বাঙালীর নৃতত্ত্ব এবং না-তত্ত্ব

Jul 13, 2011
বাঙালীর বয়স মোটামুটি হাজার-এগারশ বছর। এর আগে এই অঞ্চলে মানুষ বাস করলেও তারসাথে বাঙালী কিংবা বাংলা এইজাতিয় শব্দগুলি ছিল না। বাঙালীর নৃতত্ত্ব নিয়ে খুববেশি গবেষনা কেউ করেননি। অন্তত বাজারে বই খুজতে গেলে পাবেন না। যে দুচারজন্য করেছেন এটা তাদেরই বক্তব্য। কাজেই যদি খুত ধরতে চান তাহলে তাদের খোজ করবেন।
তারা বাঙালীর বর্ননা করেছেন বাঙালীর মতই। বাঙালী কেমন ?
তারা লম্বাও না বেটেও না। গায়ের রং কালোও না ধলাও না। নাক বোচাও না উচুও না। চুল কোকড়ানোও না সোজাও না। যাকিছু বর্ননা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন তার সবকিছুকে না বলবেন, তারপর যা অবশিষ্ট থাকে সেটাই বাঙালী।
আজকাল ওসব শারিরীক বর্ননা নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায় না। খাটো-বোচানাক নিয়েও চিনেরা দিব্বি আমেরিকানদের চ্যালেঞ্জ করছে। বরং আজকাল সত্যিকারের পরিচয় কাজে। কিংবা আচারে-আচরনে। সেখানে এই না-তত্ত্ব কতটা বর্তমান সেটা একবার দেখে নিতে পারেন।
ধরুন যদি বলা হয় বাঙালী ধনীও না গরীবও না তাহলে কেমন হয়।
সারা বিশ্বের মানুষ বাংলাদেশের পরিচয় দিতে গিয়ে বলে ওয়ান অব দি পোরেষ্ট কান্ট্রি। তারমানে বাঙালী ধনী না। আর যদি রাজপথের দিকে তাকান, মিনিটে মিনিটে কোটি টাকার গাড়ি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে তাহলে তাকে গরিব বলবেন কোন আক্কেলে ?
বাঙালী মোটাও না পাতলাও না। যেদেশে একতৃতিয়াংশ মানুষ পেটভরে খেতে পায় না তারা মোটা হয় কিভাবে ? আর ফাষ্টফুডের দোকানের সামনে যে ৫ মনি দাড়িয়ে আছে তাকেই বা পাতলা বলেন কোন সাহসে ? 
কিংবা যদি বলা হয় বাঙালী শিক্ষিতও না মুর্খও না। তাহলে!
শিক্ষার কারনে বাঙালী বিশ্বে পরিচিতি পায়নি। অমুক দেশের তমুকে এই কর্ম করেছেন, এটা বিশ্বখবরে নিয়মিত শোনা যায়। যেদেশে মানুষ বড়জোর কয়েকলক্ষ সেই দেশের নামও শোনা যায়। বিশ্বের ২৫ কোটি বাঙালীর নাম শোনা যায় না। আর বিপরীত দিক যদি দেখেন, যেখানে ভিক্ষুক রাজনীতি সচেতন তাকে মুর্খ বলবে কোন মুর্খ।
বাঙালী ধার্মিক না বিধর্মীও না একথা বলা কি যুক্তিসংগত ?
যে দেশে প্রতিটি স্তরে মানুষ দুর্নীতিতে জড়িয়ে তাদের ধার্মীক বলার কারন নেই। ইসলাম ধর্মের কথা যদি নির্দিষ্ট করে বলেন, আল্লা সর্বশক্তিমান, তিনি সব দেখেন, সব জানেন। তাকে ফাকি দিয়ে চুরি-দুর্নীতি-ঘুস এসব হতে পারে না। একমাত্র আল্লার অস্তিত্ব নেই জানলেই সেটা সম্ভব। আর বিপরীত দিক যদি দেখেন,
বাপরে! জীবন দেব ধর্মের সমালোচনা শুনব না। দেখি কোন বাপের বেটা ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে।
সত্যিকারের পরিচয় যদি জানতে চান তাহলে রাজনীতি নিয়েই কথা বলা উচিত। পেটে খাবার থাকুক বা না থাকুক, রাজনীতির টনটনে জ্ঞান থাকতে হবে। নিজের সচেতনতা দেখাতেই হবে।
সেই রাজনীতির কথা যদি বলেন, গত ৩০ বছরের কথাই ধরুন না কেন। এরশাদের মত সৈরশাসক চাই না। ৯ বছর ধরে বহু আন্দোলন করে বহু জীবন দিয়ে তাকে বিদেয় করা হল। ক্ষমতায় এল বিএনপি। তাকেও আমরা চাই না, বিদায় কর। পরের নির্বাচনে ক্ষমতায় এল আওয়ামী লীগ। তাকেও আমরা চাই না, বিদায় কর। আবারো নির্বাচনে এল জোট সরকার। তাকেও আমরা চাইনা, এর জরুরী সরকার। তাকেও আমরা চাই না, এল মহাজোট সরকার।
এখনই অনেকে বলতে শুরু করেছেন মহাজোটকে চাই না। এমনকি যে ডিজিটাল নিয়ে এত মাতামাতি সেই ডিজিটাল দেশও চাই না।
এমন না-তত্ত্বের দেশ আর কোথায় পাবেন!

0 comments:

 

Browse