কীর্তিমানের কীর্তি

Jul 15, 2011
বকারামের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হচ্ছে;
বিষয়টি বকারামের বকা সম্পর্কিত। অধিকাংশ মানুষ (ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যারা কোনভাবে বকারামের সাইটে ঢুকে পড়েন) রাবারের বলের মত ছিটকে বেরিয়ে যান। গুগল এই ছিটকে বেরিয়ে যাওয়াকে বলে বাউন্স। যিনি সাইটে ঢুকে পরমুহুর্তেই চলে গেছেন। এটাই বলে দেয় বকারামের বকাবকি অধিকাংশের কত অপছন্দ।
তারপরও কেউ কেউ কিছুটা ধৈয্য ধরে দেখার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ নিয়মিত। সেকারনেই এখনও বকাবকি থামেনি। যদিও থামার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
এভাবে শুরু করার অর্থ হচ্ছে, সবাই বকাবকি করেন না। অত্যন্ত গুছিয়ে, ইতিহাসের রেফারেন্স ব্যবহার করে, অভিধান থেকে শব্দ খূজে তবেই যথার্থভাবে প্রয়োগ করেন। তারা কীর্তিমান। আর কীর্তিমানের কথা সবাই শোনে।
আজকের কাগজখানাই দেখুন না। অনেক কীর্তিমানের ছবিসহ তাদের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। বিষয়ওটিও অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন। কেবলমাত্র উচুমানের শিক্ষিত হলে তবেই মর্মে প্রবেশ করে। বিষয়টি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা।
বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মরিপেক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এদেশে কেবলমাত্র মুসলমান বাস করে না যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলার রাখবেন। অন্য ধর্মের যারা আছে আদেরও অধিকার সমান। কাজেই সংবিধানে সেকথা থাকতে হবে।
একটু পুরনো দিনের কথা দিয়েই কারনটা ব্যাখ্যা করা যাক। ৪৭ এর দেশবিভাগের সময় মস্ত দাঙ্গা হয়েছিল। ভারত থেকে ট্রেনভর্তি লাশ পাঠানো হয়েছে পাকিস্তানে, পাকিস্তান থেকে ট্রেনভর্তি লাশ পাঠানো হয়েছে ভারতে। আশ্চর্যজনকভাবে বাংলাদেশ এলাকায় (পুর্ব পাকিস্তান) এধরনের কিছু ঘটেনি।
এরপর কাটাকাটি যখন থামে তখন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে অন্যভাবে। কোনভাবে কিছু মানুষের মনে হয়েছে হিন্দুধর্মের যারা আছে তাদের ভয় দেখানো খুব সহজ। ভয় দেখালেই ওরা ধরে নেয় তাদের দেশ ভারত, সবকিছু ফেলে পালিয়ে যায়। বিষয়-সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি নাম পায়। তারপর একসময় সেটা দখল করে নেয়া যায়। ঘটনাটি এক বেশি ঘটেছে যে লক্ষ লক্ষ হিন্দু পালিয়ে গেছ ভারতে। এখনো অনেকের বিশ্বাস হিন্দুরা ভারতকে নিজের দেশ মনে করে, সেখানে যাওয়ার পথ তৈরী রাখে।
এমন ঘটনা যখন ঘটে তার কুপ্রভাব পড়ে। অন্তত কোন দেশে যদি লক্ষ লক্ষ মানুষ যেতে শুরু করে তাদের সমস্যা হয় বৈকি। পশ্চিমবঙ্গের সেটা ভাল করেই হয়েছিল। তারপরও তারা সরাসরি বিরোধীতা করেনি। নিজেদের সমস্যা মেনে নিয়ে তাদেরকে অন্তত থাকার যায়গা দিয়েছে। এখন তারা সেখানকার স্থায়ী। এত বড় মানষিকতা খুব কম দেশেই দেখা যায়।
এরপর ৭১ সাল। আবারও বহুলক্ষ মানুষ আশ্রয় নিল ভারতে। এবারে তারা আরো বেশি সহযোগিতা করল। ভাইয়ের মত আশ্রয় দিল, পথে নেমে ত্রান সংগ্রহ করল।
ওসব কথা যাকগে। বর্তমান নিয়েই বরং কথা বলা যাক। বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক খুব ভাল নেই। বাংলাদেশের টিভি ভারতে দেখা যায় না, বাংলাদেশের বই বিক্রি হয় না। নেতারা বড় সজাগ সেটা যেন না হয়। তারা যা বলবেন সেটাই ভারতবাসিকে শুনতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে। এতে দেশপ্রেম বাড়ে। বাংলাদেশের জিনিষপত্র ভারতে বিক্রি হচ্ছে না, দেশের কলকারখানা লাভবান হচ্ছে, এসব দেখছেন না! হাততালি দিন। ওইসব ভাই ভাই হিসাব চলবে না। হিসাব হবে ব্যবসার খাতায়।
হয়ত এরই মধ্যে বলছেন, এজন্যই ওই বাউন্স। কিসের মধ্যে কি ...
তাহলে সংক্ষেপে মুল কথায় আসি। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গনতান্ত্রিক দেশ। তাদের সংবিধানে লেখা আছে ধর্মনিরপেক্ষ। যদিও ধর্ম নিয়ে এত মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা কয়েকশ বছরে বিশ্বের অন্য কোন দেশে ঘটেনি। এমনকি ৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইনের যে বিরোধ, ইত্তেফাদা, দ্বিতীয় ইত্তেফাদা, তৃতীয় ইত্তেফাদা, সুইসাইড বোমা হামলা এসবের কারনে দুদেশ মিলেও এত মানুষ মারা যায়নি যা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে। ইচ্ছে করলেই মোঘল আমলের মসজিদ ভেঙে দেয়া যায়, ধর্মের কথা বলে ইলেকশানেও জেতা যায়। বাংলাদেশের সাথে পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশে ধর্মীয় হাঙ্গামা মাইক্রোসকোপে দেখতে হয়। ধর্মের কথা বলে সংসদে কয়েকটা সিট পাওয়া সম্ভব, রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব না।
তারপরও কিছু মানুষ অপরাধ করেছে। জিয়া ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সংবিধানে ধর্ম ঢুকিয়েছেন, এরশাদ (তিনি বড় অপরাধী নন, যতদিন মহাজোটে আছেন) তাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়েছেন। এখানেই পার্থক্য তৈরী হয়েছে। ভারতের সংবিধানে লেখা আছে ধর্মনিরপেক্ষ আর বাংলাদেশে ইসলাম। এতে কি দেশের মান থাকে ?
সবশেষ পরিবর্তন কখন হয়েছিল তার সনতারিখ উল্লেখ করা সম্ভব না। অন্তত ২৫ বছর তো হবেই। এই ২৫ বছর মানুষ এনিয়ে কোন সমস্যায় পড়েনি। অধিকাংশ মানুষ যে সংবিধানের চেহারাই দেখেনি। সেখানে কি লেখা আছে তাতে বাঙালীর কি যায় আসে ?
এইখানেই ভুমিকা ওই কীর্তিমানদের। তারা সংবিধান দেখেছেন। লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, অমুক অমুক কারনে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা উচিত। আমরা শতভাগ নিখুত থাকতে চাই। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা লিখুন। তারপর আরএসএস এর মত মারামারি কাটাকাটি করুন তাতে কিছু যায় আসে না। ওসব আমার ধারেকাছে আসবে না। বুদ্ধিজীবী হিসেবে এটুকু সুবিধে তো পেতেই পারি।
অবশ্য কৃতিত্ব কীর্তিমানদের একার না। সরকারেরও যথেষ্টই। তারাও সঠিক সময়ে বের করেছেন সংবিধানে এনিয়ে কিছু করা যায়। অন্তত গুতাগুতির একটা কারন তো হল। তারপর বিএনপি-জামাত ওসব ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ কিভাবে বন্ধ করতে হয় সে আমাদের জানা আছে।

0 comments:

 

Browse