ভেজালের জাল

Jun 16, 2009

একসময় চানাচুর খেতে খুব পছন্দ করতাম। একবার চানাচুর খাওয়ার পরই পেটটা কেমন কেমন করতে থাকল। মনেমনে যাচাই করতে চেষ্টা করলোম, খারাপ কিছু তো খাইনি। রীতিমত দোকান থেকে কেনা প্যাকেট করা মচমচে চানাচুর। গায়ে হোমমেড লেখা কাগজ লাগানো। কোন সমাধান না পেয়ে পরামর্শের জন্য অন্যের স্মরনাপন্ন হতে হল।

ও, আপনি জানেন না চানাচুর কি দিয়ে ভাজে। ওতে পোড়া মোবিল দেয়। মোবিল দিয়ে চানাচুর সবসময় মচমচে থাকে। নষ্ট হয়না।

পেটের আর দোষ কি। পোড়া মোবিল যেখানে গাড়ি হজম করতে পারে না।

আমার চানাচুর খাওয়ার সেখানেই ইতি। কথাটা মনে পড়ল কারন সরকার ঘোষনা দিয়েছেন খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করার জন্য সারাদেশে ভেজাল বিরোধী মামলার আদালত গঠন করা হবে দেশের মানুষ এবার ভেজাল থেকে রক্ষা পাবেনই পাবেন আমি আবারও চানাচুর খাওয়ার সুযোগ পাব। কোন দেশে যেন খাবারের দোকানের নামে মামলা করলে লক্ষ ডলার পাওয়া যায়। ওই ব্যাটার দোকানের খাবার খেয়ে মোটা হয়েছি, ব্যাটা বলেনি কেন ওটা খেলে মোটা হব। দিন ক্ষতিপুরন।

ভেজালনিরোধ পদ্ধতি মনেমনে যাচাই করতে চেষ্টা করলাম।

ধরুন আপনি খাবার কিনলেন দোকান থেকে। খাওয়ার পর যদি ভেজাল মনে হয় (মনে হওয়া ছাড়া যাচাই করার অন্য পন্থা নেই) তাহলে সেখানে গিয়ে মামলা ঠুকে দেবেন ব্যাটা শাস্তি না পেয়ে যাবে কোথায় ?

মামলা ঠুকে দিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরবেন তারপর মাঝেমাঝে খোজ নেবেন মামলার কতদুর কি হল পকেটের টাকা যায় যাক দেশ তো ভেজাল মুক্ত হবে দেশের সেবা করার মত ভাল কাজ আর কি আছে ? দেখেন নি এই কাজ করে একজন মহাপুরুষ হয়ে গেছেন প্রায়ই টিভিতে মুখ দেখা যায়, খবরের কাগজে ছবি ছাপা হয় তিনি কতজনকে কতটাকা জরিমানা করলেন। একজনকে তিনবার চারবার পর্যন্ত জরিমানা করলেন। সরকারের কোষাগার টাকায় ভরে ফেললেন এমন কৃতিত্ব কজন দেখাতে পারে ?

প্রশ্ন করতে পারেন শেষফল কি। এখন নতুন পদ্ধতি প্রয়োজন হল কেন ?

না। শেষফল কি সেপ্রশ্ন করবেন না খাদ্যে ভেজাল কমেছে না বেড়েছে সেকথা বলবেন না ওটা বিবেচনা করা তার দায়িত্বে ছিল না সরকারেরও ছিল না। এখনও নেই। তার এবং সরকারের মনে হয়েছে অমুক খাবারে ফরমালিন দেয়া হয়েছে কাজেই জরিমানা দিতে হবে আবারও ফরমালিন আবারও জরিমানা আবারও সরকারের ঘরে টাকা আয় বাড়তেই থাকে এসব বন্ধ হলে কি আয় হয় ?

আর আদালতের বিষয় যদি বলেন, জানেন আদালত কতজনের কর্মসংস্থান করে আদালতের সামনে ফুটপাত দখল করে বসে থাকা লোকজন থেকে শুরু করে রায় দেয়া বিচারক পর্যন্ত সকলের কর্মসংস্থান হয় তো ওই আদালত থেকেই আদালত বাড়া মানেই তো মানুষের নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হওয়া দেখেন না এক দিনের মামলা এক যুগ চলে আরে যত দিন গড়াবে তত টাকা গড়াবে এই গড়গড়ানি থামানোর কোন অর্থ আছে ? আমেরিকা ইউরোপের মানুষের টাকার অভাব নেই তাই তারা ওপথে যায় না বিচারক নাকি দুজনকে ডেকে একসাথে বসিয়ে বলে মামলা করলে এই হবে, না করলে এই হবে তোমরা মিটমাট করে ফেল বাপু নইলে দুজনেই পস্তাবে

এখানে এই কথা বললে কি চলবে ? এখানে বিচারককে কি ডলার দেয় ? ওই সামান্য বেতনে কত হিসেব করে চলতে হয় তা জানেন ? সেজন্যই এই ব্যবস্থা মামলার টাকা নাকি ভুতে যোগায় তা ভূতের টাকা বিচারকের পকেটে গেলে ক্ষতি কি ? নতুন তারিখ, নতুন হাজিরা, আরো টাকা। আদালতই সঠিক যায়গা ভেজাল সমস্যা মিটানোর

কি বলছেন ? তারা ভেজাল চিনবে কিভাবে ? প্রমান করবে কিভাবে ? সেই মহামানব জরিমানা করেছেন ভেজাল আছে অনুমান করে ? আদালতও কি তাই করবে ?

বড় বিপদে ফেললেন কেন আদালত যদি অনুমান করে শাস্তি দেয় তাতে সমস্যা কোথায় ? আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন করা যায় না সেটা জানেন ? আর ভেজাল যদি না থাকে তাহলে বিজ্ঞাপন ব্যবসার অবস্থা কি হবে ভেবে দেখেছেন। একশ ভাগ খাটি কথাটা ভুলে যেতে হবে, একমাত্র নির্ভরযোগ্য জাতিয় শব্দ শোনা যাবে না।

যদি এসব মেনে নিতে চান, অন্য দেশ যা করে তা যদি করতে চান তাহলে আদালত প্রয়োজন নেই প্রথমে চেয়ার-টেবিলে কাগজ কলম নিয়ে বসুন, কি করতে চান ঠিক করুন। আইন করুন, যার কাছে ভেজাল পাওয়া যাবে তাকে নিশ্চিত জেলে যেতে হবে ওসব জরিমানা-টরিমানা দিয়ে কাজ কবে না তারপর বিজ্ঞান গবেষনাগার না কি যেন আছে, বড় বড় বিজ্ঞানীরা মোটা মোটা চশমা লাগিয়ে এসিরূমে বসে থাকে, তাদের বলুন সাথেসাথে ফরমালিন চেনার ব্যবস্থা করে দিতে লিটমাস না কি যেন নাম, ছোট্ট একটুকরো কাগজ দিয়ে নাকি সাথেসাথে কি কি সব বোঝা যায়, তেমনই একটা সহজ উপায় বাতলে দিতে বলুন না পারলে আউট করে দিন ওই অকম্মাগুলোর দরকার কি ?

0 comments:

 

Browse