ভুল করলে ভুল হয়

Jun 29, 2011
সত্যজিত রায় একখানা গল্প লিখেছিলেন এক ব্যক্তিকে নিয়ে। তিনি যা করেন তাতেই অন্যদের সমস্যা তৈরী হয়। এমন না যে তিনি কারো ক্ষতি চান, ক্ষতি হয়। গল্পের বিস্তারিত উল্লেখ না করে শেষটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট, তিনি মারা গেলেন তার এক আত্বীয়ের বিয়ের দিনে। এরথেকে বড় ভুল আর কি হতে পারে।
মানুষ কেন ভুল করে এনিয়ে নানারকম ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেছেন পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানী-দার্শনীকেরা। সেটা পশ্চিমের বিষয়। এদেশে এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই কারোই। একসময় একজন সমাজবিজ্ঞানী গবেষনা করে বাঙালী এবং চীনাদের মধ্যে খুব মিল পেয়েছিলেন। দুদেশের মানুষই নাকি নিজের দেশে অলস, অন্য দেশে কঠোর পরিশ্রমী। দুদেশের মানুষই চাপের মধ্যে ভাল কাজ করেন। অন্য কথায় দৌড়ের ওপর থাকলে এদিক ওদিক খোচাখুচি করেন না।
তাই বলে সবসময় মাথায় চাপ দিয়ে তো রাখা যায় না। গার্মেন্টস কর্মীরা দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে রাতের বেলা হাসতে হাসতে, গল্প করতে করতে বাড়ি ফেরে। আর সারাদিন অফিসে চা খেয়ে, গল্পগুজব করে, ফোন করে সময় কাটিয়ে আরেকজন সন্তুষ্ট নন। তার মুখে হাসি আনার জন্য তাকে গার্মেন্টস কর্মী বানানো যায় না।
প্রবনতা বলে একটা বিষয় আছে। যদিও ব্যাখ্যা করা কঠিন, তাহলেও আছে। কেউ বললেন তিনি ৫০০ টাকা নিয়ে ৫০ হাজার বানিয়ে দেবেন, সাথেসাথে হাজার হাজার মানুষ ছুটল সেদিকে। একবারও প্রশ্ন করল না যার ৫০০ কে ৫০ হাজার বানানোর ক্ষমতা থাকে সে ৫০০ নেবে কেন।
আবার সেই একই ব্যক্তি, একজন বললেন আসুন দুজনে একসাথে কাজ করি। যা আয় হবে দুজন ভাগাভাগি করে নেব। টাকাপয়সা দিতে হবে না, আয় করব বুদ্ধি দিয়ে। তখন তার উত্তর, বাপরে কাউকে বিশ্বাস করার জো আছে। পার্টনারশীপ ব্যবসা মানুষ করে! শেষে ঘরবাড়ি সব হাতিয়ে নেবে।
পরদিন দেখা গেল আবারও টাকা হাতে ছুটেছে আরেক বাটপারের পেছনে।
শেয়ারবাজারকে বাটপারির যায়গা বলা অন্যায়। দেশের ৩৫ লক্ষ সন্মানীত, পরিশ্রমি, নিষ্ঠাবান বিনিয়োগকারী রয়েছেন এই পেশায়। দেশের অর্থনীতি চালু রেখেছেন বিনিয়োগ করে। তারা ফাটকা হতেই পারেন না।
তারপরও মুহুর্তের জন্য হলেও দেশের ভাবমুর্তি আলমারীতে রেখে একবার জুয়ার সাথে তুলনা করে নিন। যদিও জুয়া বাংলাদেশে অবৈধ, লাস ভেগাসে না। লাস ভেগাস বিশ্বখ্যাত ওই জুয়ার কারনেই।
জুয়ার বিষয় হচ্ছে, আপনি মুহুর্তে ধনী ব্যক্তিতে পরিনত হতে পারেন। হতে পারেন কিন্তু হন না। দুচারজন হন, তাদের অনুসরন করতে গিয়ে বাকিরা সর্বশ্রান্ত হয়। একারনেই এদেশে জুয়া নিষিদ্ধ।
যারা জুয়ায় জেতেন তারা সবসময়ই জেতেন। কখনো হারেন না। আরেকটু গভিরে দেখেন তাহলে কারনটাও অষ্পষ্ট থাকার কথা না। তারা বুদ্ধি খাটান। কখন কতটুকু ঝুকি নিতে হবে সেটা হিসেব করেন, কখনো হাতসাফাইয়ের সুযোগ থাকলে সেটাও কাজে লাগান (আধুনিক জুয়ায় সেটা চলে না)।
কাজেই যার বুদ্ধি যত বেশি তার ধনী হওয়ার সুযোগ তত বেশি। আরেকজনের চোখে অবশ্য বুদ্ধিটা ধরা পড়ে না, টাকাটা সহজে দেখা যায়। তিনিও ওই টাকা পাওয়ার আশায়ই নিজের সর্বস্ব ঢালতে থাকেন। প্রতিবার নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেন আর নতুন উতসাহে আরো টাকা ঢালেন।
শেয়ার বাজারের সাথে অন্তত এই উতসাহের বিষয়ে মিল বিষয়টি উপেক্ষা করার উপায় নেই। ৯৬ সালে একবার ঠকেছি, ১৫ বছর পর আরেকবার ঠকেছি। শেয়ার বাজার কি কম বুঝি। এইবার তৈরী হইয়া রইছি। ৩ দিনে বাড়ছে ৫০০ পয়েন্ট, ৩০ দিনে ৫ হাজার পয়েন্ট। ব্যাস। সব ট্যাকা নিয়া ঘরে তুলমু। এইবার দাম কমার আগেই।
প্রত্যেকেই যদি অন্যের হাতে দামী শেয়ার গছিয়ে টাকা পেতে চেষ্টা করেন তাহলে শেষ পর্যন্ত ফলটা কি দাড়াবে সেটাই কথা। প্রত্যেকেই ধনী হবে। নাকি যারা দুবার সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারাই আরেকবার হাতিয়ে নেবে। অন্তত বুদ্ধি এবং ক্ষমতা সবই যখন তাদের সহায়।
মানুষ ইচ্ছে করে ভুল করে না। ভুল হয়। ভুল হওয়া মানে ভুল করা, নাকি ভুল করা মানে ভুল হওয়া এর একটা উত্তর থাকলে ভাল হত।

0 comments:

 

Browse