আমি ঠিক - সব ঠিক I’m OK, You’re OK

Sep 2, 2009

এক বনে লম্বোদর এব দীর্ঘকর্ণ নামে দুই শেয়াল বাস করত। তাদের মধ্যে খুব মিল। কখনো ঝগড়াঝাটি, মারামারি, গালাগালি, খোচাখুচি, গুতোগুতি নেই। একেবারে বৈচিত্রহীন বিরক্তিকর জীবন। একদিন লম্বোদরকে বাধ্য হয়ে দীর্ঘকর্ণকে বলতে হল, ভাই ধীর্ঘকর্ণ। মানুষের সমাজে মানুষ অবিরাম একে অন্যের সাথে গুতোগুতি করে, ল্যাং মারে, গালাগালি করে, মারামারি-খুনাখুনি পর্যন্ত করে। আমরা কখনো তার স্বাদ পেলাম না। এসো দুজনে ঝগড়া করি।

দীর্ঘকর্ণ বলল, ঠিক আছে।

লম্বোদর বলল, চল তাহলে খুজে বের করি কি নিয়ে ঝগড়া করা যায়।

দুজনে হাটতে হাটতে একটা পাথরের কাছে উপস্থিত হল। লম্বোদর বলল, আমরা এই পাথর নিয়ে ঝগড়া করব। আমি বলব এই পাথর আমার, তুমি বলবে তোমার। বেশ ঝগড়া হবে।

দীর্ঘকর্ণ বলল, ঠিক আছে।

লম্বোদর গলার স্বর উচু করে বলল, এই পাথর আমার।

দীর্ঘকর্ণ বলল, ঠিক আছে।

লম্বোদর বলল, ভাই তোমার সাথে ঝগড়া করার সাধ্য কারো নেই।

একেবারে সহজ সরল উপদেশ। যে যা বলে উত্তরে বলবেন ঠিক আছে। আপনার সাথে ঝগড়া করবে কে ? সাধ্য কার ? মোহনদাস গান্ধী কখনো কাউকে আঘাত করেননি। সর্বতোভাবে বাধা দিয়েছেন। একটা বাড়ি দিলে আরো পিঠ পেতে দিয়েছে আরো বাড়ি দেবার সুযোগ করে দিতে। তবে তিনি নিজের দাবি আদায়ে ঠিক ছিলেন। আমাকে মেরে ফেললে ফেলতে পারো, আমি আমার দাবী ছাড়ব না। সেকারনেই মারামারি, খুনাখুনি দেখতে হয়েছে তাকে। আপনি সেটাও করবেন না। দীর্ঘকর্ণের মত শুধুই বলবেন, ঠিক আছে। ব্যস, সব সমস্যা সমাধান।

অন্য কিছু করবেন না। অন্য কিছু ভাববেন না। যদি ভাবতে শুরু করেন অমুকে গালাগালি করেছে সে খারাপ তাহলে আপনি আদর্শচ্যুত হলেন। তমুকে ঠকিয়েছে কাজেই সে খারাপ একথা ভাবলে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করা হয়। সকলকে একই ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। কখনো ভুলেও কাউকে অবজ্ঞা করবেন না। সবকিছু ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন।

যিশু উত্তর দিলেন, তাকে ক্ষমা করে দিন। প্রশ্ন করা হল, যদি আবারও অপরাধ করে তাহলে। যিশু বললেন, আবারও ক্ষমা করবেন। প্রশ্ন করা হল, কতবার ক্ষমা করা হবে ? যিশুর উত্তর যতবার প্রয়োজন ততবার।

কাজেই ক্ষমা করতে শিখুন। কারো ওপর রাগ করা, বিরক্ত হওয়া নিজের অক্ষমতা। ক্ষমা করতে না শেখা। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন মানসিক রোগ। নিজে ঠিক থাকুন, দেখবেন জগত ঠিক আছে। নইলে চারিদেকে সবকিছু অসহ্য মনে হবে। নরক মনে হবে। বোঝার সুযোগ পাবেন না এজন্য আপনিই দায়ী। আপনি কার্ণেগির কথা মানছেন না। হ্যারিসের কথা মানছেন না। তারা আই অ্যাম ওকে, ইউ আর ওকে, একথা বলে কোটি কোটি ডলার আয় করেছেন। কোটি কোটি মানুষ জীবনে শান্তি পেয়েছে তাদের দেখানো পথে চলে।

এসব বড় গোছের মানুষের কথা বিশ্বাস না হয় নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কথা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন। একদিন রাতের বেলা রাস্তায় দুজন মানুষের ঝগড়া শুনে তিনি বাইরে বের হলেন। একটু পরই ফিরে এলেন। তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, কি হল ?

তিনি বললেন, ঝগড়া থামিয়ে এলাম।

স্ত্রী জিজ্ঞেস করল, তোমার গায়ের চাদরটা কোথায় গেল ?

তিনি বললেন, ওরা ওটা নিয়েই ঝগড়া করছিল। আমি যেতেই ওটা টান দিয়ে নিয়ে দুজনে মিলেমিশে চলে গেল।

ছিনতাইকারী মোবাইল ফোন চেয়েছে, মানিব্যাগ চেয়েছে। দিয়ে দিন। জিজ্ঞেস করুন, প্যান্টটা কি খুলে দেব ? যদি আপনার কাজে লাগে।

দেখবেন কি জাদুকরী ফল। ছিনতাইকারী পর্যন্ত খুশী হয়ে আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে যাবে।

1 comments:

James Rubel said...

ক্ষমা সত্যই একটি বড় গুণ। এটা আয়ত্ব করতে পারলে জীনণ অনেক সহজ হয়ে যায়।

 

Browse