ছেলে কোন বিষয়ে ফেল করেছে শুনে বাবা ধমকে উঠলেন, কানের কাছে সারাদিন ইংরেজি গান বাজাস আর ইংরেজিতে ফেল করিস!
অবাক হবার কিছু নেই। ইংরেজি প্রীতি এবং ইংরেজি ভীতি দুটোই আমাদের সমান পরিচিত। ইংরেজি শব্দ জানা থাকলে কেউ বাংলা বলেন না, আর পরীক্ষার সবচেয়ে বেশি ফেল ইংরেজিতে।
কাজেই একজন কম্পিউটার শিক্ষার্থী যতই মেটাল-র্যাপ-হিপহপের ভক্ত হোক, প্রয়োজনে বাংলা বই খুজবে এটাই স্বাভাবিক। আর সমস্যা সেখানেই।
কম্পিউটারের বাংলা বইয়ের অভাব নেই। শতশত। কিভাবে চালু করবেন থেকে শুরু করে কিভাবে ডাউনলোড করবেন, কিভাবে গেম খেলবেন থেকে শুরু করে কিভাবে প্রোগ্রামিং শিখে বিলিওনিয়ার হবে কোন কিছুই বাদ নেই। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এইসব বই। দেশে লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হচ্ছে। কাজেই ধরে নেয়া যায় লক্ষ লক্ষ প্রোগ্রামারও তৈরী হচ্ছে। এই প্রোগ্রামার তৈরীর দায়িত্ব শুধু লেখকই নেননি, সিডি নির্মাতাও নিয়েছেন।
সিডি নির্মাতার বিষয়টি দুকথা শেষ করি। ভিডিও দেখে এনিমেটর, ভিডিও এডিটর, প্রোগ্রামার হওয়া যায় না। এর ওপর কথা বলার কোন সুযোগ নেই। তারপরও এর প্রয়োজনিয়তা থেকে যায়। এথেকে কোন প্রোগ্রাম বা কাজ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পাওয়া যায় খুব সহজে, যদি সেটা নির্ভুল হয়। যিনি প্রোগ্রামার হতে আগ্রহি নন তিনিও এই জ্ঞানটুকু লাভ করতে পারেন। এর বাইরে প্রোগ্রামিং শেখানোর ক্ষমতা মাল্টিমিডিয়া-ভিডিওর নেই।
বইয়ের বিষয়টি আলাদা। প্রোগ্রামার বই ব্যবহার করেন রেফারেন্স হিসেবে। কিংবা ডিকশনারীর মত। যখন প্রয়োজন তখন দেখে নেন। এটা পেশাদারী প্রোগ্রামারের কথা। শেষ লক্ষ্য এটাই। যদি এজন্য কেউ বই কিনতে চান তাহলে জানিয়ে রাখি, কোন বই কেনারই প্রয়োজন নেই। কষ্ট করে প্রোগ্রামের হেল্প মেনুতে যান। সেখানে টিউটোরিয়াল থেকে কমান্ড রেফারেন্স সবই দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি না কাজ না হয় ইন্টারনেটে সার্চ করুন। বহু ব্যক্তি, বহু প্রতিষ্ঠান আপনাদের সাহায্য করার জন্য বসে রয়েছে। এমনকি নির্দিষ্ট সমস্যায় পরে সেটা জানালে বহু মানুষ এগিয়ে এসে সাহায্য করতেও রাজি। এটুকু ইংরেজি শিখতে যদি ভয় পান তাহলে দুরে থাকাই ভাল।
যারা শিক্ষার্থী তারা আরেক ধরনের বই প্রয়োজন মনে করেন যা ধাপে ধাপে প্রোগ্রামিং শেখায় (অথবা এনিমেশন, অথবা ডিজাইন)। এই বইয়ের বিকল্প নেই। সাধারনত এই বইগুলি যারা লেখেন তারা নিজেরা শিক্ষক। বহু বছর ধরে অন্যদের শিখিয়ে একদিকে যেমন সেই প্রোগ্রামের নাড়ি নক্ষত্র জানেন। কেউ কেউ নিজেই সেই প্রোগ্রাম তৈরীর সাথে জড়িত প্রোগ্রামার। অন্যদিকে শেখাকে শেখাতে শিক্ষার্থীর মনস্তত্ব বোঝার যোগ্যতাও লাভ করেছেন। দুটি বিষয়কে একসাথে করে এমনভাবে বই লেখেন যা পড়ে শিক্ষার্থী নিজেই একা একা শিখে নিতে পারেন। যদি এধরনের বই হাতের কাছে থাকে একবার খুলে লেখকের পরিচিতি দেখে নিন। আমি ইংরেজি বইয়ের কথা বলছি।
যদি হয় বাংলা বই-
কিছু বই দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, একজন লেখক পঞ্চাশটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে বই লেখার যোগ্য হলে তিনি নিজ মেধায় বিল গেটসকে ছাড়িয়ে যেতেন। সেটা না হয়ে তাকে হয়েছে বই বিক্রেতা। তার পরিচিতি তিনি কতগুলি বইয়ের লেখক সেটাই। বইয়ের সংখ্যা যত বেশি তিনি তত বড় লেখক।
লেখকদের লেখক হওয়ার পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। কেউ ইংরেজি থেকে বাংলায় তরজমা করতে পারেন সেটাই একমাত্র যোগ্যতা। বিষয়টি যদি গল্পের বই হত তাহলে এতে কোন সমস্যা ছিল না। কারিগরী বিষয় বলেই সমস্যা। সেই বিষয়ে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকায় অনায়াসে ইট সিমেন্ট দিয়ে শততলা বিল্ডিং বানানোর কথা প্রচার করে যান। টেরও পাননা বাংলা পদ্ধতিতে কি ভয়ংকর হাতুড়ে ডাক্তার তৈরী হচ্ছে।
আরেক ধরনের লেখক বই লেখেন অভিজ্ঞতা থেকে। দশ বছর, বিশ বছর কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছি কাজেই আমি সবই জানি। বই লিখতেই পারি। তাদের সম্পর্কে বলতে হয়, পঞ্চাশ বছর গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে গাড়ি চালানো যায়, বিমানচালক হওয়া যায় না।
শতশত বই লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হওয়ার ফল কি সেটা দেখা যাচ্ছে। সফটঅয়্যার রপ্তানী করে বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করব, অথচ গত দুদশকে কি কাজ করেছি তার কোন উদাহরন নেই। সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে যিনি পড়ান তিনি জানেন না বর্তমান প্রযুক্তি কি। লক্ষ করেন না যে মেনফ্রেমের কথা তারা মাস জুড়ে পড়ান বর্তমানের মোবাইল ফোন দক্ষতায় তাকে ছাড়িয়ে যায়। আভ্যন্তরীন প্রযুক্তিতে একের সাথে অন্যের তুলনা চলে না। বিষয়টি মার্কোনির হাতে বর্তমানের একটা রেডিও তুলে দিয়ে বলার মত, এটা রেডিও, তুমি আবিস্কার করেছ। দেখত ভেতরে কি আছে ?
আর বিলি------অন ডলারের আয়ের কথা যারা বলেন তারা একবারও একটা কাজের উদাহরন দেখিয়ে বলেন না অমুক কাজের করলে তমুক ডলার আয় হয়। অমুক কাজ তমুকের মত কোম্পানীর কাছে পাওয়া যায়। অমুক কাজের জন্য তমুক যোগ্যতা প্রয়োজন হয়। অমুক কাজ তমুক পদ্ধতিতে করতে হয়। এই যে উদাহরন, অমুকে এই যোগ্যতা নিয়ে অতদিনে অমুকভাবে এটা করেছে।
তারা দার্শনিক মানুষ। সংক্ষেপে বলেন। আর যারা সেই কথা শুনে ঝাপিয়ে কাজে পড়েন তারা সামনে যা পান তাকেই পেয়েছি বলে ধরে ফেলেন। তারপর একসময় বলতে শুরু করেন, এই দেশে থেকে কিছু হবে না। এরচেয়ে অন্যদেশে রাস্তা পরিস্কার করা ভাল।
0 comments:
Post a Comment