এক হাজারে ট্যারা

Jun 7, 2009

এক হাজারে এক কিলো, এক হাজার কিলোতে এক মেগা, এক হাজার মেগাতে এক গিগা, এক হাজার গিগাতে এক ট্যারা – না, ট্যারা হতে বহু দেরি। সবে মেগা থেকে গিগাতে পৌছেছেন। তবে একদিন পৌছবেন নিশ্চয়ই।

আমি সিরিয়ালের কথা বলছি। টিভি সিরিয়াল। সকাল-দুপুর-বিকেল-সন্ধ্যা-রাত-মধ্যরাত-ভোররাত যখনই টিভি খুলবেন দেখা পাবেন। মিনিট দশেক বিজ্ঞাপন দেখানোর পর শুরু হবে। আগের পর্বগুলিতে কি দেখানো হয়েছে সেগুলি আবারো দেখবেন। তারপর আবার বিজ্ঞাপন। মিনিট তিন-চার হয়ত দেখলেন নাটকের বর্তমান, তারপর বিজ্ঞাপন। বাথরুম থেকে ঘুরে এলেন, তখনো বিজ্ঞাপন শেষ হয়নি। রাগ করে আবারও গেলেন। এসে দেখলেন নাটক শেষ হয়ে বিজ্ঞাপন শুরু হয়েছে। জিদ চেপে গেল, নাটক দেখবেনই দেখবেন। দেখতে থাকলেন এই নাটকের পর কোন নাটক দেখানো হবে, তারপর কোন নাটক, তারপরও নাটক। তারপর নাটক। তারপর-

কতক্ষনে আপনি ট্যারা হন সেটা যাচাই করার এরচেয়ে ভাল পদ্ধতি নেই।

দর্শকদের একেকজনের মত একেকরকম। কেউ কেউ চব্বিশ ঘন্টাই নাটক দেখেন এবং নাটকের চরিত্র হয়ে যান। নাটকের ভাষায় কথা বলেন, নাটকের পোষাক পড়েন, নাটকের মত সঙ্গি খোজেন। কেউ আবার নাটকে নাম শুনলেই নাক কোচকান। তবে কেউই সন্তুষ্ঠ নন। সবার মুখে এককথা, ভাল নাটক হচ্ছে না। হাসির নাটক হচ্ছে না। আমরা হাসতে চাই। পাগলের চেয়ে কে বেশি হাসাতে পারে ? নাটকে পাগল দেখান। আমাদের হাসান।

যারা নাটক তৈরী করছেন তাদের যদি জিজ্ঞেস করেন

তাদেরও ভাগ আছে। একদলের কাছে শুনবেন, কিভাবে করব ?

তাদের ব্যাখ্যা, আপনি পকেটের টাকা খরচ করে নাটক করবেন তারপর ধর্না দেবেন টিভি চ্যানেলে, আর তারা দেখিয়ে দেবেন কত চালে কত ভাত। দুলাখ টাকা খরচ করেছেন ? কে বলেছে খরচ করতে ? ত্রিশ হাজার পাবেন। পারলে দিয়ে যান।

নির্মাতাকে ভাবতে হয়, যতটুকু ফেরত পাওয়া যায় ততটুকুই লাভ। এরপর নাককান ধরব।

সেই ত্রিশ হাজার কতদিনে, কতমাসে, কত বছরে পাওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। ফল যা হবার তাই হচ্ছে। তারা দুয়েকবার চেষ্টা করে বিদেয় নেন। তার যায়গা পুরন করেন আরেকজন। এভাবে একের পর এক আসেন আর দিদেয় নিতে থাকেন। টিভি কোম্পানীগুলির বিনামুল্যের নাটকের অভাব হয়না।

আর যারা এই পর্ব পার হয়ে টিকে থাকেন তাদের নাটক রিসিয়ালে পরিনত হয়। বলা হয় বিশ মিনিট, দেখানো হয় দশ মিনিট। এতে পর্ব সংখ্যা বাড়ে। খরচ কমানো বলে কথা। অভিনেতার পেছনে বিছানার চাদর ঝুলিয়ে রাখলে এক বাড়ি, আরেক চাদর ঝুলিয়ে আরেক বাড়ি। তাতে কি ? বিজ্ঞাপনদাতারা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না। কে অভিনয় করবে এটুকু বলে দিয়েই তারা সন্তুষ্ট। নাটক লেখার আগেই তারা কাজ সেরে রাখেন। একটা নামের লিষ্ট হাতে ধরিয়ে দেন। ষ্টার ছাড়া নাটক জমে না। দর্শক দেখে না।

এদের নাটকে দর্শকের অভাব হয় না। তাদের সিরিয়াল ক্রমে মেগা সিরিয়াল, গেগাসিরিয়াল, টেরা সিরিয়াল হয়ে যায়। একমাত্র গলা টিপে ধরায় যদি সেটা থামে। তাদের বক্তব্য, এটাই আয়ের সময়। ঝড় ফুরালে আম পড়ে না। এখন আমার সময় আমি আম কুড়াব, তুই বেটা কে-রে? নাটকের বুঝিস কিছু ? দুরে থাক।

ভাগ্যিস সত্যজিৎ, মৃনালরা এইসময় এদেশে জন্মাননি।

আরেক ধরনের নির্মাতা রয়েছেন। নির্মাতা না বলে নির্মিতব্য নির্মাতা বলাই ভাল। তারা ভবিষ্যতের জন্য ভাবেন। তাদের বক্তব্য, টিভি চ্যানেলের হাতে যতদিন নাটক বন্দী থাকবে ততদিন কিছু হবে না। পাইরেসি বন্ধ করে সিডি/ডিভিডিতে নাটক বিক্রির সুযোগ করে দিলে এর সমাধান হতে পারে। কেউ যদি ভাবেন তিন লাখ /ছয় লাখ টাকা খরচ করে ভাল কিছু করবেন, চেষ্টা করতেই পারেন। টাকার জন্য টিভি চ্যানেলের দয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না। তার নাটক ভাল হলে দর্শক কিনবে, ভাল না হলে কিনবে না। হিসেব খুবই সহজ। নির্মাতার মাথায় থাকতে হবে, যাকিছু বানিয়ে বাজারে ছাড়লেই লোকে টাকা খরচ করে কিনবে না। বিশ্বে অনেক দেশে ছবি তৈরী হচ্ছে শুধুমাত্র ডিভিডির বাজারকে টার্গেট করে। হলিউডেও। এখানে সেটা হতে দিতে সমস্যা কোথায় ? এতে লাভ নির্মাতা দর্শক দুজনেরই।

তবে তাদের কথা কাজে পরিণত হয়না। তারাও ধোয়ার গোল্লা পাকানোর বাইরে কিছু করেন না।

আপনার সামনে একটাই পথ। রিমোট হাতে নিয়ে টিপতে থাকা। মেগা থেকে গেগা, গেগা থেকে ট্যারা-

0 comments:

 

Browse