বিবি গোলামের বাক্স

Jul 1, 2011
একসময় নাম ছিল সাহেব বিবি গোলামের বাক্স। ধারাবহিকভাবে উপস্থিত হতেন সাহেব, তারপর বিবি তারপর গোলামগন। সাহেব যখন সাহেবত্ব হারালেন তখন পরিনত হল বিবি গোলামের বাক্সে। এই বিবি নয়ত ওই বিবি, এই গোলাম গন নয়ত ওই গোলামগন। সাথে একই গোলামগন। চিড়িয়াখানা সম্পর্কে সেই কথাটা মনে আছে কি। সেখানে নানারঙের বাঘ আসে, লম্ফঝম্প করে, একসময় বিদায় হয়। খাচা খাচাই থাকে। বিবি-গোলামের বাক্সও ঠিক তেমনি। বিবি বদল হয়, গোলাম বদল হয়, বাক্স বাক্সই থাকে।
অন্য কোন ব্ক্স যদি প্রতিদ্বন্দি হয় তাহলে সেটা বন্ধ করতে হয়। সেটাও হয়েছে। একটা বাক্স প্রতিদ্বন্দিতা করেছিল কিছুদিন। সেটা বন্ধ হয়েছে এক বিবির আমলে। অনেকে আশা করেছিলেন বিবি বদল হয়ে হয়ত আবারও বাক্স খুলবে। সেটা হয়নি। তারও ভয়, যদি শেষমেশ মুল বাক্সের প্রতিদ্বন্দিতা শুরু করে। তারচেয়ে বাবা বন্ধই থাকো। দুর থেকে দেখো। বিবিসি তাদের জড়িপে বলেছে ওই বাক্স সবচেয়ে জনপ্রিয়। ওর তুলনা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, মুল বাক্সের মত যোগ্য গোলাম কি সবখানে থাকে ?
দুরের জানালা দিয়ে দেখা বাক্সগুলো খুব একটা গোলামী করার সুযোগ পায় না। তাদের নিজে আয় করতে হয়। ভাল খেলা না দেখালে লোকে পয়সা দেয় না। কাজেই তাদের রীতিমত ছোটাছুটি করে, ঘাম ঝরিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ঠ করতে হয়। কোথায় কাদা, কোথায় গর্ত খুজে খুজে সেসব যায়গায় যেতে হয়।
এটা হচ্ছে দুরের জানালার নিয়ম। দুরের জানালা আবার সবখানে একই নিয়মে চলে এমন কথা নেই। বাংলাদেশে বসে ভারতের জানালা ভালভাবেই দেখা যায়। বরং দেশের জানালার তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সেখানেই ধরা পড়ল পার্থক্যটা।
লম্বা-চওড়া সুবেশি এক ব্যক্তি সুললিত কন্ঠে বর্ননা করছেন একখানা ভাঙা বাড়ির কথা, পাশে নর্দমা, সেখানে মশার কামার। নর্দমার পাশের ভাঙা বাড়িতে বাস করেন এক দিদি। তিনি জনগনের দিদি।
দিদি হঠাত করে সেখানে বাস করতে যাননি, বাস করছেন যুগ যুগ ধরে। হঠাত করে তাকে আবিস্কার করা হয়েছে কারন তিনি নির্বাচনে জিতেছেন। সেই আবিস্কারক হয়ত এতদিন আবিস্কার করেছেন বুদ্ধদেব দাদা কত সহজ সরলভাবে জীবন কাটিয়েছেন সেই গবেষনায়, এদিকে দৃষ্টি দেয়ার সময় পাননি। তারো আগে হয়ত জ্যোতিদাদার গবেষনায়।
সে যাকগে। কথা হচ্ছে জানালা নিয়ে। মানুষ ওই জানালা দিয়েই দেখে। আপনি বাংলাদেশে বসে অর্ধশত জানালা দিয়ে ভারত দেখুন কারো কোন আপত্তি নেই, ভারতে বসে বাংলাদেশ দেখতে হলে দেখতে হবে সেই বিবি-গোলামের বাক্স দিয়ে। যদি কোনভাবে দেখা যায়।
তবে সবচেয়ে ভাল দেখা যায় সরাসরি নিজেদের দরজা দিয়ে। তাদের সাহেব-গোলাম যা বলছেন তাই দিয়ে।
যেমন তাদের সাহেব বললেন, বাংলাদেশে ২৫ ভাগ মানুষ জামাত সমর্থক। তারা ভারতের ঘোর বিরোধী। ব্যাস, পৌছে গেল সবার কাছে। অন্তত পশ্চিম বঙ্গের বাঙালী বলতে শুরু করলেন, কি নেমকহারাম রে বাবা। ৭১ সালে আমরা নিজেদের ভাই বলে যায়গা দিলাম, এতকিছু করলাম এখন তারাই আমাদের বিরোধী।
রাজনীতি বিষয়টা আরেকটু বেশি জটিল। অপ্রাসংগিক হলেও দুকথায় উল্লেখ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী কথা বলা দল রয়েছে অনেকগুলি। অধিকাংশ দলের নাম শতকরা ১ জনও জানে না। জামাতের পরিচিতি সেতুলনায় বেশি, কিন্তু তারা আবার ওভাবে ভারতবিরোধী কথা বলে না। অন্তত হোয়াইটহাউজ, পেন্টাগন জামাতকে অন্য দেশের জামাতের মত দল হিসেবে দেখে না। তারা একে গনতান্ত্রীক রাজনৈতিক দল হিসেবেই দেখে। বাংলাদেশে অনেকেই মনে করেন জামাতের উচিত ছিল মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারিদের ঝেড়ে ফেলে সত্যিকারের রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত হওয়া। অন্তত তাদের নামে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। সেটা হয়নি। তারপরও বাস্তবে তারা ২৫ ভাগ নাকি ২ ভাগ জানার সুযোগ হয়নি কারন তাদের সাথে রয়েছে বিএনপি।
কতজন মানুষ ভারতবিরোধী, কতজন জামাতপন্থি তার কিছুটা জানা যায় নানারকম জানালা থেকে। পথে হেটে যাওয়া পথিক, রিক্সাচালক, ব্যবসায়ী কিংবা সাজগোজ করা বুদ্ধিজীবি কাউকেই ভারতবিরোধী কথা বলতে শোনা যায়না। একমাত্র বিবি-গোলামের বাক্স ছাড়া। আর একটা কথা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, জামাত ধর্মের কথা বলে রাজনীতি করলেও অন্তত বিজেপির ধর্মের রুপকথা প্রচার করে হাজার হাজার মানুষ মারার সাথে তুলনা চলে না।  
বাক্সটাই আসলে মুলকথা। একদিকের বাক্স বন্ধ, আরেকদিকের খোলা। নিজের চোখে দেখার সুযোগ যখন নেই তখন দুহাত কচলে বলবেন, দাদা যা বলেচেন না, সব মিলে যাচ্চে যে।

0 comments:

 

Browse