নিরপেক্ষতার বাজার ভাল

Jul 9, 2011
কেউ কেউ কবি নয় সকলেই কবি, কথাটার মানে কি ঠিক জানা নেই। এর বক্তব্য কি এই যে কবি হিসেবে কাউকে পৃথক করা প্রয়োজন নেই কারন সকলেই ওই দলে। তাহলে প্লেটোর কথা অনুযায়ী সবাইকে রাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে হয়। তিনি সেটাই চেয়েছিলেন। তাদের সাথে কারাপ আচরন করবেন না, ভালভাবেই বলবেন, আমার আদর্শ রাষ্ট্রে কবির প্রয়োজন নেই।
কবির প্রয়োজন না থাকলেও ব্যবসায়ীর প্রয়োজন অবশ্যই আছে। ব্যবসার মুল আদর্শের কারনেই হোক আর বাস্তবিক কারনেই হোক। আদর্শিক কারন হচ্ছে জনগনকে সেবা দেয়া। আপনি জাপানী জিনিষ কেনার জন্য জাপান যেতে পারেন না। ব্যবসায়ীর কাজ হচ্ছে জাপান থেকে জিনিষটি এনে আপনার কাছে পৌছে দেয়া এবং বিনিময়ে কিছু লাভ করা। আর বাস্তবিক কারন হচ্ছে লাভ করা। যেকাজে লাভ সেকাজ করবেন, যেভাবে লাভ বেশি সেভাবে করবেন। কখনো বেশি এনে লাভ বেশি, কখনো গুদামে জমা করে লাভ বেশি।
লাভ এবং ব্যবসা দুটিকে একসাথে করলে অনায়াসে বলতে পারেন, কেউ কেউ ব্যবসায়ী নন, সকলেই ব্যবসায়ী। সকলেরই লাভ প্রয়োজন। কারো বাংলা কারো ইংরেজি কারো দুটোই।
জন রাস্কিন বর্তমান (তার সময়কালীন) ব্যবসা সম্পর্কে বলেছিলেন, আপনি যত কমে কিনবেন এবং যত বেশিতে বেচবেন আপনি তত দক্ষ ব্যবসায়ী। কারন এতে আপনার লাভ সবচেয়ে বেশি। ব্যবসা যখন কেনাবেচা থেকেছুটা দুরে, অন্যভাবে, তখন হিসেবটাও অন্যরকম হবে এটাই স্বাভাবিক।
যেমন ধরুন, সংবাদপত্র। আপনি সংবাদ পরিবেশন করবেন, জনপ্রিয়তা বাড়াবেন, লাভ করবেন। আপনার পত্রিকার কাটতি যত বেশি বিজ্ঞাপন তত বেশি আয় তত বেশি। আর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকার কথা কে-না জানে। তারা এমনভাবে খবর তৈরী করে যা দুপক্ষকেই খুশি রাখে। দুপক্ষই কেনে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো স্পষ্ট। সংবাদপত্র মালিক মানেই এই দল নয়ত ওই দল। এর সমস্যা হচ্ছে, একদলের পক্ষে গেলে আরেক দলের পক্ষ হারাতে হয়। আওয়ামী পাঠক জাতিয়তাবাদী পত্রিকা সহ্য করে না, আবার বিপরীত কথাও সত্যি।
কাজেই যদি ব্যবসা করতেই হয় নিরপেক্ষ থাকাই ভাল। এমনভাবে খবর করবেন যেন দুপক্ষই খুশি থাকে। সাপ বাচাবেন লাঠিও বাচাবেন। আজকাল টিভি টকশোতে এধরনের ব্যক্তির হরহামেশা দেখা পাওয়া যায়। তারা দুপক্ষেরই সমালোচনা করেন। অমুকের এই কাজ ঠিক হয়নি, তবে ... তমুক কারনে করা হয়েছে। দুপক্ষই ভাবল উনি তার পক্ষ নিয়েছেন। এরাই জনপ্রিয় বক্তা।
বাংলাদেশে সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তা বললে প্রথম-আলোকে উপেক্ষা করার কোন কারন নেই। একসময় ইত্তেফাক মানুষ কিনত কিজ্ঞাপনের কারনে। কারন সব বিজ্ঞাপনদাতা সেখানে হুমড়ি খেতেন। এখন প্রথম আলোর ধাক্কায় তারাও হিমসিম খাচ্ছে।
কাজেই তারা যে নিরপক্ষ সাংবাদ পরিবেশন করবে এটাই স্বাভাবিক। দুপক্ষের সমর্থন যখন প্রয়োজন।
সামান্য একটু ভুল সম্ভবত তারা করে ফেলেছেন। বর্তমান সময়ের অত্যন্ত আরোচিত একটি বিষয় নিয়ে। বিরোধীদলের চীপ হুইপকে পেটানোর খবর পরিবেশন করতে গিছে।
ঘটনার দিন খবর ছাপা হলে একজন মন্তব্য করলেন (আমি ইন্টারনেট ভার্শনের কথা বলছি। ছাপা কাগজের পাঠকেরা সম্ভবত মুল খবরের চেয়েও উত্তেজনাকর এই বিষয়টি উপভোগের সুযোগ পান না) এটা পক্ষপাত মুলক। তিনি পড়ে যাওয়ার অভিনয় করলেন, তাতে আহত হলেন এরসাথে টিভির ভিডিও মেলে না।
এবং আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্যি, এই মন্তব্য বাদ দেয়া হয়নি।
একই সাংবাদিক কিনা সেটা নিশ্চিত করা কঠিন, পরদিন আবারও খবর ছাপা হল। এবারে আরেকটি ছবি। ক্যাপশন, ঢিল ছোড়া ভঙ্গিতে ফারুক।
বাস্তবিকই দেখা যাচ্ছে তার ডানহাত মাথার ওপর উচু করা। সেইহাতে কিছু ধরে আছেন। এমন চাক্ষুস কিছু বিশ্বাস করবেন না কেন। তারওপর একজন নিরপেক্ষ টকশো বক্তা ব্যাখাও দিলেন, প্রথমআলো সবসময় সত্য প্রকাশ করে না, এইবারে ভাল খবর করেছে। এই খবরেও আশ্চর্যজনকভাবে সেন্সর এড়িয়ে মন্তব্য ছাপা হয়েছে, ওই ভঙ্গিতে কেউ ঢিল ছোড়ে না। তার হাত গলার সাথে আটকানো।
চোখ যখন আরো আছে তখন একচোখকে বিশ্বাস করবেন কেন। আরো যে মারখাওয়া সাংবাদিক ছবি উঠিয়েছেন তাদের কারো কারো ছবিতে বিষয়টি আরো ভালভাবে ধরা পড়েছে। একেবারে স্পষ্ট।
সেখানে যা দেখা যায়, ফারুক সাহেবের ডানহাতে পুরোটা ব্যান্ডেজ জড়ানো। স্লিংগার দিয়ে গলার সাথে আটকানো। এবং ঢিল ছোড়ার ভঙ্গিতে হাতে যে ঢিলটি রয়েছে সেটা তার মোবাইল ফোন। ফটোগ্রাফার কিংবা অন্যরা ভুল করেছেন এটা মনে করার কোন কারন নেই। বরং এর একটা ব্যাখ্যাই হতে পারে, নিরপেক্ষতায় লাভ বেশি এই নীতি মুহুর্তের জন্য হলেও ভুলে গেছে প্রথম আলো। একবারে বেশি লাভের দিকে গেছে।
এরফলে যে পরিচিতি তৈরী হয়েছে তার প্রভাব আগামীতে পাঠকদের ওপর পড়বে নিশ্চিতভাবেই। শতভাগ নিরপেক্ষ থাকলেও সন্দেহ করা হবে। বিশ্বাসের আয়না একবার ভাঙলে নাকি জোড়া লাগে না।

0 comments:

 

Browse