রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের নাম পাল্টান

Jul 14, 2011
ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার কে এনিয়ে কোন সন্দেহ থাকা অনুচিত। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধান হিসেবে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলেই তিনি জনগনের ভোটে সর্বশক্তিমান হয়েছেন। কাজেই দাবীটা তার একারই। তারপরও সামান্য একটু বিষয় থেকে যায়। ইদানিং নোবেল পুরস্কার কথাটা বেশ ঘনঘন শোনা যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যানে বাঙালী জাতি আরেকবার ওই সৌভাগ্যের সুযোগ পায় তাহলে সেটা নিয়ে টানাটানি ভাল দেখায় না। একবারই যথেস্ট টানাটানি হয়েছে।
কথাটা বলতে হচ্ছে কারন এখানে একজন প্রতিদ্বন্দি রয়েছে। তিনি অনেক বছর ধরেই ডিজিটাল ডিজিটাল বলে হাহাকার করছেন। মাল্টিমিডিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে একবার দেশের সবাইকে মাল্টিমিডিয়া শেখানোর জন্য এখানে-ওখানে-সেখানে স্কুল খুলেছিলেন। সেটা ফ্লপ করেছে বটে, তিনি মাল্টিমিয়া বিশেষজ্ঞ খেতাবটিও ব্যবহার করেন না। পরিবর্তে যা ব্যবহার করেন সেকারনেই সন্দেহ। টিভিতে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন, নিয়মিত পত্রিকায় কলাম লেখেন, স্কুলের টেক্সট বইতেও তার লেখা পড়ানো হয়। আর নামের সাথে ব্যবহার করা হয় ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার ইত্যাদি। শংকাটা সেকারনেই।
তার কৃতিত্বও এখানেই থেমে নেই। মেধা চুরি করা অপরাধ সেটা তিনি প্রমান করে ছেড়েছেন। তার আবিস্কার কিবোর্ড আরেকজন নকল করে বিনে পয়সায় বাংলা ব্যবহারের ব্যবস্থা করবে, তার বাংলা বিক্রির পথ বন্ধ করবে এটা হতেই পারে না। রীতিমত মামলা করে মামলা জিতে তিনি দেখিয়েছেন এদেশে আইন বলে কিছু আছে। সময়ে সেটা মানতে হয়। অবশ্য তিনি যখন কলামে লেখেন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বার্থে বিদেশী সফটঅয়্যার পাইরেসি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যেতে হবে তখন বিদেশীরা আপত্তি তুলতে পারেন। আপনি তো বিদেশী নন।
কথায় নাকি কথা বাড়ে। কথা টানলে লম্বা হতেই থাকে। কখনো শেষ হয় না। সেকারনেই কথায় কথায় পুরনো কথাও এসে যায়। একসময় মানুষ বাংলা ব্যবহার করত ডিজিটাল ছাড়াই। ছাপাখানায় হাতে অক্ষর সাজাতে হত। অন্যান্য কাজে টাইপরাইটার নামের এক যন্ত্র ব্যবহার করা হত। টাইপরাইটারে কিভাবে অক্ষর সাজানো থাকবে সেটা ঠিক করেছিলেন মুনীর চৌধুরী। জার্মানীর এক কোম্পানী সম্ভবত সেগুলি তৈরী করত, নাম ছিল মুনীর অপটিমা। তিনি সেই কাজের যত কি পারিশ্রমিক পেতেন জানার উপায় নেই কারন তিনি প্রান হারিয়েছেন রাজাকারদের হাতে। এমনকি বিশ্বজুড়ে যে কোটি কোটি কম্পিউটার-মোবাইল কিবোর্ড বিশেষভাবে সাজানো কিবোর্ড ব্যবহার করে তার আবিস্কারক কত পান সেটাও জানা নেই। সম্ভবত তিনি পাগল-ছাগল গোছের কেউ। দিব্বি মামলা ঠুকে দিতে পারতেন তার আবিস্কার করা অক্ষর অন্যরা ব্যবহার করছে বলে। ঘরে বসে কোটিপতি।
মাইক্রোসফট দাবী করে তাদের এক্সপি সার্ভিস প্যাক ২ থেকে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ উইন্ডোজেই দেয়া হয়েছে। সেটা কে ব্যবহার করে তানিয়ে অবশ্য তাদের মাথাব্যথা নেই। যদিও বাংলাদেশে তারা অফিস রেখেছেন, সেখানে লক্ষটাকা বেতনভোগি লোকজনও আছে। কথা হচ্ছে, আপনি যদি কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে নির্ভর করতে হবে কোন কীর্তিমানের ওপর। টাকা দিয়ে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ কিনবেন। সারা বিশ্বের মানুষকে মাতৃভাষা দিবস পালনের সুযোগ এনে দিয়েছেন বলে গলা ফাটাতে পারেন, নিজের মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ আপনার নেই।
নেই কথাটা আসলে ভুল। ব্যবস্থা আছে। এজন্য বাংলা শেখারও প্রয়োজন নেই। আপনি ইংরেজিতে বানান করেই বাংলা লিখবেন, সে তাকে বাংলা বানিয়ে দেবে। গুগলও ব্যবহার করছে। সমস্যা হচ্ছে, আপনি ত লিখবেন না ট লিখবেন, স লিখবেন না শ কিংবা ষ লিখবেন তাতে কিছু যায় আসে না। সে যা ভাল মনে করে সেটাই করবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হ্রস্ব-ই দীর্র্ঘ ই নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। সবই হ্রস্ব-ই। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি কাহিনী, এখন সেটা এক মজার কাহিনি। মানুষ বেজায় খুশি। এখন কেউ বলে না বানানে ভুল আছে। যা লিখবেন তাই সই।
বকারামের দিকে চোখ পাকিয়ে বলবেন না এত বানান ভুল কেন। এখন ভুল বানান বলে কিছু নেই।
কারো কারো পুরনো জিনিষের বাতিক থাকে। যত পুরনো তত দামী। তারা বলেন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ দাস এরা হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের স্তম্ভ।
ধুরো! নিজের নাম লিখতে যে বানান ভুল করে সে আবার সাহিত্যিক কিসে ? দীর্ঘ-ই বলে কিছু আছে নাকি ? আগে নামের বানান ঠিক করুন তারপর মুখ খুলুন।

0 comments:

 

Browse