সেটা ছিল এককাল। খবর দিলে ডাক্তার ব্যাগ নিয়ে রোগীর বাড়ি যেত। আজকাল ডাক্তার কারো বাড়ি যান না। রোগ হলে আপনিই ছোটেন ডাক্তারখানায়। ডাক্তারখানা মানে হাসপাতাল আরকি। আজকাল কোন ডাক্তার একা কাজ করেন না। নানা রঙের বোতল থেকে মিকচার বানান না। ওগুলো ফ্যাক্টরী বানিয়ে দেয়। কোন ওষুধে কি কাজ হবে জানিয়ে দেয়। হাসপাতালের কাজ সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে একসাথে করা। সব বিশেষজ্ঞ একসাথে বসে একই ছাদের তলায় রোগী দেখেন। একজন নখ বিশেষজ্ঞ, একজন আঙুল, একজন তালু, একজন কব্জি, আরেকজন হাত। একজন দেখবেন তারপর আরেকজনের কাছে পাঠাবেন। তিনি পাঠাবেন তার পরের জনের কাছে। সাতদিন ধরে চৌদ্দ যায়গায় যতরকম টেষ্ট করা সম্ভব করলেন। তারপর শুনলেন, ভয় পাবার কিছু নেই। ওঠা আপনিই ধীরে ধীরে সেরে যাবে।
না সারলে ?
না সারলে সাতদিন পর আসবেন। আবার পরীক্ষা করা হবে।
আমার এতগুলান টাকা ?
আরে পরীক্ষা না করলে কি রোগ জানা যায়। রোগ বলে কথা, জীবন বলে কথা। রোগকে কখনো অবহেলা করতে নাই। জানেন একজনের সামান্য দাতব্যথা থেকে কি হয়েছিল -
আপনি আবারও শুনলেন সেই বিখ্যাত কাহিনী।
যারা বিদেশী সংস্থায় কাজ করেন তারা দেশেই বিদেশীর মর্যাদা পানে। কেউ কেউ বেতন পান ডলারের হিসেবে। দেশে বিদেশী প্রতিষ্ঠানেরও অভাব নেই। তেমনই এক সৌভাগ্যবানের কথা। গাড়ি দুর্ঘটনায় পা ভাঙল তার। সাথেসাথে ঢাকায় নিয়ে নামকরা এক হাসপাতালে ভর্তি, সাথেসাথে নানারকম পরীক্ষা, এক্সরে। একসময় এক্সরে রিপোর্ট দেয়া হল বিদেশী বড় কর্মকর্তাকে। তিনি দেখলেন সেটা বাম পায়ের, আসলে ভেঙেছে ডান পা।
সাথেসাথে প্রতিক্রিয়া। হেলিকপ্টার এসে রোগীকে নিয়ে গেল সিংগাপুরে। তাদের কর্মী বলে কথা।
তবে তাদের কর্মী আর কয়জনই বা। বাকীদের ভাগ্যে আছে পরীক্ষার খরচ, তারপর কিছু বাচলে কটা ট্যাবলেট। সেটাই বা কম ঝক্কি না-কি। ১০ ট্যাবলেটের এন্টাসিডের স্ট্রিপের দাম এক দোকানে ১০ টাকা, আরেক দোকানে ২০ আরেক দোকানে ৩০। তারপরও সেটা আটার গুলি কিনা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই।
দেশে ডাক্তারের সংখ্যা কত হাজারে কত তা নিয়ে বিতর্ক তৈরী করতেই পারেন। অন্তত হাতে সময় যখন অফুরন্ত তখন যেকোন কিছূ নিয়েই বিতর্ক করতে করতে পারেন। তবে কথা হচ্ছে, দেশে, অন্তত ঢাকা শহরে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তারের ঘাটতি নেই। বানির্জিক এলাকা বলুন আর আবাসিক এলাকাই বলুন আর শিল্প এলাকাই বলুন, যে পরিমান হাসপাতাল জন্মেছে তাতে অনায়াসে হাসপাতাল এলাকা তৈরী করা সম্ভব। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু এলাকা হাসপাতাল এলাকা হিসেবে পরিচিতিলাভ করেছে। রাস্তায় গাড়ির লাইন, ভেতরে রোগীর লাইন। বর্তমানের গার্মেন্টস শিল্প, আগামীর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প’র মত দ্রুতই প্রসার লাভ করছে হাসপাতাল শিল্প। এমন কোন প্রযুক্তি নেই যার অভাববোধ করতে হবে। কথা একটাই, এটা বড় হাসপাতাল, বড়জোর মাঝারি হাসপাতালের কথা। ছোটদের কথা আলাদা।
কোন কোন নিন্দুক বলে সরকার নাকি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করে না। তা নিন্দুকের কাজইতো নিন্দে করা। তারা কোনকিছু ভালচোখে দেখে না। চশমার বাকা কাচের মধ্যে দিয়ে বাকাভাবে দেখে। নইলে অন্তত খরচের কথা উঠত না। একবার এয়ারপোর্ট গিয়ে দেখুন না চিকিৎসাভ্রমনের লাইনটা কতবড়। এর খরচ কি আপনি দেন ? সরকারই তো দেয়। সবাইকে দেয়া সম্ভব না বলেই তো এখানে বিদেশী মানের হাসপাতাল করা হচ্ছে। এটা গরীব দেশ। সব যায়গায় হিসেব করে চলতে হয়।
কথা হচ্ছে, হাসপাতাল বলুন আর যাই বলুন, মুল কথা হচ্ছে ডাক্তার আর রোগী। এদেশে ডাক্তাররা মোটেই ভাল নেই। জানেন আমেরিকায় একজন ডাক্তার কত কামায় ? ইউরোপে ?
একসময় মুখে মুখে ফিরত, হয় ডাক্তার নয় ইঞ্জিনিয়ার। এদুটোর একটা হতেই হবে। এখন কেউ সেকথা বলে না। এথেকেই প্রমানিত হয় ডাক্তাররা সুবিধেয় নেই। কদিন আইটি নিয়ে কথা উঠেছিল, সেটাও মিইয়ে গেছে। ব্যবসা শিক্ষাও মাথা তুলে দাড়াতে পারেনি। তাদের সাথে তুলনা করলে ডাক্তাররা অনেক পিছিয়ে। বাপের টাকা খরচ করে ডাক্তার হয়ে এখন হাপিত্যেস করতে হচ্ছে। বড় হাসপাতালে সুযোগ পেলে তবু নামে কাটিয়ে নেয়া যায়। নয়ত দালাল ধরতে হয়।
হাসপাতাল ব্যবসা এখনো লাভজনক হয়ে ওঠেনি। কোনভাবে যদি গতি বাড়ানো যেত। হাজার হাজার লোক এসে লাইন ধরে দাড়াত।
এখনো মানুষ সচেতন হয়নি। এন্টাসিড-প্যারাসিটামল নিজেই কিনে খায়। নিতান্ত মরার দশা না হলে কেউ ছোট হাসপাতালে যায় না। ডাক্তারের হাতেও তাই অফুরন্ত সময়।
পরিচিত একজনের একেবারে সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা। এমার্জেন্সি রুগী নিয়ে গেছেন হাসপাতালে। তার শিশু সন্তান কানের মধ্যে কাগজ ঢুকিয়েছে। ওটা বের করতে হবে। টাকা দিয়ে টিকেট কেটে বসলেন। ডাক তার আর আসে না। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করায় শুনলেন ডাক্তার নেই।
ডাক্তারসাব নামাজ পড়তে গ্যাছেন। বসেন। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আইসা পড়ব।
বসেই আছি একঘন্টা হল আরো একঘন্টা লাগবে ? কিসের নামাজ পড়তে একঘন্টা লাগে ?
উনি পরহেজগার মানুষ, জামাত ছাড়া নামাজ পড়েন না।
তাহলে টাকা ফেরত দ্যান। আমি অন্য যায়গায় যাই।
যাইতে চান যান। টাকা ফেরত দেওয়া হয় না।
0 comments:
Post a Comment