পালানোর পথ নেই

Jul 10, 2011
বাংলাদেশে এখন খবর বলতে একটাই, আন্দোলন আর হরতাল। লাঠিপেটা আর গাড়ি পোড়ানো। এই আগুনের তাপে বাজারে যে আগুন লেগেছে সেটাও চাপা পড়েছে। সমাজের উচু থেকে নিচু পর্যন্ত সবার মুখে ওই একই কথা, হরতালে দেশের সর্বনাস হচ্ছে নয়ত আরো হরতাল চাই। এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতির অবসান চাই নয়ত এই একদলীয় ব্যবস্থার অবসান চাই। দুপক্ষের গলাই জোড়ালো।
এখন দুপক্ষ বলাও কঠিন। আসলে বহুপক্ষে জট পাকিয়ে গেছে। সরকার এবং তার সমর্থকরা যখন জানাচ্ছেন সকলের সাথে পরামর্শ নিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে এই প্রথমবার রাতের বদলে দিনে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, গনতন্ত্র রক্ষা করা হয়েছে, দেশকে অবৈধ ক্ষমতার হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে তখন বিপক্ষ শিবির পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে। সবার সাথে আলোচনা করে সবার মত নিয়ে যদি সংবিধান সংশোধন করা হয় তাহলে প্রতিবাদ করছে তারা কারা। ওখানে যে শুধু বিরোধী দল নেই, ইসলামি বলে রীতিমত একটি জোট রয়েছে, আবার সরকারের মহাজোটের অংশও রয়েছে। তারা একবার সংশোধনের মত দিল আবার রাস্তায় নেমে পুলিশের লাঠিপেটা খেল এটা কিভাবে সম্ভব?
কি সম্ভব আর কি অসম্ভব সেটা হিসেব করছে কে ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন সংসদ এলাকায় পিকেটিং করা বেআইনী, সেকারনেই পেটানো হয়েছে। বিপক্ষের বক্তব্য, পিকেটিং বেআইনী হলেও খুন করা নিশ্চয়ই বৈধ। সরকারদলীয় এমপি সংসদ এলাকায় খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত, তদন্তের আগেই তাকে নির্দোষ ঘোষনা করা হয়েছে, সমস্ত তথ্য-প্রমান তার বিপক্ষে গেলেও সেই ঘোষনা বলবত আছে।
একদল বলছে, পুলিশ পেটানো কি নতুন ? ওরাও তো পিটিয়েছিল নাসিম, মতিয়া, নুরের মত নেতাদের। আসলে ওদের গুলি করা উচিত। বিপক্ষের বক্তব্য, ইকবাল তো সেটাও করেছিল। সেই বিখ্যাত ছবির পরও তাকে নির্দোষ ঘোষনা করা হয়েছে।
একদলের বক্তব্য, ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার করেছে, গ্রেনেড হামলা করেছে ওরা আবার বড়গলা করে কিভাবে ? বিপক্ষের বক্তব্য, ১০ ট্রাক অস্ত্র তো ধরেছিল সরকারই। পুলিশ প্রধান, গোয়েন্দা প্রধান, সরকার সবাই যদি জড়িতই থাকে তাহলে সেটা ধরা পড়ল কেন ? ধরল কে ?
দুপক্ষের সাথে মিশে তৃতীয় পক্ষ, চতুর্থ পক্ষ সবকিছু আরো জটিল করে তুলেছে। এখানেও মতামত পক্ষে বিপক্ষে সবদিকেই। একদলের বক্তব্য, দেশটাকে তালেবান বানাতে মোল্লারা পথে নেমেছে। অন্যদের বক্তব্য, কি দরকার ছিল বাবা এই জট পাকানোর। সংবিধান পড়ে কে ধর্মপালন করে। ধর্মের একটা কথা ছিল সেটা তো এতদিন কাউকে কামড় দেয়নি।
এরই মধ্যে মাথা তুলে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে মহাজোটের সঙ্গি কিছু দল। সাধারনত কিছু বলার সুযোগ থাকে না বলেই হয়ত তাদের সাড়াশব্দ শোনা যায় না। এটা সুযোগ। তাদের বক্তব্য, সমাজতন্ত্র যোগ করা হয়েছে খুব ভাল কথা। আমরা তো সেকথাই বলি। কিন্ত্র বিসমিল্লাহ থেকে গেল কেন। ওটা তো আমরা বলি না।
তাদের বিপক্ষের বক্তব্যও নেই এমন না। তাহলে আপনার লাল ঘোড়া ছুটিয়েছিলেন কেন ? ওই আওয়ামী সরকারই তো বলেছিল লাল ঘোড়া দাবড়াইয়া দিমু। আলেন্দের উদাহরন দিয়েছিল। সেই আওয়ামী সরকারই সংবিধানে সমাজতন্ত্র যোগ করেছে। শাবাস। সাংবিধানিক সমাজতান্ত্রিক দেশ।
কিছু ব্যক্তি অবশ্যই আছেন যারা কোন পক্ষেই নন। চার দশকের স্বাধীনতা, কয়েক লক্ষ মানুষের জীবনের বদলে পাওয়া স্বাধীনতা নিয়েই প্রশ্ন করছেন, আমার স্বাধীনতা আসলে কোনটা ? পথে বের হলে হরতালের পিকেটার পেটাবে, হরতালবিরোধী পেটাবে, পুলিশও পেটাবে। পিটুণি খাওয়ার পর কেউ পক্ষ নিয়ে একটা কথাও বলবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলবেন তারা সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই কৃতিত্বের জন্য তাদের মেডেল দেয়া উচিত।
আসলে আপনি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে একজন বন্দি। সবাই স্বাধীনতা রক্ষা করছেন, গনতন্ত্র রক্ষা করছেন, দেশের উন্নতি করছেন আর পাহারা দিচ্ছেন যেন আপনি জেল থেকে না পালান। পালানোর পথ আপনার জানা নেই।

0 comments:

 

Browse