বখশিস

Jun 15, 2009

এক ভদ্রলোক ষ্টেশনে গেছেন টিকিট কিনতে। দামাদামি সব যায়গায় চলে এখানে চলবে না কেন। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করলেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। শত চেষ্টা করেও টিকিটের দাম কমানো যায় না। ওই লোক সরকারী চাকুরে। তোমার কিনতে ইচ্ছে কেন নয়ত যাও বাপু। আমার বিক্রি নিয়ে এত মাথাব্যথা নেই। বিক্রি হোক বা না হোক মাসগেলে আমার বেতন যা তাই থাকবে।

কাজ না হওয়ায় চাহিদা মোতাবেক পুরো টাকা দিয়েই কিনতে হল। টাকা দেয়ার সময় বললেন, দাম তো কমালেন না, একটুকরো সুপারি দেন।

সুপারি কোথায় পাব ?

ওইযে খুট করে কাটলেন।

এটা হল বখশিসের আবদার

এখন খুট করে কেটে টিকিট বেচতে হয় না, তবে ওই যে বখশিস সেটা খুব ভাল জিনিষ। আমি দেয়ার কথা বলছি না বলছি প্রাপ্তির কথা। বছর ঘুরে যখন উৎসবের সময় হয় আর আপনার সামনে দারোয়ান-পিওন-ড্রাইভার-কাজের লোক-কাজের মেয়ে এসে লাইন দিয়ে দাড়ায় কখন আপনার আপত্তি করার পথ থাকে না। সারাবছর যাদের গাফিলতি- চুরি-বাটপারির জন্য প্রকাশ্যে গালাগালি করেছেন তাদেরও মনেমনে গালাগালি করে হাতে বখশিস দিতে হয়। তবে সেটা আপনার পক্ষের কথা। যাদের দিয়েছেন তারা অত্যন্ত খুশি। বখশিসের পরিমান যত বেশি খুশীর পরিমান তত বেশি। আর আপনি যদি আগ বাড়িয়ে বখশিস প্রাপ্তদের সংখ্যা বাড়াতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। একগোছা পাচশ টাকার নোট নিয়ে পাড়ার একজনকে ডেকে হাতে তুলে দেবেন। বলবেন, ল, বখশিস। সকলে মিল্যা আনন্দফুর্তি করিস। এটা আমার শোনা কথা। একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম নেতার সাথে মাস্তানের সম্পর্ক তৈরী হয় কিভাবে তার উত্তরে শুনেছিলাম এই পদ্ধতির কথা। এই পদ্ধতিতে মুহুর্তে জনদরদী হওয়া যায়।

সে যাকগে। বলছিলাম বখশিসের উপকারের কথা। একসময় রিক্সাচালক যাত্রীর হাত থেকে টাকা নিয়ে সসংকোচে বলত খুশী হয়ে দুটাকা বাড়ায়া দেন। এতে আপনার দয়ার উদ্রেক হত আর আপনি আরো দুটাকা বাড়িয়ে দিতেন। তবে আজকাল টাকার মুল্য কমে গেছে। দুটাকা আর কটাকা। এখন আপনাকেই আগ বাড়িয়ে বলতে হয়, ওই মিয়া, যাইন নি। বাড়ায়া দিমুনে। এটা হল আগ বাড়িয়ে দেয়া বখশিস।

কিংবা আপনি আপনার অফিসের পিয়নকে পাঠালেন একটা জিনিষ কিনতে। খুব ভাল করেই জানেন সে টাকা মারবে। পই পই করে বলে দিলেন, ভাওচার ছাড়া জিনিষ কেনা চলবে না।

তবে ভাওচার এল। আর দেখেই আপনি বুঝে গেলেন বখশিসের পদ্ধতি। একশ টাকা বাড়ায়া লেইখেন।

দোকানদারও এই পদ্ধতি জানে। না জেনে উপায় কি, সারাদিন একাজই করতে হয়। তিনিও আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, কত লেখমু-

লেখালেখির বিষয়টা সবচেয়ে বেশি চলে অফিসেই। আর যদি সরকারি অফিস হয় তাহলে তো কথাই নেই। সব হিসাব কাগজে থাকতে হবে। এই বছরের বাজেট কত ? টেন্ডার ছাড়া মাসে দুলাখ খরচ করা যায়। ভাওচার লেখেন তো, এক লাখ নিরাবব্বুই হাজার ট্যাকা। কিসের ভাওচার ? এই ব্যবসা শিখছেন এতদিনে ? লেখেন হার্ডডিস্ক ক্লিন করা, এন্টিভাইরাস এইসব। আরে যা দেখা যায় না এমন কিছু। এই তথ্য সরকারের এক মন্ত্রনালয় এবং কম্পিউটারের দোকানের হিসেব থেকে পাওয়া। প্রতিমাসে একলক্ষ নিরানব্বুই হাজার।

তা তারা করবেই বা কি। প্রতিযোগীতায় প্রতিযোগীতা করেই টিকে থাকতে হয়। নেতা-মন্ত্রীরা যখন এসব করছেন তখন এটুকু না করলে কি চলে ? তারাও তো অন্য দেশে গিয়ে একথাই বলছেন। ডলার-পাউন্ড-ইউরো আনছেন। সংসদে সবচেয়ে বেশি হাততালি কখন হয় জানেন। হয় দুবার, যখন ঘোষনা দেয়া হয় কোন দেশ কত টাকা দেবে, আর যখন ঘোষনা হয় সেই টাকায় সাসংদের ভাতা, সুযোগসুবিধা কত বাড়বে। সেখানে সরকারী-বেসরকারী, দলীয়-বিরোধী বলে কিচ্ছু নেই।

বখশিস বলে কথা।

0 comments:

 

Browse