লাঠির দিকে হাত বাড়াবেন না

Jul 5, 2011
বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। অন্তত আমেরিকান-ইউরোপিয়ানদের মত নিজের স্বার্থ নিয়ে জীবন কাটান না। বরং নিজের স্বার্থ বাদ দিয়ে রাজনীতির স্বার্থ দেখেন। ব্যবসা প্রতিস্ঠান বন্ধু রেখে, অফিস কামাই করে, কারখানা বন্ধ রেখে মিছিলে যান। এত সচেতনতা আর পাবেন কোথায়!
ইদানিং সচেতনতা যে আরো বেড়েছে তাতেও সন্দেহ নেই। শেয়ার বাজারের সুচকের চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এরজন্য কোন সুচকের ব্যবস্থা নেই বলে গ্রাফ দেখা সম্ভব হচ্ছে না, কিন্তু যদি পত্রিকা কিংবা টিভি দেখেন তাহলে গ্রাফ প্রয়োজন হওয়ার কথা না। নাটক নির্মাতারাও ফেল মেরে যাচ্ছেন টক শো নির্মাতাদের কাছে। দুপক্ষের দুজনকে দাওয়াত করে এনে দুপাশে বসিয়ে দিন, ব্যস। ঘন্টার পর ঘন্টা অবিরাম সচেতনতাবর্ষন। মাঝেমাঝে বিজ্ঞাপনের জন্য দুচার মিনিট বিরতি।
কাজেই সচেতনতা যে আকাশছোয়া হবে এটা তো স্বাভাবিক। মানুষ এখন নৌকা-ধানের শীষ-লাঙল নিয়ে মাথা ঘামায় না, আদালত-সংবিধান এসব নিয়েও মাথা ঘামায়।  কারো জো নেই সংবিধান পরিপন্থী কথা বলে পার পায়। সাথেসাথে পাকড়াও। যিনি ফুটপাতে ব্যবসা করেন, যিনি রিক্সা চালান, যিনি দিনমজুর, যিনি বেকার সবাই সংবিধান বিশেষজ্ঞে পরিনত হয়ে গেছেন।
আপনার স্মরনশক্তি যদি একটু ধারারো হয় তাহলে অবশ্য একে যেদিকে পাল সেদিকে হাল বলে ফেলতে পারেন। জরুরী সরকারের সময়ে সংবিধান অনুযায়ী কতদিন জরুরী আইন বলবত রাখা যায় তা নিয়ে কথা উঠেছিল। যখন সবার মুখেমুখে তখন একটাই কথা, সংবিধান জনগনের জন্য, জনগন সংবিধানের জন্য জনগন না। পাল্টে ফেলুন, পাল্টে ফেলুন। জনগনের স্বার্থবিরোধী সংবিধানের প্রয়োজন নেই।
যেদিকে পাল সেদিকে হাল এটা বেফাস কথা। আবার অন্যভাবে এটাও তো ঠিক, হাওয়া যেদিকে পাল সেদিকেই দিতে হয়। হাল ধরতে হয় সেদিকেই। বিপরীত দিকে পালে হাওয়া লাগে না, হাল ধরা মানে অতিরিক্ত শক্তিক্ষয়।
কাজেই সংবিধান এবং গনতন্ত্র, দুইয়ের জন্যই হাল এবং পাল দুই প্রয়োজন। যদি ভোট দিতে হয় সবাই মিলে জোটকে দেবেন যেন অন্যরা ছিটকে বাইরে চলে যায়। আবার নাহয় মহাজোটকে দেবেন যেন জোটের অস্তিত্ব না থাকে। কখনো হাল এবং পালের বিরোধীতা করার সুযোগ দেবেন না।
আর সচেতনতার পরিচয় দেবেন নির্বাচনে। জেনে, শুনে, বুঝে, নিজের ইচ্ছেয় ভোট দেবেন। সত, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক, জনদরদী, উন্নয়নকামীকে ভোট দেবেন। অন্য কাউকে ভোট দিতেই পারেন না।
কেউ কেউ বলেন বাংলাদেশের গনতন্ত্র হচ্ছে পাচ বছরের জন্য একজনের হাতে লাঠি তুলে দেয়া যেন ৫ বছর ধরে তিনি আপনাকে লাঠিপেটা করতে পারেন। সেই লাঠিপেটার জোরে আপনি সবভুলে বিপরীত দিকে যাত্রা করেন। নৌকায় থাকলে ধানের শীষের দিকে, ধানের শীষে থাকলে নৌকার দিকে। লাঠি অন্যের হাতে দেয়াটাই কর্তব্য। বাবা-রে, এত সহজে কি ভোলা যায়। দেখা যাক না ৫ বছর।
কেউ কেউ বলেন ৫ বছর কেন, ১০-২০-৩০-৪০ বছর দেখা হয়ে গেছে। সেই একই ব্যক্তিরাই একই অবস্থানে থেকে যাচ্ছেন। বড়জোর ৫ বছর লাঠিছাড়া, তারপরও আবারো তাদের হাতেই লাঠি। তারা খুব ভালো করেই জানেন লাঠি ছাড়া গতি নেই। এখন লাঠি ঘুরাচ্ছে ঘুরিয়ে নিক, সামনের বার ওটা হাতে আসছে।
অবশ্য লাঠি পুলিশও ঘোরায়। তাদের ধরনটা একটু অন্যরকম। তাদের হাতে লাঠি আসে একবারই, সেকারনে ঘুরানোর পরিমানটাও একটু বেশি। তারা জানে সময় গেলে তাদের সামনে অপেক্ষা করছে জেল। পুলিশ-গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে সাক্ষীই দিচ্ছে। তারা এটাও জানে, যাদের হাত থেকে লাঠি সরে গেছে তারা কখনো তাদের পক্ষ নিয়ে দুকথা বলবে না। তারপরও, হাতে যতক্ষন লাঠি আছে ততক্ষন হাতের সুখ তো করে নেই।
জীবন আর কদিনের। কজন এমন সুখভোগের সুযোগ পায়।
পৃথিবীর ইতিহাস বলে কোন এক সময় নাকি জনগনের হাতেও লাঠি আসে। সেটা ভয়ংকর সময়। মুহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন এসে যায়।
বাংলাদেশের সচেতন জনগন সেটা ভাল করেই জানে। সেকারনেই তারা লাঠির দিকে হাত বাড়ায় না। যারা লাঠি ব্যবহারে অভস্থ্য তারাই ব্যবহার করুন। এক প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্ম, তারপর লাইনে অপেক্ষা করছে আরেক প্রজন্ম।

0 comments:

 

Browse