বাঘে-মোষে লড়াই করে

Jul 7, 2011
বাঘে-মোষে লড়াই কথাটা কিভাবে চালু হয়েছে বোঝা কঠিন অন্তত বাস্তব যুক্তিতে মেলে না বাঘ থাকে সুন্দরবনে, সেখানে মোষ নেই কোনকালে হয়ত ছিল, বর্তমানে যে নেই সেটা শতভাগ নিশ্চিত বর্তমান বাংলাদেশে মোষ নামের যে প্রাণী দেখা যায়, যার মাংশকে গরুর মাংশ বলে চালানো হয়ে সে নিতান্তই গোবেচারা প্রাণী গরুর থেকেও নিরীহ বাঘের সাথে লড়াই করতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না
আবার লড়াই করা মোষ রয়েছে আফ্রিকায় তাকে ভয় করে না এমন প্রাণী নেই শক্তিতে পেরে ওঠে এমন প্রানীও নেই তার সাথে বাঘের লড়াই কথাটাও মানায় না কারন সেখানে বাঘ নেই অন্তত আমরা যাকে বাঘ বলি সেটা হতে পারত মোষে-সিংহে লড়াই কিন্তু আফ্রিকার মোষ এমনই প্রাণী যে নিতান্ত অনাহারে মারা যাওয়ার অবস্থা না হলে সিংহও তার ধারেকাছে যায় না
যেভাবেই হোক কথাটা চালু হয়েছে বাংলাদেশে বাঘ এবং মোষ কোনভাবে লড়াই শুরু করেছে আর যেখানে লড়াই করছে সেখানকার লতাপাতা জীবন দিচ্ছে তারা না পারে এই পক্ষে যোগ দিতে না পারে ওই পক্ষে
এদিকে লড়াইও থামার লক্ষ নেই কোন পক্ষ জেতে না, কোন পক্ষ হারে না
আসলে এধরনের কোন বক্তব্য যদি যুগ যুগ ধরে চলতেই থাকে তাহলে বিভ্রান্তি তৈরী হওয়াটাই স্বাবাবিক আজকাল ওইসব নলখাগড়া চুপ করে বসে থেকে জীবন দেয় না তারাও অংশ নেয় একটু চিমটি কাটে, একটু খোচা মারে একদল এক পক্ষে আরেকদল আরেক পক্ষে লড়াই আরো জমে ওঠে দর্শক যদি চুপ করে থাকে তাহলে কি খেলা জমে ? ক্রিকেট খেলায়ও খেলা জমানোর জন্য রীতিমত টাকাপয়সা খরচ করে নাচিয়ে জোগাড় করছে গ্যালারীর দর্শকদের হাতে তুলে দিচ্ছে বাশি তবেই না উত্তেজনা
বাংলাদেশের রাজনীতির দর্শকরাও চুপ করে নেই একটু আধটু অংশ নিচ্ছেন খোচা মারার চেষ্টা করছেন খেলাকে উত্তেজনায় পরিনত করছেন
হরতালে একজনের বক্তব্য, আমি দিব্বি অফিস করছি, তাহলে সর্বাত্মক হরতাল হল কিভাবে ? (কিভাবে অফিসে গেছেন সেপ্রশ্ন করবেন না)
আরেকজনের বক্তব্য, দ্যাখছেন পুলিশের কান্ড ওইডা নাকি চিপ হুইপ ছিনতাইকারী ধরা পরলে যেমন পিটায় তেমনি পিটাইতাছে
অপর পক্ষের বক্তব্য, আরে পিটাইব না কি করব পুলিশরে খারাপ গালাগালি করছে বাপরে, পুলিশরে গালাগালি! জানেন না পুলিশ একমাত্র প্রাণী যাগো গালাগালি ট্রেনিং দেয়।
আর সরকারী দলের একজন আইনপ্রনেতা টিভিতে টকশোতে এসে বললেন, আমি গালাগালি একদম পছন্দ করি না। ওই ফারুক জঘন্য ভাষায় কথা বলে। শুনলে আমার রক্ত গরম হয়। ওরা যা করেছে সেটা কিছুই না। আমি হলে এমন শিক্ষা দিতাম যেন সারাজীবন মনে থাকে (কোন আইনের কোন ধারায় কে জানে। নিশ্চয়ই আইনে আছে পুলিশ পেটালে কৈফিয়ত দিতে হয় না, কিংবা আইনপ্রনেতার আইন মানতে হয়না)। ওই দুজন ছাত্রলীগ নেতা নিজের যোগ্যতায় প্রমোশন পেয়ে পুলিশ অফিসার হয়েছে। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্য সন্তান আরেকজন জগন্নাথের। দুজনা বিভিন্ন মামলার আসামী। একজন বিনা নোটিসে ৭ বছর বিদেশে কাটিয়েও চাকরী বহাল রেখেছেন আরেকজন স্পিকারের ভাতিজা।
ছাত্রলীগ থেকে প্রমোশন পাওয়া সেই পুলিশের বক্তব্য, উনি নিজেই জামা খুলে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করেছেন
চিপ হুইপ বর্তমানে হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ারে অবস্থান করছেন সেই অভিনয়ের কারনে
লড়াই এখন মাঘে-মোষে থেমে নেই বরং অন্যদেরই উতসাহ বেশি চালিয়ে যাও, চালিয়ে যাও কাজকাম নেই, ঘরে বসে টিভিতে দেখি ওরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন যেভাবে পিটিয়েছে তারচেয়ে বেশি জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও ওরা যতগুলো গাড়ি পুড়িয়েছে তারচেয়ে বেশি
কেউ বলার চেষ্টা করছেন, রাজনীতি করা কি সংবিধানে নিশেষ করা হয়েছে ? কথা বলা যাবে না, হরতাল ডাকা যাবে না, মিছিল করা যাবে না গনতন্ত্র মানে কি সরকারের আচলের তলায় বসে থাকা
আরেক দল বলছেন, গনতন্ত্রের নামে ওসব অরাজকতা চলতে পারে না পুলিশের উচিত আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া ইচ্ছে হলেই গাড়ি পেড়াবে এটা কোন গনতন্ত্র সাথেসাথে ধরে পেটাও, জেলে ঢোকাও সিসি ক্যামেরা বসাও ওদের ধরার জন্য
একজন বললেন, এইডা হইল দুর্নীবাজগো বাচানোর হরতাল। ওইযে জিয়ার পোলার দুর্নীতি সারা বিশ্বে প্রমান হইছে তাগো রক্ষা করতে হরতাল ডাকছে। প্রধানমন্ত্রী কইছে।
আরেকজনের পাল্টা বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীরে জিজ্ঞাস করেন তো দুর্নীতি খারাপ না ব্যাংক ডাকাতি খারাপ। শ্যাকের  পোলা যে ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়া গুলি খাইছিল, অস্ত্রগুলান ৩২ নম্বর ব্রিজের সামনের বাড়িতে জমা রাখত এইসব তো নিজের চক্ষে দেখা। সেই বাড়ি অহনো আছে। মালিক অহনো আছে। নিজের ভাইয়ের কথা কি তার মনে আছে ?
ফুটপাতে চায়ের দোকানের পাশে একজন বয়স্ক লোক গলা ফাটাচ্ছে, আমি বুড়া মানুষ আমারে ওইসব করতে হইব ক্যান। আমার আড়াইশ ট্যাকার স্যান্ডেল ছিড়ছে, পায়ে ব্যথা পাইছি, দোকান বন্ধ রাখছি। প্রতি সপ্তাহে হাসপাতালে গিয়া পায়ে হিট দিতে হয়। কই, ট্যাকা দিছে। আমারে কয় না গেলে ব্যবসা বন্ধ কইরা দিব-
কথা শুনে যতদুর মালুম হল, তিনি ফুটপাতে চা-সিগারেটের দোকানদার। জনসভায় তার যাওয়া বাধ্যতামুলক করে আদেশজারী করা হয়েছিল। রাস্তায় বিশাল বিশাল গেট বানানো হয়েছে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে।
নলখাগড়া আরো আছে তাদেরও বক্তব্য কম উত্তেজনাকর না কোথাও মইন, কোথায় ফখরুদ্দিন দেশ বাচাও আবারো চাই এক-এগারো
বাঘ-মোষের লড়াই লড়াই খেলা রীতিমত জমজমাট পরের দৃশ্য দেখার প্রতিক্ষা।

0 comments:

 

Browse