রেডিও, সর্বদা গোলমাল করতেই রেডি-ও। বলেছিলেন শিব্রাম।
এখন রেডিওর চল নেই। সেই কাজ করতে টেলিভিশন ভিষনভাবে ব্যস্ত। স্যাটেলাইটের কল্যানে দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা। সম্ভবত একমাত্র লোডসেডিং তাতে বিরতি দেয়। আর যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে চালু থাকে ইউপিএস/আইপিএস এর কল্যানে। কিংবা জেনারেটর। চিনের কল্যানে টিভি পানির চেয়ে সস্তা। এক বোতল পানি বিশ টাকা, ওয়াসার বিল মাসে আটশ, রঙিন টিভি ৪ হাজার। টিভি কিনবেন একবার পানি কিনবেন প্রতিদিন। সরকার জানিয়েছে খাবার পানি আর অন্য কাজের পানির পৃথক লাইন বসাবে। পার্থক্য আরো বাড়বে।
আমি টিভি দেখি না। কোন কারনে কাছাকাছি টিভি চালু থাকলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখি। তবে তাতে শেষরক্ষা হয় না। কান ঘুরানো যায় না। এসে কানে প্রবেশ করে। যদি রাতের বেলা হয় তাহলে তো কথাই নেই। অন্য শব্দ যত কমতে থাকে তত বেশি করে শব্দ আসতে থাকে। কখনো কখনো ভাবি যারা সারারাত টিভি দেখে তারা নিশ্চয়ই নিশাচর। সারাদিন ঘুমায়, সারারাত টিভি দেখে। নয়ত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টিভি দেখে। অন্তত শব্দ শোনে। টিভি এদের ঘুমপাড়ানি মাসিপিসির কাজ করে। একদিন হাউমাউ শব্দ শুনে তটস্থ হয়ে রইলাম। কেউ মারা গেলে এমন শব্দ শুনেছি। কিছুক্ষন পর একজন জানাল টিভিতে জমজমাট নাটক হচ্ছিল। আরেকদিন তেমনই শব্দ শুনে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষন পর মসজিদের মাইকে একজনের মৃত্যুসংবাদ প্রচার করা হল। আমাকে একেবারে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে এসব। কখন হাসি, কখন কান্না, কোনটা নাটক, কোনটা প্রতিবেশির গলার আওয়াজ বুঝে উঠতে পারি না। ঘুমের মধ্যেই অনেক মানুষের কান্নার আওয়াজ শুনে জেগে উঠি। বাস্তবতা বুঝে উঠতে অনেকক্ষন কেটে যায়। তারপর জানতে পারি এটা নাটক। টিভিতে নয়ত কোন বাড়িতে।
আর যদি উপলক্ষ্য থাকে তাহলে তো কথাই নেই। একে নাচুনে বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি-
খবরের কাগজে প্রকাশ, বিটিভিতে ঈদের নাটক জমা পরেছে শতখানেক। সাথে টেলিফিল্ম (নাটকের সাথে পার্থক্য কোথায় জানি না) যোগ করলে সেঞ্চুরি পার। স্যাটেলাইট টিভির সামর্থ্য নিশ্চয়ই আরো বেশি। বিটিভির লোকজনের অন্তত কিছু বিধিনিষেধ মানতেই হয়, তাদের সে বালাই নেই। সব মিলিয়ে নাটকের সংখ্যা হাজার ছাড়াবে নিশ্চয়ই। এই শিল্পের সাথে জড়িত হাজার হাজার, নাকি লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে এই নাটক করেই। শতপর্ব, হাজার পর্বের নাটক। হাজার পর্বের নাটক বানাতে যোগ্যতা লাগে। সত্যিই, যার যোগ্যতা আছে তিনি নাটক বানান। যার নেই তিনি বানান ডকুমেন্টারী। যদি সরকারি কাজ হয় তাহলে তো কথাই নেই। অমুক নেতা, তমুক মন্ত্রীকে ধরে কাজ বাগানোটাই মুল কথা। তারপর ভিডিও করে জমা দিলেই হল। বিয়ের ভিডিও করে এমন কাউকে ভাড়া করলেই চলে যায়। এরচেয়ে সহজ কাজ হয় না। যদিও মৃনাল সেন বলেছেন ডকুমেন্টারী সবচেয়ে উচু মানের শিল্প। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, হিষ্টরী চ্যানেল এসব বানিয়েই কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করছে।
সে তাদের হিসেব আলাদা। তারা নিশ্চয়ই পাগল। এখানে নাটকই সবকিছু। নাটক জীবনের কথা বলে। বর্তমানের কথা বলে। মানুষের কথা বলে। মানুষ কিভাবে চলে, কিভাবে বলে শেখা যায়। কি হবে অতীত ঘেটে। বনে বাদারে ঘুরে।
রীতিমত বুদ্ধিজীবী পর্যায়ের একজন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকা দেখে বলেছিলেন, ও দিয়ে কি হবে ? আমার টিভিতেই দেখা যায়।
আর সেটাই বা দেখে কে নাটক থাকতে। সবাই তো আর পাগল না।
0 comments:
Post a Comment