্কে নাকি চালকরা (অধিকাংশই নাকি আবার বাঙালী) সকালের খাবার খায় দুপুর পেরিয়ে গেলে সকালে রাস্তায় বের হওয়ার সাথেসাথে শুরু হয় ছোটাছুটি হাত দেখালে থামতে হয় ওরা কোন কথা না বলে সোজা দরজা খুলে উঠে বসে তারপর বলে অমুক যায়গায় যাও কোন প্রশ্ন করার উপায় নেই অমুক যায়গায় যাব না তো দুরের কথা, চিনি না বললেও লাইসেন্স বাতিল ওরাও তর্ক করবে না সোজা পুলিশকে জানাবে পুলিশও তর্ক করে না একবারও বলে না যাবে না তো রাস্তায় চলার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে কেন ? একবারও বলে না, যায়গা চেন না তবে ট্যাক্সি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে কেন ? পুরো শহরের ম্যাপ মুখস্ত করে তবে লাইসেন্স পেতে হয় তার ফল এই। দুপুরে যখন সবাই ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেয় তখন খাবারের সুযোগ মেলে

বাপরে কি অসভ্য দেশ

ট্যাক্সি চালায় বলে কি ওরা মানুষ না দোকানে বসে এককাপ চা, সিগারেটে দুটা টান, দুএকজনের সাথে খোসগল্প কিছুই করতে দেবে না আবার ওরাই কিনা মানুষের স্বাধীনতার কথা বলে!

দেখে যান স্বাধীনতা কাকে বলে আমার রাস্তা, আমার ট্যাক্সি, আমার সিএনজি, আমার রিক্সা আমার ইচ্ছেয় চলবে যায়গা পছন্দ হলে যাব, টাকা পছন্দ হলে যাব, স্বাস্থ্য চেহারা পছন্দ হলে যাব তুমি বাধা দেবার কেডা ? ট্যাকার কথা কও ? ওই ট্যাকা আমার ---- তলে থাকে গরম দেহায়েন না পারলে হাইট্যা যান

তবে হাটা যায় না ফুটপাতের লীজ নিয়েছে দোকান, কর্মসংস্থানের কারনে রাস্তার অর্ধেক লীজ নিয়ে গাড়ি মালিক পার্কিংএর কারনে আর বাকি যায়গা ?

সে যায়গা গাড়ির জন্যই গাড়ির আর দেখছেন কি ? দেখতে চান তো অপেক্ষা করেন গাড়ি তো অহনো আসার অপেক্ষায় চিটাগাং পোর্ট সামাল দিতে পারে নাই, মংলা চালু হইছে পারলে একখান কিন্যা লন নয়ত ঘরে বইস্যা আঙুল চোষেন নিজেরে কি জমিদার মনে করছেন রাস্তায় দাড়ায়া আঙুল উঠাইবেন আর দৌড় দিতে হইব

আজকাল কেউ আর রিক্সা থামানোর জন্য হাত তুলে বুড়ো আঙুল দেখায় না এই খালি, এই খালি বলেও ডাকে না খুব ভাল করেই জানে দেশের উন্নতির সাথে সাথে সকলের ষ্ট্যাটাস বেড়েছে সকলের কাজের মর্যাদা দিতে হয় তবে না সভ্য সমাজ

আজকাল ডাকতে হয় অন্যভাবে এইযে ভাই যাবেন ? এই যে মামা যাবেন ? যাবেন নাকি চাচা জান ?

আমি মামা, চাচা, দুলাভাই, শ্বশুরমশাই সবরকম ডাকই শুনেছি এতে নতুনত্ব নেই নতুননত্ব দেখলাম একজনের কাছে সেটাই বক্তব্য।

বৃষ্টি হঠাৎ করেই থেমে গেছে। অনেকেই রওনা দিয়েছে। রিক্সাচালকও মনে করছে ভুলটা হয়েই গেল। বেশি সবুরে ম্যাওয়া পচে গেল। এখন বোধহয় আর প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায় না। এমন সময়,

পড়নে নক্সাকরা ফতুয়া, চোখে চশমা, গালভর্তি দাড়ি, মাথায় নক্সাকরা টুপি কাধে ঝুলছে একটা ব্যাগ ইনি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-বিজ্ঞানী-অধ্যাপক কিছু একটা না হয়ে যান না আমার সামনে দিয়ে হেটে গিয়ে থেমে থাকা রিক্সাটার কাছে দাড়ালেন রিক্সাচালক তখন যাত্রীর সিটে গুটি মেরে বসে।

শুনতে পেলাম তার কাব্যিক স্বর, তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে-

0 comments:

 

Browse