অলৌকিক কিছু চাই Waiting for miracle

Aug 30, 2009

প্রাচীনকালে এথেন্সের পথে একজন অদ্ভুত ব্যক্তিকে ঘুরতে দেখা যেত। সাথে একটা কুকুর। কুকুরের গলায় ঝুলানো জ্বলন্ত হারিকেন। লোকে জিজ্ঞেস করত, দিনের বেলা হারিকেন কেন ? তার উত্তর, আমি মানুষ খুজছি। কোন মানুষ আমার চোখে পড়ে না।

হারিকেন দিয়ে খোজা প্রবাদের শুরু হয়ত এখানেই। কিন্তু যিনি খুজছেন তার পরিচয় কি ? কোন সমাজে তিনি মানুষ খুজে পান না ? সক্রেটিস, প্লেটো, এরিষ্টটলের সমাজে মানুষ নেই এই দাবী কে করতে পারেন ?

তার নাম ডায়োজিনিস। এবং তারপক্ষেই সম্ভব এমন কথা বলা। তিনি কারো ধার ধারেন না। অমুক জিনিষ আমার প্রয়োজন একথা ভাবেন না। বরং একেবারে বিপরীতভাবে চিন্তা করেন। অমুক জিনিষ-, ওটা আমার না হলেও চলবে।

বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার, এরিষ্টলের ছাত্র তার কথা শুনে দেখতে গিয়েছিলেন তাকে। গরম কাপড়কেও অপ্রয়োজনীয় মনে করে শীতের সকালে রোদ পোয়াচ্ছিলেন তিনি। আলেকজান্ডার সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন, আমি আলেকজান্ডার। এই দেশের রাজা। বলুন আমি আপনার জন্য কি করতে পারি।

তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনি আমার রোদ আড়াল করে দাড়িয়েছেন। ওখান থেকে সরে দাড়াতে পারেন।

এটাই তার দাবী। রোদ দেয়ার ক্ষমতা রাজার নেই, সেটা থেকে বঞ্চিত করার অধিকারও তার নেই। রাজার কাছে তিনি এটাই প্রত্যাসা করেন।

খুব বেশি চিন্তা না করেও অনুমান করা যায় বর্তমানে কি হতে পারত। চাহিদার তালিকার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে এই ঔদ্ধত্বের ফল কি হতে পারত কল্পনা করা যায়। তার ক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। রাজা তার বক্তব্য বুঝেছিলেন। তারপরও-

হ্যা, তারপরও তিনি সমাজে মানুষ দেখতে পেতেন না। মানুষ দেখার জন্য দিনের বেলা হারিকেন হাতে ঘুরতেন।

আজ থেকে দুশো বছরের বেশি আগে যখন ইংরেজরা এদেশ শাসন করত তখন তারা ব্যবসা, অর্থ উপার্জন, অত্যাচার ইত্যাদির পাশাপাশি কিছু ভাল কাজ করে গেছে। একটি জাতিকে দেখিয়েছে কিভাবে সমাজ চালাতে করতে হয়। পড়ালেখা করতে হয়, নিয়ম মানতে হয়। এজন্য ভাবতে হয়। পরিকল্পনা করতে হয়।

তাদের সেই পরিকল্পনার এক নমুনা ছিল প্রতিটি জেলায় মানুষের চরিত্র সম্পর্কে খোজ নেয়া। তারপর সেগুলিকে একসাথে করে সমাজ সম্পর্কে ধারনা পাওয়া।

একসাথে করার পর সমাজের যে চিত্র পাওয়া গেল তা ভয়াবহ। মানুষ অসৎ, ফাকিবাজ, প্রতিহিংসা পরায়ন, অকৃতজ্ঞ, লোভি, ঠকবাজ, হঠকারী, জাল-জালিয়াতিতে অভ্যস্থ, মিথ্যাবাদী, স্বার্থপর, ঘূষ নেয়া, আদালতে মিথ্যে সাক্ষি দেয়া, নিজের লাভের জন্য পরের ক্ষতি করা, পরের ক্ষতিতে আনন্দলাভ করা, পরের সম্পত্তি দখল করা, কাজে ফাকি দেয়া, মুখে কথার তুবড়ি ছুটানো এগুলি বিশেষনের বিশাল তালিকার অংশবিশেষ। পুরো তালিকা জানা হয়ত প্রয়োজন নেই। কারো নিতান্ত আগ্রহ থাকলে চার্লস গ্রান্টের সেই প্রামান্য দলিল দেখে নিতে পারেন।

বক্তব্য হচ্ছে দুশো বছর আগে সমাজের যে পরিচিতি পাওয়া গিয়েছিল তার থেকে বর্তমানের পরিবর্তন কতটা ? রিপোর্টের লক্ষনীয় বিষয় সেখানে কোন ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ করা হয়েছে চারিত্রিক বৈশিষ্টের কথা যা স্থায়ী। যা সহজে বদলানো যায় না। বদলাতে হলে যুগ যুগ ধরে সাধনা করতে হয়।

গ্রান্টের সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই সমাজে রামমোহন রায়ের মত ব্যক্তির উপস্থিতি অলৌকিক ঘটনা। ডায়োজিনিস যদি এযুগে বাস করতেন তিনি নিশ্চয়ই হারিকেন হাতে পথে পথে ঘুরতেন না। কারন তিনি বুঝে যেতেন হারিকেনের মলিন আলোয় মানুষ খুজে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সেজন্য অলৌকিক কিছু চাই।

0 comments:

 

Browse