পাগল বলে কি আপন পর বুঝি না

Jul 24, 2011
মোল্লা নাসিরুদ্দিন একবার বস্তাভর্তি গম গাধার পিঠে চাপিয়ে রওনা দিলেন সেগুলি ভাঙিয়ে আটা বানিয়ে আনবেন। তার এক প্রতিবেশি এসে বলল, ভাই নাসিরুদ্দিন, এরসাথে আমার একই গম টুকু যদি ভাঙিয়ে এনে দাও তাহলে খুব ভাল হয়। আমি অন্য কাজের জন্য যেতে পারছি না। হোজ্জা বললেন, ঠিক আছে।
দুজনের গত নিয়ে হোজ্জা চলেছেন। একজন সঙ্গিও আছে সাথে। হোজ্জা মাঝেমাঝে প্রতিবেশির বস্তা থেকে গত নিয়ে নিজে বস্তায় রাখছেন। তার সঙ্গি বলল, ওকি হোজ্জা মশাই। এক বস্তার গম আরেক বস্তায় রাখছেন কেন ?
হোজ্জা বললেন, আমার মাথায় একটু গড়মিল আছে। অনেক সময় উল্টাপাল্টা কাজ করি।
তার সঙ্গি বলল, তাহলে নিজের বস্তার গম অন্য বস্তায় রাখছেন না কেন ?
হোজ্জার উত্তর, পাগল বলে কি আপন পর বুঝি না!
এমন চিরন্তনী গল্প খুববেশি হয়ত নেই। যুগে যুগে মানুষ দেখিয়ে গেছে কিভাবে পাগলামি দেখাতে হয়। কেউ কেউ হয়ত আগবাড়িয়ে বলবেন এটা যে দিন দিন বাড়ছে। আজকাল এখানে-ওখানে-সেখানে এধরনের পাগলে যে গিজগিজ করছে। বিশেষ করে ওই মিডিয়াতে। কথা বলার যায়গা তো ওটাই।
ধরুন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রধানের কথা। মন্ত্রীর সাথে এখানে ওখানে যান, জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। একেবারে সরাসরি ঘোষনা দিলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ে রাজপথে নেমে হরতালের প্রতিরোধ করব।
৪৫ টাকায় আমদানী করা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। বানিজ্যমন্ত্রী যত বৈঠকই করুন না কেন তাকেও কিছু বলতে হয়। তিনি দাম ঠিক করে দিলেন। সাথেসাথে দেশের ১ লক্ষ টনের বেশি চিনি বাজার থেকে উধাও। খুচরা দোকানে নেই, পাইকারী দোকান বন্ধ। আপনি সেই নেতাকে প্রশ্ন করতে পারেন এটা প্রতিরোধের জন্য তিনি কি কিছু করবেন ? তিনি তো এইসব ব্যবসায়ীদেরই নেতা।
আপনে দেখি আমার চেয়েও বেশি পাগল। আমি কি আপনপর বুঝি না!
কিংবা বানিজ্যমন্ত্রীর কথাই ধরুন। ক্যান্টমেন্টে বসে রাজনীতি করা নিষেধ কাজেই খালেদাকে বাড়ি ছাড়তে হবে। তাইবলে বানিজ্যমন্ত্রী ক্যান্টনমেন্টে বাস করবেন না এমন কথা আছে নাকি ? পাগল হলেও আপনপর তো এখনো ভুলিনি।
লোকে বলে যতবার তিনি মুখ খোলেন ততবার একধাপ জিনিষের দাম বাড়ে। বিষয়টি অন্যভাবে দেখে অনেকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন তিনি বললে দাম বাড়ে, নাকি দাম বাড়লে তিনি এভাবে জানান দেন। ব্যবসায়ীরা বানিজ্যমন্ত্রীর আপনজন নাকি বানিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আপনজন ?
কথা আরো অনেকেই বলেন। শিক্ষামন্ত্রীও বলেন। তিনি নাকি ছাত্র থাকাকালেই স্বপ্ন দেখেছিলেন এককালে শিক্ষামন্ত্রী হবেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবেন। শিক্ষাপ্রতিস্ঠানের ঘটা নিয়ে নতুনভাবে বলতে চাই না, বকারাম আগেই এধরনের ঘটনা নিয়ে বলেছে। অধঃপতন দ্রুতহারে হচ্ছে একথা বলতে বলতে বকারামও বিরক্ত। দোকানে-ফুটপাতে-ইন্টারনেটে মোবাইল ভিডিওর ছড়াছড়ি।
তারপরও, নামকরা স্কুলে যখন এমন ঘটনা ঘটে, সব যায়গায় প্রচার পায়, মানুষজন পথে নামে তখন তাকেও বক্তব্য দিতে হয়। কোচিং সেন্টার নামের ব্যবসা প্রতিস্ঠানগুলি যখন বিশ্ববিদ্যালয় নাম নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় তখন সেখানেও কিছু বলতে হয়। কাজেই তাকেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মত বলতে হয়, কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করা হবে। (কিভাবে কে জানে!) ধীরে ধীরে কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হবে।
ধীরে ধীরে কেন ?
আরে, আপন পর বলে কিছু বিষয় তো আছে। পাগল হলেই কি সেটা ভোলা যায়। ওদের এত ইনভেষ্টমেন্ট মাঠে মারা যাবে যে। ওগুলো পুরোপুরি স্কুল-কলেজ-ইউনিভাসিটি হয়ে যাক তারপর কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হবে।
শিক্ষা তো টিকে আছে ওদের কল্যানেই। ওরাই তো জাতির মেরুদন্ড সোজা রেখেছে। পাগল যত যাই করুক নিজের পায়ে কুড়াল মারে না।

0 comments:

 

Browse